ঋতু পরিবর্তনের কারণ গুলো কি কি?
পৃথিবীর ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ হলো পৃথিবীর অক্ষের হেলে থাকা। পৃথিবীর অক্ষটি ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে আছে। এই হেলে থাকার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে বা সূর্যের বিপরীত দিকে সরে পড়ে। যখন কোনো অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন সেই অংশে বেশি তাপ ও আলো পড়ে। ফলে সেই অংশে গ্রীষ্মকাল হয়। আবার যখন কোনো অংশ সূর্যের বিপরীত দিকে হেলে থাকে তখন সেই অংশে কম তাপ ও আলো পড়ে। ফলে সেই অংশে শীতকাল হয়।
ঋতু পরিবর্তনের অন্যান্য কারণগুলি হলো:
- পৃথিবীর বার্ষিক গতি: পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। এই ঘূর্ণনের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সূর্যের আলো ও তাপের পরিমাণ পরিবর্তিত হয়।
- মৌসুমী বায়ু: পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ঋতু পরিবর্তন হয়।
- উচ্চতা: পৃথিবীর উচ্চতায় ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা কমতে থাকে।
পৃথিবীর অক্ষের হেলে থাকাই ঋতু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। পৃথিবীর অক্ষটি যদি হেলে না থাকত তাহলে পৃথিবীর সব জায়গায় একই তাপমাত্রা থাকত এবং সবসময় একই ঋতু থাকত।
ঋতু পরিবর্তন মানুষের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলে
ঋতু পরিবর্তন মানুষের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। এই প্রভাবগুলি শারীরিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিক হতে পারে।
শারীরিক প্রভাব:
- তাপমাত্রার পরিবর্তন: ঋতু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়। এই তাপমাত্রার পরিবর্তন মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, গরম আবহাওয়ায় ঘামের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। এটি ডিহাইড্রেশন, গরমে অসুস্থতা, এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। আবার, ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। এটি সর্দি-কাশি, ফ্লু, এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
- দিনের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন: ঋতু পরিবর্তনের ফলে দিনের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন হয়। শীতকালে দিন ছোট হয় এবং রাত্রি বড় হয়। এই দিনের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন মানুষের ঘুমের ধরন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব আরও তীব্র হচ্ছে। এর ফলে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, এবং দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি মানুষের জীবন ও সম্পদের জন্য হুমকিস্বরূপ।
মানসিক প্রভাব:
- ঋতুজনিত ব্যাধি: কিছু লোক ঋতু পরিবর্তনের ফলে মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যাগুলিকে ঋতুজনিত ব্যাধি বলা হয়। ঋতুজনিত ব্যাধিগুলির মধ্যে রয়েছে মেজাজ পরিবর্তন, উদ্বেগ, এবং হতাশা।
- ঘুমের সমস্যা: ঋতু পরিবর্তনের ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শীতকালে দিন ছোট হওয়ার কারণে ঘুমের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আবার, গ্রীষ্মকালে গরম আবহাওয়ার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
- খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন: ঋতু পরিবর্তনের ফলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হতে পারে। শীতকালে বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা থাকে। আবার, গ্রীষ্মকালে হালকা খাবার খাওয়ার প্রবণতা থাকে।
অর্থনৈতিক প্রভাব:
- কৃষি ও মৎস্য শিল্প: ঋতু পরিবর্তনের ফলে কৃষি ও মৎস্য শিল্পের উপর প্রভাব পড়ে। ঋতুর পরিবর্তনের কারণে ফসলের উৎপাদন এবং মাছের ধরা পড়ার পরিমাণ কমে যেতে পারে।
- পর্যটন শিল্প: ঋতু পরিবর্তনের ফলে পর্যটন শিল্পের উপর প্রভাব পড়ে। শীতকালে কিছু পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণকারীর সংখ্যা কমে যেতে পারে। আবার, গ্রীষ্মকালে কিছু পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণকারীর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।
- অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসা: ঋতু পরিবর্তনের ফলে অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসার উপরও প্রভাব পড়তে পারে। যেমন, পোশাক শিল্পে ঋতুর পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে পোশাকের ডিজাইন ও উৎপাদন পরিবর্তিত হয়।
ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি এড়াতে বা কমাতে মানুষের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং ব্যায়াম। এছাড়াও, ঋতু পরিবর্তনের ফলে হতে পারে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
ঋতু পরিবর্তন বলতে কী বোঝ?
ঋতু পরিবর্তন বলতে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনকে বোঝায়। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে এবং তার নিজ অক্ষের উপরও ঘোরে। পৃথিবীর এই ঘূর্ণনের কারণে বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে বা সূর্যের বিপরীত দিকে সরে পড়ে।
যখন কোনো অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন সেই অংশে বেশি তাপ ও আলো পড়ে। ফলে সেই অংশে গ্রীষ্মকাল হয়। আবার যখন কোনো অংশ সূর্যের বিপরীত দিকে হেলে থাকে তখন সেই অংশে কম তাপ ও আলো পড়ে। ফলে সেই অংশে শীতকাল হয়।
পৃথিবীর অক্ষটি ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে আছে। এই হেলে থাকার কারণেই ঋতু পরিবর্তন হয়। যখন উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন সেখানে গ্রীষ্মকাল হয়। আবার যখন দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন সেখানে গ্রীষ্মকাল হয়।
ঋতু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তিত হয়। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেশি থাকে এবং বৃষ্টিপাত কম হয়। শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকে এবং বৃষ্টিপাত বেশি হয়। ঋতু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতেও পরিবর্তন আসে।
গ্রীষ্মকালে গাছপালা সবুজ থাকে এবং ফল ফোটে। শীতকালে গাছপালা পাতা ঝরে ফেলে এবং শীতকালে ঘুমিয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে ষড়ঋতুর দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু রয়েছে: গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত এবং বসন্ত। প্রতিটি ঋতুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ঋতুর দেশ কোনটি?
সবচেয়ে বেশি ঋতুর দেশ হলো চীন। চীনে মোট ১২টি ঋতু রয়েছে। এই ঋতুগুলি হলো:
- বসন্ত: ২১ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল
- গ্রীষ্ম: ২১ এপ্রিল থেকে ২২ জুন
- গ্রীষ্মকালীন বর্ষা: ২২ জুন থেকে ২৩ আগস্ট
- গ্রীষ্মকালীন শরৎ: ২৩ আগস্ট থেকে ২৩ অক্টোবর
- শরৎ: ২৩ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর
- শীতকালীন বর্ষা: ২২ নভেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর
- শীতকাল: ২১ ডিসেম্বর থেকে ২১ জানুয়ারি
- শীতকালীন শরৎ: ২১ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি
- বসন্তকালীন বর্ষা: ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ মার্চ
চীনের এই ঋতুগুলির বিভাজন পৃথিবীর অক্ষের হেলে থাকার পাশাপাশি চীনের ভৌগোলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। চীন একটি বিশাল দেশ এবং এর ভৌগোলিক অবস্থান বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে বিস্তৃত। এই কারণে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে ঋতু পরিবর্তন হয়।
চীনের বাইরেও কিছু দেশ আছে যেখানে বেশ কয়েকটি ঋতু রয়েছে। যেমন:
- ভারত: ৬টি ঋতু
- নেপাল: ৬টি ঋতু
- ভুটান: ৬টি ঋতু
- মালদ্বীপ: ৬টি ঋতু
- ইন্দোনেশিয়া: ৭টি ঋতু
- থাইল্যান্ড: ৪টি ঋতু
- ফিলিপাইন: ৪টি ঋতু
বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু রয়েছে। এটি একটি উষ্ণ মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চল। এখানকার ঋতু পরিবর্তন মূলত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয়।
- গ্রীষ্ম (মার্চ-জুন)
- বর্ষা (জুন-অক্টোবর)
- শরৎ (অক্টোবর-নভেম্বর)
- হেমন্ত (নভেম্বর-ডিসেম্বর)
- শীত (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি)
- বসন্ত (ফেব্রুয়ারি-মার্চ)
প্রতিটি ঋতুর কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আছে। সকল ঋতুর বিরাজকাল সমান না-হলেও হিসাবের সুবিধার্থে পঞ্জিকা বৎসরকে সমমেয়াদী কয়েকটি ঋতুতে বিভাজন করা হয়। যেমনঃ বাংলাদেশে ছয়টি ঋতুর প্রতিটির মেয়াদ দুই মাস ধরা হয়েছে।
গ্রীষ্মকাল
গ্রীষ্মকাল হলো বছরের সবচেয়ে গরম ঋতু। এই সময় সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে এবং দিনের দৈর্ঘ্যও বেশি হয়। ফলে প্রচুর তাপ এবং রোদ পড়ে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই সময় প্রচুর ঘাম হয় এবং শরীরে ক্লান্তি আসে।
বর্ষাকাল
বর্ষাকাল হলো বছরের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল ঋতু। এই সময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফলে নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়গুলিতে পানি ভরে যায়। বর্ষাকাল হলো ফসল ফলানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু।
শরৎকাল
শরৎকাল হলো গ্রীষ্মকাল এবং শীতকালের মধ্যবর্তী ঋতু। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে। দিনের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে এবং তাপমাত্রা কমতে থাকে। শরৎকালে ফুল ফোটে এবং ফল পাকে।
হেমন্তকাল
হেমন্তকাল হলো শরৎকাল এবং শীতকালের মধ্যবর্তী ঋতু। এই সময় আবহাওয়া আরও ঠান্ডা হয়ে যায়। দিনের দৈর্ঘ্য আরও কমে যায় এবং তাপমাত্রা আরও কমে যায়। হেমন্তকালে পাতা ঝরে যায় এবং গাছপালা শুষ্ক হয়ে যায়।
শীতকাল
শীতকাল হলো বছরের সবচেয়ে ঠান্ডা ঋতু। এই সময় সূর্য পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে এবং দিনের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম হয়। ফলে প্রচুর ঠান্ডা পড়ে। শীতকালে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যেতে পারে। এই সময় মানুষ উষ্ণ কাপড় পরে।
বসন্তকাল
বসন্তকাল হলো শীতকাল এবং গ্রীষ্মকালের মধ্যবর্তী ঋতু। এই সময় আবহাওয়া আবার মনোরম হয়ে ওঠে। দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে এবং তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। বসন্তকালে ফুল ফোটে এবং প্রকৃতিতে নতুন প্রাণ আসে।
বাংলাদেশে ছয়টি ঋতুর নামকরণের পিছনে রয়েছে একটি ইতিহাস। গ্রীষ্মকালের নামকরণ করা হয়েছে “গ্রীস” শব্দ থেকে, যার অর্থ “উজ্জ্বল”। বর্ষাকালের নামকরণ করা হয়েছে “বর্ষণ” শব্দ থেকে, যার অর্থ “বৃষ্টিপাত”।
শরৎকালের নামকরণ করা হয়েছে “শর” শব্দ থেকে, যার অর্থ “পতন”। হেমন্তকালের নামকরণ করা হয়েছে “হেম” শব্দ থেকে, যার অর্থ “সোনা”। শীতকালের নামকরণ করা হয়েছে “শীত” শব্দ থেকে, যার অর্থ “ঠান্ডা”। বসন্তকালের নামকরণ করা হয়েছে “বসন্ত” শব্দ থেকে, যার অর্থ “নবজীবন”।