রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “সোনার তরী” কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। এটি ১৯১৫ সালে রচিত হয়েছিল এবং “সোনার তরী” কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত।
কবিতাটিতে কবি সোনার তরীকে জীবনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, জীবন একটি অজানা যাত্রার মতো। এই যাত্রায় মানুষকে অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু, সোনার তরী যদি থাকে, তাহলে এই বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করা সহজ হয়।
কবিতায় কবি সোনার তরীর বিভিন্ন গুণাবলী বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, সোনার তরী হলো “অচিন সুদূরের” প্রতীক। এটি হলো “অকূল আকাশের” প্রতীক। এটি হলো “অন্ধকারের” মধ্য দিয়ে আলোর প্রতীক।
কবি বিশ্বাস করেন যে, সোনার তরী মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে সাহায্য করে। এটি মানুষকে নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা দেয়। এটি মানুষকে জীবনের প্রতি আশাবাদী করে তোলে।
কবিতাটির শেষে কবি বলেছেন যে, সোনার তরী মানুষের হৃদয়ে বাস করে। এটি মানুষের আশা ও স্বপ্নের প্রতীক।
কবিতার বিভিন্ন পংক্তির ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
- “সোনার তরী আমার স্বপ্ন সাজায়েছে অচিন সুদূরের দেশে বহিয়াছে আকাশের নীল বহরে ছায়া ফেলেছে অন্ধকারের তিমির ভেদিয়াছে”
এই পংক্তিগুলিতে কবি সোনার তরীর গুণাবলী বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, সোনার তরী স্বপ্নের প্রতীক। এটি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে সাহায্য করে। এটি মানুষকে নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা দেয়। এটি মানুষকে জীবনের প্রতি আশাবাদী করে তোলে।
- “আমার সোনার তরী ভাসায়েছি আমি অন্ধকারের কিনারে আমার সোনার তরী ভাসায়েছি আমি আকাশের নীল নীরে”
এই পংক্তিগুলিতে কবি সোনার তরীর যাত্রার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, সোনার তরী অন্ধকারের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে। এটি আকাশের নীল জলে যাত্রা করে।
- “আমার সোনার তরী ভাসায়েছি আমি আকাশের নীল নীরে আমার সোনার তরী ভাসায়েছি আমি অচিন সুদূরের দেশে”
এই পংক্তিগুলিতে কবি সোনার তরীর গন্তব্যের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, সোনার তরী অচিন সুদূরের দেশে যাত্রা করে।
- “আমার সোনার তরী ভাসায়েছি আমি অন্ধকারের তিমির ভেদিয়াছে আমার সোনার তরী ভাসায়েছি আমি আকাশের নীল বহরে ছায়া ফেলেছে”
এই পংক্তিগুলিতে কবি সোনার তরীর বিজয়ের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, সোনার তরী অন্ধকারের তিমির ভেদ করে যাত্রা করে। এটি আকাশের নীল বহরে ছায়া ফেলে।
- “আমার সোনার তরী আমার হৃদয়ে বাস করে আমার সোনার তরী আমার স্বপ্নের সাথী আমার সোনার তরী আমার আশার বাণী”
এই পংক্তিগুলিতে কবি সোনার তরীর অবস্থান সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, সোনার তরী মানুষের হৃদয়ে বাস করে। এটি মানুষের স্বপ্নের সাথী। এটি মানুষের আশার বাণী।
“সোনার তরী” কবিতাটি একটি গভীর অর্থবহ কবিতা। এটি জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে। এটি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে সাহায্য করে। এটি মানুষকে জীবনের প্রতি আশাবাদী করে তোলে।
অসামান্য প্রতিভার অধিকারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) আধুনিক বাংলা কবিতা প্রাণ পুরুষ। তার সাহিত্যসাধনার একটি বৃহৎ কাল বাংলা সাহিত্যের রবীন্দ্রনাথ নামে পরিচিত।
মানব ধর্মের জয় ও সৌন্দর্য তিশা রোমান্টিক এই কোভিদ কবিতার মূল সুর। কবিতা ছাড়াও ছোটগল্প উপ- ন্যাস নাটক প্রবন্ধ ভ্রমণ কাহিনী ও সঙ্গীত রচনা রবীন্দ্রনাথ কালজয়ী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
তিনি অন্য চিত্রশিল্পী অনুসন্ধিৎসু বিশ্ব বিশ্ব পরিব্রাজক দক্ষ সম্পাদক এবং অন্যান্য শিক্ষা সংগঠন ও চিন্তক।
নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের নিরুৎসাহী হলেও বিশ্ব ভারতীয় নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি স্বাপ্লিক ও প্রতিষ্ঠাতা।
মাত্র 15 বছর বয়সে তার প্রথম কাব্য বনফুল প্রকাশিত হয়। গীতাঞ্জলি এবং অন্যান্য কাব্য কবিতার সমন্বয় স্ব অনুষ্ঠিত Song offering গ্রন্থের জন্য ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম এশীয় হিসেবে তিনি নোবেল পুরস্কার ভূষিত হন।
বাংলা ছোট প্রতি কেৎ ও শ্রেষ্ঠ শিল্পী। মানসী সোনার তরী চিত্রা ক্ষণিকা বলাকা জন্মদিনে শেষ লেখা তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ।
কাব্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা’ এবং কাহিনী কবিতা সংকলন কথা ও কাহিনী তা ভিন্ন স্বাদের রচনা।
সোনার তরী কবিতা
গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হলো সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা-
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।।
এখানে ছোট খেত, আমি একেলা-
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা–
ও পারেতে ছোট খেত, আমি একেলা।।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে!
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙ্গে দু’ধারে-
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।।
ওগো তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে?
বারেক বিড়াও তরি কুলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও-
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনা ধান কূলেতে এসে।।
যত চাও তত লও তরণী- পারে।
আর আছে- আর নাই, দিয়েছি ভরে।।
এককাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে-
এখন আমার করুণা করে।।
ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই- ছোট সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি-
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।।
সোনার তরী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা। শতাব্দী বছর ধরে এই কবিতা র আলোচনা ও নানামুখী ব্যাখ্যায় নতুন নতুন তাৎপর্য অভিষিক্ত।
একইসঙ্গে কবিতাটির রহস্য শ্রেষ্ঠ ত্বের স্মারক।মহৎ সাহিত্যের একটি বিশেষ গুণ হলো কালে কালে নতুন সৃষ্টির বঙ্গীয় বিবেচনার আলোকে তার শেষকৃত্য নিরূপিত হতে থাকে।
বাংলা কবিতার ইতিহাসে সোনার তরী তেমনি আশ্চর্য সুন্দর এক চিরায়ত আবেদন কবিতা।
কবিতা লেখা যায়, চারপাশে প্রবল স্রোতের মধ্যে জেগে থাকা দ্বীপের মতো ছোট একটি ধানক্ষেতে সোনার ধানেরসম্ভার নিয়ে অপেক্ষারত নিঃসঙ্গ এক কৃষক।
আকাশে মেঘ আর ভারী বর্ষণের পাশের খরস্রোতা নদী হয়ে উঠেছেন নিঃস্ব। চার দিকে বাঁকা জল কৃষকের মনে সৃষ্টি করেছে ঘনঘোর আশঙ্কা।
এরকম এক পরিস্থিতিতে এই খরস্রোতা নদীতে একটি ভরা পান সোনার নৌকা নিয়ে আসা এক মাঝিকে দেখা যায়।
উৎকন্ঠিত কৃষকদের উৎপাদিত সোনার ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য মাঝিকে সখাতরে মিনতি দেখিজা- নালেও ওই সোনার ধানের সোমবার নৌকায় তুলে নিয়ে মাঝে চলে যায়।
ছোটনৌকা বললেই স্থান সং কুলান হয়না কৃষকের। শূন্য নদীর তীরে আশাহত কৃষকের বেদনা গুমড়ে মরে।এ কবিতায় নিবি ড় ভাবে মিশে আছে কোভিদ জীবনদর্শন। মহাকালের স্রোতে জীবন যৌবন ভেসে যায়।
কিন্তু বেঁচে থাকে মানুষের সৃষ্ট সোনার ফসল। ব্যক্তিসত্তা ও শারীরিক অস্তিত্বকে নিশ্চিতভাবে হতে হয় মহাকালের নিষ্ঠুর কালগ্রাসের শিকার।
সোনার তরী মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। এর মঙক্টি ৮+৫ মাত্রার পুণ্য পর্বে বিন্যস্ত।