সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন কয়টি ও কি কি?
বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪ ধারায় সুপ্রিম কোর্টের কাঠামো বর্ণিত আছে। এই ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট” নামে বাংলাদেশের একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকিবে এবং আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ লইয়া তাহা গঠিত হইবে।
সুতরাং, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মোট দুটি বিভাগ রয়েছে। যথা:
- আপিল বিভাগ
- হাইকোর্ট বিভাগ
আপিল বিভাগ
আপিল বিভাগ হলো সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ বিভাগ। এই বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। আপিল বিভাগ নিম্ন আদালত এবং ট্রাইবুনাল থেকে আপিল শুনানি করে থাকে। এছাড়াও, আপিল বিভাগ দেশের আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।
হাইকোর্ট বিভাগ
হাইকোর্ট বিভাগ হলো সুপ্রিম কোর্টের প্রাথমিক বিভাগ। এই বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ ৮৮ জন বিচারপতি রয়েছেন। হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালত থেকে আপিল শুনানি করে থাকে। এছাড়াও, হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালতের আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে জামিন, রুল, ক্ষতিপূরণ, স্থগিতাদেশ, রিভিউ ইত্যাদি বিষয়ে আদেশ দিতে পারে।
সুতরাং, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মোট দুটি বিভাগ রয়েছে। আপিল বিভাগ হলো সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ হলো সুপ্রিম কোর্টের প্রাথমিক বিভাগ।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোথায় অবস্থিত
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের রমনায় অবস্থিত। সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনটি ১৯৬১ সালে নির্মিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে একটি সুন্দর উদ্যান রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
সুপ্রিম কোর্টের ঠিকানা:
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রমনা, ঢাকা-১০০০ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রথম কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪ ধারায় সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আইনি বিধান ব্যক্ত করা হয়েছে।
এই ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট” নামে বাংলাদেশের একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকিবে এবং আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ লইয়া তাহা গঠিত হইবে।
তবে, ১৭৭৪ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট অফ জুডিকেচার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আদালতটিই পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মূল ভিত্তি রচনা করে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কে?
আজকের তারিখ, ২০২৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি ২০২৩ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর থেকে এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগ
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হলো সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ বিভাগ। এই বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। আপিল বিভাগ নিম্ন আদালত এবং ট্রাইবুনাল থেকে আপিল শুনানি করে থাকে। এছাড়াও, আপিল বিভাগ দেশের আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।
আপিল বিভাগের বিচারিক ক্ষমতা
আপিল বিভাগের বিচারিক ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে:
- নিম্ন আদালত এবং ট্রাইবুনালের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি করা।
- দেশের আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করা।
- নিম্ন আদালতের আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে জামিন, রুল, ক্ষতিপূরণ, স্থগিতাদেশ, রিভিউ ইত্যাদি বিষয়ে আদেশ দেওয়া।
আপিল বিভাগের অন্যান্য ক্ষমতা
আপিল বিভাগের অন্যান্য ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে:
- আইনি নীতিমালা প্রণয়ন করা।
- আইনের সঙ্গতিতা পর্যালোচনা করা।
- রাষ্ট্রপতির শপথবাক্য গ্রহণ করা।
- রাষ্ট্রপতির নিকট থেকে রাষ্ট্রপতির সংবিধানগত ক্ষমতা গ্রহণ করা।
আপিল বিভাগের কার্যক্রম
আপিল বিভাগের কার্যক্রম প্রধানত দুইটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে, আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করেন এবং শুনানির জন্য কোন মামলা গ্রহণ করবেন তা নির্ধারণ করেন। দ্বিতীয় ধাপে, আপিল বিভাগ মামলার শুনানি করে রায় প্রদান করেন।
আপিল বিভাগের শুনানি সাধারণত সপ্তাহে দুই দিন অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি শুনেন এবং মামলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। শুনানি শেষে, আপিল বিভাগ রায় প্রদান করেন।
আপিল বিভাগের রায়
আপিল বিভাগের রায় চূড়ান্ত এবং আইনের দৃষ্টিতে বাধ্যতামূলক। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় না।
আপিল বিভাগের অবদান
বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থায় আপিল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আপিল বিভাগ নিম্ন আদালতের রায়ের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে আইনের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও, আপিল বিভাগ দেশের আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করে আইনের সঙ্গতিতা নিশ্চিত করেছে।
সুপ্রিম কোর্ট কজ লিস্ট
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের প্রতিদিনের শুনানির জন্য মামলার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই তালিকাটিকে “কজ লিস্ট” বলা হয়। কজ লিস্টে মামলার সংখ্যা, মামলার পক্ষগণ, মামলার বিষয়বস্তু এবং শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখ উল্লেখ করা থাকে।
আপনি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে কজ লিস্ট দেখতে পারেন। ওয়েবসাইটের “নোটিশ” বিভাগে কজ লিস্ট প্রকাশ করা হয়। আপনি কজ লিস্ট ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
আপিল বিভাগের কজ লিস্ট
আপিল বিভাগের কজ লিস্টে নিম্ন আদালত এবং ট্রাইবুনালের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য মামলাগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে। কজ লিস্টে সাধারণত মামলার সংখ্যা ১০০ থেকে ২০০ এর মধ্যে থাকে।
আপিল বিভাগের কজ লিস্টে মামলার বিষয়বস্তু বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন:
- সিভিল মামলা: সম্পত্তি, দেওয়ানী, বাণিজ্যিক, পারিবারিক, সামাজিক আইন ইত্যাদি বিষয়ের উপর মামলা।
- ক্রিমিনাল মামলা: ফৌজদারী আইনের বিভিন্ন বিষয়ের উপর মামলা।
- অন্যান্য মামলা: সংবিধান, প্রশাসনিক আইন, ট্রেডমার্ক, কোম্পানি আইন ইত্যাদি বিষয়ের উপর মামলা।
হাইকোর্ট বিভাগের কজ লিস্ট
হাইকোর্ট বিভাগের কজ লিস্টে নিম্ন আদালতের আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে জামিন, রুল, ক্ষতিপূরণ, স্থগিতাদেশ, রিভিউ ইত্যাদি বিষয়ে মামলাগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে। কজ লিস্টে সাধারণত মামলার সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকে।
হাইকোর্ট বিভাগের কজ লিস্টে মামলার বিষয়বস্তু বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন:
- সিভিল মামলা: সম্পত্তি, দেওয়ানী, বাণিজ্যিক, পারিবারিক, সামাজিক আইন ইত্যাদি বিষয়ের উপর মামলা।
- ক্রিমিনাল মামলা: ফৌজদারী আইনের বিভিন্ন বিষয়ের উপর মামলা।
- অন্যান্য মামলা: সংবিধান, প্রশাসনিক আইন, ট্রেডমার্ক, কোম্পানি আইন ইত্যাদি বিষয়ের উপর মামলা।
কজ লিস্টে মামলা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা
কজ লিস্টে মামলা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য মামলাটিকে নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করতে হবে:
- মামলাটি অবশ্যই আইনসম্মত হতে হবে।
- মামলাটি অবশ্যই শুনানির জন্য উপযুক্ত হতে হবে।
- মামলাটি অবশ্যই শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখে আদালতে দায়ের করা হতে হবে।
কজ লিস্টে মামলা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন
আপনি যদি মনে করেন যে আপনার মামলাটি কজ লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য, তাহলে আপনি আদালতে আবেদন করতে পারেন। আবেদনপত্রে মামলার বিবরণ, মামলার পক্ষগণ, মামলার বিষয়বস্তু এবং শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
আবেদনপত্রটি আদালতের নির্ধারিত ফরমেটে লিখতে হবে। আবেদনপত্রটি আদালতের রেজিস্ট্রারের কাছে দায়ের করতে হবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায়
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায় হলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত। এই রায় চূড়ান্ত এবং আইনের দৃষ্টিতে বাধ্যতামূলক। সুপ্রিম কোর্টের রায় দেশের আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করে এবং আইনের সঙ্গতিতা নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন:
- আপিল রায়: নিম্ন আদালত এবং ট্রাইবুনালের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট যে রায় প্রদান করে তাকে আপিল রায় বলে।
- অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ: মামলার শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট যে আদেশ প্রদান করে তাকে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বলে। এই আদেশ সাধারণত জামিন, স্থগিতাদেশ, ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রদান করা হয়।
- ঐতিহাসিক রায়: যে রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট দেশের আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করে বা আইনের সঙ্গতিতা নিশ্চিত করে তাকে ঐতিহাসিক রায় বলে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায় বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা হয়। যেমন:
- মুদ্রিত ভাষায়: সুপ্রিম কোর্টের রায়কে মুদ্রিত ভাষায় প্রকাশ করা হয়। এই রায়গুলোকে “ল রিপোর্টস” বলা হয়।
- ইন্টারনেটে: সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়গুলো ডাউনলোড করা যায়।
- আইনজীবীদের পত্রিকায়: সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আইনজীবীদের পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। এই পত্রিকাগুলোতে রায়গুলোর সংক্ষিপ্তসার প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এই রায়গুলো দেশের আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করে এবং আইনের সঙ্গতিতা নিশ্চিত করে। সুতরাং, বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।