বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছরের ধারা: শীর্ষ ঘটনাগুলো

বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছরের ধারা: শীর্ষ ঘটনাগুলো

বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছরের ধারা: শীর্ষ ঘটনাগুলো

বিশ্ব রাজনীতির গত একশ বছরের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এটি অসংখ্য উত্তাল সময়, বৈপ্লবিক পরিবর্তন এবং মানবজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে পরিপূর্ণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা মানবজাতির গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এই নিবন্ধে সেইসব ঘটনার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে, যা গত একশ বছর ধরে বিশ্ব রাজনীতির গতিধারা নির্ধারণ করেছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪–১৯১৮)

বিশ্ব রাজনীতির প্রথম বড় ধাক্কা আসে ১৯১৪ সালে, যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ইউরোপে জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, এবং জোটগত রাজনীতির সংঘর্ষে এই যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের পর ১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তি বিশ্বকে নতুন ভৌগোলিক মানচিত্র দেয়, কিন্তু এটি পরবর্তী দ্বন্দ্বের বীজ বপন করে।

রাশিয়ান বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক উত্থান (১৯১৭)

১৯১৭ সালে রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব আধুনিক যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কমিউনিজমের উত্থান সোভিয়েত ইউনিয়নের মাধ্যমে একটি নতুন ধাঁচের ক্ষমতার কাঠামো সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে পশ্চিমা পুঁজিবাদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ঠাণ্ডা যুদ্ধ সৃষ্টি করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯–১৯৪৫)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ঘটনা। ফ্যাসিজম ও নাৎসিবাদের উত্থান, হিটলারের জার্মানি, এবং জাপানের সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা এই যুদ্ধের প্রধান কারণ। যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘ গঠিত হয়, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে।

ঠাণ্ডা যুদ্ধ (১৯৪৭–১৯৯১)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের দুই পরাশক্তি – যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী ঠাণ্ডা যুদ্ধ। এটি মূলত আদর্শিক সংঘর্ষ, যেখানে পুঁজিবাদ বনাম কমিউনিজমের লড়াই চলে। বার্লিন দেয়াল, কিউবা মিসাইল সংকট, এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিল এই সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

ঔপনিবেশিক মুক্তি (১৯৪৫–১৯৭৫)

বিশ্ব রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন ঘটে ঔপনিবেশিক দেশগুলো স্বাধীন হওয়ার মাধ্যমে। ভারত, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ব্রিটিশ, ফরাসি, বা অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তির শাসন থেকে মুক্তি পায়। এটি একদিকে নতুন রাষ্ট্রগঠনের সম্ভাবনা বাড়ায়, অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন জটিলতা তৈরি করে।

স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্ব (১৯৯১–বর্তমান)

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে ঠাণ্ডা যুদ্ধ শেষ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতি আরও জটিল হয়, বিশেষ করে ৯/১১ হামলা, ইরাক যুদ্ধ, এবং চীনের উত্থানকে কেন্দ্র করে।

গ্লোবালাইজেশন ও প্রযুক্তির প্রভাব

একবিংশ শতাব্দীতে গ্লোবালাইজেশন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বিশ্ব রাজনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে। ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন ধরনের ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করেছে।

সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ

বর্তমান সময়ে বিশ্ব রাজনীতি পরিবেশ পরিবর্তন, অভিবাসন সমস্যা, এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত এসব চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করে তুলেছে।

১০০ বছরে বিশ্ব রাজনীতি: গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও ফলাফল

১. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ও ভার্সাই চুক্তি (১৯১৯):
  • ঘটনা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানিকে দোষী সাব্যস্ত করে কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়।
  • ফলাফল: বিশ্ব অর্থনীতি অস্থির হয়ে ওঠে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভূমিকা রাখে।

২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা (১৯৩৯-১৯৪৫):

  • ঘটনা: বিশ্বব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞের পরে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্যে গঠিত।
  • ফলাফল: শীতল যুদ্ধের সূচনা এবং আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই।

৩. শীতল যুদ্ধ (১৯৪৭-১৯৯১):

  • ঘটনা: যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আদর্শগত সংঘর্ষ।
  • গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত: বার্লিন প্রাচীর নির্মাণ (১৯৬১), কিউবান মিসাইল সংকট (১৯৬২)।
  • ফলাফল: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও এক মেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা।

৪. ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা (১৯৪৭):

  • ঘটনা: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান এবং দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি।
  • ফলাফল: ভারত-পাকিস্তান বিরোধ, কাশ্মীর সমস্যা।

৫. চীন ও মাও সেতুং-এর বিপ্লব (১৯৪৯):

  • ঘটনা: চীনে সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা।
  • ফলাফল: চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।

৬. আফ্রিকান উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তি (১৯৫০-১৯৭০):

  • ঘটনা: আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
  • ফলাফল: নতুন জাতি-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে বৈশ্বিক রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা।

৭. মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত ও ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা (১৯৪৮):

  • ঘটনা: ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিরোধ এবং একাধিক যুদ্ধ।
  • ফলাফল: তেল রাজনীতির গুরুত্ব বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক অস্থিরতা।

৮. সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ ও ৯/১১ (২০০১):

  • ঘটনা: যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তান ও ইরাকে সামরিক অভিযান।
  • ফলাফল: সন্ত্রাস দমন নীতির পুনর্বিন্যাস এবং পশ্চিমা বিশ্বের ভূরাজনৈতিক প্রভাব।

৯. ব্রেক্সিট ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চ্যালেঞ্জ (২০১6):

  • ঘটনা: যুক্তরাজ্যের ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত।
  • ফলাফল: ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংহতির ওপর প্রভাব।

১০. জলবায়ু পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক চুক্তি:

  • ঘটনা: কিয়োটো প্রোটোকল (১৯৯৭), প্যারিস চুক্তি (২০১৫)।
  • ফলাফল: টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বৈশ্বিক প্রয়াস।

১১. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (২০২২-বর্তমান):

  • ঘটনা: রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিরোধ।
  • ফলাফল: ন্যাটোর প্রভাব বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিবর্তন।

বিশ্ব রাজনীতির শতাব্দী, কী শিখেছি এই ১০০ বছরে?

গত একশ বছর ধরে বিশ্ব রাজনীতি নানা মোড় ও পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। এই সময়কালে সভ্যতা যেমন ত্বরান্বিত উন্নয়ন দেখেছে, তেমনি যুদ্ধ, সাম্রাজ্যবাদের পতন, জাতীয়তাবাদ, ও বৈশ্বিক সহযোগিতার গুরুত্বও উপলব্ধি করেছে। এই শতাব্দীতে আমরা কী শিখেছি—তা বিচার করা সময়োপযোগী।

১. যুদ্ধ ও শান্তি: শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা

বিশ্বযুদ্ধের সময় মানুষ উপলব্ধি করেছে যুদ্ধ মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। ১৯১৪-১৮ এবং ১৯৩৯-৪৫-এর দুটি বিশ্বযুদ্ধ কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জাতিসংঘ গঠিত হয়, যা বৈশ্বিক শান্তি ও সহযোগিতা স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা শিখেছি যে দ্বন্দ্বের চেয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান দীর্ঘস্থায়ী সমাধান আনে।

২. সাম্রাজ্যবাদের পতন এবং স্বাধীনতার উত্থান

২০শ শতকের একটি বড় শিক্ষা হল উপনিবেশ থেকে মুক্তির সংগ্রাম। ভারত, বাংলাদেশ, আফ্রিকা, ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো বিভিন্ন সময়ে স্বাধীনতা লাভ করে। উপনিবেশবাদ শুধু অর্থনৈতিক শোষণ নয়, সাংস্কৃতিক ও মানসিক শোষণও করেছে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের দেখিয়েছে যে মানুষের স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ একটি মৌলিক অধিকার।

৩. গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের দ্বন্দ্ব

এই শতাব্দীতে বিভিন্ন দেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তবে স্বৈরতন্ত্রও ফিরে আসার চেষ্টা করেছে। গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজে অধিকারের সমতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদিকে, স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনগণের অধিকার হরণ করেছে। আমরা শিখেছি যে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া শাসন টেকসই হয় না।

৪. শীতল যুদ্ধ ও সুপারপাওয়ারের প্রতিযোগিতা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হয় শীতল যুদ্ধ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজেদের প্রভাব বিস্তারে লিপ্ত হয়। এই সময়ে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু হয়, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আমরা শিখেছি যে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখা এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অপরিহার্য।

৫. বৈশ্বিক অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা

বিশ্ব রাজনীতির আরেকটি শিক্ষা হল অর্থনীতির গুরুত্ব। বিশ্বায়ন অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও আন্তঃনির্ভরতা বাড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ও ডব্লিউটিও-এর মতো সংস্থাগুলি আন্তর্জাতিক অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে, আমরা শিখেছি যে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর না করলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্থহীন।

৬. পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন

গত একশ বছর ধরে বিশ্ব রাজনীতি পরিবেশের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে। শিল্পায়ন এবং অতি ব্যবহারের কারণে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা শিখেছি যে প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া ভবিষ্যৎ নিরাপদ রাখা যাবে না।

৭. মানবাধিকার ও নারীর ক্ষমতায়ন

জাতিসংঘের মাধ্যমে মানবাধিকারের ধারণা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পায়। নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রশ্নে বড় পরিবর্তন দেখা যায়। ১৯৪৮ সালের মানবাধিকার সনদ এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশ নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা এই শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।

৮. তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল যুগ

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন বিশ্ব রাজনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রাজনীতিতে নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আমরা শিখেছি যে তথ্যপ্রযুক্তি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে সমাজের কল্যাণ নিশ্চিত হয়।

বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর: ইতিহাসের পেছনের গল্পগুলো

১. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ এবং পরিণতি (1914-1918):

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভেসাইলস চুক্তি (1919) জার্মানিকে দায়ী করে এবং তাদের উপর কঠোর শর্ত আরোপ করে। এর ফলে জার্মানিতে অসন্তোষ এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে নাৎসি পার্টির উত্থানে ভূমিকা রাখে।

পেছনের গল্প:
বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে ইউরোপীয় রাজপরিবারগুলো নিজেদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি করেছিল। কিন্তু অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির আর্চডিউক ফার্ডিনান্ডের হত্যা পুরো বিশ্বকে যুদ্ধে টেনে নেয়।


২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা (1939-1945):

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ঠাণ্ডা যুদ্ধ শুরু হয়। একই সময়ে, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য।

পেছনের গল্প:
হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানিতে নাৎসি মতবাদ এবং এটি কীভাবে ইহুদি জনগোষ্ঠীর উপর গণহত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটায়, তা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়।


৩. ঠাণ্ডা যুদ্ধ এবং দ্বিধাবিভক্ত বিশ্ব (1947-1991):

আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলতে থাকে। এই সময়ে বিভিন্ন দেশ দুটি শক্তিধর গোষ্ঠীর পক্ষে অবস্থান নেয়।

পেছনের গল্প:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের CIA এবং সোভিয়েত KGB-এর গুপ্তচরবৃত্তি বিশ্বব্যাপী রাজনীতির নতুন মাত্রা যোগ করে। কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট এবং বার্লিন প্রাচীরের পতন ঠাণ্ডা যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।


৪. ঔপনিবেশিক মুক্তি আন্দোলন (১৯৪৫-এর পর):

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলো ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেতে শুরু করে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, এবং আলজেরিয়া এর বড় উদাহরণ।

পেছনের গল্প:
ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন দেশকে দ্বিধাবিভক্ত করে রেখে যায় (যেমন ভারত-পাকিস্তান বিভাজন), যা আজও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে।


৫. ইউরোপীয় ইউনিয়নের উত্থান (1957-এর পর):

ইউরোপের দেশগুলো অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি জোট গঠন করে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) হিসেবে গড়ে ওঠে।

পেছনের গল্প:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ব্রেক্সিট (যুক্তরাজ্যের EU থেকে বের হওয়া) এই জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তোলে।


৬. মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত এবং তেলের রাজনীতি (1948-এর পর):

ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা, আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ, এবং তেলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের হস্তক্ষেপ বিশ্ব রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

পেছনের গল্প:
তেলের খনিজ সম্পদ নিয়ে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ধীরে ধীরে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নিজেদের আধিপত্য তৈরি করে।


৭. সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং বিশ্বায়ন (1991):

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায় এবং আমেরিকা একক বিশ্বশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সঙ্গে শুরু হয় বিশ্বায়নের এক নতুন যুগ।

পেছনের গল্প:
সোভিয়েত পতনের পর বিভিন্ন দেশে পশ্চিমা মডেলের গণতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যা অনেক স্থানে অশান্তি সৃষ্টি করে।


৮. ৯/১১ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (2001):

যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধ শুরু হয়। আফগানিস্তান এবং ইরাকে সামরিক হস্তক্ষেপ এর বড় উদাহরণ।

পেছনের গল্প:
৯/১১-এর পরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন হস্তক্ষেপ নতুন নতুন জঙ্গি সংগঠনের জন্ম দেয়, যার প্রভাব আজও টিকে আছে।


৯. চীন এবং ভারতের উত্থান (2000-এর পর):

বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন ও ভারত বড় ভূমিকা রাখতে শুরু করে। প্রযুক্তি এবং সামরিক ক্ষেত্রে এই দুটি দেশের উন্নতি চোখে পড়ার মতো।

পেছনের গল্প:
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে চীন নতুন বিশ্বশক্তি হয়ে উঠতে চায়। অন্যদিকে, ভারতের গণতন্ত্র এবং উদীয়মান বাজার তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে।


১০. জলবায়ু পরিবর্তন এবং নতুন বিশ্ব রাজনীতি (বর্তমান):

জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন বর্তমান রাজনীতির বড় ইস্যু। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিবেশ রক্ষায় কার্যক্রম চালাচ্ছে।

পেছনের গল্প:
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোর ভূমিকা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতি একটি বড় বিতর্কের বিষয়।

উপসংহার

বিশ্ব রাজনীতির গত একশ বছর পরিবর্তন, সংঘর্ষ, এবং পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে গেছে। অতীতের শিক্ষাগুলো থেকে ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থিতিশীল ও ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top