বাংলা নাটকের উদ্ভব ইতিহাস ও জন্মকথা
বাংলা নাটকের উদ্ভব ও বিকাশে ভারতীয় ও পাশ্চাত্য উভয় সংস্কৃতিরই প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বাংলা নাটকের আদি রূপগুলি ছিল ব্রাহ্মণ্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ। রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের কাহিনীগুলি যাত্রা, কীর্তন, জারি, ভাওয়াইয়া, পালা ইত্যাদি লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে রূপকথার আকারে বর্ণনা করা হতো। এই যাত্রা-কীর্তনগুলিই বাংলা নাটকের আদি রূপ বলে মনে করা হয়।
বাংলা নাটকের আদি রূপ
বাংলা নাটকের আদি রূপগুলি ছিল মূলত ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের অংশ। রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের কাহিনীগুলি যাত্রা, কীর্তন, জারি, ভাওয়াইয়া, পালা ইত্যাদি লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে রূপকথার আকারে বর্ণনা করা হতো। এই যাত্রা-কীর্তনগুলিই বাংলা নাটকের আদি রূপ বলে মনে করা হয়।
বাংলা নাটকের আধুনিক রূপ
বাংলা নাটকের আধুনিক রূপের সূচনা হয় উনিশ শতকে। এই সময় ইউরোপীয় নাটকের প্রভাবে বাংলা নাটক নতুন আঙ্গিকে গড়ে ওঠে। উনিশ শতকের বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হলেন রামনারায়ণ তর্করত্ন। তার রচিত “অভিজ্ঞান শকুন্তলা” বাংলা নাটকের একটি অমূল্য সম্পদ।
বাংলা নাটকের বিকাশ
বিংশ শতকে বাংলা নাটক আরও বিকাশ লাভ করে। এই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, শেখ ফজলুল হক, বিজন ভট্টাচার্য, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায় প্রমুখ নাট্যকারদের অবদান বাংলা নাটকের ইতিহাসে স্মরণীয়।
বাংলা নাটকের শ্রেণীবিভাগ
বাংলা নাটককে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন:
- ধর্মীয় নাটক: রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণের কাহিনীগুলি অবলম্বনে রচিত নাটকগুলিকে ধর্মীয় নাটক বলা হয়।
- সামাজিক নাটক: সামাজিক সমস্যার প্রতিফলন ঘটিয়ে রচিত নাটকগুলিকে সামাজিক নাটক বলা হয়।
- ঐতিহাসিক নাটক: ইতিহাসের কোনও ঘটনা বা ব্যক্তিকে অবলম্বনে রচিত নাটকগুলিকে ঐতিহাসিক নাটক বলা হয়।
- আধুনিক নাটক: আধুনিক জীবনের সমস্যা ও প্রেক্ষাপটকে অবলম্বনে রচিত নাটকগুলিকে আধুনিক নাটক বলা হয়।
বাংলা নাটকের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে বাংলা নাটক বিভিন্ন আঙ্গিকে বিকাশ লাভ করেছে। থিয়েটার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলা নাটক উপস্থাপন করা হচ্ছে। বাংলা নাটক এখন আর শুধুমাত্র মঞ্চের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এখন একটি জনপ্রিয় বিনোদন মাধ্যম।
বাংলা নাটকের ভবিষ্যৎ
বাংলা নাটকের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। নতুন প্রজন্মের নাট্যকাররা বাংলা নাটকে নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য আনছেন। বাংলা নাটক বিশ্বের নাট্য জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করবে বলে আশা করা যায়।
পূর্ববর্তী বাংলাদেশের নাটক
পূর্ববর্তী বাংলাদেশের নাটক বলতে স্বাধীনতাপূর্বকালীন পূর্ববঙ্গের নাটককে বোঝায়। এই সময়ের নাটক ছিল মূলত ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের অংশ। রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের কাহিনীগুলি যাত্রা, কীর্তন, জারি, ভাওয়াইয়া, পালা ইত্যাদি লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে রূপকথার আকারে বর্ণনা করা হতো। এই যাত্রা-কীর্তনগুলিই পূর্ববর্তী বাংলাদেশের নাটকের আদি রূপ বলে মনে করা হয়।
উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গে নাট্যচর্চার সূচনা হয়। এই সময় ইউরোপীয় নাটকের প্রভাবে পূর্ববঙ্গের নাটক নতুন আঙ্গিকে গড়ে ওঠে। উনিশ শতকের পূর্ববঙ্গের নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হলেন রামনারায়ণ তর্করত্ন। তার রচিত “অভিজ্ঞান শকুন্তলা” পূর্ববঙ্গের নাটকের একটি অমূল্য সম্পদ।
বিংশ শতকে পূর্ববঙ্গের নাট্যচর্চা আরও বিকাশ লাভ করে। এই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, শেখ ফজলুল হক, বিজন ভট্টাচার্য, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায় প্রমুখ নাট্যকারদের অবদান পূর্ববঙ্গের নাটকের ইতিহাসে স্মরণীয়।
পূর্ববর্তী বাংলাদেশের নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ততা: পূর্ববর্তী বাংলাদেশের নাটকগুলি মূলত ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিল।
- লোকসঙ্গীতের উপর নির্ভরতা: পূর্ববর্তী বাংলাদেশের নাটকগুলি লোকসঙ্গীতের উপর নির্ভরশীল ছিল।
- ইউরোপীয় নাটকের প্রভাব: উনিশ শতকে ইউরোপীয় নাটকের প্রভাবে পূর্ববঙ্গের নাটক নতুন আঙ্গিকে গড়ে ওঠে।
পূর্ববর্তী বাংলাদেশের নাটক বাংলা নাট্যচর্চার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ের নাটকগুলি বাংলা নাটকের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের নাটক
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের নাটক ছিল রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার সময়কাল। এই সময়ের নাটকগুলিতে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা হয়েছিল।
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবাদ: পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের নাটকগুলি মূলত রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই সময়ের নাটকগুলিতে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা হয়েছিল।
- সামাজিক সমস্যার প্রতিফলন: পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের নাটকগুলিতে সামাজিক সমস্যার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছিল। এই সময়ের নাটকগুলিতে বৈষম্য, দারিদ্র্য, নারীর অধিকার ইত্যাদি সামাজিক সমস্যাগুলি তুলে ধরা হয়েছিল।
- নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য: পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের নাটকগুলিতে নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। এই সময়ের নাটকগুলিতে যাত্রা, কীর্তন, জারি, ভাওয়াইয়া, পালা ইত্যাদি লোকনাট্যের পাশাপাশি আধুনিক নাটকের প্রচলন শুরু হয়েছিল।
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের নাটকের উল্লেখযোগ্য নাট্যকার ও নাটকগুলি হল:
- নাট্যকার: আলাউদ্দিন আল আজাদ, আবদুল গফুর চৌধুরী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সৈয়দ শামসুল হক, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়
- নাটক: “আত্মহত্যা” (আলাউদ্দিন আল আজাদ), “বাংলাদেশ” (আবদুল গফুর চৌধুরী), “হাজার বছর ধরে” (আবু হেনা মোস্তফা কামাল), “একদিন আসবে” (সৈয়দ শামসুল হক), “সূর্যগ্রহণ” (অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়), “অপরাজিত” (সত্যজিৎ রায়)
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের নাটক বাংলা নাট্যচর্চার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ের নাটকগুলি বাংলা নাটকের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের নাটকের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আবদুল গফুর চৌধুরীর রচিত “বাংলাদেশ” নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এই নাটক পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটি প্রতীক হয়ে ওঠে।
- ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে সৈয়দ শামসুল হকের রচিত “হাজার বছর ধরে” নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকটিতে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা হয়েছিল।
- ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত “সূর্যগ্রহণ” নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকটিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের নানা ঘটনার চিত্রায়ন করা হয়েছিল।
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের নাটক বাংলা নাট্যচর্চার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ের নাটকগুলি বাংলা নাটকের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী নাটক
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নাটক একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এই সময়ের নাটকগুলিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা অনুষঙ্গ উঠে এসেছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি: স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নাটকগুলিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই সময়ের নাটকগুলিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের নানা ঘটনা, ব্যক্তিত্ব ও চেতনা তুলে ধরা হয়েছে।
- সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা: স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নাটকগুলিতে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলিও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই সময়ের নাটকগুলিতে দারিদ্র্য, বৈষম্য, নারীর অধিকার, দুর্নীতি ইত্যাদি সামাজিক সমস্যাগুলি তুলে ধরা হয়েছে।
- ব্যক্তিগত জীবনের নানা অনুষঙ্গ: স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নাটকগুলিতে ব্যক্তিগত জীবনের নানা অনুষঙ্গও উঠে এসেছে। এই সময়ের নাটকগুলিতে প্রেম, বিরহ, ব্যর্থতা, সাফল্য ইত্যাদি ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘটনা ও অনুভূতি তুলে ধরা হয়েছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নাটকের উল্লেখযোগ্য নাট্যকার ও নাটকগুলি হল:
- নাট্যকার: আবদুল গাফুর চৌধুরী, মামুনুর রশীদ, মমতাজউদ্দিন আহমেদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সৈয়দ শামসুল হক, ইন্দু সাহা, প্রসাদ বিশ্বাস, বন্দে আলী মিয়া
- নাটক: “একাত্তরের দিনগুলি” (আবদুল গাফুর চৌধুরী), “এখানে এখন” (মামুনুর রশীদ), “সাতঘাটের কানাকড়ি” (মমতাজউদ্দিন আহমেদ), “একাত্তরের পালা” (নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু), “একদিন আসবে” (সৈয়দ শামসুল হক), “অগ্নিশিখা” (ইন্দু সাহা), “ভোরের স্বপ্ন” (প্রসাদ বিশ্বাস), “বৌদিদি রেস্টুরেন্ট” (বন্দে আলী মিয়া)
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নাটক বাংলা নাট্যচর্চার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ের নাটকগুলি বাংলা নাটকের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নাটকের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
- ১৯৭২ সালে আবদুল গাফুর চৌধুরীর রচিত “একাত্তরের দিনগুলি” নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকটি স্বাধীনতা যুদ্ধের নানা ঘটনার চিত্রায়ন করে এক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
- ১৯৭৩ সালে মামুনুর রশীদের রচিত “এখানে এখন” নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকটি স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে তুলে ধরে।
- ১৯৭৪ সালে মমতাজউদ্দিন আহমেদের রচিত “সাতঘাটের কানাকড়ি” নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকটি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে তুলে ধরে।
- ১৯৭৫ সালে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর রচিত “একাত্তরের পালা” নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকটি স্বাধীনতা যুদ্ধের নানা ঘটনার একটি পালাবাহিক রূপায়ণ।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নাটক বাংলা নাট্যচর্চার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ের নাটকগুলি বাংলা নাটকের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।