জ্যামিতিতে, কোণ হল দুটি রেখাংশের মধ্যকার সংযোগবিন্দু থেকে উৎপন্ন বিন্দু থেকে উৎপন্ন দুইটি দিক। কোণকে দুটি রেখাংশের মধ্যবর্তী কোণ বলেও বলা হয়।
কোণের পরিমাপ ডিগ্রিতে প্রকাশ করা হয়। একটি সমকোণ হল ৯০ ডিগ্রির কোণ। একটি বর্গক্ষেত্রের প্রতিটি কোণ সমকোণ। একটি সমবাহু ত্রিভুজের প্রতিটি কোণ ৬০ ডিগ্রির কোণ।
কোণকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যেমন,
- কোণের প্রকারভেদ:
- সূক্ষ্মকোণ: ৯০ ডিগ্রির চেয়ে ছোট কোণকে সূক্ষ্মকোণ বলে।
- স্থূলকোণ: ৯০ ডিগ্রির চেয়ে বড় কোণকে স্থূলকোণ বলে।
- সমতলকোণ: ৯০ ডিগ্রি কোণকে সমতলকোণ বলে।
- সমকোণ: ৯০ ডিগ্রি কোণকে সমকোণ বলে।
- অসমকোণ: ৯০ ডিগ্রি কোণ ছাড়া অন্য কোণকে অসমকোণ বলে।
- কোণের অবস্থানভেদে:
- অভ্যন্তরীণ কোণ: ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষবিন্দুর মধ্যবর্তী কোণগুলোকে অভ্যন্তরীণ কোণ বলে।
- বাহ্যিক কোণ: ত্রিভুজের একটি শীর্ষবিন্দু এবং তার বিপরীত বাহুর শেষবিন্দু থেকে উৎপন্ন কোণকে বাহ্যিক কোণ বলে।
কোণ জ্যামিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। কোণের সাহায্যে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি নির্ণয় করা যায়।
কোণ (Angle)
কোণ (Angle) যদি দুইটি সরলরেখা পরস্পরের সাথে কোনো বিন্দুতে মিলিত হয়, তবে মিলন বিন্দুতে কোণ উৎপন্ন হয়।
একই সমতলে দুইটি রস্মির প্রান্তবিন্দু একই হলে কোন তৈরি হয়।
রশ্মি দুইটিকে কোণের এবং এদের সাধারন বিন্দুকে শীর্ষবিন্দু বলে।
চিত্রে ,OP ও OQ রশ্মিদ্বয় এদের সাধারণ প্রান্তবিন্দু O তে <POQ উৎপন্ন করেছে।
O বিন্দুটি <POQ এর শীর্ষবিন্দু । OP এর যে পার্শ্বে অবস্থিত সকল বিন্দুর সেটকে <POQ এর অভ্যন্তর বলা হয়।
কোনটির অভ্যন্তরে অথবা কোনো বাহুতে অবস্থিত নয় এমন সকল বিন্দুর সেটকে এর বহির্ভাগ বলা হয়।
সরল কোণ
সরল কোণ হল ৯০ ডিগ্রির কোণ। একটি সরল রেখাকে দুটি ভাগে ভাগ করলে যে কোণ উৎপন্ন হয় সেটি সরল কোণ। একটি বর্গক্ষেত্রের প্রতিটি কোণ সরল কোণ। একটি সমবাহু ত্রিভুজের বিপরীত কোণ দুটি সরল কোণ।
সরল কোণের প্রতীক হল ∠।
সরল কোণের বৈশিষ্ট্য
- সরল কোণের পরিমাপ ৯০ ডিগ্রি।
- সরল কোণের দুটি দিক পরস্পর পরস্পর লম্বভাবে অবস্থান করে।
- সরল কোণের দুটি দিক পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।
সরল কোণের ব্যবহার
- সরল কোণের সাহায্যে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি নির্মাণ করা যায়।
- সরল কোণের সাহায্যে বিভিন্ন জ্যামিতিক সমস্যা সমাধান করা যায়।
- সরল কোণের সাহায্যে বিভিন্ন ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা যায়।
সরল কোণের উদাহরণ
- একটি বর্গক্ষেত্রের প্রতিটি কোণ সরল কোণ।
- একটি সমবাহু ত্রিভুজের বিপরীত কোণ দুটি সরল কোণ।
- একটি সমকোণী ত্রিভুজের একটি কোণ সরল কোণ।
- একটি বর্গক্ষেত্রের চারটি অন্তঃকোণের সমষ্টি ৩৬০ ডিগ্রি। এই সমষ্টিতে প্রতিটি অন্তঃকোণের পরিমাপ ৯০ ডিগ্রি।
- একটি সমবাহু ত্রিভুজের তিনটি অন্তঃকোণের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রি। এই সমষ্টিতে প্রতিটি অন্তঃকোণের পরিমাপ ৬০ ডিগ্রি।
সরল কোণের সূত্র
সরল কোণের পরিমাপ ৯০ ডিগ্রি।
উদাহরণ
একটি সরল কোণের পরিমাপ কত?
উত্তর:
একটি সরল কোণের পরিমাপ ৯০ ডিগ্রি।
অতএব, উত্তর হল ৯০ ডিগ্রি।
সন্নিহিত কোণ (Adjacent Angle)
সন্নিহিত কোণ হল দুটি কোণ যা একই বাহু এবং একই শীর্ষবিন্দুকে ভাগ করে। অর্থাৎ, যে দুটি কোণের একটির শীর্ষবিন্দু অন্য কোণের শীর্ষবিন্দুর সাথে মিলে যায় এবং একটি বাহুর উভয় দিকে অবস্থিত হয় সে দুটি কোণকে সন্নিহিত কোণ বলে।
সন্নিহিত কোণের বৈশিষ্ট্য
- সন্নিহিত কোণের দুটি দিক পরস্পরকে ছেদ করে।
- সন্নিহিত কোণের দুটি দিক পরস্পরের সমান্তরাল হতে পারে না।
- সন্নিহিত কোণের পরিমাপের সমষ্টি সর্বদা ১৮০ ডিগ্রি হয়।
সন্নিহিত কোণের ব্যবহার
- সন্নিহিত কোণের সাহায্যে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি নির্মাণ করা যায়।
- সন্নিহিত কোণের সাহায্যে বিভিন্ন জ্যামিতিক সমস্যা সমাধান করা যায়।
- সন্নিহিত কোণের সাহায্যে বিভিন্ন ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা যায়।
সন্নিহিত কোণের উদাহরণ
- একটি বর্গক্ষেত্রের যেকোনো দুটি বিপরীত কোণ সন্নিহিত কোণ।
- একটি ত্রিভুজের যেকোনো দুটি অভ্যন্তরীণ কোণ সন্নিহিত কোণ হতে পারে।
- একটি সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণ এবং তার বিপরীত কোণ সন্নিহিত কোণ।
সন্নিহিত কোণের সূত্র
সন্নিহিত কোণের পরিমাপের সমষ্টি সর্বদা ১৮০ ডিগ্রি।
উদাহরণ
একটি সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণ এবং তার বিপরীত কোণের পরিমাপের সমষ্টি কত?
উত্তর:
সন্নিহিত কোণের পরিমাপের সমষ্টি সর্বদা ১৮০ ডিগ্রি।
একটি সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের পরিমাপ ৯০ ডিগ্রি।
সুতরাং, সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণ এবং তার বিপরীত কোণের পরিমাপের সমষ্টি = ৯০ ডিগ্রি + ৯০ ডিগ্রি = ১৮০ ডিগ্রি
অতএব, উত্তর হল ১৮০ ডিগ্রি।
সন্নিহিত কোণের একটি বিশেষ ক্ষেত্রে, যদি দুটি কোণের মধ্যবর্তী বাহুটি সরল রেখা হয়, তাহলে সেই দুটি কোণ পরস্পর পরস্পর লম্বভাবে অবস্থান করে। অর্থাৎ, সেই দুটি কোণের পরিমাপের যোগফল সর্বদা ৯০ ডিগ্রি হয়।
প্রবৃদ্ধ কোণ হল ১৮০ ডিগ্রি থেকে বড় এবং ৩৬০ ডিগ্রি থেকে ছোট কোণ। অর্থাৎ, ৩৬০° > θ > ১৮০° হলে θ একটি প্রবৃদ্ধ কোণ।
প্রবৃদ্ধ কোণের বৈশিষ্ট্য
- প্রবৃদ্ধ কোণের পরিমাপ ১৮০ ডিগ্রি থেকে বড় এবং ৩৬০ ডিগ্রি থেকে ছোট।
- প্রবৃদ্ধ কোণের দুটি দিক পরস্পর বিপরীত দিকে অবস্থান করে।
- প্রবৃদ্ধ কোণের দুটি দিক পরস্পরের সমান্তরাল হতে পারে না।
প্রবৃদ্ধ কোণের ব্যবহার
- প্রবৃদ্ধ কোণের সাহায্যে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি নির্মাণ করা যায়।
- প্রবৃদ্ধ কোণের সাহায্যে বিভিন্ন জ্যামিতিক সমস্যা সমাধান করা যায়।
- প্রবৃদ্ধ কোণের সাহায্যে বিভিন্ন ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা যায়।
প্রবৃদ্ধ কোণের উদাহরণ
- একটি ঘড়ির ঘন্টার কাঁটার অবস্থান পরিবর্তনের ফলে ঘড়ির কাঁটার সাথে উৎপন্ন কোণটি প্রবৃদ্ধ কোণ।
- একটি সমবাহু ষড়ভুজের প্রতিটি অন্তঃকোণের পরিমাপ ১২০ ডিগ্রি। ষড়ভুজের চারটি কোণের সমষ্টি = ৪ * ১২০ ডিগ্রি = ৪৮০ ডিগ্রি। এই সমষ্টিতে প্রতিটি কোণের পরিমাপ ৪৮০ ডিগ্রি / ৪ = ১২০ ডিগ্রি।
প্রবৃদ্ধ কোণের সূত্র
প্রবৃদ্ধ কোণের পরিমাপ ৩৬০ ডিগ্রি থেকে θ এর মান বিয়োগ করে পাওয়া যায়।
উদাহরণ
একটি প্রবৃদ্ধ কোণের পরিমাপ কত হলে সেই কোণের পরিমাপ ৩৬০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি বেশি হবে?
উত্তর:
প্রবৃদ্ধ কোণের পরিমাপ = ৩৬০ ডিগ্রি + ৩০ ডিগ্রি = ৩৯০ ডিগ্রি
অতএব, উত্তর হল ৩৯০ ডিগ্রি।
লম্ব সমকোণ হলো এমন একটি কোণ যা ৯০ ডিগ্রির সমান। একে ইংরেজিতে Right Angle বলা হয়। দুইটি সরলরেখা একে অপরকে ছেদ করলে সন্নিহিত কোণ দুইটি পরস্পর সমান হলে, তারা উভয়েই সমকোণ। যে সরলরেখাগুলো সমকোণ গঠন করে সেই দুটি রেখাকে পরস্পরের লম্ব বলে।
লম্ব সমকোণের প্রতীক:
লম্ব সমকোণকে সাধারণত নিচের চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়:
এখানে, ⦧
হলো একটি লম্ব সমকোণ। ⦧
এর কেন্দ্রীয় বিন্দুটি হলো লম্ব সমকোণের শীর্ষবিন্দু।
লম্ব সমকোণের ব্যবহার:
লম্ব সমকোণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
- ঘরের দরজা, জানালা, দেয়ালের কোণগুলি লম্ব সমকোণী হয়।
- টেবিল, চেয়ার, বিছানা, ইত্যাদি আসবাবপত্রের কোণগুলি লম্ব সমকোণী হয়।
- স্কেল, পেন্সিল, ইত্যাদি সরঞ্জামগুলির কোণগুলি লম্ব সমকোণী হয়।
- ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে লম্ব সমকোণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লম্ব সমকোণের সম্পর্কিত ধারণা:
- লম্ব রেখা: যে দুটি রেখা একে অপরকে ছেদ করে এবং ছেদ বিন্দুতে একটি সমকোণ গঠন করে, সেই দুটি রেখাকে পরস্পরের লম্ব রেখা বলে।
- লম্বভাবে: দুটি বস্তু বা বিন্দু পরস্পরের লম্বভাবে থাকলে তাদের মধ্যে একটি লম্ব সমকোণ থাকে।
- লম্বভাবে ছেদ করা: দুটি রেখা একে অপরকে ছেদ করলে এবং ছেদ বিন্দুতে একটি লম্ব সমকোণ গঠন করলে, বলা হয় তারা লম্বভাবে ছেদ করেছে।
লম্ব সমকোণের গুরুত্ব:
লম্ব সমকোণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- লম্ব সমকোণ আমাদেরকে সঠিকভাবে বস্তু পরিমাপ করতে সাহায্য করে।
- লম্ব সমকোণ আমাদেরকে সঠিকভাবে নির্মাণ কাজ করতে সাহায্য করে।
- লম্ব সমকোণ আমাদেরকে সঠিকভাবে নকশা করতে সাহায্য করে।
সুতরাং, লম্ব সমকোণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়।