মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত বাক্ সংকেতের সংগঠনকে ভাষা বলা হয়। অর্থাৎ বাগযন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট অর্থবোধক ধ্বনির সংকেতের সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই হলো ভাষা।
ভাষার প্রকারভেদ
ভাষাকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। ভাষার প্রকারভেদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- বংশগত ভাষা: যে ভাষার উৎস একই, তাকে বংশগত ভাষা বলে। যেমন, বাংলা, হিন্দি, উর্দু, মারাঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, অসমীয়া, তেলেগু, তামিল, মণিপুরী ইত্যাদি ভাষা একই বংশগত ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
- উপভাষা: একই ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কিন্তু কিছুটা ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভাষাকে উপভাষা বলে। যেমন, বাংলা ভাষার উপভাষা হলো ঢাকাইয়া, বরিশাইল্যা, চট্টগ্রামীয়া, রাজশাহীয়া, সিলেটি ইত্যাদি।
- ক্রিয়োল: যে ভাষা একটি ভিন্ন ভাষা থেকে উদ্ভূত হয়, কিন্তু তার মধ্যে ভিন্ন ভাষার কিছু বৈশিষ্ট্যও বিদ্যমান থাকে, তাকে ক্রয়োল বলে। যেমন, বাংলাদেশের চাকমা, মারমা ইত্যাদি ভাষা।
- পিজিন: যে ভাষা একটি ভাষা থেকে উদ্ভূত হয়, কিন্তু তার মধ্যে লিখিত রীতি নেই, তাকে পিজিন বলে। যেমন, সাভাহিলি, টোক পিসিন ইত্যাদি।
- জাতীয় ভাষা: একটি দেশের অধিবাসীদের দ্বারা সাধারণভাবে ব্যবহৃত ভাষাকে জাতীয় ভাষা বলে। যেমন, বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা বাংলা।
- রাষ্ট্রভাষা: একটি দেশের সরকারী ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা বলে। যেমন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।
- সাংস্কৃতিক ভাষা: একটি দেশের সংস্কৃতির বাহক হিসেবে ব্যবহৃত ভাষাকে সাংস্কৃতিক ভাষা বলে। যেমন, বাংলা ভাষা।
- ধর্মীয় ভাষা: একটি ধর্মের ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত ভাষাকে ধর্মীয় ভাষা বলে। যেমন, আরবি ভাষা।
- ব্যবসা-বাণিজ্যিক ভাষা: ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষাকে ব্যবসা-বাণিজ্যিক ভাষা বলে। যেমন, ইংরেজি ভাষা।
- তথ্যপ্রযুক্তি ভাষা: তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষাকে তথ্যপ্রযুক্তি ভাষা বলে। যেমন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষা।
এই ছাড়াও ভাষাকে আরও অনেকভাবে ভাগ করা যায়।
ভাষার প্রধান উপাদান কয়টি
ভাষার প্রধান উপাদান তিনটি:
- ধ্বনি: ভাষার সবচেয়ে মৌলিক উপাদান হলো ধ্বনি। ধ্বনি হলো বাতাসের কম্পন যা মানুষের কানে শোনা যায়। ভাষার মাধ্যমে ভাব প্রকাশের জন্য ধ্বনিগুলিকে বিভিন্নভাবে সংগঠিত করা হয়।
- শব্দ: এক বা একাধিক ধ্বনির সমষ্টিকে শব্দ বলে। শব্দগুলির অর্থ থাকে। উদাহরণস্বরূপ, “গাছ” শব্দটি একটি বৃক্ষকে বোঝায়।
- বাক্য: এক বা একাধিক শব্দের সমষ্টিকে বাক্য বলে। বাক্যগুলির একটি নির্দিষ্ট অর্থ থাকে এবং এগুলির মাধ্যমে মানুষ তাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, “গাছটি সবুজ” বাক্যটি একটি বৃক্ষের সবুজ রঙকে বোঝায়।
এই তিনটি উপাদানের সমন্বয়ে ভাষা গঠিত হয়। ভাষার অন্যান্য উপাদানগুলি, যেমন ব্যাকরণ, শব্দভান্ডার, উচ্চারণ ইত্যাদি, এই তিনটি মূল উপাদানের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়।