বায়ু দূষণ কাকে বলে? কিভাবে বায়ু দূষণ কমাতে পারি?

বায়ু দূষণ বলতে বায়ুর স্বাভাবিক উপাদানগুলির পরিবর্তন বা বায়ুতে ক্ষতিকারক পদার্থের মিশ্রণকে বোঝায়। বায়ু দূষণের ফলে বায়ুর গুণমান হ্রাস পায় এবং মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বায়ু দূষণের প্রধান কারণগুলি হল:

  • যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়াশা: যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়াশায় নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, বেনজিন, ওজোন ইত্যাদি ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে।
  • শিল্প কারখানা থেকে নির্গত দূষক পদার্থ: শিল্প কারখানা থেকে নির্গত দূষক পদার্থগুলির মধ্যে সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরোকার্বন, ওজোন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
  • জ্বালানী পোড়ানো: ঘর-বাড়ি, রান্নাঘর, ইত্যাদি থেকে জ্বালানী পোড়ানোর ফলে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ইত্যাদি ক্ষতিকারক পদার্থ বায়ুতে মিশে যায়।
  • বন উজাড়: বন উজাড়ের ফলে বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ কমে যায় এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি: বায়ু দূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, ক্যান্সার, ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
  • পরিবেশের ক্ষতি: বায়ু দূষণের ফলে বৃষ্টির পানিতে অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা গাছপালা, ফসল ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে।
  • জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি: বায়ু দূষণের ফলে পাখি, পোকামাকড়, ইত্যাদি জীবের মৃত্যু হয়।

বায়ু দূষণ কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • যানবাহন থেকে নির্গত দূষণ কমাতে: যানবাহনের সংখ্যা কমানো, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি করা, যানবাহনের ইঞ্জিনগুলিকে পরিবেশবান্ধব করে তোলা, ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
  • শিল্প কারখানার দূষণ কমাতে: শিল্প কারখানার বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা করা, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা, ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
  • জ্বালানী পোড়ানো থেকে দূষণ কমাতে: জ্বালানী পোড়ানোর ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করা, জ্বালানী সাশ্রয় করা, ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
  • বন উজাড় রোধে পদক্ষেপ নেওয়া: বন রক্ষা করা, বনায়ন করা, ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও, ব্যক্তিগতভাবে বায়ু দূষণ কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • **গাড়িতে চড়ার পরিবর্তে হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা।
  • **জ্বালানী সাশ্রয় করা।
  • **বাসায় ও অফিসে বিদ্যুৎ ও জলের ব্যবহার কমানো।
  • **প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো।
  • **গাছ লাগানো।

বায়ু দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা। এটি সমাধানের জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

 বায়ু দূষণের ফলে শরীরের কী কী ক্ষতি হয়

বায়ু দূষণের ফলে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • শ্বাসকষ্ট: বায়ু দূষণের ফলে শ্বাসনালীতে প্রদাহ হয় এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এটি হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, এবং ফুসফুসের অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • হৃদরোগ: বায়ু দূষণের ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, এবং রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ব্যাহত হয়। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং অন্যান্য হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ক্যান্সার: বায়ু দূষণের ফলে ফুসফুসের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • জন্মগত ত্রুটি: বায়ু দূষণের ফলে জন্মগত ত্রুটি, যেমন মস্তিষ্কের ত্রুটি, হৃদযন্ত্রের ত্রুটি, এবং অন্যান্য জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়ায়।
  • অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা: বায়ু দূষণের ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি, স্মৃতিভ্রংশতা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।

বায়ু দূষণের ফলে শরীরের ক্ষতি কতটা হবে তা নির্ভর করে দূষণের মাত্রা, দূষণের ধরন, এবং ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর।

বায়ু দূষণের ফলে শরীরের ক্ষতি প্রতিরোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:

  • যানবাহন ব্যবহার কমানো এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি করা।
  • শিল্প কারখানার বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা করা।
  • জ্বালানী পোড়ানোর ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করা।
  • বনায়ন করা।
  • ব্যক্তিগতভাবে গাড়িতে চড়ার পরিবর্তে হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা।
  • জ্বালানী সাশ্রয় করা।
  • বাসায় ও অফিসে বিদ্যুৎ ও জলের ব্যবহার কমানো।
  • প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *