জাহানারা ইমামের “একাত্তরের দিনগুলি” বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম। বইটি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে শুরু হয় এবং ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়।
এটি একটি ব্যক্তিগত দিনলিপি আকারে লেখা, যাতে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাহানারা ইমামের নিজের জীবনের পাশাপাশি সমগ্র বাংলাদেশের অবস্থার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে।
বইটিতে জাহানারা ইমাম তার স্বামী শরীফ ইমাম এবং ছেলে শফি ইমাম রুমীকে নিয়ে লেখেন। রুমী একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন যিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য স্কুল ছেড়ে দেন। তিনি ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আর কখনও ফিরে আসেননি।
শরীফ ইমাম একজন পুরকৌশলী ছিলেন যিনি হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। যুদ্ধের সময় তার অবস্থার অবনতি হয় এবং তিনি ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে মারা যান।
বইটিতে জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা শহরের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দেন। তিনি শহরের গুলিবিনিময়, বোমা হামলা এবং গণহত্যা সম্পর্কে লেখেন। তিনি গেরিলা যোদ্ধাদের সাহস ও বীরত্বের কথাও লেখেন।
“একাত্তরের দিনগুলি” একটি শক্তিশালী ও হৃদয়স্পর্শী বই। এটি মুক্তিযুদ্ধের ট্র্যাজেডি ও গৌরবময় ইতিহাসের এক অসামান্য দলিল।
বইটি মুক্তিযুদ্ধের পরপরই প্রকাশিত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রচনা হিসাবে বিবেচিত হয়। বইটি ২০০৭ সালে জাতীয় অধ্যাপক উপাধিতে ভূষিত হয়।
বইটি বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে পঠিত হয়। এটি বাংলা ভাষায় লেখা হয়েছে, তবে এটি ইংরেজি, ফরাসি, জার্মানি, জাপানি ও অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বইটি বিশ্বব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ট্র্যাজেডি সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে।
১৩ই এপ্রিলঃ মঙ্গলবার ১৯৭১
১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় আট শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করে। এ ঘটনাটি চারঘাট গণহত্যা নামে পরিচিত।
এছাড়াও এদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার মিরপুরে সারদা পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এ অভিযানে দুই পুলিশ অফিসার নিহত হন এবং সেনাবাহিনী সারদা পুলিশ একাডেমি দখল করে নেয়।
এছাড়াও এদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়।
চারঘাট গণহত্যা
১৩ই এপ্রিল সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালায়। তারা গ্রামবাসীদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে।
এই গণহত্যার শিকারদের মধ্যে ছিল নারী, শিশু, বৃদ্ধ, এমনকি রোগীও। পাকিস্তানি সেনারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে, গুলি করে মাথা ফাটিয়ে, গলা কেটে, পুড়িয়ে হত্যা করে।
এই গণহত্যার ফলে চারঘাট উপজেলার শত শত পরিবারের স্বজন হারায়। এই গণহত্যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি ভয়াবহ অধ্যায়।
সারদা পুলিশ একাডেমিতে অভিযান
১৩ই এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত সারদা পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এ অভিযানে দুই পুলিশ অফিসার নিহত হন এবং সেনাবাহিনী সারদা পুলিশ একাডেমি দখল করে নেয়।
সারদা পুলিশ একাডেমি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এ একাডেমি থেকে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই অভিযানে সারদা পুলিশ একাডেমি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে এই অভিযানের ফলে সারদা পুলিশ একাডেমিতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
অন্যান্য গণহত্যা ও লুটপাট
১৩ই এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়।
এই দিন ঢাকার মিরপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
এই গণহত্যা ও লুটপাটের ফলে দেশের মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তারা পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়।
১৩ই এপ্রিলের এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই ঘটনাগুলোর ফলে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে আরও বেশি উজ্জীবিত হয় এবং তারা পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়।
১০ই মেঃ সোমবার ১৯৭১
১০ই মে, ১৯৭১
- বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ, সাতক্ষীরা যুদ্ধ, এই দিনে শুরু হয়।
- পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সাতক্ষীরা জেলার থানা এবং গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক গণহত্যা চালায়।
- সাতক্ষীরা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে মুক্তিবাহিনী তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
সাতক্ষীরা যুদ্ধ
সাতক্ষীরা যুদ্ধ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলির মধ্যে একটি। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে মুক্তিবাহিনী তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
১০ই মে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সাতক্ষীরা জেলার থানা এবং গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। তারা হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। এই গণহত্যার প্রতিবাদে মুক্তিবাহিনী তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
সাতক্ষীরা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীকে নেতৃত্ব দেন খালেদ মোশাররফ এবং শেখ ফজলুল হক মণি। তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বেশ কয়েকটি স্থানে পরাজিত করতে সক্ষম হন।
সাতক্ষীরা যুদ্ধের ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে।
সাতক্ষীরা যুদ্ধের ফলাফল
সাতক্ষীরা যুদ্ধের ফলে নিম্নলিখিত ফলাফলগুলি হয়:
- পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করা হয়।
- মুক্তিবাহিনীর ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে।
- সাতক্ষীরা জেলার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উৎসাহ বৃদ্ধি পায়।
সাতক্ষীরা যুদ্ধের গুরুত্ব
সাতক্ষীরা যুদ্ধ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করা হয় এবং মুক্তিবাহিনীর ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে।
১২ই মেঃ বুধবার ১৯৭১
১২ই মে, বুধবার, ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চতুর্থ দিন চলছে।
এই দিনটিতে, পাকিস্তানি সেনারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলিতে বোমাবর্ষণ করে।
পাকিস্তানি সেনারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালায়। তারা হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
এই দিনটিতে, মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালায়।
১২ই মে, বুধবার, ১৯৭১ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি হল:
- পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলিতে বোমাবর্ষণ করে।
- পাকিস্তানি সেনারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালায়।
- মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
এই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটিতে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি রচিত হয়।
১৭ই মেঃ সোমবার ১৯৭১
১৭ই মে, সোমবার, ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অষ্টম দিন চলছে।
এই দিনটিতে, পাকিস্তানি সেনারা চট্টগ্রামে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
পাকিস্তানি সেনারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলিতে বোমাবর্ষণ করে। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলি ধ্বংস করে।
এই দিনটিতে, মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালায়।
১৭ই মে, সোমবার, ১৯৭১ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি হল:
- পাকিস্তানি সেনারা চট্টগ্রামে ব্যাপক গণহত্যা চালায়।
- পাকিস্তানি সেনারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলিতে বোমাবর্ষণ করে।
- মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
এই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটিতে, চট্টগ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যুদ্ধের সূচনা হয়।
এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে কিছুটা সাফল্য অর্জন করে। তারা পাকিস্তানি বাহিনীর কিছু অস্ত্র ও সরঞ্জাম দখল করে নেয়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আত্মত্যাগ ও বীরত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়।
২৫ শে মেঃ মঙ্গলবার ১৯৭১
আজ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মজয়ন্তী। বিশ্বাস শওকতের সঙ্গে পালিত হচ্ছে ঢাকায়। এমনকি ইসলা- মিক ফাউন্ডেশন পর্যন্ত একটা অনুষ্ঠান করছে সন্ধ্যার পর টিভি সামনে বসেছিলাম জামী সিড়ির মাথা থেকে মুখ বাড়ি- য়ে ডাক কল, মা শিগগির এস।
নতুন প্রোগ্রাম।ধরে ওপরে গেলাম স্বাধীন বাংলা বেতার বাংলা সংবাদ পাঠ করছে নতুন এক কণ্ঠস্বর। খানিক শোনার পর চেনা চেনা টেকলো কিন্তু ঠিক চিনে উঠতে পারলাম না। সালেহ আহমেদ নামটা আগে কখনো শুনিনি। রুমি বলল নিশ্চয়ই ছদ্মনাম।
বললাম হতে পারে। তবে ঢাকারই লোকে এ। এই ঢাকাতেই এই গলা শুনেছি। হয় নাটক নয় আবৃত্তি এই সব গবেষণা করতে করতে বাংলা সংবাদ পাঠ শেষ। আজকের প্রোগ্রামেও বেশ নতুনত্ব কণ্ঠস্বরও সবই নতুন শুনছি।
এখন একটা পত্রিকা পড়লেন- চরমপত্র বেশ মজা লাগলো শুনতে, শুদ্ধ ভাষাতে দুটো লাইন বলে শেষ করলেন। অদ্ভুত তো।
কিন্তু এখানে আল্টিমেটামের মত কিছু তো বোঝা গেল না। শরীফ বলল ওই যে বলল না একবার যখন এ দেশের কাদায় পা ডু বেছে আর কক্ষে নেই। গাজুরিয়া মাইরের চোটে মরে কাদার মধ্যে শুয়ে থাকতে হবে, এটা আল্টিমেটাম ।
কি জানি
জানি জানতে চাইলো গাজুড়িয়া মাইর কি জিনিস? রুমি বলল জানিনা। আমার ঢাকাইয়া বন্ধু কাউকে জিজ্ঞেস করে নিয়ে নেব।
ওই যে মুক্তিফৌজের গেরিলা তৎপরতার কথা বলল– ঢাকার ছয় জায়গায় জ্ঞানের ফেটেছে, আমরা তো স্বাদ আট দিন আগে এরকম বোমা ফাটার কথা শুনেছিলাম, কিন্তু ঠিক বিশ্বাস করিনি।
ব্যাপারটা তাহলে সত্যি? আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। ব্যাপারটা তাহলে সত্যি! সত্যি তাহলে ঢাকার আনাচে কানাচে ছোট ছোট ফুলঙ্গি জ্বালাতে শুরু করেছে।
এতদিন জানছিলাম বর্ডারঘেশা অঞ্চল গুলোতেই গেরিলা তৎপরতা। এখন তাহলে খোদ ঢাকাতেও?
মুক্তি ফৌজ!কথাটা এত ভারী যে এই রকম অত্যাচারের সৈন্য দিয়ে ঘেরা অবরুদ্ধ ঢাকা শহরে বসে মূর্তি খোঁজ শব্দটা শুনলেও কেমন যেন অবিশ্বাস্য মনে হয়। আবার ওই অবিশ্বাসের ভেতর থেকে একটা আশা একটা ভরসার ভাব ধীরে ধীরে মনের কোণে জেগে উঠতে থাকে।
৫ই সেপ্টেম্বরঃ রবিবার ১৯৭১
একটা কঠিন বিষয়দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছি। রুমিকে কি করে বের করে আনা যায়, তা নিয়ে শরীফের বন্ধু-বান্ধব নানারকম চিন্তা ভাবনা করছে। এর মধ্যে বাঁকা আর ফকিরের মত হলোঃ যে কোন প্রকারের রুমিকে উদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে।
বাঁকা আর ফকিরের মনে করছে– শরিফকে দিয়ে রুমের ত্রাণ ভিক্ষা চেয়ে একটা মার্সি পিটিশন করিয়ে তদবির করলে রুমে হয়তো ছাড়া পেয়ে যেতে পারে। রুমীর শোকে আমি প্রথম চোটে তাই করা হোক বলেছিলাম। কিন্তু শরিফ রাজি হতে পারছে না।
যে সাময়িক জানতার বিরুদ্ধে রুমি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে, সেই সরকারের কাছে মার্সি পিটিশন করলে রুমি সেটা মোটেও পছন্দ করবেনা এবং রুমে তাহলে আমাদের কোনদিনও ক্ষমা করতে পারবেনা।
বাকা ও ফকির অনেক ভাবে শরিফকে বুঝিয়ে– ছেলের প্রাণটা আগে। রুমির মত এমন অসাধারণ মেধাবী ছেলের প্রাণ বাঁচা বাঁচলে দেশেরও মঙ্গল। কিন্তু শরীফ তবুও মদ দিতে পারছে না। খুনি সরকারের কাছে রুমের প্রাণভিক্ষা চেদা ভিক্ষা করা মানেই তুমি আদর্শকে অপমান করা।
রুমির উঁচু মাথা হেড করা। গত দূরাত শরীফ ঘুমায়নি আমি একবার বলেছি তোমার কথাই ঠিক। ওই খুনি সরকারের কাছে মার্সি পিটিশন করা যায় না। আবার খানিক পরে কেঁদে আকুল হয়ে বলেছি নানা মারছি পিটিশন কর।
এইভাবে দ্বিধাদ্বন্দ্বে কেটেছে দু দিন দু রাত। শেষ পর্যন্ত শরীর সিদ্ধান্ত নিয়েছে– না মার্কশিপ পিটিশন সে করবে না। চোখের জলে ভাসতে ভাসতে আমিও শরীফের মধ্যে সমর্থক করেছি। রুমিকে অন্যভাবে বের করে আনার যত রকম চেষ্টা আছে সব করা হবে; কিন্তু মার্সি পিটিশন করে নয়।
১১ই অক্টোবরঃ সোমবার ১৯৭১
শরীফ বলল সেই যে মাঝখানেক আগে কাগজে পড়েছিলাম ফ্লাই লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের কথা তার সম্বন্ধে আজ শুনে এলাম। কি শুনে এলে? কোথায় শুনলে? ডা, রাব্বির কাছে।
রাব্বি জানোতো আমাদের সুজার ভাস্তে শরিফের এক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু সোজা সাহেব তার ভাসতে ডাক্তার ফজলে রাব্বি শরীফ বলল আজ ফকিরের অফিসে গেছিলাম ওখানে রাব্বির সঙ্গে দেখা।
ওর মুখে শুনলাম মতিউর রহমানের ফ্যামিলি ২৯ সেপ্টেম্বর করাচি থেকে ঢাকায় এসেছে। মতিউর রহমানের শশুর গুলশানের এক বাড়িতে থাকেন।
সেইখানে ৩০ তারিখে মতিউরের চল্লিশা হয়েছে। রাব্বি গিয়েছিল চল্লিশায়। মিসেস মতিউর নাকি বাংলা বিভাগের মনিরু জ্জামানের শালী।
আমাদের স্যার মনিরুজ্জামানর? তার মানে ডলির বোন? দাড়াও দাড়াও–এই বোনকে তো দেখেছি ডলি দের বাসায় মিলি এর নাম । কথা মনে পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ডলি মনিরুজ্জামান স্যার ওদের কোন খোঁজই জানি না। দুটো বাচ্চা নিয়ে কোথায় যে বেশে বেশে বেড়াচ্ছে কে জানে। ওপারে ও যায়নি গেলে বেতারে নিশ্চয়ই গলা শুনতে পেতাম। স্বাধীন বাংলা বেতারে বহু পরিচিত জনের গলা শুনি, তারা ছদ্মনাম ব্যবহার করে।
কিন্তু গলা শুনে চিনতে পারি। প্রথম যেদিন স্বাধীন বাংলা বেতারের সালে আহমেদ কণ্ঠে খবর শুনি, খুব চেনা চেনা লেগেছিল দু একদিন পরেই চিনে ছিলাম সে কন্ঠ হাসান ইমামের।
ইংরেজি খবর ও ভাষ্য প্রচার করে যারা সে আবু মোহাম্মদ আলী ও আহমেদ চৌধুরী হল আলী জাকের আর আলমগীর কবির।
গায়কদের গলা তো সহজে চেনা যায় রথীন্দ্রনাথ রায় আব্দুল জব্বার অজিৎ রায় ইন্দ্র মোহন রাজবংশী হরলাল রায়। প্রতিকায় সৈয়দ আলী আহসান কামরুল হাসান, ফয়েজ আহমেদ প্রায় সকলেরই গলা শুনে বুঝতে পারি। নাটকের রাজু আহমেদ মাধুরী চট্টোপাধ্যায় এদের সবার গলায় এক লোমায় বুঝে যাই।
১৬ই ডিসেম্বরঃ বৃহস্পতিবার ১৯৭১
আজ সকাল ৯ টা পর্যন্ত যে আকাশযুদ্ধ বিরতির কথা ছিল, সেটা বিকেলে তিনটে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দুপুর থেকে সারা শহরে ভীষণ চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা। পাকিস্তানি আর্মি নাকি সালেন্ডার করবে বিকেলে।
সকাল থেকে কলিম হুদা লুলু যারা এলো সবার মুখে এক কথা। দলে দলে লোক জয় বাংলা ধনী তুলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে কারফিউম অপেক্ষা করে।
পাকিস্তানি সেনারা বিহারীরা সবাই নাকি পালাচ্ছে। পালাতে পালাতে পথে ঘাটে এলো পাতালি গুলি করে বহু বাঙালিকে খুন যখন করে যাচ্ছে।
মঞ্জুর এলেন তার দুই মেয়েকে নিয়ে, গাড়ির ভেতরে বাংলাদেশের পতাকা বিছিয়ে। তিনিও ওই এক কথায় বললেন। বাদশা এসে বলল,এলিফ্যান্ট রোডের আজিজ মোটরসেরমালিক খান জিপে করে পালাবার সময় বেপরোয়া গুলি চালি য়ে রাস্তায় বহু লোককে জখম করেছে।
মঞ্জুর যাবার সময় পতাকাটা আমাকে দিয়ে গেছেন। বললেন আজ যদি সারে ন্ডার হয় কাল সকালে এসে পতাকাটা তুলব। আজ শরীফের কুলখানি আমার বাসায় যারা আছেন,তারাই সকাল থেকে দোয়া দুরুদ কুল করছেন তারা সবাইকে বলা হয়েছে। বাদ মাগরেবব মিলাদে আসতে।
একে খান শানু মঞ্জু খুকু সবাই বিকেল থেকেই এসে কুল পড়ছে।যে জেনারেল নিয়ে নিজামী ৯০ হাজার পাকিস্তানের সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন আজ বিকেল তিনটের সময়।
যুদ্ধ তাহলে শেষ? তা হলে আর কাদের জন্য সব রসদ জমিয়ে রাখব? আমি স্টে রুমের তালা খুলে চাল চিনিগম মসলা বের করলাম কুলখানি জর্দা বাদ বার জন্য মা লালু অন্যান্য বাড়ির গৃহিণীরাসবাই মিলে জর্দা রাখতে বসলেন।
রাতে রান্নার জন্য জন্য চাল ডাল আলু পেয়াজ ইত্যাদি এখান থেকে দিলাম। আগামীকাল সকালের নাস্তার জন্য ও ময়দা ঘি সুজি চিনি গো মসলা এখান থেকে বের করে রাখলাম।