ঋতু বর্ণন কবিতা
ঋতু বৈচিত্র্য
বসন্তে
নবীন পল্লব নবীন পাতা নবীন লতা ফুলের মালা সূর্যের আলোয় ঝিকমিক বসন্তের দোলায় দুলছে ধরা
গ্রীষ্মে
শুষ্ক পাতা ঝরে যায় উষ্ণ হাওয়ায় গাছপালা কাঁপে মাঠে ফসল শুকিয়ে যায় গ্রীষ্মের গরমে পোকামাকড় মারা যায়
বর্ষাতে
গুমরে গুমরে বৃষ্টি পড়ে আকাশে মেঘের ঘনঘটা মাঠে ক্ষেতে জল জমে যায় বর্ষাতে ফুলে ফুলে ভরে যায়
শরতে
আকাশে মেঘের সারি মাঠে ক্ষেতে ফসল ফলে শরতের হাওয়ায় মন ভালো শরতে ধান পাকে
হেমন্তের
কালো মেঘে ঢাকা আকাশ শীতের হাওয়ায় গাছপালা নুয়ে পড়ে পাতা ঝরে যায় হেমন্তের শীতের আমেজ ভালো লাগে
শীতের
বরফ পড়ে মাটিতে শীতের হাওয়ায় গাছপালা কাঁপে পাখিরা উড়ে যায় শীতের সকালে কুয়াশা পড়ে
ঋতু বর্ণন কবিতাটির ব্যাখ্যা
এই কবিতাটিতে বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্যের বর্ণনা করা হয়েছে। কবিতাটিতে বসন্ত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তের বৈশিষ্ট্যগুলি তুলে ধরা হয়েছে।
বসন্ত
বসন্ত হলো সৌন্দর্যের ঋতু। এই ঋতুতে প্রকৃতি নতুন প্রাণ পায়। গাছপালা সবুজ হয়ে ওঠে, ফুল ফোটে, পাখিরা গান গায়। বসন্তের প্রকৃতি আমাদের মন ভালো করে দেয়।
গ্রীষ্ম
গ্রীষ্ম হলো উষ্ণতার ঋতু। এই ঋতুতে আবহাওয়া খুব গরম হয়ে ওঠে। গাছপালা ঝরে যায়, ফসল শুকিয়ে যায়। গ্রীষ্মের গরমে আমরা অস্বস্তি বোধ করি।
বর্ষা
বর্ষা হলো বৃষ্টির ঋতু। এই ঋতুতে বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষা আমাদের মাটিকে উর্বর করে তোলে। বর্ষাতে ফুলে ফুলে ভরে যায় প্রকৃতি।
শরৎ
শরৎ হলো ফসলের ঋতু। এই ঋতুতে ফসল পাকে। শরতের হাওয়ায় মন ভালো হয়। শরতে আমরা নানা রকমের ফল খেতে পারি।
হেমন্তের
হেমন্ত হলো শীতের পূর্বাভাস। এই ঋতুতে আবহাওয়া ঠান্ডা হয়ে ওঠে। গাছপালা নুয়ে পড়ে। পাতা ঝরে যায়। হেমন্তের শীতের আমেজ ভালো লাগে।
শীতের
শীত হলো ঠান্ডার ঋতু। এই ঋতুতে আবহাওয়া খুব ঠান্ডা হয়ে ওঠে। বরফ পড়তে পারে। শীতের সকালে কুয়াশা পড়ে।
আলাওলের ঋতু বর্ণন কবিতাটি তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ পদ্মাবতীর ঋতু বর্ণন খন্ড থেকে সংক্ষিপ্ত আ- কারে সংকলিত। প্রকৃতির বিচিত্র রূপে অভিব্যক্ত আভাওয়া ও ষড়ঋতুর প্রভাবে।
বাংলাদেশের প্রাকৃ- তিক সৌন্দর্যের যুগে যুগে মানুষকে মুগ্ধ। মুগ্ধ হয়েছে সংবেদনশীল কবিগনও। ঋতউ।বরননা মধ্য যুগের কাব্বের এক স্বাভাবিক রীতি।
কবি আলাওলের বর্ণনায় প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র সাথে মানব মনের সম্পর্ক ও প্রভা তুলে ধরেছেন।
বসন্তের নবিন পত্র পুস্প ,মলয় সমীর, ভ্রমর গুঞ্জন, কোকিলের কুহুতান; গ্রীস্মের প্রচন্ড রৌদ্র ছায়ার গুরুত্ব; বর্ষার মেঘ গর্জন, অবিরল বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি, একটানা দাদুরী শিখিনি রব; শরতের নীরমল আকাশ,ফুলের চামর দোলায়,খঞ্ছনার নাচ; শরৎ বিদায় হেমন্ত পুষ্প তুলল তাম্বুলের শুখ এবং শীতের ত্রাশেতরিত সূর্য ডুবে যাওয়া।
রজনীতে সুখী দম্পতি ইত্যাদি চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে কবিতাটিতে।
ষড় ঋতুর বর্ণনা ভেতর দিয়ে কবি বাংলার প্রকৃতির রূপ মাধুরী তুলে ধরেসেন।ষড়ঋতুর বৈচিত্র বাংলার নিসর্গ রুপকে যে সমৃদ্ধ করেছে তা কাব্যাংশ থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়।
ঋতু বর্ণন
লেখক আলাওল
প্রথমে বসন্তঋতু নবীন পল্লব।
দুই পক্ষ আগে পাশে মধ্যে শুমাধব।।
মলায়া সমীর হইলা কামের পদাতি।
মুকুলিত কইল তবে বৃক্ষ বনস্পতি ।।
কুসুমিত কিংশুক সঘন বন লাল ।
পুষ্পিত সুরঙ্গ মল্লি লবঙ্গ গুলাল।।
ভ্রমরের ঝংকার কোকিল কলরব।
শুনিতে যুবক মনে জাগে অনুভব।।
নানা পুষ্প মালা গলে বড় হরষি্ত।
বিচিত্র বসন অঙ্গে চন্দন চর্চিত।।
নিদাঘ সময় অতি প্রচন্ড তপন ।
রৌদ্র ত্রাশে রহে ছায়া চরণে স্মরণ।।
চন্দন চম্পক মাল্ল মলয় পবন।
সতত দম্পত্তি সঙ্গে বেপিত মদন ।।
পাবন সমহে ঘন ঘন গরজিত ।
নিরভএ বরিষে জল চুদিকে পুরিত।।
ঘর শব্দ কৈলাসে রাগ গাত্র।
দাদুরী শিখিনি রব অতি মন ভাএ।।
কিটকুল পুনি ঝংকার ঝংকার।
সুন্তে জুবক হরসিত ডরে ।।
আইল শার্দ ঋতু নির্মল আকাশে।
দোলায়ে চামর কেশ কুসুম বিকাশে।।
নবীন খঞ্জন দেখি বড়ই কৌতুক।
যামিনী দম্পতি মনে সুখ ।।
পরবেশে হেমন্ত ঋতু শীত অতি যায়।
কুশপুতুল অধিক হয়। ।
শীতের তাড়াশে রুবিইয় তুরীতে লুকাআ।
অতি দীর্ঘ সুখ নিশি পলকে পহায় ।।
পুষ্পসজ্জা ভেদ ভুলি বিচিত্র বসন।
উড়ে-উড়ে এক হইলে শীত নিবারণ।।
কাকুর চুয়া যাবক সৌরভ।
দম্পতির চিত্তেত চেতন অনুভব।।
আলাওল ১৭ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। আনুমানিক ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ফাতেহাবাদ পরগনা বর্তমান ফরিদপুর জেলা জালালপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
তরুণ বয়সে জলপথে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় তার পিতাও তিনি পর্তুগিজ জলদস্যুদের কবলে পএই আক্রমণে তার পিতা নিহত হন। তিনি ভাগ্য ক্রমে বেঁচে আরাকানে উপস্থিত হন।
আলাওল ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানে প্রথমে আরাকান রাজ্যে সেনাদলে কাজ পান তিনি।
ক্রমে রাজদরবারের প্রধান অমাত্য মাগন ঠাকুরের কৃপা দৃষ্টি লাভ করেন এবং রাজসভা যুক্ত হোন তারি পৃষ্ঠপোষকতায় এবং কাব্য প্রতিভা ও বিদ্যাবুদ্ধির আলাওল পদ্মাবতী কাব্য গ্রন্থ রচনা করেন।
রাজসভার শিক্ষিত ও পদস্থ ব্যক্তিদের সহচার্যে থেকে তিনি কাব্য চর্চা করেছেন। তার রচনায় নাগ- রিক চেতনা ও রুচির ছাপ সুস্পষ্ট।
সংস্কৃত, আরবি, ফরাসি সহ বিভিন্ন ভাষায় ব্যুৎন্ন আলাওল অসামান্য পণ্ডিতের অধিকারী ছিলেন।