আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ্ এর জীবনী

কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর জন্ম

কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর জন্ম ১৯৩৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জের বাহেরচর গ্রামে। তার পিতা আব্দুল জব্বার খান পাকিস্তানের আইন পরিষদের স্পিকার ছিলেন।

তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে এম.এ. পাস করেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন একজন সৃজনশীল কবি, লেখক, সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদ। তিনি তার কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য রচনায় বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “সাত নরী হার”, “কখনো রং কখনো সুর”, “কমলের চোখ”, “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি”, “সহিষ্ণু প্রতীক্ষা”, “প্রেমের কবিতা”, “বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা” ইত্যাদি।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি ও পানি সম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। ২০০১ সালের ১৯ মার্চ তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন একজন প্রকৃতিপ্রেমী কবি। তার কবিতায় প্রকৃতির রূপ ও বৈচিত্র্য সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সচেতন কবি। তার কবিতায় তিনি সমাজের অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন একজন জনপ্রিয় কবি। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ।

কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর শিক্ষা

তার পেশা জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি হল:

  • ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।
  • ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন।
  • ১৯৮২ সালে সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
  • ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদের সরকারে মন্ত্রীসভায় যোগদান করেন।
  • ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হন।
  • ১৯৯২ সালে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় যোগদান করেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর পেশা জীবন তার সাহিত্যিক জীবনকে প্রভাবিত করেছে। তার বিভিন্ন পেশার অভিজ্ঞতা তার সাহিত্যকর্মে প্রতিফলিত হয়েছে।

কবি ও লেখক হিসেবে

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন একজন প্রথিতযশা কবি ও লেখক। তিনি বাংলা সাহিত্যের পঞ্চাশের দশকের অন্যতম প্রধান কবি। তার কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে “সাত নরী হার”, “কখনো রং কখনো সুর”, “কমলের চোখ”, “আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি”, “সহিষ্ণু প্রতীক্ষা”, “প্রেমের কবিতা”, “পৃথিবীর কবিতা” ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তিনি গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, অনুবাদসহ বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য রচনা করেছেন।

শিক্ষক হিসেবে

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক ছিলেন। তার ছাত্ররা তার কাছে থেকে অনেক কিছু শিখেছেন।

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেছিলেন। তিনি একজন সফল সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাষ্ট্রদূত হিসেবে

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন দক্ষ ও সফল রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা হিসেবে

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন দক্ষ ও সফল কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর পেশা জীবন তার সাহিত্যিক জীবনকে প্রভাবিত করেছে। তার বিভিন্ন পেশার অভিজ্ঞতা তার সাহিত্যকর্মে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি একজন বহুবর্ণময় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার সাহিত্যকর্ম, পেশাজীবন এবং ব্যক্তিত্ব বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ বাংলা সাহিত্যের একজন প্রথিতযশা কবি, লেখক, সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদ। তিনি তার কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য রচনায় বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

কবিতায় অবদান

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন একজন প্রকৃতিপ্রেমী কবি। তার কবিতায় প্রকৃতির রূপ ও বৈচিত্র্য সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সচেতন কবি। তার কবিতায় তিনি সমাজের অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কবিতায় নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ্য করা যায়:

  • প্রকৃতিপ্রেম: আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কবিতায় প্রকৃতির রূপ ও বৈচিত্র্য সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাশীলতা প্রকাশ করেছেন।
  • সমাজ সচেতনতা: আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন একজন সমাজ সচেতন কবি। তার কবিতায় তিনি সমাজের অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।
  • আধুনিকতা: আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কবিতায় আধুনিকতার ছাপ লক্ষ্য করা যায়। তিনি আধুনিক কবিতার বিভিন্ন আঙ্গিক ও কৌশল ব্যবহার করেছেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

  • সাত নরী হার (১৯৫৫)
  • কখনো রং কখনো সুর (১৯৬৪)
  • কমলের চোখ (১৯৬৯)
  • আমি কিংবদন্তির কথা বলছি (১৯৭৭)
  • সহিষ্ণু প্রতীক্ষা (১৯৭৯)
  • প্রেমের কবিতা (১৯৮৪)
  • বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা (১৯৯৪)

ছড়ায় অবদান

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন একজন ছড়াকারও। তার ছড়াগুলি ছিল সহজ-সরল ও হৃদয়গ্রাহী। তিনি ছড়ার মাধ্যমে শিশুদের কাছে প্রকৃতি, সমাজ ও দেশপ্রেমের শিক্ষা দিয়েছেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর উল্লেখযোগ্য ছড়ার মধ্যে রয়েছে:

  • “আমি গাইব গাইব”
  • “ওরে নীল আকাশ”
  • “মাঠে মাঠে ফুল ফোটে”
  • “আজ তোমার জন্মদিন”
  • “আমি চাঁদ হতে চাই”

অন্যান্য রচনায় অবদান

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, অনুবাদসহ বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য রচনা করেছেন। তার গল্প, উপন্যাস ও নাটকগুলিতে আধুনিক জীবনের নানা সমস্যা ও দ্বন্দ্ব তুলে ধরা হয়েছে। তার প্রবন্ধগুলিতে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন। তার অনুবাদকর্মগুলি বাংলা সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর সাহিত্যিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।

  • ১৯৮৫ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
  • ১৯৯৩ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
  • ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন একজন প্রথিতযশা কবি ও লেখক। তার সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ। তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর পুরস্কার

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন একজন প্রথিতযশা কবি, লেখক, সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদ। তিনি তার সাহিত্যিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।

  • ১৯৮৫ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। একুশে পদক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন তার কাব্যগ্রন্থ “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি”-এর জন্য।
  • ১৯৯৩ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন তার সাহিত্যকর্মের জন্য।
  • ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বাংলা ভাষার সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য প্রদান করা হয়। তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন তার কাব্যগ্রন্থ “সময়ের গান”-এর জন্য।

তাছাড়াও, তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

  • ১৯৭৬ সালে তিনি ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে “লেজিওঁ অফ অনার” পুরস্কার লাভ করেন।
  • ১৯৮৮ সালে তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে “পদ্মশ্রী” পুরস্কার লাভ করেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর সাহিত্যিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি যেসব পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন তা তার সাহিত্যিক প্রতিভারই প্রমাণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *