সাইক্লোন শব্দের উৎপত্তি গ্রিক শব্দ “κύκλος” (kyklos) থেকে, যার অর্থ “বৃত্ত” বা “চক্র”। এই শব্দটি প্রথমে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল, যিনি ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহের বর্ণনা দিতে এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
সাইক্লোন শব্দটি প্রথমে ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৮৪৮ সালে, একজন নাবিক হেনরি পিডিংটন এই শব্দটি প্রশান্ত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় বর্ণনা করতে ব্যবহার করেন।
সাইক্লোন শব্দটি বর্তমানে পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়।
বাংলায় সাইক্লোন শব্দটিও গ্রিক শব্দ “κύκλος” (kyklos) থেকে এসেছে।
সাইক্লোনের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ট্রপিক্যাল সাইক্লোন: এই ধরনের সাইক্লোন উষ্ণ সমুদ্রের উপরে গঠিত হয়। এগুলি সাধারণত ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার (৭৪ মাইল) বা তার বেশি বাতাসের গতিবেগ থাকে।
- সাবট্রপিক্যাল সাইক্লোন: এই ধরনের সাইক্লোন উষ্ণ এবং শীতল সমুদ্রের জলের সংযোগস্থলে গঠিত হয়। এগুলি সাধারণত ঘণ্টায় ৬৩ কিলোমিটার (৩৯ মাইল) বা তার বেশি বাতাসের গতিবেগ থাকে।
- পোলার সাইক্লোন: এই ধরনের সাইক্লোন ঠান্ডা বাতাসের উপরে গঠিত হয়। এগুলি সাধারণত ঘণ্টায় ৬৩ কিলোমিটার (৩৯ মাইল) বা তার বেশি বাতাসের গতিবেগ থাকে।
সাইক্লোন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা ব্যাপক ক্ষতি এবং প্রাণহানি ঘটাতে পারে।
সুনামি (Tsunami)
সুনামি হল সমুদ্রে বা অন্য কোনো জলক্ষেত্রে ভূমিকম্প, ভূমিধস কিংবা আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস বা ঢেউ। সুনামি একটি জাপানি শব্দ যার অর্থ “পোতাশ্রয়ের ঢেউ”।
সুনামি সাধারণত সমুদ্রের তলদেশে সংঘটিত একটি দ্রুত এবং আকস্মিক তরঙ্গের ফলে সৃষ্টি হয়। এই তরঙ্গটি সমুদ্রের পৃষ্ঠের উপর দিয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে, প্রায়শই ঘণ্টায় ৮০০ কিলোমিটার (৫০০ মাইল) বা তার বেশি গতিতে। সুনামি সাধারণত দীর্ঘ এবং প্রশস্ত হয়, কয়েকশ কিলোমিটার (মাইলের) দৈর্ঘ্য এবং কয়েক কিলোমিটার (মাইলের) প্রশস্ততা থাকতে পারে।
সুনামি অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক হতে পারে। তারা উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি এবং প্রাণহানি ঘটাতে পারে। সুনামির কারণে সৃষ্ট কিছু সাধারণ ক্ষতি হল:
- জলাবদ্ধতা: সুনামির ঢেউ উপকূলীয় অঞ্চলগুলিকে জলমগ্ন করে দিতে পারে, যা বাড়ি, ব্যবসা এবং রাস্তাঘাটকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- ভূমিক্ষয়: সুনামির ঢেউ উপকূলীয় অঞ্চলের মাটি এবং শিলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা ভূমিধসের কারণ হতে পারে।
- পরিবেশগত ক্ষতি: সুনামি উপকূলীয় অঞ্চলের বন, ফসল এবং জলজ জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সুনামি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়গুলির মধ্যে রয়েছে:
- সুনামি সতর্কতা সিস্টেমগুলির জন্য সচেতন থাকুন।
- সুনামি সতর্কতা বা হুঁশিয়ারি পাওয়ার পরে, নিরাপদ উচ্চভূমিতে চলে যান।
- সুনামির ঢেউ আসার আগে, উঁচু ভবন বা স্থাপনার উপরে চলে যান।
- সুনামির ঢেউ আসার পরে, নিরাপদ হওয়া পর্যন্ত ফিরে আসবেন না।
সুনামি একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা ব্যাপক ক্ষতি এবং প্রাণহানি ঘটাতে পারে। সুনামি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সুনামি সতর্কতা সিস্টেমগুলির জন্য প্রস্তুত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
এসিড বৃষ্টি (Acid Rain)
এসিড বৃষ্টি হলো এমন এক ধরনের বৃষ্টিপাত যেখানে পানির pH 7 এর চেয়ে কম হয়। স্বাভাবিক বৃষ্টির pH 5.6 থেকে 6.5 এর মধ্যে থাকে। এসিড বৃষ্টির pH 4.5 বা তার কম হতে পারে।
এসিড বৃষ্টির প্রধান কারণ হলো বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx) এর নির্গমন। এই গ্যাসগুলি জীবাশ্ম জ্বালানী, যেমন কয়লা, তেল এবং গ্যাসের দহন থেকে নির্গত হয়। বাতাসে থাকা এই গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত জল, অক্সিজেন এবং অন্যান্য পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) এবং নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) তৈরি করে। এই অ্যাসিডগুলি বৃষ্টিপাতের সাথে ভূপৃষ্ঠে পড়ে।
এসিড বৃষ্টির অনেকগুলি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এটি মাটি, জল এবং গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এসিড বৃষ্টি মাটির pH কমিয়ে দেয়, যা উদ্ভিদের জন্য পুষ্টি উপাদানগুলিকে শোষণ করা কঠিন করে তোলে। এসিড বৃষ্টি জলের pH কমিয়ে দেয়, যা মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। এসিড বৃষ্টি পাথুরে স্থাপনা, যেমন মূর্তি এবং ভবনগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এসিড বৃষ্টি প্রতিরোধের জন্য, জীবাশ্ম জ্বালানী দহন কমানো গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস, যেমন সৌর শক্তি এবং বায়ু শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা যেতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানী দহন থেকে নির্গত গ্যাসগুলি পরিশোধনের মাধ্যমেও এসিড বৃষ্টির পরিমাণ কমানো যেতে পারে।
এসিড বৃষ্টির কিছু নির্দিষ্ট প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে:
- মাটির ক্ষতি: এসিড বৃষ্টি মাটির pH কমিয়ে দেয়, যা উদ্ভিদের জন্য পুষ্টি উপাদানগুলিকে শোষণ করা কঠিন করে তোলে। এটি মাটির আর্দ্রতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং মাটিতে থাকা খনিজগুলিকে ধুয়ে ফেলতে পারে।
- জলের ক্ষতি: এসিড বৃষ্টি জলের pH কমিয়ে দেয়, যা মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। এটি পানীয় জলকে দূষিত করতে পারে এবং পানির সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত অবকাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- গাছপালা ক্ষতি: এসিড বৃষ্টি গাছের পাতা এবং শিকড়কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি গাছের বৃদ্ধি এবং ফলন কমাতে পারে।
- স্থাপনার ক্ষতি: এসিড বৃষ্টি পাথুরে স্থাপনা, যেমন মূর্তি এবং ভবনগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি ধাতু এবং অন্যান্য উপকরণগুলিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- স্বাস্থ্য সমস্যা: এসিড বৃষ্টির সাথে যুক্ত কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, চোখের জ্বালা এবং ত্বকের সমস্যা।
এসিড বৃষ্টি একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা যা ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। এসিড বৃষ্টি প্রতিরোধের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।