বাংলাদেশের ইতিহাসের ফাল্গুন মাসের সঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারি একই সূত্রে গাঁথা।কেননা এ মাসেই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে ঢাকার রাজপথ বাংলার সাহসী সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে ছিল।
প্রতিবছর যখন ফাগুন মাস আসে, তখন আমাদের স্মৃতি চলে যায় ১৯৫২সালের একুশে ফেব্রু- য়ারির রক্তঝরা দিনে। বসন্ত ঋতুর প্রথম মাস ফাল্গুন।
ফাগুন মাস হুমায়ুন আজাদ
ফাগুনটা খুব ভীষণ দস্যি মাস
পাথর ঢেলে মাথা উঁচোয় ঘাস।
হাড়ের মত শক্ত ডাল থেকে ফেড়ে
সবুজ পাতা আবার ওঠে বেড়ে।
সকল জীবনের বিশাল গান
ঝিলিক দিয়ে পড়তে হয় লাল।
বাংলাদেশের মাঠে বলে তলে ।
ফাল্গুন মাসে সবুজ আগুন জলে।
আগুনটা খুব ভীশন দুঃখী মাস
হাওয়ায় হাওয়ায় দীর্ঘশ্বাস
ফাগুন মাসে গোলাপ কাদে বনে
কান্নারা সব ডুকরে ওঠে মনে।
ফাগুন মাসে মায়ের চোখে জল
ঘাসের ওপর কাপে যে টলমল।
ফাগুন মাসে বোনেরা ওঠে কেঁদে
হারানো ভাই দুই বাহুতে বেঁধে।
ফাল্গুন মাসের ভাইয়েরা নামে পথে
ফাগুন মাসে দস্যু আসে রথে।
ফাগুন মাসে বুকের ক্রোধ ঢেলে
আগুন দেয় জেলে।
বাংলাদেশের শহর গ্রামে চলে
ফাগুন মাসে রক্ত ঝরে পড়ে।
ফাগুন মাসে দুটি গোলাপ ফোটে
বুকের ভেতর শহীদ মিনার উঠে।
সেই যে কবে কয়েকজন খোকা
ফুল ফোটা- রক্ত ঝরালো থোকা
গাছের ডালে পথের বুকের ঘরে
ফাল্গুন মাসের তাদেরই মনে পড়ে।
সেই যে কবে- তিরিশ বছর হলো-
আগুন মাসে দু চোখ ছোলছোল।
বুকের ভেতর ফাগুন পসে ভর-
তারকাদের আবার কি যে হয়!
প্রকৃতির রূপ বৈচিত্রের পাশাপাশি এই মাস আমাদের মধ্যে দুঃখবোধক জাগিয়ে দেয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগের গল্পে আমরাও একই সঙ্গে দুঃখি এবং সাহসী হয়ে উঠি। ফাল্গুন মাস কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে সুখ ও বেদনার গভীর অনুভূতি আমাদের ফালগুুন অন্যদেশের ফাল্গুন মাসের মতো নয়। বাংলাদেশের ফাল্গুনে বনের ভেতর জ্বলে সবুজ আগুন।
আমরা বাসার জন্য আত্মদানকারী পূর্ব পুরুষদের জন্য অনুভব করি দুঃখ ও মমতা। আবার তাদের আত্মত্যাগের শক্তি-সাহস জোগায় আমাদের মনে। আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে এবং গোলাপ ফুলের মতো একেকটা শহীদ মিনার জেগে ওঠে। আমরা বাংলার বীর সন্তানদের স্মরণ করি প্রতিটি ফাল্গুনে।
১. পহেলা ফাল্গুন
ফাল্গুনের হাওয়ায় উড়ছে রঙিন পতাকা, সবাই মেতে উঠেছে পহেলা ফাল্গুনে। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সবাই একে অপরকে, ভালোবাসা আর আনন্দে ভরে উঠেছে চারদিক।
২. বসন্তের গান
ফাল্গুন এসেছে বসন্তের গান নিয়ে, প্রকৃতিতে নতুন সাজ জাগিয়ে। ফুলের বনে ফুটেছে রঙিন ফুল, পাখিরা গান গেয়ে উঠেছে সুরে সুরে।
৩. ভালোবাসার দিন
ফাল্গুন মাস হলো ভালোবাসার দিন, প্রেমীদের মনে জাগিয়ে দেয় নতুন ভালোবাসা। কোকিলের কুহু কুহু ডাকে, প্রেমিক প্রেমিকার মনে জাগে ভালোবাসার সাড়া।
৪. নতুন বছরের সূচনা
ফাল্গুন মাস হলো নতুন বছরের সূচনা, বাঙালির মনে জাগিয়ে দেয় নতুন আশা। নতুন বছরের নতুন পরিকল্পনা, নতুন বছর আসুক সাফল্যের বরণে।
৫. ভাষা শহীদদের স্মৃতি
ফাল্গুন মাস হলো ভাষা শহীদদের স্মৃতির মাস, তাদের আত্মত্যাগকে আমরা ভুলব না কখনোই। তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, আমরা পহেলা ফাল্গুন পালন করব সবাই মিলে।
৬. ফাল্গুনের উৎসব
ফাল্গুন মাস হলো উৎসবের মাস, পহেলা ফাল্গুনে সবাই মেতে উঠে আনন্দে। পহেলা ফাল্গুনে আমরা রঙ খেলায় মেতে উঠি, গান গাই, নাচ করি, খেলাধুলা করি।
৭. ফাল্গুনের ঐতিহ্য
ফাল্গুন মাস হলো বাঙালির ঐতিহ্য, পহেলা ফাল্গুনে আমরা পালন করি এই ঐতিহ্য। পহেলা ফাল্গুনে আমরা সবাই মিলে, বাঙালির ঐতিহ্যকে তুলে ধরি বিশ্বের বুকে।
কবিতাটি রচনা করেছেন:
কবিতাটি রচনার উদ্দেশ্য: পহেলা ফাল্গুনের সৌন্দর্য ও আনন্দকে তুলে ধরা।
কবি পরিচিতি
হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা রাড়ি খালে জন্মগ্রহণ করেন। একজন কৃতি ছাত্র হিসেবে তিনি তার শিক্ষাজীবন শেষ করেন।
কর্মজীবি বনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। বাংলা ভাষা ভাষা- য় গবেষক হিসেবে তিনি খ্যাতি পেয়েছে। একাধারে তিনি ছিলেন ভাষাবিজ্ঞানী কবি উপন্যাসে ও প্রাবন্ধিক।
কুসংস্কার ও ভণ্ডামী বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সদা তৎপর। তার গবেষণা গ্রন্থ হচ্ছে কাব্যতত্ত্ব এবং কি শোরদের জন্য তাঁর লেখা দুটি গ্রন্থ লাল নীল দীপাবলি ও কতো নদী সরোবর।
তিনি ১৯৮৭ সালে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ সালে জার্মানির মিউনিখ শহরে মৃত্যুবরণ করেন।