কৃষিকাজে বিজ্ঞান হল কৃষিক্ষেত্রের অনুশীলন এবং উপলব্ধির জন্য ব্যবহৃত বিজ্ঞান। এটি জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, এবং সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অন্তর্ভুক্ত করে।
কৃষি বিজ্ঞানের লক্ষ্য হল খাদ্য, তন্তু, এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এটি কৃষকদের তাদের ফসলের ফলন বাড়াতে, তাদের প্রাণীদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে, এবং তাদের খামারের পরিবেশকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
কৃষি বিজ্ঞানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল:
- উদ্ভিদ বিজ্ঞান: উদ্ভিদ বিজ্ঞান উদ্ভিদের বৃদ্ধি, বিকাশ, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে অধ্যয়ন করে। এটি নতুন ফসলের জাত তৈরি করা, ফসলের ফলন বাড়ানো, এবং ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় এবং রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে সাহায্য করে।
- প্রাণী বিজ্ঞান: প্রাণী বিজ্ঞান প্রাণীদের বৃদ্ধি, বিকাশ, এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে অধ্যয়ন করে। এটি নতুন প্রাণী প্রজাতির উন্নয়ন, প্রাণীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, এবং প্রাণীদের রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে সাহায্য করে।
- মাটি বিজ্ঞান: মাটি বিজ্ঞান মাটির গঠন, বৈশিষ্ট্য, এবং উর্বরতা সম্পর্কে অধ্যয়ন করে। এটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা, মাটির ক্ষয়রোধ করা, এবং মাটিকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- কৃষি প্রকৌশল: কৃষি প্রকৌশল কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার অধ্যয়ন করে। এটি নতুন যন্ত্রপাতি এবং পদ্ধতি তৈরি করা, কৃষিজাত পণ্যগুলির প্রক্রিয়াকরণ এবং সংরক্ষণ উন্নত করা, এবং কৃষিক্ষেত্রে শক্তির ব্যবহার দক্ষ করে তোলার জন্য সাহায্য করে।
- কৃষি অর্থনীতি: কৃষি অর্থনীতি কৃষি খাতের অর্থনৈতিক দিকগুলি অধ্যয়ন করে। এটি কৃষি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, এবং নীতির উপর অর্থনৈতিক প্রভাবগুলি বুঝতে সাহায্য করে।
- কৃষি সামাজিক বিজ্ঞান: কৃষি সামাজিক বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিকগুলি অধ্যয়ন করে। এটি কৃষি উৎপাদনের উপর সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবগুলি বুঝতে সাহায্য করে।
কৃষি বিজ্ঞানের অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি ফসলের ফলন বাড়ানো, নতুন ফসলের জাত তৈরি করা, এবং খাদ্যের উৎপাদন এবং পরিবহনকে আরও দক্ষ করে তুলেছে।
বাংলাদেশে, কৃষি বিজ্ঞানের অগ্রগতি খাদ্য উৎপাদন এবং কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ ধান, পাট, চা, এবং মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ উৎপাদক দেশ। কৃষি বিজ্ঞানের অগ্রগতি এই পণ্যগুলির উৎপাদন আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা প্রদান করে।
কৃষি বিজ্ঞানের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। নতুন প্রযুক্তি এবং গবেষণার মাধ্যমে, কৃষি উৎপাদন আরও বাড়ানো এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে
অতীতের কথাঃ আজ থেকে বেশ কয়েক হাজার বছর আগে কৃষক বা কৃষি কিছুই ছিল না । মানুষ ফলমূল ও মাছ শিকার করে এবং জন্তু জানোয়ারের মাংস খেয়ে জীবন ধারণ করত । কিন্তু এক পর্যায়ে মানুষ পশুপালন ও বীজ বপন করতে শেখে ।
মানুষ তখন সমাজবদ্ধ হতে শুরু করে । একদল মন দেয় কৃষিকাজে , অন্য দল মন দেয় ব্যবসা-বাণিজ্য । এভাবে সমাজের অগ্রগতি সাধিত হতে থাকে ।
বাংলাদেশের অবস্থানঃ বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এ দেশের শতকরা পঁচাশি জন লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল । দুঃখের বিষয় হলেও এ কথা সত্য যে এখন ও এদেশের কৃষক সম্প্রদায় সেই চিরাচরিত সনাতন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে চলছে ।
ভারতেও অবাক লাগে যখন উন্নত বিশ্বের দেশগুলো মহাশূন্য অভিযানের প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের দেশের কৃষকরা সেই গতানুগতিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করছে ।
সেই পুরনো পদ্ধতিতে লাঙ্গল ও একজোড়া গরু এখন ও কৃষিব্যবস্থায় প্রধান হাতিয়াররূপে ব্যবহৃত হচ্ছে । এর ফলে শস্য উপাদান আশানুরূপ হচ্ছে না ।
কৃষির সূচনাঃ যেদিন থেকে মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখল , সেদিন থেকে পাথরের অস্ত নিয়ে বন্য পশুর সাথে যুদ্ধ আরম্ভ করল । যেদিন সে কাচা তৈরি করল, সেদিন থেকেই বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু হলো ।
মানুষ যেদিন আবিষ্কার করল অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় তার ক্ষুদ্র অবয়বে রয়েছে একটি শুকনো অথচ প্রখর বুদ্ধি সম্পন্ন মস্তিষ্ক , সেদিন থেকেই প্রকৃতির রহস্য ভেদ করার জন্য নব নব তওৃ আবিষ্কার করলো সে ।
প্রকৃতিকে আবিষ্কার করার নেশায় হয়ে উঠল সে অস্থির । প্রকৃতির দেওয়া শস্য সম্পদে সে সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি । সে কৃষিশিক্ষা অর্জন করে নিজের রুচির পরিতৃপ্তি ও পরিপুষ্টি সাধনে আত্মনিয়োজিত হলো ।
কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রভাবঃ মানুষ খাদ্যের জন্য কিসের ওপর নির্ভরশীল । আজ বিজ্ঞানের প্রভাবে কৃষিকাজ আদিম স্তর পেরিয়ে আধুনিক স্তরে পৌছেছে । সুপ্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশে গরু বা মহিষ দ্বারা লাঙ্গল চালিয়ে কৃষি কাজ করা হতো ।
এখন গরুর লাঙ্গলের পরিবর্তে এসেছে কলের লাঙ্গল ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার । এতে এক দিকে যেমন শ্রমের ব্যয় হ্রাস পেয়েছে তেমনই জমি ও কর্ষিত হচ্ছে গভীরভাবে । ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ।
জলসেচ ব্যবস্থা উন্নত বীজ সরবরাহ ভূমি সংরক্ষণ প্রবৃত্তির প্রভূত উন্নতি কৃষিতে বিজ্ঞানেরই অবদান । পৃথিবীতে আজ জনসংখ্যা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে । কিন্তু সে অনুপাতে আবাদযোগ্য কৃষিজমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে না ।
ফলে সীমিত বর্ষণযোগ্য জমিতে মানুষের অন্ন সংগ্রহের প্রয়াস বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জরুরি কাজ বলে বিবেচিত হচ্ছে । আর এজন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানী পদ্ধতিতে চাষাবাদ । বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে দিন দিন খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলছে ।
উন্নত দেশগুলোর কৃষি ব্যবস্থাপনাঃ উন্নত দেশসমূহের কৃষি কাজ সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল । জমি কর্ষণ বীজবপন , সেচকাজ , ফসল কাটা , মাড়াই , বাছাই , ইত্যাদি সব কাজ আজ যন্ত্রের সাহায্য সম্পাদন করা হয় ।
ট্রাক্টরের সাহায্য জমি চাষ করে মেশিন দিয়ে জমিতে বীজ বপন করা হয় । তার আগে বপনের জন্য সংরক্ষিত বীজ বাছাই কাজও যত্ন দ্বারা করা হয় । বর্তমান যুগে মানুষ গভীর নলকূপ এবং পাম্পের সাহায্য জমিতে সেচ দেয় ।
ড্রপ উন্নত দেশ আজ কৃষিকে যান্ত্রিক করে তুলেছে । শীতপ্রধান দেশগুলো গ্রীনহাউসের সাহায্য গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মতো শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন করছে ।
বিজ্ঞানের সাহায্যে বর্তমানে সুস্ক মরুভূমির মতো জায়গাতেও সে, আরও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া চাষাবাদ করে সোনার ফসল ফলানো হচ্ছে । সর্বোপরি বিজ্ঞান কৃষিকার্যে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটিয়েছে ।
বাংলাদেশের কৃষিতে বিজ্ঞানের প্রভাবঃ আমাদের দেশেও আজ কৃষি কাজে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে । জমি বর্ষণে ব্যাপকভাবে ট্রাক্টরের ব্যবহার করা যাচ্ছে না জমির খন্ড বিখন্ডতার কারণে ।
সেচ কাজে মানুষ এখন বৃষ্টি ধারার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে না । এখন সেচের জন্য ব্যবহার করা হয় গভীর নলকূপ পাপ্প ইত্যাদি । উন্নত ধরনের বীজ সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয় ।
খেতে প্রকার আক্রমণ হলে তা দমনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় ব্যাপকভাবে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্য । রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফসলের ফলন বাড়ানো হচ্ছে । জমিতে আগে যেখানে এক ফসল হতো , বিজ্ঞান এর অবদানে এখন সেখানে তিন ফসল পর্যন্ত হয় ।
আমাদের দেশের কৃষিকাজকে এখনো পুরোপুরি যান্ত্রিক করা যায়নি । বিজ্ঞানের অবদান কে দেশের চাষাবাদের ক্ষেত্রে লাগাতে পারলে আমাদের খাদ্য সমস্যা বহুলাংশে সমাধান করা সম্ভব হবে ।
বৈজ্ঞানিক চাষাবাদ সমস্যা এবং বাংলাদেশঃ কৃষকেরা অর্থা ভাবে খালের গরু বিক্রি করে, দিনমজুরি করে , অতিকষ্টে অন্ন সংস্থান করে । তারা দরিদ্র বলে অর্থব্যয় করে চাষাবাদের উপযোগী আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে পারে না ।
বর্তমানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্লোগান শোনা যাচ্ছে, এ আন্দোলনকে ফলপ্রশু করা সম্ভব ,যদি কৃষি কাজে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় । যাতে কম মূল্য কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকদের হাতে পৌঁছে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব ।
বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি আমরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না । কৃষকের অজ্ঞতার কারণে । এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমে দেশে শিক্ষার হার বাড়াতে হবে । কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে ।
এর জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে । আসার কথা বর্তমানে সরকার ও বিভিন্ন এনজিও গ্রাম্য যুবকদের কৃষি পদ্ধতি সমন্ধে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে ।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রাঃ মানুষ যখন প্রথমে আগুন জ্বালাতে, পাথরের অস্ত্র নিয়ে বন্য পশুর সাথে যুদ্ধ করত , চাকা গড়াতে শিখেছিল, তখন থেকেই বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছিল ।
প্রকৃতিতে আবিষ্কার করার নেশায় মানুষ অস্থির হয়ে উঠল । কিছুতেই তার তৃপ্তি নেই । তাই প্রকৃতি থেকে আহৃত শস্য সম্পদে সে সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি । সে কৃষিবিদ্যা করে নিজের রুচির পরিতৃপ্তি ও পরিপুষ্টি করেছে ।
শিল্পবিপ্লব ও কৃষিঃ প্রস্তুরযুগের শেষ দিক থেকে কৃষি কাজের সূচনা । আদিম যুগে যে পরিশ্রমে মানুষ এক একর জমিচাষ করত , ২ শতাব্দী আগে সে পরিশ্রমী চাষ হয়েছে ৫০ একর জমি আর আজ ঠিক একই পরিমাণ এক হাজার একর জমি চাষ করা সম্ভব ।
তাই অতীতের চাষাবাদ পদ্ধতি বাদ দিয়ে মানুষ বেছে নিয়েছে আধুনিক পদ্ধতি । অবশেষে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং ১৯ শতাব্দীর গোড়ার দিকে শিল্প বিপ্লব কৃষিকার্যে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে ।
কৃষিযন্ত্র ও সুবিধাঃ অসংখ্য নিড়ানি সমন্বিত এক একটি কৃষি যন্ত্র চাষাবাদের জন্য জমির তৈরিতে মানুষকে বিপুল সাহায্য করেছে । আধুনিক কৃষি যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে চাষাবাদের ক্ষেত্রে যেমন যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে , তেমনি কৃষকরা ভোগ করছে নানা সুবিধা ।
মিলকার কুলারঃ আমারে অন্যান্য যন্ত্রপাতির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য বৈদ্যুতিক দোহক যন্ত্র (মিলকার) শীতলকারী যন্ত (কুলার) মাখন তোলা যন্ত্র (ম্যানিউর স্পেডার) ইত্যাদি যন্ত্র বেশি কার্যকর ।
সেলৃফ বাইন্ডার কম্বাইন হারভেস্টরঃ সেলৃফ বাইন্ডার বা স্বয়ং বন্ধনকারী যন্ত্র ফসল কাটার সঙ্গে সঙ্গে আঁটি বাঁধে । তবে ফসল কাটার যন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কম্বাইন হারভেস্টর । যন্ত্রটি একই সঙ্গে ফসল কাটে এবং ঝাকাই মাকাই করে ।
কৃষিপদ্ধতি ও পশুপালনঃবিজ্ঞানের অবদানে খামারজাত ফসলে এবং সেখানে উৎপাদিত জীবজন্তুর প্রকৃতিতে এসেছে বিরাট পরিবর্তন । বহুশব্দী ধরে কৃষি কার্যে এবং গৃহপালিত জীবজন্তু প্রজননে পরীক্ষা নিরীক্ষা ফসল উৎপাদনে ও পশু পালনের যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে ।
গবাদিপশু উৎপাদনের বৈচিত্রঃ যে ঘোরা মাল টানবে আর যে ব্যবহৃত হবে দ্রুত ছোটার কাজে , তাদের প্রজননপদ্ধতি আজ আলাদা । গবাদিপশুর প্রজননে ও এসেছে বৈচিত্র । কোথাও ভালো মানুষের দিকে নজর রেখে, আবার কোথাও বেশি দুধ উৎপাদনের কথা ভেবে প্রজনন এবং লালন পালনে গুরুত্ব আরোপ করা হয় ।
শস্য ও ফলমূলঃ শস্য ও ফলমূল উৎপাদনে বিজ্ঞান উভূত কল্যাণ সাধন করেছে । বীজ নির্বাচনে সতর্কতা নতুন ও উন্নত ধরনের গাছপালার প্রজননব্যবস্থা এবং ব্রীজ অংকুর ও গাছের কলম ব্যবহারের নতুন নতুন ব্যবস্থা কৃষি কাজে বিপ্লব এনেছে ।
ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যানাটমলজিঃ ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যানাটমলজি পশুরোগ- সংক্রান্ত বিজ্ঞান (ভেটেরিনারি সায়েন্স )খামারের পশুদের মধ্যে রোগজনিত মৃত্যু হারবিপুল পরিমাণের কমিয়েছে ।
গাছপালা ও শস্যদির মধ্যে নানা ধরনের পতঙ্গের উৎপাত জীবাণু সংক্রমণ ও রোগ থেকে যে সব ক্ষতি হয়, সাম্প্রতিককালে সে সম্পর্কে প্রচুর গবেষণা হয়েছে । যার ফলে দিন দিন কৃষিখাতে উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।
অতীতের উন্নত জাতি ও তাদের কৃষিকাজঃ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ও টিটের উন্নত জাতিগুলো কৃষি কাজেও উন্নত ছিল । প্রাচীন মিশরবাসী পালাক্রমে ভিন্ন ভিন্ন শস্য চাষ জানত ।
কৃত্রিম জনসেচন পদ্ধতির সঙ্গে তারা পরিচিত ছিল । এছাড়া কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফুটানোর কার্যক্রম ও তাদের অজানা ছিল না । এর থেকে বোঝা যায় প্রাচীন উন্নত জাতীয় বিভিন্নভাবে কৃষিকার্যে পারদর্শী ছিল ।
প্রকৃত উন্নতির কালঃ কৃষিকার্যে প্রকৃত যুগান্তর সূচিত হয় ১৮ শতক থেকে । শালগমজাতীয় সমূল উদ্ভিদের চাষ এ পর্বেই শুরু হয় । ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট রেকওয়েল কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির রীতিনীতি প্রতিষ্ঠিত করেন ।
তখন থেকেই খামারে পশু পালনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে । কৃষিকাজ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আধুনিকায়নের ফলে প্রকৃত উন্নতি সাধিত হয়েছে ।
উপসংহারঃ বিজ্ঞান সমৃদ্ধ চাবিকাঠি । কৃষি ক্ষেত্রেও তার ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে । আমাদের বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ ।
কৃষির উন্নতির মাধ্যমেই আমাদের দেশের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব । এজন্য আমরা যদি বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষম হই, তবে সবাই কণ্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে পারব ।