বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতাটির ব্যাখ্যা দিতে পারবেন কি?
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত রাবণের ভাই বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে মেঘনাদের তীব্র প্রতিবাদ ও ঘৃণার প্রকাশ করেছেন।
কবিতাটি শুরু হয় মেঘনাদের বিভীষণের প্রতি তিরস্কার দিয়ে। মেঘনাদ বিভীষণকে “রক্ষোবর” (রাক্ষসের বীর) বলে সম্বোধন করে তার জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতীয়তাবোধকে ভুলে যাওয়ার জন্য তিরস্কার করে।
সে বিভীষণকে বলে যে, ধর্মশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, স্বজন যদি গুণহীনও হয়, তবুও গুণহীন আত্মীয়ই শ্রেয়। কেননা, পর সবসময় পরই থাকে। কিন্তু বিভীষণ সেই শিক্ষাকে ভুলে গেছে এবং রাবণের মতো অসৎ ও অত্যাচারী রাজার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
মেঘনাদ বিভীষণকে বর্বরতাও শিখতে বলে। সে বলে যে, গতির সাথে যে নীচ সহচর হয়, সে দুর্মতি। রাবণ বর্বর ও অত্যাচারী হলেও বিভীষণ তার সাথে দাঁড়িয়ে লঙ্কাকে বর্বরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মেঘনাদ বিভীষণকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, লঙ্কা একসময় স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল ছিল। কিন্তু রাবণের অত্যাচারে আজ তা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিভীষণ যদি রাবণের সাথে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে সেও ধ্বংসের অংশ হবে।
মেঘনাদ বিভীষণকে সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানায়। সে বলে যে, এখনও সময় আছে। বিভীষণ যদি রাবণকে ত্যাগ করে রামচন্দ্রের পক্ষে দাঁড়ায়, তাহলে সে লঙ্কাকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারে।
কবিতাটির শেষে মেঘনাদ রাবণের পতন ও লঙ্কার ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী করে। সে বলে যে, রাবণ তার পাপের ফল ভোগ করবে এবং লঙ্কা ধ্বংস হয়ে যাবে।
কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু:
- বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা
- মেঘনাদের প্রতিবাদ ও ঘৃণা
- লঙ্কার ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী
কবিতাটির ভাষা ও শৈলী:
কবিতার ভাষা উচ্চাঙ্গের এবং শৈলী বর্ণনামূলক ও অনুরোধমূলক। কবিতার বিভিন্ন স্থানে ছন্দের ব্যবহারও লক্ষণীয়।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতাটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত। অমিত্রাক্ষর ছন্দে প্রতি চরণে ১১ থেকে ১৫ মাত্রা থাকে। এ ছন্দে কবিতার ভাষা ও শব্দের সাবলীলতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের বিভিন্ন মাত্রা বিন্যাস লক্ষ্য করা যায়। যেমন:
- ১১ মাত্রা:
“ধর্মপথগামী, হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে তুমি; কোন ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি, দিলা জলাঞ্জলি?”
- ১২ মাত্রা:
“জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি, এ সকলে দিলা জলাঞ্জলি? শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি পরজন, গুণহীন স্বজন শ্রেয়, তথাপি নির্গুণ স্বজন শ্রেয়, পরঃ পরঃ সদা!”
- ১৩ মাত্রা:
“গতির সাথে যে নীচ সহচর, সে দুর্মতি। রাবণ বর্বর, অত্যাচারী, তার সাথে দাঁড়িয়ে তুমি, লঙ্কাকে বর্বরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছ, লঙ্কা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছ!”
- ১৪ মাত্রা:
“লঙ্কা ছিল স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল, আজ রাবণের অত্যাচারে, তা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তুমি যদি রাবণের সাথে দাঁড়িয়ে থাক, তুমিও ধ্বংসের অংশ হবে!”
- ১৫ মাত্রা:
“এখনও সময় আছে, তুমি সঠিক পথে ফিরে আসতে পারো, রাবণকে ত্যাগ করে রামচন্দ্রের পক্ষে দাঁড়াতে পারো, তাহলে তুমি লঙ্কাকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারো!”
এই ছন্দের ব্যবহারের ফলে কবিতাটি শ্রুতিমধুর ও মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছে।
সহজ ভাষায় শিখে নাও বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতায়, রামের সেনাপতি মেঘনাদ তার চাচা বিভীষণকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখছেন। তিনি বিভীষণকে প্রশ্ন করছেন যে, তিনি কোন ধর্ম মতে রাবণের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করছেন।
তিনি বলছেন যে, ধর্মশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, গুণবান ব্যক্তি পরের হলেও শ্রেয়, তবুও নির্গুণ স্বজন শ্রেয়। রাবণ বর্বর ও অত্যাচারী, তাই তার সাথে দাঁড়িয়ে বিভীষণ লঙ্কাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
** সহজ ভাষায় বলা যায়, মেঘনাদ বিভীষণকে বলছেন যে, তিনি যেন রাবণের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন না করেন। তিনি বলছেন যে, রাবণ বর্বর ও অত্যাচারী, তাই তার সাথে দাঁড়িয়ে বিভীষণ লঙ্কাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।**
কবিতাটির প্রতিটি পঙ্ক্তির অর্থ নিচে দেওয়া হল:
- প্রথম পঙ্ক্তি:
ধর্মপথগামী, হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে তুমি; কোন ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি, দিলা জলাঞ্জলি?
অর্থ: হে রাক্ষসরাজের ভাই, তুমি ধর্মপথে চলা একজন বিখ্যাত মানুষ। দাস তোমাকে বলছি, কোন ধর্ম মতে তুমি রাবণের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করছ?
- দ্বিতীয় পঙ্ক্তি:
জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি, এ সকলে দিলা জলাঞ্জলি? শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি পরজন, গুণহীন স্বজন শ্রেয়, তথাপি নির্গুণ স্বজন শ্রেয়, পরঃ পরঃ সদা!
অর্থ: তুমি কি জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি এসব ত্যাগ করেছ? শাস্ত্রে বলা হয়েছে, গুণবান ব্যক্তি পরের হলেও শ্রেয়, তবুও নির্গুণ স্বজন শ্রেয়। কিন্তু তুমি নির্গুণ রাবণের সাথে দাঁড়িয়েছ, তাই তুমি ধর্ম ত্যাগ করেছ।
- তৃতীয় পঙ্ক্তি:
গতির সাথে যে নীচ সহচর, সে দুর্মতি। রাবণ বর্বর, অত্যাচারী, তার সাথে দাঁড়িয়ে তুমি, লঙ্কাকে বর্বরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছ, লঙ্কা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছ!
অর্থ: যার সাথে চলার গতি নীচ, সে দুর্বুদ্ধি। রাবণ বর্বর ও অত্যাচারী, তার সাথে দাঁড়িয়ে তুমি লঙ্কাকে বর্বরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছ। তুমি লঙ্কাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছ।
- চতুর্থ পঙ্ক্তি:
লঙ্কা ছিল স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল, আজ রাবণের অত্যাচারে, তা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তুমি যদি রাবণের সাথে দাঁড়িয়ে থাক, তুমিও ধ্বংসের অংশ হবে!
অর্থ: লঙ্কা একসময় স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল ছিল, কিন্তু রাবণের অত্যাচারে আজ তা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তুমি যদি রাবণের সাথে দাঁড়িয়ে থাক, তাহলে তুমিও ধ্বংসের অংশ হবে।
- পঞ্চম পঙ্ক্তি:
এখনও সময় আছে, তুমি সঠিক পথে ফিরে আসতে পারো, রাবণকে ত্যাগ করে রামচন্দ্রের পক্ষে দাঁড়াতে পারো, তাহলে তুমি লঙ্কাকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারো!
অর্থ: এখনও সময় আছে, তুমি সঠিক পথে ফিরে আসতে পারো। তুমি রাবণকে ত্যাগ করে রামচন্দ্রের পক্ষে দাঁড়াতে পারো। তাহলে তুমি লঙ্কাকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারো।
**এইভাবে সহজ ভাষায় বি
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার মূলভাব
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার মূলভাব হল নীতিবোধের জয়। কবিতায়, মেঘনাদ বিভীষণকে রাবণের প্রতি তার আনুগত্য ত্যাগ করার আহ্বান জানান। তিনি বিভীষণকে বলেন যে, রাবণ একজন বর্বর ও অত্যাচারী রাজা। তিনি আরও বলেন যে, বিভীষণ যদি রাবণের সাথে থাকেন, তাহলে তিনিও ধ্বংসের অংশ হবেন।
মেঘনাদ বিভীষণকে ধর্ম ও নীতির কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন যে, ধর্মশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, গুণবান ব্যক্তি পরের হলেও শ্রেয়, তবুও নির্গুণ স্বজন শ্রেয়। কিন্তু বিভীষণ নির্গুণ রাবণের সাথে দাঁড়িয়েছেন, তাই তিনি ধর্ম ত্যাগ করেছেন।
মেঘনাদ বিভীষণকে সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, এখনও সময় আছে, বিভীষণ রাবণকে ত্যাগ করে রামচন্দ্রের পক্ষে দাঁড়াতে পারেন। তাহলে তিনি লঙ্কাকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারেন।
কবিতাটিতে মেঘনাদ বিভীষণকে রাবণের প্রতি তার আনুগত্য ত্যাগ করার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে নীতিবোধের জয়ের আশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, নীতিবোধ শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে।
কবিতাটির মূলভাব নিম্নরূপ:
- নীতিবোধ সর্বোচ্চ।
- নীতিবোধের বিপরীত কোনো কিছুই স্থায়ী হতে পারে না।
- নীতিবোধের জয়ের জন্য সবসময় সংগ্রাম করা উচিত।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার পাঠ পরিচিতি
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত একটি অমিত্রাক্ষর ছন্দের কবিতা। এটি মেঘনাদবধ কাব্য গ্রন্থের প্রথম সর্গ থেকে গৃহীত। কবিতায়, রামের সেনাপতি মেঘনাদ তার চাচা বিভীষণকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখছেন।
কবিতাটির পাঠ পরিচিতি নিম্নরূপ:
- কবিতাটির নাম: বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
- কবি: মাইকেল মধুসূদন দত্ত
- গ্রন্থ: মেঘনাদবধ কাব্য
- সর্গ: প্রথম
- বিষয়বস্তু:
- মেঘনাদ বিভীষণকে রাবণের প্রতি তার আনুগত্য ত্যাগ করার আহ্বান জানান।
- তিনি বিভীষণকে বলেন যে, রাবণ একজন বর্বর ও অত্যাচারী রাজা।
- তিনি আরও বলেন যে, বিভীষণ যদি রাবণের সাথে থাকেন, তাহলে তিনিও ধ্বংসের অংশ হবেন।
- মেঘনাদ বিভীষণকে ধর্ম ও নীতির কথা মনে করিয়ে দেন।
- তিনি বলেন যে, ধর্মশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, গুণবান ব্যক্তি পরের হলেও শ্রেয়, তবুও নির্গুণ স্বজন শ্রেয়।
- কিন্তু বিভীষণ নির্গুণ রাবণের সাথে দাঁড়িয়েছেন, তাই তিনি ধর্ম ত্যাগ করেছেন।
- মেঘনাদ বিভীষণকে সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
- তিনি বলেন যে, এখনও সময় আছে, বিভীষণ রাবণকে ত্যাগ করে রামচন্দ্রের পক্ষে দাঁড়াতে পারেন। তাহলে তিনি লঙ্কাকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারেন।
- কবিতাটির মূলভাব:
- নীতিবোধের জয়
- কবিতাটির ভাষা:
- কবিতাটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত।
- কবিতার ভাষা সরল ও প্রাঞ্জল।
- কবিতার ভাষায় মাঝে মাঝে অলঙ্কারের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
- কবিতাটির শব্দচয়ন:
- কবিতার শব্দচয়ন অত্যন্ত সচেতন ও সুনিপুণ।
- কবিতার শব্দগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
- কবিতাটির ছন্দ:
- কবিতাটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত।
- কবিতার ছন্দের ব্যবহার অত্যন্ত সুষম ও সুন্দর।
- কবিতাটির ছন্দের মাত্রা:
- কবিতার প্রতিটি পঙ্ক্তিতে ১১ থেকে ১৫ মাত্রা থাকে।
- কবিতাটির ছন্দের বিন্যাস:
- কবিতার ছন্দের বিন্যাস অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়।
- কবিতাটির ছন্দের প্রভাব:
- কবিতার ছন্দের প্রভাবে কবিতাটি শ্রুতিমধুর ও মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছে।
- কবিতাটির গঠন:
- কবিতাটি পাঁচটি পঙ্ক্তিতে বিভক্ত।
- প্রতিটি পঙ্ক্তিতে ১১ থেকে ১৫ মাত্রা থাকে।
- কবিতাটির বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকের প্রভাব:
- কবিতার বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকের প্রভাবে কবিতাটি একটি উচ্চাঙ্গের কাব্য হয়ে উঠেছে।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবিতায় তিনি নীতিবোধের জয়ের আশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, নীতিবোধ শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে।