প্রাচীন যুগ
এই অধ্যায়ে আমরা প্রাচীনকালের তিনজন রাজা সম্পর্কে জানব । আরো জানবো সেই সময়কাল সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ।
রাজা শশাংক ঃসপ্তম শতকে বাংলায় শশাংক নামে একজন প্রভাবশালী রাজা ছিলেন । তিনি বাংলার স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রেখেছিলেন এবং বর্ণসুবর্ণ ছিল তাঁর রাজধানী । তাঁর শাসনা মলে তিনি বাংলার বাইরে ও রাজ্য সীমানা পালিয়েছিলেন ।
রাজা গোপালঃরাজা শশাংকের পর প্রায় একশ বছর ধরে বাংলায় ভীষণ অস্থির অবস্থা বিরাজ করছিল । এরপর অষ্টম শতকে রাজা গোপাল বাংলার সিংহাসনে বসেন । তিনি পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা । এই রাজবংশ বাংলায় প্রায় ৪০০ বছর রাজত্ব করেছিল ।
রাজা লক্ষণ সেনঃরাজা লক্ষণ সেন দ্বাদশ শতকে বাংলায় রাজত্ব করেন । ছিলেন সেন রাজবংশের চতুর্থ রাজা । তিনি ছিলেন একজন সুকন্ডিত ও কবি । ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে লক্ষণ সেন কে পরাজিত করে বখতিয়ার খিলজী বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা করেছিলেন।
সামাজিক জীবনঃসেই সময়ের সমাজজীবনের মূল ভিত্তি ছিল গ্রাম । তখন মানুষ সনাতন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন । যেমন, নাপিত , কামার , কুমার , ধোপা মুচি ইত্যাদি । সে সময় হিন্দু ও বৌদ্ধ ছিল দুইটি প্রধান ধর্ম । নৌকা গরুর গাড়ি ও পালকি ছিল প্রধান যানবাহন ।
ভাত ছিল বাঙালির প্রধান খাদ্য । শাক সবজি ডাল মাছ ইত্যাদিও খাওয়া হতো । বিনোদনের প্রধান উপাদান ছিল গান , নাচ , পাশা , দাবা , মল্লযুদ্ধ ও কুস্তিখেলা ।
অর্থনৈতিক জীবনঃকৃষিকাজই ছিল প্রাচীন বাংলার মানুষের প্রধান পেশা । ধান আর আক ছিল প্রধান ফসল । কুটির শিল্পে তোলা ও রেশম দিয়ে বাংলার কারিগররা নানারকম কাপড় গুনতেন ।
এসব কাপড় বিদেশেও রপ্তানি করা হতো । সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাংলার বাণিকেরাবিদেশের সাথে বাণিজ্য করতেন ।
মধ্যযুগ
প্রাচীনকালের পরবর্তী সময়ের (মধ্যযুগের )তিনজন রাজা সম্পর্কে আমরা জানব আর ও জানব সেই সময়কার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ।
শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহঃ শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ চতুর্দশ শতকে বাংলার সিংহাসন দখল করেন । তখন ছিল বাংলায় মুসলিম শাসনামল । তাঁর প্রধান সাফল্য হলো তিনি দিল্লির সুলতানদের কবল থেকে বাংলার স্বাধীনতা বজায় রাখেন ।
ইলিয়াস শাহী বংশের শাসনের সূচনা করেন । তাঁর শাসনামলে দেশীয় ভাষা সাহিত্য পন্ডিতত ও কবিদের সমাদর বাড়ে ।
ঈশা খাঁ ঃবাংলার বড় বড় অঞ্চলের জমিদার যারা বারো ভূঁইয়া নামে পরিচিত , তাঁদের নেতা ছিলেন ঈশা খাঁ ।তিনি সোনারগাঁও এর জমিদার ছিলেন । বাংলার স্বাধীনতার জন্য ষোড়শ শতকে দিল্লির মোগল সম্রাট আকবরের সাথে তিনি যুদ্ধ করেন । ঈশা খাঁ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলায় মোগলদের অধীনতা মানেননি ।
শায়েস্তা খানঃবাংলার বড় বড় অঞ্চলে জমিদার যারা বারো ভূঁইয়া নামে পরিচিত , তাঁদের নেতা ছিলেন ইসা খাঁ । তিনি সোনারগাঁও এর জমিদার ছিলেন । বাংলার স্বাধীনতার জন্য ষোড়শ শতকে দিল্লির মোগল সম্রাট আকবরের সাথে তিনি যুদ্ধ করেন । ইসা খাঁ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলায় মোগলদের অধীনতা মানে নেনি ।
সামাজিক অবস্থাঃবাংলায় তখন হিন্দু, মুসলমান এবং বৌদ্ধসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে সম্প্রীতির সাথে বাস করতেন । মধ্যযুগের শাসকদের আনুকূল্যে বাংলাভাষা এবং সাহিত্য ব্যাপকভাবে বিকশিত হয় ।
এ সময় বাংলায় গড়ে উঠেছিল ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প । কুটির শিল্পের কারিগররা ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী । মধ্যযুগের পোশাক এবং খাদ্যাভাস ছিল প্রাচীন যুগের মতোই ।
অর্থনৈতিক অবস্থাঃএ যুগের অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক । এ সময় সুতার তৈরি মসলিন এবং রেশমের কাপড় অনেক প্রসিদ্ধ ছিল । হাতির দাঁতের শিল্প ও কাঠের কাজে বাংলার শিল্পীরা পারদর্শী ছিলেন ।
আমদানি থেকে রপ্তানি বাণিজ্য এ সময় বেশি ছিল । চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি হতো চাল, চিনি , আদা , হলুদ , মসলিম , এবং অন্যান্য ধরনের কাপড় । বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে চট্টগ্রাম সুপরিচিত ছিল ।