ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁতের পাথর দূর করবেন যেভাবে

ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁতের পাথর দূর করবেন যেভাবে
ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁতের পাথর দূর করবেন যেভাবে  ক্যানভা

দাঁতের পাথর বা টার্টার হল দাঁতে জমা হওয়া একটি কঠিন পদার্থ যা দাঁতের এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং দাঁত ক্ষয়, দুর্গন্ধ এবং মাড়ির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যদিও দাঁতের পাথর দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া, তবে কিছু ঘরোয়া উপায়ও আছে যা আপনি চেষ্টা করতে পারেন।

যেসব ঘরোয়া উপায় দাঁতের পাথর দূর করতে সাহায্য করতে পারে:

  • বেকিং সোডা: বেকিং সোডা একটি প্রাকৃতিক এব্রেসিভ যা দাঁতের পাথরকে নরম করে তুলতে সাহায্য করতে পারে। এক চামচ বেকিং সোডাকে এক চামচ পানির সাথে মিশিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। তবে, বেকিং সোডা দিয়ে প্রতিদিন ব্রাশ করা উচিত নয় কারণ এটি দাঁতের এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • হাইড্রোজেন পারক্সাইড: হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি এন্টিসেপটিক যা ব্যাকটেরিয়া মারতে সাহায্য করে। এক চামচ হাইড্রোজেন পারক্সাইডকে এক চামচ পানির সাথে মিশিয়ে মুখ কুলি করুন। তবে, এটি দিয়ে প্রতিদিন কুলি করবেন না।
  • লেবুর রস: লেবুর রসে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে যা দাঁতের পাথরকে নরম করতে সাহায্য করতে পারে। একটি লেবুর রস একটি টুথব্রাশে লাগিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। তবে, লেবুর রস দাঁতের এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তাই এটি সপ্তাহে একবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • নারকেল তেল: নারকেল তেল ব্যাকটেরিয়া মারতে সাহায্য করে এবং দাঁতের পাথরকে নরম করে তুলতে পারে। এক চামচ নারকেল তেল মুখে নিয়ে ১৫-২০ মিনিট ধরে ঘুরিয়ে ফেলুন। এরপর গরম পানি দিয়ে কুলি করুন।
  • নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা এবং ফ্লস করা: দিনে দুবার ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা এবং দিনে একবার ফ্লস করা দাঁতের পাথর জমাকে রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
  • আপেল সিডার ভিনেগার: আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিড থাকে যা দাঁতের পাথরকে নরম করতে সাহায্য করতে পারে। এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগারকে এক কাপ পানিতে মিশিয়ে মুখ কুলি করুন। তবে, এটি দাঁতের এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তাই এটি সপ্তাহে একবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।

মনে রাখবেন:

  • ঘরোয়া উপায়গুলি দাঁতের পাথর সম্পূর্ণরূপে দূর করতে পারে না।
  • দাঁতের পাথরের সমস্যা যদি গুরুতর হয়, তাহলে অবশ্যই দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • উপরের উল্লিখিত যে কোনো উপাদান ব্যবহার করার আগে আপনার দাঁতের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

দাঁতের পাথর প্রতিরোধ করার জন্য আপনি আরো কিছু করতে পারেন:

  • সুগারযুক্ত খাবার এবং পানীয় কম খাওয়া।
  • ধূমপান করা বন্ধ করা।
  • নিয়মিত দাঁতের চেকআপ করানো।

দাঁতে পাথর কেন হয়

দাঁতে পাথর বা টার্টার জমার পেছনে মূলত দুটি প্রধান কারণ রয়েছে:

১. দাঁতের প্লাক জমা:

    • প্লাক কী? দাঁতের প্লাক হল একটি নরম, স্টিকি পদার্থ যা ব্যাকটেরিয়া, খাবারের অবশেষ এবং লালা দিয়ে তৈরি।
    • প্লাক জমার কারণ: যখন আমরা খাই, তখন খাবারের কণা দাঁতে আটকে যায়। এই কণাগুলোতে থাকা শর্করা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য খাদ্য হিসাবে কাজ করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলোই প্লাক তৈরি করে।
    • প্লাক থেকে টার্টার: সময়ের সাথে সাথে, এই প্লাক কঠিন হয়ে টার্টার বা দাঁতের পাথরে পরিণত হয়। টার্টারকে ঘরে বসে দূর করা কঠিন, কারণ এটি দাঁতের এনামেলের সাথে শক্তভাবে আটকে যায়।
Image of Plaque buildup on teeth

২. দাঁতের যত্নের অভাব:

  • নিয়মিত ব্রাশ না করা: দাঁত ব্রাশ না করলে বা নিয়মিত ফ্লস না করলে প্লাক দাঁতে জমতে থাকে এবং টার্টারে পরিণত হয়।
  • মুখ কুলি না করা: মুখ কুলি করলে মুখের ব্যাকটেরিয়া কমে এবং দাঁতে প্লাক জমার সম্ভাবনা কমে।
  • দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে যাওয়া: দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে থাকলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায় এবং প্লাক জমতে থাকে।

দাঁতে পাথর জমার ফলে কী হয়?

  • দাঁত ক্ষয়: টার্টার দাঁতের এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দাঁত ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
  • মাড়ির সমস্যা: টার্টার মাড়িকে উত্তেজিত করে এবং মাড়ির রোগের কারণ হতে পারে।
  • মুখের দুর্গন্ধ: টার্টারে থাকা ব্যাকটেরিয়া মুখের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।
  • দাঁত হারানো: যদি টার্টারের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তাহলে এটি দাঁত হারানোর কারণ হতে পারে।

দাঁতে পাথর জমার প্রতিরোধ:

  • নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন: দিনে দুবার ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন।
  • নিয়মিত ফ্লস করুন: দাঁতের ফাঁকে খাবারের কণা আটকে থাকলে ফ্লস করে পরিষ্কার করুন।
  • মুখ কুলি করুন: খাবার খাওয়ার পর মুখ কুলি করুন।
  • সুগারযুক্ত খাবার কম খান: চিনি ব্যাকটেরিয়ার জন্য খাদ্য হিসাবে কাজ করে।
  • ধূমপান বন্ধ করুন: ধূমপান দাঁতের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
  • নিয়মিত দাঁতের চেকআপ করান: বছরে অন্তত দুবার দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
Image of Healthy teeth vs. teeth with tartar

মাত্র ৫ দিনে দাঁতের গর্ত, ব্যথা, নোংরা পাথর দূর করুন

দাঁতের গর্ত, ব্যথা এবং পাথর দূর করতে সময় লাগে। মাত্র ৫ দিনে এই সমস্যাগুলি সম্পূর্ণরূপে দূর করার কোনো ঘরোয়া উপায় নেই।

কেন?

  • দাঁতের গঠন: দাঁতের গঠন কঠিন এবং এতে গর্ত হলে তা সহজে মেরামত হয় না।
  • ব্যাকটেরিয়া: দাঁতের সমস্যার মূল কারণ হল ব্যাকটেরিয়া। ব্যাকটেরিয়াকে সম্পূর্ণরূপে দূর করতে সময় লাগে।
  • পাথর: দাঁতের পাথর হল কঠিন খনিজ পদার্থ। এটি দূর করতে পেশাদার পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন।

কী করবেন?

  • দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন: দাঁতের সমস্যা যদি গুরুতর হয়, তাহলে অবশ্যই দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তিনি আপনার দাঁতের অবস্থা পরীক্ষা করে উপযুক্ত চিকিৎসা দেবেন।
  • নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করুন: দিনে দুবার ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন এবং দিনে একবার ফ্লস করুন।
  • সুগারযুক্ত খাবার এবং পানীয় কম খান: চিনি ব্যাকটেরিয়ার জন্য খাদ্য হিসাবে কাজ করে। তাই চিনিযুক্ত খাবার কম খেলে দাঁতের সমস্যা কম হবে।
  • ধূমপান বন্ধ করুন: ধূমপান দাঁতের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
  • নিয়মিত দাঁতের চেকআপ করান: বছরে অন্তত দুবার দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ঘরোয়া উপায়:

ঘরোয়া কিছু উপায় দাঁতের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে এগুলি দাঁতের ডাক্তারের চিকিৎসার বিকল্প নয়।

  • বেকিং সোডা: বেকিং সোডা দাঁতের পাথরকে নরম করতে সাহায্য করতে পারে।
  • হাইড্রোজেন পারক্সাইড: হাইড্রোজেন পারক্সাইড ব্যাকটেরিয়া মারতে সাহায্য করে।
  • লেবুর রস: লেবুর রস দাঁতের পাথরকে নরম করতে সাহায্য করতে পারে।

মনে রাখবেন:

  • ঘরোয়া উপায়গুলি দাঁতের পাথর সম্পূর্ণরূপে দূর করতে পারে না।
  • দাঁতের পাথরের সমস্যা যদি গুরুতর হয়, তাহলে অবশ্যই দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • উপরের উল্লিখিত যে কোনো উপাদান ব্যবহার করার আগে আপনার দাঁতের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

সুস্থ দাঁতের জন্য সঠিক পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি।

Image of দাঁতের ডাক্তার
Image of দাঁত পরিষ্কার করার উপায়

অয়েল পুলিং বা তেল দিয়ে কুলকুচি করার পদ্ধতি দাঁতের যত্নে একটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক উপায়। এটি মুখের ব্যাকটেরিয়া কমাতে, মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, অয়েল পুলিং একাই দাঁতের পাথর বা টার্টার সম্পূর্ণরূপে দূর করতে পারে না।

কেন?

  • টার্টারের গঠন: টার্টার হল ক্যালসিয়াম এবং ফসফেটের একটি কঠিন পদার্থ যা দাঁতে জমা হয়ে যায়। এটি খুবই শক্ত এবং ঘরোয়া উপায়ে একে সম্পূর্ণরূপে দূর করা কঠিন।
  • পেশাদার পরিচ্ছন্নতা: টার্টার দূর করার জন্য দাঁতের ডাক্তারের কাছে স্কেলিং এবং রুটিং করা প্রয়োজন। এটি একটি পেশাদার পরিচ্ছন্নতা প্রক্রিয়া যা শুধুমাত্র দাঁতের ডাক্তারই করতে পারেন।

অয়েল পুলিং এর উপকারিতা:

  • ব্যাকটেরিয়া কমায়: মুখের ব্যাকটেরিয়া কমিয়ে দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করে: মুখের দুর্গন্ধের একটি প্রধান কারণ হল ব্যাকটেরিয়া। অয়েল পুলিং ব্যাকটেরিয়া কমিয়ে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
  • দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে: নিয়মিত অয়েল পুলিং করলে দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং দাঁত স্বাভাবিকভাবেই চকচকে হয়ে ওঠে।

তাহলে কি অয়েল পুলিং করার দরকার নেই?

অবশ্যই না। অয়েল পুলিং একটি দারুণ প্রাকৃতিক উপায় যা আপনার দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এটি দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ এবং পেশাদার পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নয়।

সারসংক্ষেপ:

  • অয়েল পুলিং দাঁতের পাথর বা টার্টার দূর করতে পারে না।
  • টার্টার দূর করার জন্য দাঁতের ডাক্তারের কাছে স্কেলিং এবং রুটিং করা প্রয়োজন।
  • অয়েল পুলিং মুখের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে এবং দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শের পাশাপাশি একটি ভালো অভ্যাস।

সুতরাং, দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে:

  • নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন এবং ফ্লস করুন।
  • সুগারযুক্ত খাবার কম খান।
  • ধূমপান বন্ধ করুন।
  • নিয়মিত দাঁতের চেকআপ করান।
  • অয়েল পুলিং করুন।
Image of oil pulling

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top