মানসিক চাপ থেকে মুখে ব্রণ কেন হয়? কারণ এবং সমাধান

মানসিক চাপ থেকে মুখে ব্রণ কেন হয়? কারণ এবং সমাধান

অনেকেই ভাবেন মুখে ব্রণ শুধু হরমোন বা অপরিষ্কার ত্বকের জন্য হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন জানেন যে, মানসিক চাপও ব্রণের একটা বড় কারণ হতে পারে।

কি কারণ মানসিক চাপে ব্রণ হয়?

কর্টিসল হরমোন: মানসিক চাপের সময় শরীরে কর্টিসল নামক এক ধরনের হরমোনের মাত্রা বাড়ে। এই হরমোন তেলগ্রন্থিগুলিকে আরও বেশি তেল উৎপাদন করতে উৎসাহিত করে। অতিরিক্ত তেল ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দিয়ে ব্রণের সৃষ্টি করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে ত্বকের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে এবং ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তন মানসিক চাপের কারণে শরীরে আরও অনেক পরিবর্তন হয়, যেমন- ঘুমের সমস্যা, খাবারের অভ্যাসের পরিবর্তন, যা সরাসরি ত্বকের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।


মানসিক চাপ থেকে মুখে ব্রণের সমাধান

মানসিক চাপ কমানো: ধ্যান, যোগাসন, বা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর মতো কার্যকলাপগুলি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম নিন,নিয়মিত ব্যায়াম করুন,প্রিয় কাজগুলো করুন। ত্বকের যত্ন মুখ দিনে দুবার হালকা ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তৈলাক্ততা কমানোর পণ্য ব্যবহার করুন। ব্রণের ওষুধ ব্যবহার করার আগে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সুষম খাদ্য ফল, সবজি, এবং পানি বেশি করে খান প্রক্রিয়াজাত খাবার, মিষ্টি, এবং কফি কম খান।চিকিৎসা যদি ব্রণের সমস্যা বেশি হয়, তাহলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

মানসিক চাপ থেকে মুখে ব্রণ কেন হয়? কারণ এবং সমাধান
মানসিক চাপ থেকে মুখে ব্রণ কেন হয়? কারণ এবং সমাধান- ছবি:শাটারস্টক

মুখের কোন কোন অংশে ‘স্ট্রেস অ্যাক্নে’ হতে পারে?

স্ট্রেস অ্যাক্নে কী?: স্ট্রেস অ্যাক্নে হল মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে ত্বকের এমন এক সমস্যা, যা ত্বকের নির্দিষ্ট স্থানে ব্রণের সৃষ্টি করে। এটি মূলত হরমোনের পরিবর্তন এবং কর্টিসল হরমোনের উৎপাদন বাড়ার ফলে হয়। স্ট্রেস অ্যাক্নে বেশি দেখা যায় মুখের যেসব অংশে কপাল,অতিরিক্ত তেল ও ময়লা জমে। হজমজনিত সমস্যা বা মানসিক চাপ কপালের ব্রণের জন্য দায়ী।গাল,ফোনের স্ক্রিন বা বালিশের কভারে ব্যাকটেরিয়া জমে। মানসিক চাপ রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে গালে ব্রণ হতে পারে।থুতনি এবং চোয়াল,হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এখানে স্ট্রেস অ্যাক্নে বেশি হয়। এটি পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS)-এর লক্ষণও হতে পারে। নাক,স্ট্রেসের কারণে ত্বকের তেল উৎপাদন বেড়ে যায়, যা নাকে ব্রণের সৃষ্টি করে।

স্ট্রেস অ্যাক্নে প্রতিরোধের উপায়

স্ট্রেস কমান:যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করুন।পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন। ত্বকের যত্ন নিন,নিয়মিত ক্লিনজার ব্যবহার করুন। অ্যান্টি-অ্যাক্নে পণ্য ব্যবহার করুন, যেমন স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা বেনজয়েল পারক্সাইড। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন ফোন স্ক্রিন ও বালিশের কাভার নিয়মিত পরিষ্কার করুন। হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন। স্ট্রেস অ্যাক্নে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিফলনও। সঠিক জীবনযাত্রা এবং ত্বকের যত্নের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

মানসিক চাপে ব্রণ হয় কেন?

মানসিক চাপে ব্রণ হওয়ার কারণ: কর্টিসল হরমোন মানসিক চাপের সময় শরীরে কর্টিসল নামক একটি হরমোন বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন ত্বকের তৈলাক্ততা বাড়িয়ে দেয় এবং ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্যাকটেরিয়া জন্মে এবং ব্রণ হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া মানসিক চাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে ত্বকের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে এবং ব্রণের সমস্যা আরও খারাপ হয়ে যায়। ঘুমের ব্যাঘাত মানসিক চাপের কারণে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের হরমোনগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ত্বকের সমস্যা বাড়তে পারে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মানসিক চাপে অনেকেই অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে শুরু করেন, যেমন চিনি, চর্বিযুক্ত খাবার ইত্যাদি। এই খাবারগুলোও ব্রণের সমস্যা বাড়াতে পারে।


মানসিক চাপের কারণে ত্বকের আরও কিছু সমস্যা হতে পারে

ছবি:শাটারস্টক

  • অ্যাকনে (Acne):অতিরিক্ত মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে, যার ফলে ত্বকে ব্রণ বা অ্যাকনে দেখা দিতে পারে।
  • ত্বকের শুষ্কতা (Dryness): মানসিক চাপ শরীরের মধ্যে কেমিক্যাল পরিবর্তন ঘটায়, যা ত্বককে শুষ্ক এবং রুক্ষ করতে পারে।
  • রাশ (Rashes): মানসিক চাপ ত্বকের উপর অ্যালার্জি বা রাশ সৃষ্টি করতে পারে, যা চুলকানি বা লালচে ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
  • সোরিয়াসিস (Psoriasis): চাপের কারণে সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলো তীব্র হতে পারে, যেমন ত্বকে লাল, শুষ্ক, এবং চিটচিটে দাগ।
  • এজিং বা বয়সের ছাপ (Premature Aging): স্ট্রেস ত্বকের কোলাজেন এবং ইলাস্টিন কমিয়ে দিয়ে ত্বকের বয়স বাড়িয়ে দিতে পারে, ফলে ঝুলে পড়া ত্বক এবং বলিরেখা দেখা দেয়।
  • রোগের জন্য সোর বা ক্ষত (Wounds or Lesions): মানসিক চাপ ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে দিতে পারে, যা ত্বকে ক্ষত বা সোরের সৃষ্টি করতে পারে।

কীভাবে এড়াবেন: মানসিক চাপ কমানো  ধ্যান, যোগব্যায়াম, প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।সুষম খাদ্য গ্রহণ: ফল, সবজি, শাকসবজি সমৃদ্ধ খাবার খান। পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ত্বকের যত্ন: নিয়মিত মুখ ধোয়া, ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা ইত্যাদি। ডাক্তারের পরামর্শ: যদি সমস্যা বেড়ে যায়, তাহলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

চিকিৎসা

মানসিক চাপ (stress) শরীরে এবং ত্বকে বিভিন্ন প্রভাব ফেলে, যার মধ্যে একটি হলো মুখে ব্রণ ওঠা। মানসিক চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল (cortisol) নামক একটি হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই হরমোন ত্বকে তেল উৎপাদনের গ্ল্যান্ডগুলোকে উত্তেজিত করে, ফলে ত্বকে বেশি তেল জমে এবং ব্রণের সৃষ্টি হতে পারে।

মানসিক চাপ কমানোর উপায়:

রিল্যাক্সেশন টেকনিক: মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম অনুশীলন করুন।গভীর শ্বাস নেওয়ার অনুশীলন করুন। পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুমের রুটিন ঠিক রাখুন। শারীরিক ব্যায়াম নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে এবং শরীর সুস্থ থাকে। জগিং, সাঁতার, বা হাঁটা উপকারী হতে পারে। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ফাস্ট ফুড এবং চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। তাজা শাকসবজি, ফল এবং পানি বেশি করে খান।হবি বা মজার কাজ,গান শোনা, ছবি আঁকা, বা কোনো নতুন কিছু শেখা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

 

ত্বকের যত্ন  মুখ পরিষ্কার রাখুন দিনে দুইবার মুখ ধুয়ে নিন। এমন ক্লিনজার ব্যবহার করুন যা আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক। অপরিষ্কার হাত দিয়ে মুখে হাত দেবেন নাত্বকের জন্য সঠিক পণ্য ব্যবহার করুন, নন-কমেডোজেনিক (non-comedogenic) পণ্য ব্যবহার করুন, যা ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করবে না। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা বেনজয়েল পারক্সাইড যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। ধুলা এবং তেলমুক্ত রাখুন যদি বাইরে যান, সানস্ক্রিন এবং তেলমুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন? মানসিক চাপ হতে পারে কারণ

মানসিক চাপ থেকে মুখে ব্রণ কেন হয়? কারণ এবং সমাধান
মানসিক চাপ থেকে মুখে ব্রণ কেন হয়? কারণ এবং সমাধান- ছবি:শাটারস্টক

মানসিক চাপ ব্রণের সমস্যা সৃষ্টি বা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যখন আমাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায়, তখন শরীরে কোর্টিসল নামক হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ত্বকের তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে। অতিরিক্ত তেল ত্বকের পোরগুলো বন্ধ করে দেয়, ফলে ব্রণ হতে পারে। এছাড়া, মানসিক চাপ ত্বকের স্বাস্থ্য আরও খারাপ করতে পারে এবং ব্রণের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তবে, মানসিক চাপ ছাড়াও ব্রণ হওয়ার অন্যান্য কারণও থাকতে পারে, যেমন: হরমোনের পরিবর্তন (যেমন, প্রেগন্যান্সি, পিরিয়ডস বা হরমোনাল সমস্যা) ,পুষ্টির অভাব ,ত্বকের জন্য অযথা কেমিক্যাল ব্যবহার ,অপর্যাপ্ত ত্বক পরিচর্যা ব্রণ কমাতে, চাপ কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং সঠিক ত্বক পরিচর্যা অপরিহার্য।

উপসহার

মানসিক চাপের কারণে মুখে ব্রণ হওয়ার প্রধান কারণ হলো শরীরের হরমোনের পরিবর্তন। মানসিক চাপের সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন এবং করটিসোল হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ত্বকের তৈলগ্রন্থীকে উদ্দীপ্ত করে এবং অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে। এই অতিরিক্ত তেল ত্বকের রোমকূপ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে ব্রণ হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top