কবি: মাইকেল মধুসূদন দত্ত
বঙ্গানুবাদ:
সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে! সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে; সতত যেমতি লোক নিশার স্বপনে শোনে মায়া-মন্ত্রধক্ষনি) তব কলকলে জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!
বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে, কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে? দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা? – যত দিন যাবে,
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে বারি-রূপ কর তুমি;
এ মিনতি, গাবে বঙ্গজ জনের কানে,
সখে, সখা-রীতে নাম তার,
এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে
লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে।
মূল কবিতা:
সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে!
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;
সতত যেমতি লোক নিশার স্বপনে শোনে
মায়া-মন্ত্রধক্ষনি) তব কলকলে জুড়াই এ কান আমি
ভ্রান্তির ছলনে!
বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা? – যত দিন যাবে,
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে বারি-রূপ কর তুমি;
এ মিনতি, গাবে বঙ্গজ জনের কানে,
সখে, সখা-রীতে নাম তার,
এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে
লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে।
কবিতাটির ব্যাখ্যা:
এই কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা একটি বিখ্যাত কবিতা। এটিতে কবি তার পৈতৃক নিবাস যশোরের কপোতাক্ষ নদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন।
কবি কপোতাক্ষ নদকে তার মনের সঙ্গী হিসেবে দেখেন। তিনি যেখানেই যান, সেখানেই নদের কথা মনে পড়ে। তিনি নদের কলকল ধ্বনি শুনে মনে করেন যেন কোন মায়া-মন্ত্রধক্ষনি তাকে ডাকছে।
কবি বিশ্বাস করেন যে কপোতাক্ষ নদ তার জন্মভূমি যশোরের প্রাণ। তিনি বলেন যে তিনি অন্য দেশে অনেক নদ দেখেছেন, কিন্তু কপোতাক্ষ নদের মতো সুন্দর ও স্নেহশীল নদ তিনি দেখেননি।
কবি আশা করেন যে তিনি আবার কপোতাক্ষ নদের তীরে ফিরে আসতে পারবেন। তিনি চান যে নদ তার জন্মভূমি যশোরের মানুষের জন্য বরকত বয়ে আনুক।
কবিতাটির ভাষা ও ছন্দ:
কবিতাটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত। কবির ভাষা অত্যন্ত সরল ও প্রাঞ্জল। তিনি কপোতাক্ষ নদের প্রতি তার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন।
কবিতাটির মূলভাব:
কবিতাটির মূলভাব হলো দেশপ্রেম ও মাতৃভূমিতে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা। কবি তার পৈতৃক নিবাস যশোরের কপোতাক্ষ নদকে তার মনের সঙ্গী হিসেবে দেখেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে কপোতাক্ষ নদ তার জন্মভূমি যশোরের প্রাণ। তিনি আশা করেন যে তিনি আবার কপোতাক্ষ নদের তীরে ফিরে আসতে পারবেন।
কবিতাটির কিছু উল্লেখযোগ্য দিক:
- কবি তার পৈতৃক নিবাস যশোরের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্র
কপোতাক্ষ নদ কোথায়
কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদ। এই নদের উৎপত্তি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে। মাথাভাঙ্গা নদীর একটি শাখা যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় ভৈরব ও কপোতাক্ষ দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে কপোতাক্ষ নদ নামে পরিচিত হয়।
কপোতাক্ষ নদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ১৫০ মিটার। নদীটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় শিবসা নদীতে পতিত হয়েছে।
কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার কৃষিকাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, নদীটি মৎস্য সম্পদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কপোতাক্ষ নদের অবস্থান নিম্নরূপ:
- উৎপত্তিস্থল: চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদী
- প্রবাহিত জেলা: যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা
- মোহনা: খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় শিবসা নদী
- দৈর্ঘ্য: ১৮০ কিলোমিটার
- প্রস্থ: ১৫০ মিটার
উৎপত্তি
কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদ। এই নদের উৎপত্তি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে। মাথাভাঙ্গা নদীর একটি শাখা যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় ভৈরব ও কপোতাক্ষ দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে কপোতাক্ষ নদ নামে পরিচিত হয়।
কপোতাক্ষ নদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ১৫০ মিটার। নদীটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় শিবসা নদীতে পতিত হয়েছে।
কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার কৃষিকাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, নদীটি মৎস্য সম্পদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। এক মতে, নদীটি মাথাভাঙ্গা নদীর একটি শাখা হিসেবে উৎপন্ন হয়েছে। অপর মতে, নদীটি প্রস্তর যুগে উৎপন্ন হয়েছিল।
কপোতাক্ষ নদের নামকরণ সম্পর্কেও বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। এক মতে, নদীটির নামকরণ হয়েছে কপোত বা পায়রার অক্ষির মতো স্বচ্ছ পানি থাকার কারণে। অপর মতে, নদীটির নামকরণ হয়েছে কপোত বা পায়রার বাসস্থান থাকার কারণে।
কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমান অবস্থা
কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। একসময় এই নদ ছিল বহমান ও প্রাণবন্ত। কিন্তু বর্তমানে নদটি মৃতপ্রায়।
কপোতাক্ষ নদের বর্তমান অবস্থার জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- পলি জমে ভরাট হওয়া: কপোতাক্ষ নদের তলদেশে প্রচুর পরিমাণে পলি জমে গেছে। এ কারণে নদীর গভীরতা কমে গেছে এবং প্রবাহের গতি কমে গেছে।
- নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবৈধ দখল: নদীর তীরবর্তী এলাকায় অনেক মানুষ অবৈধভাবে দখল করে আছে। এ কারণে নদীর প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে।
- নদীবিধ্বংসী কার্যকলাপ: নদীর তীরবর্তী এলাকায় অনেক মানুষ নদীবিধ্বংসী কার্যকলাপ করছে। এতে নদীর ক্ষতি হচ্ছে।
কপোতাক্ষ নদের বর্তমান অবস্থার কারণে যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার কৃষিকাজ, মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
কপোতাক্ষ নদকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- নদীর তলদেশ থেকে পলি অপসারণ
- নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ
- নদীবিধ্বংসী কার্যকলাপ বন্ধ করা
এই উদ্যোগগুলো সফল হলে কপোতাক্ষ নদকে আবার প্রাণবন্ত করা সম্ভব হবে।
কপোতাক্ষ নদ রক্ষার জন্য জনগণের সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ। জনগণকে নদীর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং নদীর প্রতি তাদের আন্তরিকতা বাড়াতে হবে।
সাহিত্যে কপোতাক্ষ নদ
বাংলা সাহিত্যে কপোতাক্ষ নদ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার কপোতাক্ষ নদ কবিতাটিতে এই নদের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। এই কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ।
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার শৈশবকাল কপোতাক্ষ নদের তীরে কাটিয়েছেন। এই নদ তার মনের সঙ্গী ছিল। তিনি যখন ফ্রান্সে ছিলেন, তখনও তিনি কপোতাক্ষ নদের কথা মনে করতেন।
কপোতাক্ষ নদ কবিতাটিতে কবি তার পৈতৃক নিবাস যশোরের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। তিনি কপোতাক্ষ নদকে তার মনের সঙ্গী হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন যে তিনি অন্য দেশে অনেক নদ দেখেছেন, কিন্তু কপোতাক্ষ নদের মতো সুন্দর ও স্নেহশীল নদ তিনি দেখেননি।
কবি আশা করেন যে তিনি আবার কপোতাক্ষ নদের তীরে ফিরে আসতে পারবেন। তিনি চান যে নদ তার জন্মভূমি যশোরের মানুষের জন্য বরকত বয়ে আনুক।
কপোতাক্ষ নদ কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ। এই কবিতাটি শুধুমাত্র কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রতিভাকেই প্রকাশ করে না, বরং বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
কপোতাক্ষ নদ ছাড়াও, বাংলা সাহিত্যে আরও অনেক কবি ও সাহিত্যিক এই নদকে তাদের রচনায় স্থান দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- কাজী নজরুল ইসলাম
- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
- সুকুমার রায়
- অন্নদাশঙ্কর রায়
- অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
এই কবি ও সাহিত্যিকরা তাদের রচনায় কপোতাক্ষ নদের সৌন্দর্য, মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।