পিরিয়ড কম হওয়া” বা “Hypomenorrhea” হচ্ছে একটি শারীরিক সমস্যা, যেখানে নারীর মাসিক রক্তপাতের পরিমাণ বা সময় স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়ে যায়। এটা একটি পরিচিত সমস্যা এবং বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এমনকি কিছু সাধারণ ও স্বাভাবিক কারণও থাকতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে প্রতীয়মান হয়। এই সমস্যা হওয়ার পেছনে সাধারণত শারীরিক, মনস্তাত্ত্বিক, এবং জীবনযাত্রার কারণে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ঘটে থাকে। তবে এটি মূলত একটি চিকিৎসা সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হওয়ায়, এর কারণ চিহ্নিত করা এবং যথাযথ চিকিৎসা নেয়া জরুরি।
পিরিয়ড কম হওয়ার কারণ
হরমোনের অস্বাভাবিকতা: নারী শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমোন থাকে, যার মধ্যে প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোন মাসিক চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি এগুলোর ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, তবে পিরিয়ড কম হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণত পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) বা থাইরয়েডের সমস্যার কারণে হয়। স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ অনেক সময় অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। এটি মাসিক চক্রে প্রভাব ফেলতে পারে এবং পিরিয়ড কম হতে পারে। ওজন কম বা বাড়ানো শরীরের অতিরিক্ত বা কম ওজন হরমোনের সুষম ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি বা কম হওয়া মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে পিরিয়ড কম হওয়া সম্ভব। অতিরিক্ত ব্যায়াম অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রম বা কঠিন ব্যায়াম যেমন মারাথন দৌড়ানো বা অন্য কোন উচ্চমানের শারীরিক চর্চা মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি শরীরে অতিরিক্ত টান সৃষ্টি করতে পারে, যা পিরিয়ড কম হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।গর্ভধারণ গর্ভধারণের ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা পিরিয়ডের পরিমাণ কম হতে পারে। যদি একজন নারী গর্ভধারণ করেন এবং পিরিয়ডের সময় দেখা যায় কম বা অস্বাভাবিক, তবে তা গর্ভাবস্থার লক্ষণ হতে পারে। শরীরের অসুখ বা মেটাবলিক সমস্যা যদি শরীরে কোনও গুরুতর অসুখ বা মেটাবলিক সমস্যা থাকে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বা থাইরয়েডের সমস্যা, তবে তা পিরিয়ডের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং পিরিয়ড কম হতে পারে। মেনোপজ বয়সের সাথে সাথে মহিলাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, যা মেনোপজের দিকে নিয়ে যায়। এটি সাধারণত ৪৫-৫৫ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে এবং এর ফলে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় অথবা পরিমাণ কমে যায়।
পিরিয়ড কম হওয়ার লক্ষণ
পিরিয়ড কম হওয়ার চিকিৎসা
হরমোন থেরাপি: যদি পিরিয়ড কম হওয়ার কারণ হরমোনের অস্বাভাবিকতা হয়, তবে হরমোন থেরাপি ব্যবহৃত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইস্ট্রোজেন বা প্রোজেস্টেরন হরমোনের ট্যাবলেট বা ইনজেকশন দেয়া হতে পারে। স্ট্রেস কমানো মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানোর জন্য কিছু আচরণগত পরিবর্তন যেমন যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, বা মনোরঞ্জনমূলক কার্যকলাপ করা যেতে পারে। এটা শরীরের টেনশন কমায় এবং পিরিয়ডের সময়কে স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পিরিয়ড কম হওয়ার চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং নিয়মিত ব্যায়াম পিরিয়ডের সমস্যাকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করতে পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণ ওজনের ভারসাম্য রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ওজন কমানো বা অত্যধিক ওজন বাড়ানোর ফলস্বরূপ পিরিয়ড কম হতে পারে। তবে কোনো ধরনের ডায়েট শুরু করার আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। মেডিকেল টেস্ট যদি কোন গর্ভধারণ, থাইরয়েড, বা পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) এর মত সমস্যা থেকে পিরিয়ড কম হওয়ার কারণ থাকে, তবে চিকিৎসক নির্দিষ্ট মেডিকেল পরীক্ষা করবেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা পরিকল্পনা করবেন। অতিরিক্ত ব্যায়াম কমানো খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকতে হবে, বিশেষ করে যদি ব্যায়াম বা দৌড়ানো খুব বেশি হয়। একটু বিশ্রাম এবং শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা কমিয়ে পিরিয়ডের সমস্যা সমাধান হতে পারে।গর্ভধারণের পরীক্ষা যদি মাসিক কম হওয়ার কারণ গর্ভধারণ হয়, তবে গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করার জন্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পিরিয়ড কম হওয়ার সঙ্গে যদি গর্ভধারণ সম্পর্কিত কোনো লক্ষণ থাকে, তবে তা নিশ্চিত করার জন্য গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা উচিত।
উপসংহার:
পিরিয়ড কম হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। হরমোনের সমস্যা, মানসিক চাপ, শারীরিক সমস্যা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে পিরিয়ড কম হতে পারে। এই সমস্যা মোকাবিলায় সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন অপরিহার্য। যদি পিরিয়ড কম হওয়ার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত, যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া যায় এবং স্বাস্থ্য ঠিক রাখা যায়।