রোজনামচা শব্দের অর্থ হলো দিনলিপি। এটি একটি ফারসি শব্দ। রোজনামচা শব্দের মূল হলো “রোজ” যার অর্থ দিন এবং “নামচা” যার অর্থ লিপি। তাই রোজনামচা শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো “দিনের লিপি”।
রোজনামচা হলো একজন ব্যক্তির প্রতিদিনের ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করার একটি মাধ্যম। এতে একজন ব্যক্তি তার দিনের কাজকর্ম, দেখাশোনা, ভ্রমণ, চিন্তাভাবনা, ইত্যাদি লিখে রাখতে পারেন। রোজনামচা ব্যক্তির জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি থেকে একজন ব্যক্তির জীবনের ইতিহাস জানা যায়।
বাংলা সাহিত্যে রোজনামচা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি তাদের জীবনের বিভিন্ন সময়ে রোজনামচা লিখেছেন। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমুখ।
রোজনামচা লিখতে হলে একজন ব্যক্তির অবশ্যই ভালো লেখালেখির দক্ষতা থাকতে হবে। এছাড়াও, তার অবশ্যই সচেতন হতে হবে এবং প্রতিদিনের ঘটনাবলী সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
রোজনামচা লিখতে হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে:
- তারিখ: রোজনামচায় প্রতিদিনের তারিখ উল্লেখ করা উচিত।
- ঘটনাবলী: রোজনামচায় প্রতিদিনের ঘটনাবলী সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা উচিত।
- ভাবনাভাবনা: রোজনামচায় ব্যক্তির দিনের চিন্তাভাবনাগুলো লিখে রাখা যেতে পারে।
- মতামত: রোজনামচায় ব্যক্তির বিভিন্ন বিষয়ে মতামতগুলো লিখে রাখা যেতে পারে।
রোজনামচা লিখার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার জীবনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং তার জীবনকে আরও সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে।
রোজনামচা শব্দের অর্থ
ব্যাখ্যাঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তারাগার থাকা অবস্থায় তিনি একটি দিনলিপি লেখেন । এবং তার নাম দেন কারাগারের রোজনামচা,
কারাগার জীবন
ভাষা আন্দোলন বঙ্গবন্ধু শুরু করেন ১৯৪৮ সালের.১১ই মার্চ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এবং গ্রেফতার হন । ১৫ই মার্চ তিনি মুক্তি পান।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম দেশ সফর শুরু করেন। জনমত সৃষ্টি করতে থাকেন। প্রতি জেলায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন।
১৯৪৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ফরিদপুরে গ্রেফতার করেন। ১৯৪৯ সালের ২১শে জানুয়ারি মুক্তি পান।
মুক্তি আবার দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টির জন্য সফর শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যা- লয়ের চতুর্থ কর্মচারী দাবির প্রতি সমর্থন জানান এবং তাদের ন্যায্য আন্দোলনে অংশ নেন ।
সরকার ১৯৪৯ সালের ১৯শে এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। জুলাই মাসে তিনি মুক্তি পান।
এইভাবে কয়েক দফা গ্রেফতার ও মুক্তির পর ১৯৪৯ সালের ১৪ই অক্টোবর আর্মানিটোলা ময়দানে জনসভা শেষে ভুখা মিছিল বের করেন।
দরিদ্র মানুষের খাদ্যর দাবিতে দাবিতে ভুখা মিছিল করতে গেলে আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক,ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন।
এবারে তাদের প্রায় দু’বছর পাঁচ মাস জেলে আটক রাখা হয়। ১৯৫২ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলা থেকে মুক্তি লাভ করেন।
১ম বার খাতা গুলি উদ্ধার
এই সময়ে এক মেজর সাহেব এসে বলল, বাচ্চা লোগ সুকুল মে যাও (বাচ্চারা স্কুলে যাও) ।
ড. ওয়াজেদ পাকিস্তান অ্যাটমিক এনার্জিতে চাকরি করতেন বলে তিনি নিয়মিত অফিসে যেতে পারতেন।
ফলে বাইরে যাবার কিছু সুযোগ ছিল এবং যেহেতু এটা ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি কমিশন এর সাথে সম্পৃক্ত তাই যুদ্ধের সময়ও কিছু ছাড় পেতো। হানাদার বাহিনী সব সময় নজরদারিতে রাখত।
অক স্কুলে যাবে বাচ্চারা, জামাল রেহানা আর রাসেল। আমি বললাম বই-খাতা কিছুই তো নাই, কী নিয়ে স্কুলে যাবে আর যাবেই বা কিভাবে? জিজ্ঞেস করল বই কোথায়।
আমার মা আমাকে বললেন, একবার যেতে পারলে আর কিছু না হোক তোর আব্বার লেখা খাতাগুলো যেভাবে পারিস নিয়ে আসিস। আমি মায়ের কথা মত জায়গায় গেলাম।
ড্রেসিং রুমের আলমারির ওপর ডান দিকে আব্বার খাতাগুলো রাখা ছিল, খাতা পেলাম কিন্তু সাথে মিলিটারি লোক, কী করি? যদি দেখার নাম করে নিয়ে নেয় সে ভয় হলো।
যাহোক অন্য বই খাতা কিছু হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে একখানা গায়ে গায়ে দেব কাথা পড়ে থাকতে দেখলাম, সে কথা খানা হাতে নিলাম, তারপর এক ফাকে খাতাগুলি ওই কথায় মুড়িয়ে নিলাম। সাথে দুই একটা বই ম্যাগাজিন পড়েছিল তাও নিলাম।
২য় বার খাতা উদ্ধার
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়। জীবিত কোন সদস্য ছিল না সকল সদস্যকে ওই বাড়িতে হত্যা করা হয়েছিল।
আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা, আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, মুক্তিযোদ্ধা ভাই ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও লে. শেখ জামাল, ছোট ভাই শেখ রাসেল, কামাল জামালের নব পরিণীতা স্ত্রী সুলতানা ও রোজী, বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল, পুলিশের দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এর পর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটি সরকারি দখলে থাকে। আমি ও আমার ছোট বোন রেহানা দেশের বাইরে ছিলাম। ৬ বছর বাংলাদেশের ফিরতে পারি নাই।
১৯৮১ সালে যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে আমি অনেক বাধা – বিঘ্ন অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসি ।
তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা ও রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় তাকে মৃত্যুবরণ করতে হলো নাটকে নিম্ন বুলেটের আঘাতে। ড্রেসিং রুমে রাখা আলমারি দক্ষিণ দিকে হাত বাড়াই।
ধূলি-ধূসর বাড়ি। মাকড়সার জালে ধরা তার মাঝেই খুঁজে পাই আকাঙ্ক্ষিত রুলটানা খাতাগুলি
এই বাড়িতে একমাত্র পাওয়া ছিল এই খাতাগুলি। খুলনায় চাচির বাসায় খাতাগুলি রেখে আসি, চাচির ভাই রবি মামা কে দায়িত্ব দেই।
কারণ ঢাকায় আমার কোন থাকার জায়গা ছিল না, কখনো ছোট ফুফুর বাসায, কখনো মেজ ফুফুর বাসায় থাকতাম।
লেখাগুলো প্রকাশ করার কাজ শুরু
খাতাগুলি প্রকাশ করার উদ্যোগ নিই। ড, এনায়েতুর রহিমের আমিও বিবি বই নিয়ে কাজ করতে শুরু করি, তিনি আমেরিএর,জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর।
তার পরামর্শমতো কাজ করি। খাতাগুলি জেরোক্স কপি করেও ফটোকপি করে এক্সের রেহানার কাছে রাখি। বেবি টাইপ করানোর দায়িত্ব নেয়।
ড. এনায়েতুররহিমও তার স্ত্রী জয়েস রহিম অনুবাদ করতে শুরু করেন। তিনি সবগুলি খাতা অনুবাদ করতে দেন।
কিন্তু ২০০২ সালে তিনি হঠাৎ করে মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের কাজ থেমে যায়। এরপর ঐতিহাসিক প্রফেসর সালাউদ্দিন আহমেদের পরামর্শে কাজ শুরু করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর সামসুল হুদা হারুন, বাংলা একাডেমির শামসুজ্জামান খান, বেবী মওদুদ ও আমি বসে কাজ শুরু করি।
নিনু বাংলায় কম্পিউটার টাইপ করে দেয়, রহমান রমা কে বিয়ে ফটোকপি করার কাজ করি। বাড়িতে আলাদা ফটোকপি মেশিন ক্রয় করি।
কারাগারের রোজনামচা
বর্তমানবউটার নাম ছোট বোন রেহানা রেখেছেন – কারাগারের রোজনামচা এতটা বছর বুকে আগলে রেখেছিল যে অমূল্য সম্পদ আলতাফ তুলে দিলাম বাংলার জনগণের হাতে।
ডক্টর ফখরুল আহমের অনুবাদ করে দেওয়া ইংরেজি সংস্করণের কাজ এখনো চলছে।
১৯৬৬ সালে ৬ দফা দেয়ার পর বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৬সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বন্দি থাকেন ।
সেই সময়ে কারাগারে প্রতিদিনের ডায়েরি লেখা শুরু করেন। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত লেখাগুলো প্রকাশ করা হলো।
একসাথে আর একটি খাতা খুঁজে পাই – তাড়রও ইতিহাস রয়েছে। ১৯৫৪ সালের ৭ই অক্টোবর আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করে ।
১২ই অক্টোবর আব্বাকে গ্রেফতার এবং তার রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেয়। এরপর ১৯৬০ সালের ডিসেম্বর মাসে যখন কারাগার থেকে মুক্তি পান তখন তার লেখা খাতাগুলি মধ্যে দুই খানা খাতা সরকার বাজেয়াপ্ত করে।
এই কাতাটা তাঁর মধ্যে একখানা ,যা আমি ২০১৪ সালে খুজে পেয়েছি। SB,রকাছ থেকে পাওয়া এই খাতাটা।
SB (Special Branch) এর অফিসাররা খুবই কষ্ট করে খাতাখানা খুঁজে দিয়েছেন,তাই তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি. এই কথাটা আরো আগেই লেখা।
সেই বন্দি থাকা অবস্থায় এই খাতাটায় তিনি জেলখানার ভিতরে অনেক কথা লিখেছেন। এই লেখার একটা নাম তিনি দিয়েছেন;
থালা বাটি কম্বল
জেলখানার সম্বল