থেলস
থেলস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের একজন দার্শনিক, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ এবং ভূগোলবিদ। তিনি মাইলেটাসের থেলস নামে পরিচিত ছিলেন, কারণ তিনি তুরস্কের বর্তমান ইজমির শহরের কাছে অবস্থিত গ্রীক শহর মাইলেটাসের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি প্রায় ৬২৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং প্রায় ৫৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মারা যান।
থেলসকে প্রাচীন গ্রিসের সাতজন জ্ঞানী ব্যক্তির একজন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি প্রাকৃতিক দর্শনের জনক হিসাবে বিবেচিত হন, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে বিশ্বটি প্রাকৃতিক আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। তিনি গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যায়ও অবদান রেখেছিলেন।
থেলসের সবচেয়ে বিখ্যাত অবদানগুলির মধ্যে একটি হল “থেলসের উপপাদ্য”। এই উপপাদ্যটি বলে যে একটি ত্রিভুজের একটি কোণের বিপরীত দিক হল অন্য দুই দিক দ্বারা গঠিত বর্গক্ষেত্রের সমষ্টির সমান। তিনি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল গণনার একটি পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছিলেন।
থেলস ছিলেন একজন দক্ষ জ্যোতির্বিদও। তিনি সূর্যগ্রহণের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য প্রথম ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আকাশের নক্ষত্রগুলির অবস্থানও পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
থেলসের অবদানগুলি প্রাচীন গ্রিস এবং পশ্চিমা সভ্যতার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। তিনি একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন যিনি বিশ্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা তৈরি করেছিলেন।
থেলসের কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান হল:
- প্রাকৃতিক দর্শনের জনক: থেলস বিশ্বাস করতেন যে বিশ্বটি প্রাকৃতিক আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সবকিছুর একটি মূল কারণ রয়েছে, যা তিনি “অপেক্ষাকৃততা” বলেছিলেন।
- গণিত: থেলস গণিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল গণনার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন, এবং তিনি ত্রিভুজের তীব্র কোণের বিপরীত দিকের সমান দৈর্ঘ্যের একটি লাইন আঁকতে পারেন কিনা তা পরীক্ষা করে একটি বহুভুজের মধ্যে একটি ত্রিভুজ চিহ্নিত করার একটি পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছিলেন।
- জ্যোতির্বিদ্যা: থেলস সূর্যগ্রহণের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য প্রথম ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আকাশের নক্ষত্রগুলির অবস্থানও পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
- ভূগোল: থেলস বিশ্বাস করতেন যে পৃথিবী একটি গোলক। তিনি পৃথিবীর আকার নির্ধারণের জন্য একটি পদ্ধতিও তৈরি করেছিলেন।
থেলসের জীবনী:
থেলস মাইলেটাসের একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার ব্যবসা থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন, যা তিনি তার পড়াশোনা এবং গবেষণার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। তিনি প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করেছিলেন এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়েছিলেন।
থেলস প্রায় ৫৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মারা যান। তার মৃত্যুর পর, তিনি প্রাচীন গ্রিসের একজন মহান দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী হিসাবে সম্মানিত হন।
আর্কিমিডিস
আর্কিমিডিস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের একজন গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক। তিনি সিরাকাসের আর্কিমিডিস নামে পরিচিত ছিলেন, কারণ তিনি বর্তমান ইতালি দ্বীপের সিরাকাস শহরের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি প্রায় ২৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং প্রায় ২১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মারা যান।
আর্কিমিডিসকে প্রাচীন গ্রিসের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ এবং প্রকৌশলী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং জ্যোতির্বিদ্যায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।
আর্কিমিডিসের কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান হল:
- গণিত: আর্কিমিডিস গণিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একটি বৃত্তাকার পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল এবং পরিধি গণনার জন্য সূত্রগুলি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি পয়েন্ট, রেখা এবং কোণগুলির সংজ্ঞাও দিয়েছিলেন।
- পদার্থবিজ্ঞান: আর্কিমিডিস পদার্থবিজ্ঞানেও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি প্লবতা এবং লিভারের নীতি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একটি যন্ত্রও আবিষ্কার করেছিলেন যা জলের ঘনত্ব পরিমাপ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- প্রকৌশল: আর্কিমিডিস প্রকৌশল ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন যা শত্রু জাহাজগুলিকে ধ্বংস করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি একটি যন্ত্রও আবিষ্কার করেছিলেন যা জলকে উঁচুতে তুলতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- জ্যোতির্বিদ্যা: আর্কিমিডিস জ্যোতির্বিদ্যায়ও কিছু অবদান রেখেছিলেন। তিনি পৃথিবীর আকার এবং আকৃতি গণনা করার জন্য একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। তিনি সূর্য এবং চন্দ্রের দূরত্ব গণনা করার জন্যও একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন।
আর্কিমিডিসের জীবনী:
আর্কিমিডিস সিরাকাসের একজন ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার পিতা ফিদিয়াসের কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করেছিলেন এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়েছিলেন।
আর্কিমিডিস তার জীবনের বেশিরভাগ সময় সিরাকাসে কাটিয়েছিলেন। তিনি রোমানদের বিরুদ্ধে সিরাকাসের প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, রোমান সৈন্যরা সিরাকাস দখল করে নেয়। আর্কিমিডিসকে একটি রোমান সৈন্য হত্যা করে।
আর্কিমিডিসের মৃত্যুর পর, তিনি প্রাচীন গ্রিসের একজন মহান বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী হিসাবে সম্মানিত হন। তার অবদানগুলি প্রাচীন গ্রিস এবং পশ্চিমা সভ্যতার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
আর্কিমিডিসের কিছু বিখ্যাত উক্তি:
- “ইউরেকা!” – এই উক্তিটি আর্কিমিডিস দ্বারা বলা হয় বলে মনে করা হয় যখন তিনি প্লবতার নীতি আবিষ্কার করেছিলেন।
- “একটি বৃত্তের পরিধি তার ব্যাসের সাথে সম্পর্কিত যেমন একটি বৃত্তের ব্যাস তার ব্যাসের সাথে সম্পর্কিত।” – এই উক্তিটি আর্কিমিডিস দ্বারা বলা হয় বলে মনে করা হয়।
- “একটি দেহের ওজন তার পরিমাণের সাথে সমানুপাতিক।” – এই উক্তিটি আর্কিমিডিস দ্বারা বলা হয় বলে মনে করা হয়।
আর্কিমিডিস ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভা। তিনি গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং জ্যোতির্বিদ্যায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি প্রাচীন গ্রিস এবং পশ্চিমা সভ্যতার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছেন।
হাইপেশিয়া অ্ব আলেক্সোন্দ্রিয়া
হাইপেশিয়া অ্ব আলেক্সোন্দ্রিয়া ছিলেন একজন গ্রিক গণিতজ্ঞ, দার্শনিক, জ্যোতির্বিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি ছিলেন ইতিহাসের প্রথম এবং পূর্ণাঙ্গ নারী গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক। তিনি ছিলেন একজন নব্য প্লেটোবাদী, এবং তিনি আলেক্সান্দ্রিয়ার প্লেটোনিক স্কুলের প্রধান ছিলেন।
হাইপেশিয়ার জন্ম ৩৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে আলেক্সান্দ্রিয়ায়। তার বাবা ছিলেন একজন গণিতবিদ এবং দার্শনিক, এবং তিনি হাইপেশিয়ার শিক্ষার জন্য দায়ী ছিলেন। হাইপেশিয়া প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।
হাইপেশিয়া গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান এবং দর্শনে অবদান রেখেছিলেন। তিনি একটি জ্যোতির্বিদ্যা যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন যা সূর্যের উচ্চতা পরিমাপ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি একটি পাটিগণিত পাঠ্যপুস্তকও লিখেছিলেন যা এক হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছিল।
হাইপেশিয়া একজন দক্ষ শিক্ষকও ছিলেন। তিনি তার ছাত্রদের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান করেছিলেন, এবং তিনি একজন জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন।
৪১৫ খ্রিষ্টাব্দে, হাইপেশিয়াকে একটি ধর্মীয় দলের দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডটি প্রাচীন বিশ্বে নারীদের শিক্ষা ও স্বাধীনতার জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল।
হাইপেশিয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান হল:
- জ্যোতির্বিদ্যা: হাইপেশিয়া একটি জ্যোতির্বিদ্যা যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন যা সূর্যের উচ্চতা পরিমাপ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি একটি পাটিগণিত পাঠ্যপুস্তকও লিখেছিলেন যা এক হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছিল।
- গণিত: হাইপেশিয়া একটি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল গণনার একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একটি সূত্রও আবিষ্কার করেছিলেন যা একটি বৃত্তের পরিধি গণনা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- পদার্থবিজ্ঞান: হাইপেশিয়া আলোর প্রকৃতি সম্পর্কে গবেষণা করেছিলেন। তিনি একটি যন্ত্রও আবিষ্কার করেছিলেন যা আলোর প্রতিসরণ পরিমাপ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- দর্শন: হাইপেশিয়া নব্য প্লেটোবাদের একজন প্রধান দার্শনিক ছিলেন। তিনি জ্ঞানের প্রকৃতি এবং বাস্তবতার প্রকৃতি সম্পর্কে তত্ত্ব প্রদান করেছিলেন।
হাইপেশিয়া ছিলেন একজন প্রতিভাবান এবং উচ্চাভিলাষী নারী। তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ গবেষক, শিক্ষক এবং দার্শনিক ছিলেন। তার অবদানগুলি প্রাচীন গ্রিস এবং পশ্চিমা সভ্যতার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।