হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর জীবনী

কে ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দেশ পরিচালনাকে অনেকেই সামরিক একনায়তন্ত্রের সাথে তুলনা করেন। তিনি জাতীয় পার্টি নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে বেশ কিছু উপদলে বিভক্ত হয়।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ

এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রংপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং কারমাইল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেন। তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তিনি একটি সামরিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একাধিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করেন। তিনি একতরফা ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

এরশাদের শাসনামলে অর্থনীতিতে কিছু উন্নতি হয়। তিনি গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য “নবজাগরণ” কর্মসূচি চালু করেন। তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায়ও কিছু উন্নতি আনেন। তবে তার শাসন আমলে দুর্নীতি ও স্বৈরাচারীতার অভিযোগ উঠে।

১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি ১৯৯১ সালে গ্রেপ্তার হন এবং তাকে কারাগারে বন্দী করা হয়। ১৯৯৭ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ঢাকায় মারা যান। তিনি ৮৯ বছর বয়সে মারা যান।

এরশাদের দলের নাম কি?

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দলের নাম জাতীয় পার্টি। তিনি ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান কেন্দ্র-ডানপন্থী, রক্ষণশীল ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল। এরশাদ ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন।

জাতীয় পার্টি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৫টি আসন লাভ করে।

এরশাদ কত সালে ক্ষমতায় আসে

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতায় আসেন। তিনি রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরপর তিনি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।

১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করতে থাকেন। ১৯৮৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং একই বছরের সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন।

সুতরাং, এরশাদের ক্ষমতাগ্রহণের তারিখ হল ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ কিভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন?

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতায় আসেন। তিনি সেনাপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরপর তিনি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।

এরশাদের ক্ষমতাগ্রহণের কারণগুলি নিম্নরূপ:

  • রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের জনপ্রিয়তা হ্রাস: সাত্তারের আমলে অর্থনৈতিক মন্দা, দুর্নীতি, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ফলে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়।
  • সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ: সেনাবাহিনীর একটি অংশ এরশাদের সমর্থনে ছিল। তারা সাত্তারের সরকারকে হটিয়ে এরশাদকে ক্ষমতায় বসাতে চায়।
  • আন্তর্জাতিক সমর্থন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলি এরশাদের সমর্থনে ছিল। তারা মনে করত যে সাত্তারের সরকার অস্থিরতা ও দুর্নীতির উৎস।

এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর তিনি একটি সামরিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একাধিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করেন। তিনি একতরফা ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হন।

এরশাদ কত বছর ক্ষমতায় ছিল

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতায় আসেন এবং ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। সুতরাং, তিনি মোট ৮ বছর ৯ মাস ক্ষমতায় ছিলেন।

এর মধ্যে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশ শাসন করেন।

এরশাদের ক্ষমতাকালকে অনেকেই সামরিক একনায়তন্ত্রের সাথে তুলনা করেন। তিনি একাধিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করেন। তিনি একতরফা ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এরশাদের পতনের কারণ

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতন প্রধানত নিম্নলিখিত কারণের কারণে হয়েছিল:

  • গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ: এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি একাধিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করেন। তিনি একতরফা ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এই পদক্ষেপগুলো জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি করে।
  • অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা: এরশাদের আমলে অর্থনীতিতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়, বেকারত্ব বেড়ে যায়, এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যাগুলো জনগণের মধ্যে অসন্তোষের আরেকটি কারণ ছিল।
  • সামাজিক অস্থিরতা: এরশাদের আমলে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন, শ্রমিক-মালিকের দ্বন্দ্ব, এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ইত্যাদি ঘটনা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের আরেকটি কারণ ছিল।

১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, এবং সেনাবাহিনীর একটি অংশ অংশগ্রহণ করে।

এরশাদের পতন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য প্রতিরোধের ক্ষমতা প্রদর্শন করে।

এরশাদের সময় প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় চারজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তারা হলেন:

  • আতাউর রহমান খান (১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ – ১০ অক্টোবর ১৯৮৪)
  • মিজানুর রহমান চৌধুরী (১০ অক্টোবর ১৯৮৪ – ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৫)
  • মওদুদ আহমেদ (১১ ডিসেম্বর ১৯৮৫ – ২৭ মে ১৯৯০)
  • কাজী জাফর আহমেদ (২৭ মে ১৯৯০ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০)

এরশাদ ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠন করেন। এরশাদের সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক শাসনের ছোঁয়া লেগে যায়। তিনি বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেন যাতে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিরোধী দলগুলোর কার্যকলাপকে তিনি সীমিত করে দেন।

এরশাদের সময় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু উন্নতি হয়েছিল। তিনি কৃষিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেন এবং শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি করেন। তবে তার শাসনামলে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগও উঠেছিল।

১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হন।

পল্লী নিবাস একটি বিশাল বাড়ি। এই বাড়িতে একটি প্রধান ভবন এবং বেশ কয়েকটি ছোট ভবন রয়েছে। প্রধান ভবনে এরশাদের ব্যক্তিগত বাসভবন রয়েছে। ছোট ছোট ভবনগুলোতে এরশাদের পরিবারের সদস্য এবং কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

এরশাদের বাড়ির সামনে একটি বিশাল বাগান রয়েছে। এই বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল, ফল, এবং গাছপালা রয়েছে। বাড়ির পিছনে একটি পুকুর রয়েছে।

এরশাদ ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুর পর তার পরিবার পল্লী নিবাসে বসবাস করছে।

পল্লী নিবাসের ঠিকানা হল:

পল্লী নিবাস, নিউ সেনপাড়া, রংপুর, বাংলাদেশ

এরশাদের স্ত্রী কতজন?

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের তিনজন স্ত্রী ছিলেন। তারা হলেন:

  • বেগম নূরজাহান এরশাদ: তিনি এরশাদের প্রথম স্ত্রী। তিনি ১৯৩১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৯ সালে এরশাদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে।
  • বেগম রওশন এরশাদ: তিনি এরশাদের দ্বিতীয় স্ত্রী। তিনি ১৯৪৪ সালের ২৪ আগস্ট রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬২ সালে এরশাদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুইটি সন্তান রয়েছে।
  • বেগম শাহারা খাতুন এরশাদ: তিনি এরশাদের তৃতীয় স্ত্রী। তিনি ১৯৫৩ সালের ১০ জানুয়ারি রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে এরশাদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুইটি সন্তান রয়েছে।

এরশাদের প্রথম স্ত্রী বেগম নূরজাহান এরশাদ ১৯৯১ সালের ২ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তৃতীয় স্ত্রী বেগম শাহারা খাতুন এরশাদ এখনও জীবিত।

এরশাদের প্রথম স্ত্রী বেগম নূরজাহান এরশাদ ছিলেন একজন সমাজসেবী। তিনি “বাংলাদেশ মহিলা সমিতি”র সভাপতি ছিলেন। দ্বিতীয় স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তৃতীয় স্ত্রী বেগম শাহারা খাতুন এরশাদ একজন গৃহিণী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *