কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি

কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি? হার্ডওয়ার এর কাজ এবং প্রকারভেদ

আপনি কি জানেন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি? হার্ডওয়্যার কত প্রকার? হার্ডওয়্যার কিভাবে কাজ করে? আপনি যদি এই প্রশ্নগুলো খুঁজতে এসে থাকেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় আছেন। আপনি অবশ্যই জানেন যে একটি কম্পিউটারে প্রধানত দুটি অংশ থাকে, একটি সফ্টওয়্যার এবং অন্যটি হল হার্ডওয়্যার। সফটওয়্যার, যাকে কম্পিউটার প্রোগ্রামও বলা হয়। সফটওয়্যারের কিছু উদাহণ হল VLC প্লেয়ার, Chrome ব্রাউজার, Internet Explorer, MS-WORD, MS-PowerPoint, Photoshop, pdf রিডার এবং অপারেটিং সিস্টেম (Android, Windows, MAC, UNIX) যা আমরা সচরাচর ব্যবহার করে থাকি।

আপনি কি জানেন, এই সকল সফ্টওয়্যারের হার্ডওয়্যার ছাড়া কোন কাজেরই না। একবার ভাবুন, কীবোর্ড ছাড়া MS-WORD-এ লিখবেন কীভাবে? এমনকি একটি মাউস ছাড়া ফটোশপে কি ভাবে কাজ করবেন? আপনি যদি পিডিএফ বইটি হার্ডডিস্কে কোথাও সংরক্ষণ না করেন তবে কীভাবে এটি অ্যাডোব রিডার থেকে পড়বেন? এবার হয়ত বুঝতে পেরেছেন হার্ডওয়্যার ছাড়া সফ্টওয়্যার কোন কাজের না। কীবোর্ড, মাউস , হার্ডডিস্ক, মনিটর, মাদারবোর্ড , সিপিইউ , ইউপিএস, স্পিকার এই সব এক একটি হার্ডওয়্যার।

হার্ডওয়্যার ছাড়া, আমরা কখনই কম্পিউটারের চিত্র সম্পর্কে চিন্তাও করতে পারি না। চলুন এখন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি? এটি কত প্রকার? এটি কিভাবে কাজ করে বিস্তারিত।

হার্ডওয়্যার কি (What is Hardware)

হার্ডওয়্যার হল কম্পিউটারের সেই অংশ যা আমরা দেখতে এবং স্পর্শ করতে পারি। যদি আমরা এটিকে সঠিকভাবে বর্ণনা করি, তাহলে এটি কম্পিউটারের ভৌত ফিজিকাল উপাদান যা আমরা স্পর্শ করতে পারি, এবং এই উপাদানটি সার্কিট বোর্ড, IC এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ‍উপাদান নিয়ে গঠিত।

বিষটি যদি আমরা আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারি, যেমন আপনি এই মুহূর্তে যে স্ক্রিনে আপনি আমার লেখাটি পড়ছেন সেটি কম্পিউটার, ট্যাবলেট, মোবাইলের যেকোনো একটি হতে পারে। যার ফিজকাল অংশগুলিকে আমরা হার্ডওয়্যার বলে থাকি। একটি কম্পিউটারের সমস্ত ইনপুট, আউটপুট, প্রসেসিং এবং স্টোরেজ ডিভাইস সবই হচ্ছে হার্ডওয়্যার।

হার্ডওয়্যার ছাড়া কম্পিউটারের অস্তিত্ব নেই, এবং আপনি এটি ছাড়া কোনো সফ্টওয়্যারও ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি Software কম্পিউটারের আত্মা হয় তবে শরীর হচ্ছে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার। কিন্তু বাস্তবে হার্ডওয়্যার থেকে যেকোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।

যেকোন হার্ডওয়্যার ডিভাইসকে সচল করার জন্য সফটওয়্যার এর প্রয়োজন পড়ে। সফটওয়্যার ছাড়া কোন ইলেকট্রনিক্স হার্ডওয়্যার ডিভাইস কাজ করতে পারে না। সেটি হোক কম্পিউটার, মোবাইল, অথবা যেকোন ইলেকট্রনিক্স হার্ডওয়্যার ডিভাইস হোন না কেন।

কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের প্রকার ও কি কি (Type of computer Hardware)

হার্ডওয়্যারের প্রকারভেদ

 আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন যে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি। আপনি এটিও জানতে পেরেছেন যে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার বিভিন্ন ধরণের হয়ে থোকে। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ডিভাইস সমুহকে সাধারণত প্রধান চারটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে নিচে উদাহরণসহ তাদের বর্নণা করা হল।

1. ইনপুট ডিভাইস

ইনপুট ডিভাইস হল সেই সব ডিভাইস যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ডেটা বা নির্দেশাবলী কম্পিউটারে ইনপুট করতে পারি। ইনপুট ডিভাইস কম্পিউটার এবং মানুষের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর করে। কম্পিউটারে অনেক ইনপুট ডিভাইস আছে, এই ডিভাইসগুলো কম্পিউটারকে বিভিন্ন কাজের নির্দেশ দেয় কি করতে হবে? ইনপুট ডিভাইসগুলি অনেক ধরণের হয় এবং সকলের নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে, যেমন: টাইপ করার জন্য আমাদের কীবোর্ড রয়েছে, যা আমাদের নির্দেশাবলী টাইপ করে।

উদাহরণ: মাউস, কীবোর্ড, স্ক্যানার এবং মাইক্রোফোন ইত্যাদি।

2. আউটপুট ডিভাইস

একটি আউটপুট ডিভাইস এমন একটি ডিভাইস যা কম্পিউটারের ইনপুট ডিভাইস দ্বারা প্রদত্ত নির্দেশাবলী প্রক্রিয়া করার পরে, যে ফলাফল প্রাপ্ত হয় সেই ফলাফলটি দৃশ্যমান করার জন্য যেসকল ডিভাইস ব্যবহৃার করা হয় তাদরেকে সাধারণত আউটপুট ডিভাইস বলা হয়। কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের আউটপুট ডিভাইস থাকে।

উদাহরণ: মনিটর, প্রিন্টার, হেডফোন, স্পিকার এবং প্রজেক্টর ইত্যাদি।

3. প্রক্রিয়াকরণ ডিভাইস

আপনি যখন একটি কীবোর্ড বা অন্য কোনো ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে একটি কম্পিউটারে ডেটা পাঠান, তখন সেই ডেটাটি একটি আউটপুট ডিভাইসে পাঠানোর আগে একটি মধ্যবর্তী পর্যায়ে চলে যায়। এটি সেই পর্যায় যেখানে ডাটা সমুহকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াকরণ করা হয় এবং প্রক্রিয়াকরণ শেষে তার ফলাফল প্রদান করা হয়। প্রক্রিয়াকরণ ডিভাইস কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার অংশ, যা এই মধ্যবর্তী অবস্থা পরিচালনা করে।

উদাহরণ: CPU (সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট), GPU (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট), এবং নেটওয়ার্ক কার্ড।

4. স্টোরেজ ডিভাইস

এটি একটি হার্ডওয়্যার ডিভাইস যা ডেটা সংরক্ষণ করার কাজ করে। স্টোরেজ ডিভাইস যে কোনো কম্পিউটারের মূল উপাদানগুলির মধ্যে একটি। এটি কম্পিউটারে সমস্ত ধরণের ডেটা এবং অ্যাপ্লিকেশন সংরক্ষণ করে।

একটি কম্পিউটারে দুই ধরনের স্টোরেজ ডিভাইস রয়েছে:

প্রাথমিক স্টোরেজ ডিভাইস

এই স্টোরেজ ডিভাইসটি অস্থায়ীভাবে ডেটা ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি আকারে বেশ ছোট। যার কারণে এটি কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ। প্রাথমিক স্টোরেজ ডিভাইসে দ্রুততম ডেটা অ্যাক্সেসের গতি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে RAM, ROM এবং ক্যাশে মেমরি ।

সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইস

এই মেমরি ডিভাইসগুলির বড় স্টোরেজ ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও, এটি স্থায়ীভাবে ডেটা সংরক্ষণ করে। এটি কম্পিউটারের ভিতরে বা বাইরে উপস্থিত থাকে। এর প্রধান উদাহরণ হল হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (এইচডিডি), সলিড স্টেট ড্রাইভ (এসএসডি), অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ, ফ্ল্যাশ মেমরি এবং ইউএসবি ডিভাইস।

বিভিন্ন ধরণের কম্পিউটার হার্ডওয়্যার

আপনি অবশ্যই দুই ধরনের কম্পিউটার সিস্টেম দেখেছেন একটি হল ল্যাপটপ এবং অপরটি হল ডেস্কটপ। ল্যাপটপের সমস্ত হার্ডওয়্যার উপাদান সমুহ একসাথে সংযুক্ত করা থাকে। কিন্তু ডেস্কটপের প্রায় সকল হার্ডওয়্যার উপাদানগুলো আলাদা আলাদা ভাবে সংযুক্ত করা থাকে। কিন্তু এই দুটি ডিভাইস এর প্রায় একই রকম হার্ডওয়্যার ডিভাইস রয়েছে। চলুন কম্পিউটার এর সকল হার্ডওয়্যার ডিভাইস সম্পর্কে জানি।

কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ডিভাইস সমুহক সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে অভ্যান্তরিণ হার্ডওয়্যার ডিভাইস এবং বাহ্যিক হার্ডওয়্যার ডিভাইস। নিচে কম্পিউটারে সকল হার্ডওয়্যার ডিভাইস সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল।

1. কীবোর্ড (Keyboard)

কীবোর্ড একটি ইনপুট ডিভাইস। এটি একটি কমন ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার ডিভাইস, এটি ছাড়া আপনি কম্পিউটারে কোন ডাটা ইনপুট দিতে পারবেন না। এটির সাহায্যে আমরা কম্পিউটারের সমস্ত লেখা লেখির কাজ করতে পারি। আপনি এখন যা পড়ছেন তাও এই কীবোর্ড দিয়ে লেখা। আপনি এই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসটি দেখতে এবং হাত দিয়ে স্পর্শ করতে পারেন। এটি সর্বাধিক ব্যবহৃত ডিভাইসগুলির মধ্যে একটি। এই ডিভাইসটি সধারণত USB পোর্টে ইনস্টল করা হয়ে থাকে।

2. মাউস (Mouse)

এটি একটি পয়েন্টিং ডিভাইস এবং কার্সার মুভিং ডিভাইস নামেও পরিচিত। একটি মাউসে 2টি, 3টি বা আরো বেশি বাটন থাকতে পারে। যেমন ডান, বাম এবং মাঝের বাটনগুলি (Left key, Right Key, and Roller key) । মাউসটি সমতল পৃষ্ঠে বা মাউস প্যাডে রাখা হয়। এটি সাধারণত কার্সার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়।

3. স্ক্যানার (Scannar)

এটি একটি কম্পিউটারের বাহ্যিক হার্ডওয়্যার ডিভাইস। স্ক্যানার ব্যবহার করে, লিখিত কাগজপত্র এবং ফটোগ্রাফ ডিজিটাল ছবিতে রূপান্তরিত করা যায় এবং মেমরিতে সংরক্ষণ করা যায়। স্ক্যানারের মাধ্যমেও ডকুমেন্ট স্ক্যান করে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা যায়। একে বলা হয় Extenal Hardware ডিভাইস বলা হয়।

4. মনিটর (Monitor)

কম্পিউটার মনিটর হল একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা কিছু কম্পিউটারে আউটপুট দেখাতে ব্যবহৃত হয়। এটি দেখতে অবিকল টিভির মতো। একটি বড় এবং ভাল ডিসপ্লে রেজোলিউশন আমাদের একটি ভাল ছবি দেখায়। এই হার্ডওয়্যারটি ল্যাপটপে ছোট এবং ডেস্কটপে আপনি আপনার পছন্দ মত সাইজের নিতে পারেন। কম্পিউটার মনিটর একটি আউটপুট ডিভাইস। বিভিন্ন ধরনের মনিটর থাকতে পারে যেমন:

CRT মনিটর (CRT Monitor)

এগুলো ভারী এবং বড় এবং প্রচুর ডেস্কস্পেস এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এটি প্রাচীনতম ব্যবহৃত প্রযুক্তি। এটি ক্যাথোড রে টিউব প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে যা টেলিভিশনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।কিন্তু এই মনিটরগুলো আজকাল কাজ করে না।

এলসিডি মনিটর (LCD Monitor)

এটি এক ধরনের ফ্ল্যাট প্যানেল ডিসপ্লে আছে। এটি সিআরটি থেকে একটি নতুন প্রযুক্তি। এই মনিটর কম ডেস্ক স্পেস ব্যবহার করে। এর ওজন কম। এই মনিটর কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। দীর্ঘদিন ধরে, এই মনিটরগুলি ল্যাপটপ এবং নোটবুক কম্পিউটারে ব্যবহৃত হচ্ছে, তারা ট্যাবলেট কম্পিউটার, মোবাইল ফোনেও টাচস্ক্রিন হিসাবে কাজ করে।

5. স্পিকার (Computer Speaker)

স্পিকার একটি এক্সটার্নাল হার্ডওয়্যার ডিভাইস। এটি ব্যবহার করে আমরা শব্দ শুনতে পারি। এটি কম্পিউটারের কোন আউটপুটকে শব্দ আকারে আউটপুট দেয়। আজকাল এটি সিস্টেমে অন্তর্নির্মিত থাকে, এবং আমরা সচরাচর এটি এক্সটারনাল ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করে থাকি।

6. প্রিন্টার (Printer)

প্রিন্টার হল একটি আউটপুট ডিভাইস যা কম্পিউটার থেকে প্রাপ্ত তথ্য কাগজে মুদ্রণ করে বা প্রিন্ট করে। কাগজে আউটপুটের এই অনুলিপিকে হার্ড কপি বলে। যে তথ্যগুলি আমরা প্রিন্ট করতে চাই সেই তথ্যগুলি প্রিন্টারেই সংরক্ষণ করা যেতে পারে, তাই প্রিন্টারের একটি মেমরিও থাকে যেখান থেকে এটি ধীরে ধীরে ফলাফল প্রিন্ট করে।

7. মাদারবোর্ড (Motherboard)

মাদারবোর্ড যাকে আমরা মেইন বোর্ডও বলে থাকি। এটি কম্পিউটারের প্রধান অংশ। এটিকে যদি আপনি দেখতে চান তাহলে আপনাকে কম্পিউটার খুলতে হবে। এটি PCB বা প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড (Printed Circuit Board) নামে একটি বোর্ড। এই বোর্ড কম্পিউটারের বিভিন্ন উপাদান ধারণ করে থাকে এবং এই সমস্ত উপাদান গুলির মধ্যে হল CPU, RAM , হার্ড ডিস্ক, smps পোর্ট, গ্রাফিক্স কার্ড এবং আরো অন্যান্য।

8. CPU (Central Processing Unit)

CPU এর পুরো নাম সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট। এটি নিজে কোনো হার্ডওয়্যার নয়, এর ভেতরে রয়েছে ছোট-বড় অনেক হার্ডওয়্যার। একে কম্পিউটারের মস্তিষ্কও বলা হয়। এটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের মন যা করতে বলে আমরা তাই করি। প্রধানত এর 3টি উপাদান হল ALU, CU এবং MU। ALU যাকে বলা হয় অ্যারিথম্যাটিক এবং লজিক্যাল ইউনিট। CU কন্ট্রোল ইউনিট এবং MU মেমরি ইউনিট। ALU গাণিতিক গণনা যেমন যোগ, বিয়োগ, গুণ এবং ভাগ। LU তুলনামূলক অপারেশন করে। যেমন এর চেয়ে কম, এর চেয়ে বড়, সমান এবং সমান নয়। MU এর প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক মেমরি রয়েছে।

9. RAM (Ram)

RAM এর পুরো নাম Random Access Memory. একে ডাইরেক্ট অ্যাকসেস মেমোরিও বলা হয়, এই মেমরিটি সাধারণত কম্পিউটারের সেকেন্ডারি মেমোরির চেয়ে কম সাইজের হয়ে থাকে। এটি কম্পিউটারের প্রধান মেমরিও বলা হয়ে থাকে। কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এটি ২জিবি থেকে শুরু করে ১২৮ জিবি পর্যন্ত হয়ে থাকে। মোবাইল এর ক্ষেত্রে এটি ১GB, ২GB, ৩GB, ৬GB পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

10. সম্প্রসারণ কার্ড বা অতিরিক্ত কার্ড

আমরা জানিযে মাদারবোর্ডে আমরা PCI Slot ব্যবহার করে আরো অতিরিক্ত কিছু কার্ড ব্যবহার করতে পারি। যেগুলি ব্যবহার করে আমরা আমাদের কম্পিউটার এর কর্মক্ষমতাকে আরো বাড়িয়ে নিতে পারি, এবং অতিরিক্ত কিছু সুবিধা পেতি পারি। এসকল কার্ড এর মধ্যে রয়েছে গ্রাফিক্স কার্ড, নেটওয়ার্ক কার্ড, সাউন্ড কার্ডসহ ‍আরো অনেক।

গ্রাফিক্স কার্ড

এটি একটি ইন্টারনাল হার্ডওয়্যার ডিভাইন, এটি মাদারবোর্ডে এর সাথে যুক্ত করা হয়। মনিটরে Image Rendering/Produce করতে গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করা হয়। ডেটাকে এমনভাবে রূপান্তর করে এবং সিগন্যাল তৈরি করে যা আপনার মনিটর দ্বারা সহজেই বোঝা যায়।

গ্রাফিক্স কার্ড যত ভালো, ছবি তত ভালো তৈরি হয়। গেমার এবং ভিডিও এডিটর এর কাজ করে তাদের জন্য একটি গ্রাফিক্স কার্ড থাকা খুব জরুরী।

সাউন্ড কার্ড

এর অন্য নাম অডিও আউটপুট ডিভাইস, সাউন্ড বোর্ড বা অডিও কার্ড। সাউন্ড কার্ড একটি সম্প্রসারণ কার্ড এবং আইসি। শব্দ আউটপুট দিতে সাহায্য করে। যা আমরা স্পিকার এবং হেডফোনের মাধ্যমে শুনতে পাই।

নেটওয়ার্ক কার্ড

এটি মাদারবোর্ডে লাগানোর জন্য একটি অতিরিক্ত কার্ড, যা নেটওয়ার্ক এর জন্য ব্যবহার করা হয়। আমাদের মাদারবোর্ডে ইন্টারনালি যে লান কার্ড বিল্ডইন অবস্থায় থাকে তার কার্যক্ষমতা খুব বেশি একটা ভাল হয় না। এর কার্যক্ষমতাকে আরো বৃদ্ধি করার জন্য নেটওয়ার্ক কার্ড ব্যবহার করা হয়।

নেটওয়ার্ক কার্ড সাধারণত wireless এবং wire দুই ধরণের হয়ে থাকে। Wireless যুক্ত কার্ড এর সাহায্যে আমরা খুব সহজেই Wifi ব্যবহার করতে পারি এবং আমাদের নেটওয়ার্ককে হটস্পট এর মাধ্যমে অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে পারি।

11. SMPS

SMPS হার্ডওয়্যারের পুরো নাম হল সুইচ মোড পাওয়ার সাপ্লাই। এটি একটি ইলেকট্রনিক সার্কিট। আপনি যদি ডেস্কটপের জন্য আলাদাভাবে কিনে থাকেন তবে আপনি কিছু বর্গাকার আকৃতির বক্স পাবেন, একই রকম SMPS। এই ডিভাইসটি কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ যেমন রাম, মাদারবোর্ডে পাওয়ার সাপ্লায় দেয়, ফ্যানে পাওয়ার সাপ্লাই দেয়। যাইহোক, পাওয়ার মাদারবোর্ড থেকে বিভিন্ন অংশে যায়।

12. হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (Hard Disk Drive)

HDD বা Hard Disk Drive এটি একটি ডেটা স্টোরেজ হার্ডওয়্যার ডিভাইস। কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ভিতরে এটি সংযুক্ত করা থাকে। এর ভিতরে ফাইল বা ডেটাসমুহ বা কম্পিউটার প্রোগ্রাম জমা থাকে। অপারেটিং সিস্টেমটিও এই হার্ড ডিক্সে সংরক্ষণ করা হয়, যেটি সি ড্রাইভ নামেও পরিচিত। পার্টিশনের পর D, E, F ড্রাইভও তৈরি হয়। 

হার্ড ড্রাইভ হার্ড ডিস্ক, ফিক্সড ড্রাইভ, ফিক্সড ডিস্ক এবং ফিক্সড ডিসঅপ্টিক্যাল ড্রাইভ থেকে ডেটা পুনরুদ্ধার করে এবং সিডি, ডিভিডি এবং বিডি (ব্লু-রে ডিস্ক) এর মতো অপটিক্যাল ডিস্কে ডেটা সংরক্ষণ করে। তাদের স্টোরেজ ক্ষমতা অনেক বেশি।

13. ডিভিডি ড্রাইভ (DVD Drive)

ডিভিডি ড্রাইভ প্রতিটি ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপের সিপিইউতে ইনস্টল করা আছে। যেগুলোকে অপটিক্যাল ড্রাইভও বলা হয়। ডিভিডি ড্রাইভের আরও কিছু নাম হল ডিস্ক ড্রাইভ, সিডি ড্রাইভ, ডিভিডি ড্রাইভ। এগুলি ডিজিটাল ডেটা সংরক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়। তবে আজকাল এর ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে, এর বিকল্প হিসেবে মানুষ পেনড্রাইভ ব্যবহার করে থাকে।

14. ‍এস এস ডি ড্রাইভ (SSD Drive)

SSD Drive ও একটি সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইস যা একটি সিপিউ এর অভ্যান্তরে মাদারবোর্ড এর সাথে সংযুক্ত থাকে। এটিকে বলা হয় সলিড স্টেট ড্রাইভ (Solid State Drive), কারণ এর ভিতরে HDD এর মত কোন ঘুর্ণয়মান অংশ নেই।

এটি বর্তমান সময়ে সবয়েচে বেশি ব্যবহৃত একটি স্টোরেজ ডিভাইস। যার রিড (Read) এবং রাইট (Write) স্পিড HDD এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তবে এর দাম HDD এর তুলনায় অনেক বেশি।

15. M.2 Drive

M.2 একটি হাই স্পিড স্টোরেজ ডিভাইস। সাধারণত একটু উন্নতমানের মাদারবোর্ডে M.2 ড্রাইভ লাগানোর জন্য এক বা একাধিক M.2 পোর্ট বিল্ডইন অবস্থায় থাকে।

সাধারণত যারা কম্পিউটার ব্যবহার করে অত্যাধিক ভারি ভারি কাজ যেমন: ভিডিও এডিটিং, গেমিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রেগ্রামিং এর কাজ করে থাকে তাদের জন্য এটি অনেক ভাল।

এর দাম অন্যন্য সকল স্টোরেজ ডিভাইস এর থেকে বেশি, এবং এর পারফর্মেন্সও অন্য সকল স্টোরেজ ডিভাইস থেকে বেশি।

এ সকল কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ডিভাইস ছাড়াও আরো অনেক হার্ডওয়্যার ডিভাইস রয়েছে এবং দিন দিন এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‍মানুষের দৈনন্দিক কাজকে আরো সহজ করার জন্য দিন দিন নতুন নতুন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ডিভাইস তৈরি হচ্ছে।

হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার মধ্যে পার্থক্য

এখন পর্যন্ত আমরা কম্পিউটারের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার সম্পর্কে জানলাম। কিন্তু আমরা অনেক সময় যে বিষয় টা নিয়ে কনফিউশন এর মধ্যে পরে যাই সেটি হল হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার নিয়ে। এখানে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর মধ্যে মূল পার্থ্যক্য সমুহ তুলে ধরা হল।

হার্ডওয়্যার (Hardware)সফটওয়্যার (Software)
হার্ডওয়্যার একটি ফিজিক্যাল ডিভাইস, যা কম্পিউটারের সাথে ভৌতিকভাবে সংযুক্ত করা হয়।সফ্টওয়্যার নির্দেশক একটি গ্রুপ বা প্রোগ্রাম, যা কম্পিউটার একটি বিশেষ টাস্ক সম্পাদন করার জন্য নির্দেশ দেয়.
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার আপনি দেখতে এবং স্পর্শ পারেন।সফ্টওয়্যারটি দেখা যায় না এবং এটি স্পর্শও করা যায় না, এটি একটি প্রোগ্রাম।
Hardware বিভিন্ন উপাদান বা কম্পোনেন্ট ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।সফ্টওয়্যার তৈরি করার জন্য প্রোগ্রামিং ল্যাংওয়েজ-এ ইন্সট্রাকশন লেখা হয়।
এটি সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।এটি ব্যবহার করার জন্য হার্ডওয়্যার প্রয়োজন।
যদি হার্ডওয়্যার খারাপ হয় তবে এটি ঠিক করা যেতে পারে, বা আবার
নতুন থেকে রিপ্লেস করা যেতে পারে।
যদি কখনো সফ্টওয়্যার কারপ্ট হয় তাহলে এটি আবার নতুন করে রিইনস্টল করতে পারেন।
Computer Virus হার্ডওয়্যার এর তেমন একটি ক্ষতি করতে পারে নাকম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটার এর সফটওয়্যার এর ব্যাপক ক্ষতি সধন করতে পারে।
হার্ডার ছাড়া কম্পিউটারের কোনো অস্তিত্ব নেই, এটি ছাড়া এটি চলতে পারে না।সফটওয়্যার ছাড়াও কম্পিউটার কোন কাজ করে না। তখন এটি কেবল মাত্র একটি বক্স ছাড়া আর কিছুই না।

আমরা হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারকে যতই একে অন্যের থেকে আলাদা করি না কেন, এখানে কোনটি ছাড়া কোনটি চলতে পারে না। মানুষের শরীরের জন্য যেমন আত্তা এবং শরীর দুটিরই প্রয়োজন ঠিক তেমনি কম্পিউটারকে সচল করার জন্য হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার দুটিরই প্রয়োজন।

হার্ডওয়্যারের ভবিষ্যত (Future of Compute Hardware)

যখন প্রথম কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছিল, তখন এর সমস্ত উপাদান বিভিন্ন কক্ষে ছিল এবং সেগুলি কেবলের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। এর পরে, তৈরি করা কম্পিউটারগুলির আকার আরও হ্রাস করা হয়েছিল, যার কারণে HW এর আকারও ছোট হয়ে গেছে। ভিএলএসআই (ভেরি লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেশন) এবং এলএসআই (লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেশন) প্রযুক্তির সাহায্যে এই হার্ডওয়্যারগুলি আরও কমানো হয়েছিল। এখন প্রযুক্তির কারণে কম্পিউটারের আকার একটি ঘড়ির সমান হয়ে গেছে। ইউএলএসআই, ন্যানো প্রযুক্তি, মাইক্রোপ্রসেসরের সাহায্যে এখন ছোট আকারের এইচডব্লিউও তৈরি হচ্ছে।

উপসংহার

তাই আশা করি, এই লেখাটি পড়ে আপনি নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কী এবং কত প্রকার? এই পোস্টে, আমরা আপনার সাথে প্রায় সকল ধরনের কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। এই প্রচেষ্টা কতটা সঠিক, এই নিবন্ধে কি কোন ত্রুটি আছে? অনুগ্রহ করে মন্তব্যে আমাদের জানান। আমাদের পাঠকদের পরামর্শ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শেষ পর্যন্ত, পোস্টটি যদি তথ্যপূর্ণ হয়, তাহলে অনুগ্রহ করে এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন, যাতে এই তথ্য আপনার মাধ্যমে অন্য লোকেদের কাছে পৌঁছাতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *