আমরা অনেক সময়ই আমাদের আশে পাশে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে একটি ছোট কালো এন্যালগ মোবাইলের মত যন্ত্র দেখতে পাই। আমরা হয়ত অনেকেই জিনিসটির নাম জানি আবার অনেকে হয়ত এই ছোট কালো মেবাইলফোনের মত জিনিসটির নাম জানি না। এই জিনিসটির নাম হলো ওয়াকিটকি।
এক সময় ওয়াকিটকি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ কারী সৈন্যদের ব্যবহাররের জন্য দেওয়া হলেও বর্তমানে কিন্তু বেশ অনেক ধরনের কাজেই ওয়াকিটকি ব্যবহার করা হয়। ওয়াকিটকি করে তুলতে পারে আপনার কাজকে আরো বেশি সহজ। কিভাবে করবে সেটা নিয়ে পুরো আটির্কেল জুড়েই আলোচনা করা হবে।
তো আজকের এই আটির্কেল থেকে আমরা ওয়াকিটকি সম্পর্কেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, এর ব্যবহার, এর দাম এবং এর প্রাপ্তিস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে জানবো।
ওয়াকিটকি কি?(What is walkie talkie)
তারবিহীন ভাবে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের সাথে যোগাযোগ করার একটি যন্ত্র বা মাধ্যমকেই ওয়াকিটকি বলে। যেটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদানে সাহায্য করে । ওয়াকিটকির মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যাক্তিদের সাথে একই সময়ে যে কোন ধরনের বার্তা আদান প্রাদান করা যায় ও যে কোন ধরনের যোগাযোগ করা যায়। যোগাযোগের জন্য টেলিফোন কিংবা মোবাইল ফোনের মতো দেখতে এই যন্ত্রটির ব্যবহার আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত সহ খরচ কমাতে সহায়তা করবে এটাই ওয়াকিটকি নামে পরিচিত।
ওয়াকি টকির ইতিহাস আজকের নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে চলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একজন ব্যক্তির পিঠে একটি ছোট ব্যাগ থাকত এবং একটি অ্যান্টেনা তার উপর আটকে থাকত এবং তার পিছনে একটি ছোট ব্যক্তি। ওয়াকি টকির ইতিহাস। টকি দিয়ে তার পুরো দলের সাথে কথা বলতেন, এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের কাছে যে ওয়াকি টকি আছে তা একে অপরের সাথে কথা বলতে বা মেসেজ করতে ব্যবহৃত হয়।
আপনি প্রায়ই দেখেছেন যে পুলিশ বা আমাদের সামরিক ভাইদের যারা সীমান্তে আমাদের সুরক্ষা দিচ্ছেন, যারা সর্বদা ওয়াকি টকি দিয়ে কথা বলে থাকেন, এতে কি লাভ, আমি আপনাদের বলি, ধরুন একটি গ্রুপে 10 জন সদস্য আছে। সেই ব্যক্তিদের প্রতি এক সেকেন্ডে একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে হবে এবং কথা বলতে হবে, তারপর তারা স্মার্টফোন ব্যবহার করবে না, তারা ওয়াকি টকি ব্যবহার করবে কারণ ওয়াকি টকি কী বিনামূল্যে এবং তারা তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
১৯৩৯ সালে Donald L.Hings, রেডিও ইঞ্জিনিয়ার Alfred J.Gross এবং Team of Motorola ওয়াকিটকি নামে এই যন্ত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়।
ওয়াকিটকি কিভাবে কাজ করে
আপনারা যদি বুঝতে চান যে ওয়াকি টকি কীভাবে কাজ করে, তবে এটি একটি খুব সাধারণ ফান্ড, যেমন আগের সময়ে আপনি একটি রেডিওতে একটি ফ্রিকোয়েন্সি নির্বাচন করতেন এবং একই ফ্রিকোয়েন্সিতে রেডিও স্টেশন ধরতেন কোন গানের খবর। অথবা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি ঠিক একইভাবে করে যদি আপনি আপনার অন্য দলকে একটি ওয়াকি টকির সাথে ওয়াকি-টকি রাখার জন্য বার্তা পাঠান, তাই আপনাকে অবশ্যই একটি কোড নির্বাচন করতে হবে বেশিরভাগ লোকের আগে এবং উভয় ওয়াকি টকি কোড বিনস আলাদা থাকলে আলাদা থাকা উচিত তাহলে এটি সংযোগ করবে না
ওয়াকি টকিটি উপরে একটি সিগন্যালের জন্য তারযুক্ত এবং এর পাশে একটি বোতাম দেওয়া আছে, যা ঘোরালে ওয়াকি টকিটি খুলে যায় এবং এর পাশে আরেকটি বোতাম দেওয়া হয়, যা ঘোরালে ওয়াকি টকির শব্দ আরও জোরে হয়। এবং যদি আপনি সিগন্যালের ফ্রিকোয়েন্সি সেট করতে চান অর্থাৎ এক, দুই বা তিন, তারপর আপনি এটি সেট করতে পারেন।
আর এর পিছনে দুটি কমলা রঙের বোতাম দেওয়া আছে, একটি বোতাম দিয়ে আপনি লাইট জ্বালিয়ে বিল পেতে পারেন এবং দ্বিতীয় বোতামের সাহায্যে আপনি আপনার সঙ্গীর সাথে সংযোগ করতে পারেন এবং আপনি যা চান বা কথা বলতে চান। এটা খুব সহজ ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু হ্যাঁ আপনি মানুষ ফ্রিকোয়েন্সি , যে সংকেত, এটা ঠিক একই হতে হবে.
যখনই আপনার সঙ্গী আপনার ওয়্যারলেস ওয়াকি টকিতে একটি বার্তা দেবে, তখন তার উপর একটি সবুজ আলো থাকবে, এটি খুলতে এবং বন্ধ হতে শুরু করবে, তখন বুঝবেন যে আপনার সঙ্গী একজন আপনাকে জরুরি বার্তা দিচ্ছেন।
ওয়াকিটকিতে সাধারণত ১ থেকে ৫কিলোমিটারের মত রেন্জ থাকে।
ওয়াকি টকি কেন ব্যবহার করা হয়?
এখন আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন যে যখন মানুষের কাছে এত দামী দামী মোবাইল ফোন থাকে এবং আনলিমিটেড কলিং পায়, তখনও কেন মানুষ ওয়াকি টকি ব্যবহার করে, তাহলে এর কিছু কারণ বলি।
যখনই একজন ব্যক্তি হাঁটার জন্য একটি বড় এবং বিপজ্জনক বনে যায়, তখন সে প্রায়শই একটি ওয়াকি টকি নিয়ে যায় কারণ বনে কোনও নেটওয়ার্ক নেই এবং যখন অনেক দল একসাথে থাকে তখন তাদের অবশ্যই একটি ওয়াকি টকির প্রয়োজন হবে এটি নেটওয়ার্ক ছাড়াই কাজ করে। এর নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরি করুন এবং এটির কিছু পরিসর রয়েছে যদি আপনি রেঞ্জের মধ্যে থাকেন তবে আপনি রেডিওর মতো লোকেদের সাথে কথা বলতে পারেন
দ্বিতীয় বড় কারণ হল এটি আমাদের দেশের পুলিশ এবং সাহসী সৈন্যরা বেশি বেশি ব্যবহার করে, কারণ তারা যদি ব্যক্তিগত বার্তা পাঠাতে বা কোনও অপরাধীকে ধরতে চায় এবং তারা নিজেরাই একটি দল গঠন করে। প্রতি সেকেন্ডে বার্তা পাঠাতে ওয়াকি টকি ব্যবহার করে।
ওয়াকিটকি ব্যবহারের নিয়ম ও ব্যবহার
ওয়াকিটকি একটি দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা। দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা মানে দুই পাশ থেকেই কথা বলতে পারবে এবং শুনতে পারবে।
তবে হ্যা এটা মোবাইল ফোনের মত দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা নয় । ওয়াকিটকিতে আপনি যখন কাউকে কোন বার্তা পাঠাবেন তখন আনাকে ওয়াকিটকিতে থাকা বাটনে চেপে কথা বলতে হবে তখন সেই নির্দিষ্ট ব্যাক্তিরা সেই বার্তাটি শুনতে পারবে।
এবং আপনি যখন কোন কিছু শুনতে চাইবেন তখন আপনাকে সেই বাটনটি ছেড়ে দিয়ে শুনতে হবে। ওয়াকিটকিতে মোবাইলফোনের মত একসাথে দুই জনের বলার সুযোগ নাই।
জননিরাপত্তার জন্য এর ব্যবহার বেশী করা হলেও বর্তমানে বিভিন্ন গার্মেন্টস, পাওয়ার স্টেশন, গোডাউন, ফ্যাক্টরি থেকে শুরু করে শপিং মল, ব্যাক্তিগত কাজেও ওয়াকিটকি ব্যাবহার করা হয়। তাছাড়া ইভেন্ট যেমন কনসার্ট, সম্মেলন, মিলাদ-মাহফিল, রাজনৈতিক সম্মেলন পরিচালনায় ওয়াকিটকি ব্যবহার করা হয়
তবে অবশ্যই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন থেকে নির্দিষ্ট একটি ফ্রিকোয়েন্সির লাইসেন্স নিয়ে ওয়াকিটকি ব্যবহার করতে হবে।
ওয়াকিটকি আইন
২০১৫ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমে একটি নোটিশ প্রকাশের মাধ্যমে এই যন্ত্রের ক্রয় ও বিক্রির কিছু দিক নির্দেশনা সহ আইন অমান্যে ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা অথবা ১০ বছরের জেল কিংবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রেখে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
ওয়াকিটকি লাইসেন্স
ওয়াকিটকি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে অবশ্যই বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। বিটিআরসি সাধারনত দুইধরনের লাইসেন্স ইস্যু করে থাকেঃ
- ১। Individual Frequency: লাইসেন্সে, যা সরকারী, আধা-সরকারি, এয়ারলাইন্স এর জন্য প্রযোজ্য। এটা একতা ফ্রিকোয়েন্সি একতা চ্যানেল এর জন্য। ব্যবহারকারি যেকোনো কোম্পানির ওয়াকিটকি ব্যবহার করতে পারবে। প্রতি ওয়াকিটকির জন্য প্রতি বছর ৪,৫০০ টাকা দিতে হবে।
- ২। Short Business Radio Frequency: এটি হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য। এটার ফ্রিকোয়েন্সি ৮০ টা, ৮০ টা চ্যানেলের জন্য। বেবহারকারি যেকোনো চ্যানেল ব্যবহার করতে পারবে। তবে ব্যবহার কারি কালো রঙের ওয়াকিটকি ছাড়া অন্য যেকোনো রঙের ব্যবহার করতে পারবে।
ওয়াকিটকি ব্যবহারের জন্য আপনাকে অবশ্যই বিটিআরসির লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে। লাইসেন্স ইস্যু করার অনেক সহজ, যা বিনা খরছে করা যায়।
ওয়াকিটকি দাম কত (walkie talkie Price in BD)
বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন দামে ওয়াকিটকি পাওয়া যায়। কারণ বিভিন্ন রকম ওয়াকিটটি বিভিন্ন দামে হয়ে থাকে। এর অবশ্য বেশ কিছু কারণ ও রয়েছে। প্রতিটি কম্পানির ওয়াকিটকি আলাদা আলাদা সুবিধা সম্মলিত হয়ে থাকে তাই কনফিগারেশন অনুযায়ী বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে ঠিক যেমন মোবাইল ফোন বা আমরা যে আমাদের পছন্দের স্মার্টফোন কিনি সেই রকম।
তবে সাধারণত ২হাজার থেকে ২০হাজার টাকার মধ্যে ওয়াকিটকি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। ওয়াকিটকির দাম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এই লিংক থেকে ঘুরে আসুন।
ওয়াকিটকি কোথায় পাওয়া যায়
বাংলাদেশে বিভিন্ন ই-কামর্স সাইটে ওয়াকিটকি বিক্রির জন্য দেখা যায়। তবে এটা অন্য সাধারণ জিনিসের মত কোন পণ্য বা শুধু একটি পোডার্ক্ট নয়। তাই আপনাকে অবশ্যই ওয়াকিটকি কিনতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
কারন ওয়াকিটকি ক্রয় ও বিক্রয়ের উপর কিন্তু বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশনের আইন রয়েছে তাই আপনি যদি ভুল কারো কাছ থেকে ওয়াকিটকি কিনার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে কিন্তু আইনি ব্যবস্থার মধ্যে পরার সম্ভবনা রয়েছে।
তাই ওয়াকিটকি কিনার প্রথমেই আপনাকে চিন্তা করতে হবে আপনি যেখান থেকে ওয়াকিটকি কিনবেন তারা বিশ্বস্ত কিনা। আপনার কাছে যদি সেই রকম বিশ্বস্ত কোন সাইট বা দোকান থেকে থাকে তাহলে সেখান থেকে নিতে পারেন অথবা আপনার জন্য বেস্ট সমাধান হতে পারে বিডিস্টল।
কারণ বিডিস্টলডটকম হলো আমার দেখা সবচেয়ে সেরা ই-কমার্স ওয়েবসাইট ওয়াকিটকি কিনার জন্য। আপনি চাইলে যে কোন ধরনের ওয়াকিটকি কিনে নিতে পারবেন। এবং আপনার পছন্দমত দামে বিভিন্ন কনফিগারেশনের ওয়াকিটকি কিনতে পারবেন।
উপসংহার
এই প্রবন্ধে, আমি আপনাদের ওয়াকিটকি কি? এটি কিভাবে কাজ করে সেই সাথে ওয়াকিটাকি সম্পর্কে সকল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।আপনাদর যদি আর্টিকেলটি ভাল লাগে তাহলে আপনারা অবশ্যই আর্টিকেলটি আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।