রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী “জীবনস্মৃতি”। এটি ১৯১২ সালে প্রকাশিত হয়। এটি রবীন্দ্রনাথের বাল্যকাল থেকে শুরু করে ১৯১০ সাল পর্যন্ত তার জীবনের ঘটনাবলী নিয়ে রচিত।
“জীবনস্মৃতি” একটি অসাধারণ আত্মজীবনী। এটিতে রবীন্দ্রনাথ তার জীবনের নানা ঘটনা ও অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সৃজনশীল ও চিত্তাকর্ষকভাবে তুলে ধরেছেন। এই আত্মজীবনীতে রবীন্দ্রনাথ তার পরিবার, শিক্ষা, সাহিত্য, সংগীত, দর্শন, রাজনীতি ইত্যাদির উপর তার চিন্তাভাবনা ও অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন।
“জীবনস্মৃতি”র প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- সৃজনশীলতা: “জীবনস্মৃতি” একটি অসাধারণ সৃজনশীল আত্মজীবনী। রবীন্দ্রনাথ তার জীবনের ঘটনাবলীকে অত্যন্ত সৃজনশীল ও চিত্তাকর্ষকভাবে তুলে ধরেছেন।
- আত্মবিশ্লেষণ: “জীবনস্মৃতি”তে রবীন্দ্রনাথ তার নিজের ব্যক্তিত্ব ও জীবনের নানা ঘটনা সম্পর্কে গভীরভাবে আত্মবিশ্লেষণ করেছেন।
- সময়ের প্রতিফলন: “জীবনস্মৃতি”তে রবীন্দ্রনাথ তার সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরেছেন।
“জীবনস্মৃতি” একটি অনন্য আত্মজীবনী। এটি রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ।
“জীবনস্মৃতি”র কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল:
- রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও শৈশব
- রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাজীবন
- রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও সংগীতের সূচনা
- রবীন্দ্রনাথের বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন
- রবীন্দ্রনাথের ইউরোপ ভ্রমণ
- রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও সংগীতের বিকাশ
“জীবনস্মৃতি” একটি অনন্য আত্মজীবনী। এটি রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ।
শৈশব ও কৈশোর
শৈশব ও কৈশোর হল মানুষের জীবনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এই দুই পর্যায়ে একজন মানুষ তার ব্যক্তিত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি ও আবেগকে গঠন করে।
শৈশব
শৈশব হল জন্ম থেকে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কাল। এই সময় একজন শিশু তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। শিশুরা এই সময় খেলাধুলা, গল্প বলা, গান গাওয়া, নাচ করা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের চারপাশের জগতকে আবিষ্কার করে।
কৈশোর
কৈশোর হল ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কাল। এই সময় একজন মানুষ তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। কৈশোরের বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- শারীরিক পরিবর্তন, যেমন যৌবনের সূচনা
- মানসিক পরিবর্তন, যেমন আত্মচেতনার বিকাশ
- সামাজিক পরিবর্তন, যেমন বন্ধুত্ব ও প্রেমের বিকাশ
শৈশব ও কৈশোরের গুরুত্ব
শৈশব ও কৈশোর একজন মানুষের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই দুই পর্যায়ে একজন মানুষ তার ব্যক্তিত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি ও আবেগকে গঠন করে। এই পর্যায়ে একজন শিশু বা কিশোরের উপর যে অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা প্রভাব ফেলে, তা তার পরবর্তী জীবনকে প্রভাবিত করে।
শৈশব ও কৈশোরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- পরিবার: পরিবার হল শিশুর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। পরিবারের সদস্যরা শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- শিক্ষা: শিক্ষা হল শিশুর বিকাশের জন্য অপরিহার্য। শিক্ষার মাধ্যমে শিশু তার চারপাশের জগত সম্পর্কে জানতে পারে এবং তার দক্ষতা ও যোগ্যতা বিকাশ করতে পারে।
- বন্ধুত্ব: বন্ধুত্ব হল কৈশোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা, গল্প বলা, আলোচনা করা ইত্যাদির মাধ্যমে একজন কিশোর তার সামাজিক দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বিকাশ করতে পারে।
- প্রেম: প্রেম হল কৈশোরের একটি স্বাভাবিক অনুভূতি। প্রেমের মাধ্যমে একজন কিশোর তার আবেগকে আবিষ্কার করতে পারে এবং অন্যের প্রতি অনুভূতিশীল হতে পারে।
শৈশব ও কৈশোরের জন্য কিছু পরামর্শ
- শিশুদের তাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ দিন।
- শিশুদের তাদের আবেগ প্রকাশ করতে উৎসাহিত করুন।
- শিশুদের তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সাহায্য করুন।
- কিশোরদের তাদের স্বাধীনতা দেওয়ার সাথে সাথে তাদের দায়িত্বও বোঝান।
- কিশোরদের তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে সাহায্য করুন।
শৈশব ও কৈশোর হল একজন মানুষের জীবনের একটি মূল্যবান সময়। এই দুই পর্যায়ে একজন মানুষ তার ব্যক্তিত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি ও আবেগকে গঠন করে। এই পর্যায়ে একজন শিশু বা কিশোরের উপর যে অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা প্রভাব ফেলে, তা তার পরবর্তী জীবনকে প্রভাবিত করে।
যৌবনে রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যৌবনকাল ছিল ১৮৭০ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত। এই সময়কালে তিনি তার সাহিত্য ও সংগীতের ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেন। তিনি এই সময়কালে প্রায় ৫০০০ কবিতা, ১০০০ গান, ৩০০ গল্প, ১০০ নাটক ও উপন্যাস রচনা করেন।
যৌবনে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য
রবীন্দ্রনাথের যৌবনে তার সাহিত্য ছিল মূলত রোমান্টিক ও স্বপ্নময়। এই সময়কালে তিনি প্রকৃতি, প্রেম, জীবন ও মৃত্যুর মতো বিষয়গুলি নিয়ে লিখেছেন। তার কিছু উল্লেখযোগ্য রচনা হল:
- কবিতা: “সোনার তরী”, “চিত্রা”, “সোনারতরী”, “ঘরে বাইরে”, “শেষের কবিতা” ইত্যাদি।
- গল্প: “শেষের রাত্রি”, “গোরা”, “যোগাযোগ”, “নৌকাডুবি”, “চোখের বালি” ইত্যাদি।
- নাটক: “রক্তকরবী”, “চিত্রাঙ্গদা”, “ডাকঘর”, “শেষের সংগীত”, “চিত্রা” ইত্যাদি।
যৌবনে রবীন্দ্রনাথের সংগীত
রবীন্দ্রনাথের যৌবনে তার সংগীত ছিল মূলত দেশাত্মবোধী ও মানবতাবাদী। এই সময়কালে তিনি “আমার সোনার বাংলা”, “তোমার সোনার মুখখানি”, “আমার জীবন তোমার জন্য”, “আমার দেশ” ইত্যাদি গান রচনা করেন।
যৌবনে রবীন্দ্রনাথের জীবন
রবীন্দ্রনাথের যৌবনে তার জীবন ছিল অত্যন্ত ব্যস্ত ও বর্ণাঢ্য। এই সময়কালে তিনি পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৮৮৩ সালের ১০ইই মে মৃণালিনী দেবীকে বিয়ে করেন। এই বিবাহের ফলে তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে হয়।
১৮৮৮ সালে তিনি ঠাকুর পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৮৯১ সালে সোনার তরী নামক একটি জাহাজ কিনেন এবং ইউরোপ ভ্রমণে যান। এই ভ্রমণের ফলে তিনি পশ্চিমা সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হন এবং তার সাহিত্য ও সংগীতের ক্ষেত্রে নতুন দিকনির্দেশনা পান।
যৌবনে রবীন্দ্রনাথের সাফল্য
রবীন্দ্রনাথের যৌবনে তিনি তার সাহিত্য ও সংগীতের ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেন। তিনি ১৮৯০ সালে বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার “বঙ্গভাষার জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার” লাভ করেন। ১৯১৩ সালে তিনি তার “গীতাঞ্জলি” কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি এই পুরস্কার লাভকারী প্রথম এশীয় ব্যক্তি।
রবীন্দ্রনাথের বিবাহ
রবীন্দ্রনাথের বিবাহটি ছিল একটি পারিবারিক চুক্তি। ঠাকুর পরিবার বিয়েটিকে একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা হিসাবে দেখেছিল। রবীন্দ্রনাথ নিজেও বিয়েতে রাজি ছিলেন, তবে তিনি মৃণালিনী দেবীকে আগে কখনও দেখেননি।
বিয়ের পর রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনী দেবীর একটি সুখী দাম্পত্য জীবন ছিল। তাদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্য ও সংগীতের ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেন, এবং মৃণালিনী দেবী ছিলেন তার সবচেয়ে বড় সমর্থক।
রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনী দেবীর বিবাহটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রবীন্দ্রনাথের জীবনে। বিয়ের মাধ্যমে তিনি একজন পরিবারের প্রধান হিসাবে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তার ব্যক্তিগত জীবনে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেন।
রবীন্দ্রনাথের বিবাহের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
- ১৮৮৩ সালের ১০ই মে রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনী দেবীর বিয়ে হয়।
- বিয়ের পর রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনী দেবীর তিন মেয়ে ও এক ছেলে হয়েছিল।
- রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্য ও সংগীতের ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেন, এবং মৃণালিনী দেবী ছিলেন তার সবচেয়ে বড় সমর্থক।
রবীন্দ্রনাথের বিবাহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব:
- রবীন্দ্রনাথ একজন পরিবারের প্রধান হিসাবে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
- রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত জীবনে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
- রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও সংগীতের ক্ষেত্রে মৃণালিনী দেবীর সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভ্রমণপিপাসু রবীন্দ্রনাথঃ ভ্রমণপিপাসু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট বারো বার বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন .১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশে ৩০ টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেন ।
১৯১২ সালে ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ডে গিয়ে ইয়েটষসসহ কয়েকজন কবি ও বুদ্ধিজীবীকে মদ্যরচিত ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করে শোনান । ইয়েটস স্বয়ং উক্ত কাব্যের ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকাটি লিখে দিয়েছিলেন ।
১৯২৪ সালে তিনি চীন সফরে যান । চীন থেকে জাপানে গিয়ে জাতীয়তাবাদবিরোধী বক্তৃতা দেন তিনি । এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি পেরু আর্জেন্টিনা মেক্সিকো ইরাক পারস্য সিংহলপ্রবৃত্তি দেশ ভ্রমণ করেন ।
সাহিত্যচর্চাঃ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । ছোটবেলা থেকে তাঁর মধ্যে সাহিত্যচর্চার ভাব লক্ষ করা যায় । মহাকাব্য ব্যতীত সাহিত্যর সকল শাখায় তার হাতের স্বর্ণস্পর্শ রয়েছে । আলোচনা করা হলো-
কবিতাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত একজন কবি । মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি কাব্য রচনা শুরু করেন । তাঁর প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২ । তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মানসী সোনার তরী চিত্রা গীতাঞ্জলি বলাকা ক্ষণিকা পুণশ্চ জন্মদিনে শেষলেখা প্রবৃত্তি ।
ছোটগল্পঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটকার । তিনি ১১৯ টি ছোট গল্প রচনা করেছেন । তাঁর উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি গল্প হল কঙ্কাল নিশীথে মনিহারা ক্ষুধিত পাষাণ স্ত্রীরপত্র নষ্টনীড় হেমন্তি দেনাপাওনা ছুটি এক রাত্রি পোস্টমাস্টার মুসলমানীর গল্প ইত্যাদি ।
ছোটগল্পগুলোতে তিনি পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি বা আধুনিক ধ্যানধারণা সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেছেন । কখনো তিনি মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের বিশ্লেষণকেই গল্পে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে । এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্যজিং রায়ের ঘরে বাইরে ও ঋতুপর্ণ ঘোষের চোখের বালি ।
প্রবন্ধ ও পত্রসাহিত্য ঃরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন । এসব প্রবন্ধে তিনি সমাজ রাষ্ট্রনীতি ধর্ম সাহিত্যতত্ত্ব ইতিহাস ভাষাতত্ত্ব ছন্দ সংগীত নানা বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রেক্ষাপটে লেখা জন্মদিনের অভিভাষণ সভ্যতার সংকট তাঁর সর্বশেষ প্রবন্ধগ্রন্থ ।
নাট্যসাহিত্যঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যভিনেতা । জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক নাট্যমঞ্চে মাত্র ১৬ বছর বয়সে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত হঠাৎ নবাব নাটকের ও পরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথই অলীকবাবু নাটকের নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮১ সালে তার প্রথম গীতিনাট্য বাল্বীকি প্রতিভা সঞ্চস্থ হয় । এই নাটককে তিনি ঋষি বাল্বীকি ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ।
সংগীত ও নৃত্যকলাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৫টি গান রচনা করেছিলেন । ধ্রুপদি ভারতীয় সংগীত, বাংলা লোকসংগীত ও ইউরোপীয় সংগীতের ধারা তিনটিকে আত্মস্থ করে তিনি একটি স্বকীয় সুরশৈলীর জন্ম দেন ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বহু কবিতাকে গানে রূপান্তরিত করেছিলেন । তৎকালীন সময়ে বাংলার শিক্ষিত পরিবারের নৃত্যুের চর্চা নিষিদ্ধ ছিল । কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীয় পাঠক্রমে সংগীত ও চিত্রকলার সঙ্গে সঙ্গে ও নৃত্যকেও অন্তর্ভুক্ত করেন ।
ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের লোকনৃত্য ও ধ্রুপদি নিত্যশৈলীগুলোর সংমিশ্রণে তিনি এক নতুন শৈলীর প্রবর্তন করেন । এই শৈলীটি রবীন্দ্রনৃত্য উদয় শংকর যে আধুনিক ভারতীয় নৃত্যধারার প্রবর্তন করেছিলেন, তার পেছনে ও রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা ছিল ।
চিত্রকলাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত ছবি আঁকা শুরু করেন প্রায় সওর বছর বয়সে । চিত্রাঙ্গনে তাঁর কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিল না । তাঁর অঙ্কিত স্কেচ ও ছবিগুলো শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে ।
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি ছবি আঁকতেন । পেশাদার চিত্রশিল্পীর মতো তাঁর ছবি নিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনী হয়েছে । সর্বোপরি তিনি একজন ভালো চিত্রশিল্পী ছিলেন ।
রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক মতাদর্শঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন অত্যন্ত জটিল । তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন করতেন ।
শিক্ষাবিস্তারঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষানুরাগী ছিলেন । তিনি শান্তি নিকেতন নামে একটি বিদ্যাপীঠ স্থাপন করেন । নোবেল পুরস্কার এর অর্থ মূল্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ তিনি ঢেলে দিয়েছিলেন এই বিদ্যালয়ের পরিচালনা খাতে ।
নিজেও শান্তিনিকেতন অধ্যক্ষ ও শিক্ষক হিসেবে ব্যস্ত থাকতেন । ১৯১৯ সাল থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে তিনি একাধিকবার ইউরোপ ও আমেরিকায় ভ্রমণ করেন ।
মৃত্যুঃ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২শে শ্রাবণ (ইং ৭ই আগস্ট ১৯৪১) ঘনঘোর বাদল দিনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইহলোকক ছেড়ে মহাপ্রয়ানের পথে চলে গেলেন । কিন্তু দেশ ও জাতির কাছে রেখে গেলেন অফুরান ও ও ঐশ্বর্রভান্ডার ।
উপসংহারঃ বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মহাকবি বাল্মীকি বেদব্যাস ও কালিদাসের সার্থক উত্তরসূরি । তিনি ছিলেন মনুষ্যত্বের সাধক । সুন্দর এ আরাধানা করতে গিয়ে তিনি মানবতাকে বিসর্জন দেননি ।
তাঁর মহিমায় বাংলা সাহিত্য পরিপূর্ণতা লাভ করেছে । রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে আমাদেরকে রবীন্দ্রচর্চা করতে হবে । তাই সবার উচিত কোনো বিতর্কে না জড়িয়ে শুদ্ধভাবে রবীন্দ্রচর্চা করা ।