পাইলস সারানোর সহজ ও কার্যকর উপায় – ঘরোয়া চিকিৎসা থেকে সমস্যার সমাধান করুন

পাইলস সারানোর সহজ ও কার্যকর উপায় – ঘরোয়া চিকিৎসা থেকে সমস্যার সমাধান করুন

পাইলস বা হেমোরয়েড একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর শারীরিক সমস্যা। এটি মূলত রক্তনালী ফুলে যাওয়ার কারণে হয়। অনেক ক্ষেত্রে ঘরোয়া পদ্ধতিতে পাইলসের উপসর্গ কমানো সম্ভব।


১. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া

পাইলস (হেমোরয়েড) সারাতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খুবই উপকারী। ফাইবার খাবার আপনার মলকে নরম রাখতে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করতে সহায়তা করে, যা পাইলসের ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে। ফাইবার সমৃদ্ধ কিছু খাবারের তালিকা নিচে দেওয়া হলো শাক সবজি পালং শাক, লাল শাক, কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়স, ফুলকপি, ব্রকলি। ফলমূল পেয়ারা, আপেল (খোসাসহ), কলা, নাশপাতি, কমলা, পেঁপে।শস্যজাতীয় খাবার ব্রাউন রাইস, ওটস, বার্লি, সম্পূর্ণ গমের রুটি। ডাল ও বাদাম মসুর ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি, চিনাবাদাম, কাঠবাদাম। বীজ চিয়া বীজ, ফ্ল্যাক্সসিড, সূর্যমুখীর বীজ। ইসপাগুলের ভুষি (পিসিলিয়াম হাশক), যা ফাইবারের একটি ভালো উৎস। ফাইবার রক্তনালীর চাপ কমিয়ে মলত্যাগ সহজ করে।


২. পানি পান বৃদ্ধি করুন

পাইলস (হেমোরয়েড) সমস্যার ক্ষেত্রে সঠিক জীবনযাপন ও খাবারের অভ্যাসের পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। পানি পানের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে এটি পাইলসের উপসর্গ উপশমে সহায়ক হতে পারে। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে মল নরম থাকে, যা পাইলসের সমস্যার উপশমে সাহায্য করে।

কেন পানি পানের পরিমাণ বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ:

স্টুল নরম রাখে পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে শরীরের মল নরম থাকে, যা পাইলসের কারণে হওয়া কষ্ট কমাতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ কোষ্ঠকাঠিন্য পাইলসের প্রধান কারণগুলোর একটি। পানি মল সহজে বের হতে সহায়তা করে। শরীরের ডিটক্সিফিকেশন পর্যাপ্ত পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

করণীয়:

  1. দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
  2. সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানি পান করুন।
  3. ফাইবারযুক্ত খাবার (যেমন শাকসবজি, ফলমূল, এবং পুরো শস্য) খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।
  4. ক্যাফেইন বা অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় কমিয়ে দিন কারণ এগুলো ডিহাইড্রেশন ঘটায়।

৩. উষ্ণ পানির সিটজ বাথ

একটি বড় পাত্র বা বাথটব। কুসুম গরম পানি (খুব গরম নয়, আরামদায়ক উষ্ণ হওয়া প্রয়োজন)। চাইলে ডাক্তার পরামর্শে কিছুটা লবণ বা অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন ব্যবহার করতে পারেন। পাত্রটি পরিষ্কার করে নিন। পাত্রটি এমন উচ্চতায় রাখুন যাতে আপনি আরামদায়কভাবে বসতে পারেন। পাত্র বা বাথটবে কুসুম গরম পানি ভরে নিন। পানি যেন পায়ুপথ এবং তার আশপাশ ঢেকে রাখে। ১০-১৫ মিনিট ধরে সেখানে বসে থাকুন। এই সময়ে পানি ধীরে ধীরে শীতল হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। দিনে ২-৩ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন, বিশেষত শৌচাগার ব্যবহারের পর।


উপকারিতা:

  • ব্যথা, চুলকানি এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
  • রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে যা ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
  • মলদ্বার অঞ্চলে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে।
  • পাইলসের জন্য ওষুধের সাথে সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে কার্যকর।

৪. তেল ব্যবহার

পাইলস বা হেমোরয়েড নিরাময়ের জন্য অনেক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে তেল বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা অন্যতম। যদিও তেলের ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে আরাম দিতে পারে, এটি পাইলস পুরোপুরি সারানোর জন্য কার্যকর নাও হতে পারে। তবে প্রাকৃতিক বা ভেষজ তেলের ব্যবহার পাইলসের ব্যথা, জ্বালাপোড়া বা ফোলাভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে। নারকেল তেল গুণঅ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী রয়েছে। একটি পরিষ্কার তুলোতে নারকেল তেল লাগিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। দিনে ২-৩ বার এটি ব্যবহার করতে পারেন। টি ট্রি অয়েল প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং জীবাণুরোধী।

টি ট্রি অয়েল সরাসরি ব্যবহার না করে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। তুলোর সাহায্যে আক্রান্ত স্থানে লাগান। দিনে একবার ব্যবহার করুন। অলিভ অয়েল প্রদাহ কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। সামান্য গরম অলিভ অয়েল তুলো দিয়ে প্রয়োগ করুন। দিনে ২ বার ব্যবহার করুন। অ্যালোভেরা জেল যদিও এটি তেল নয়, অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। তাজা অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করে আক্রান্ত স্থানে লাগান। এটি দিনে ২-৩ বার প্রয়োগ করুন। প্রাকৃতিক তেল ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।


পাইলসের সমস্যা সমাধানের ঘরোয়া ৫ উপায়

পাইলস বা অর্শরোগ একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকের জীবনকে বিঘ্নিত করে। এই সমস্যার জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় আছে যা আপনার উপসর্গগুলো কমাতে সাহায্য করতে পারে।

দ্রষ্টব্য: এই ঘরোয়া উপায়গুলো সবসময় কার্যকর হতে পারে না এবং গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি।

১. আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ:

আঁশযুক্ত খাবার মলকে নরম করে এবং মলত্যাগ সহজ করে। এটি পাইলসের চাপ কমাতে সাহায্য করে। আপনার খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ এবং পুরো শস্য যোগ করুন।

Image of Highfiber foods

২. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান:

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা মলকে নরম রাখতে সাহায্য করে। এটি মলবদ্ধতা প্রতিরোধ করে এবং পাইলসের উপসর্গগুলো কমাতে সাহায্য করে।

Image of person drinking water

३. বরফ প্যাক:

বরফ প্যাক ফোলা কমাতে এবং ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। একটি পরিষ্কার কাপড়ে বরফ মুড়িয়ে আক্রান্ত স্থানে ১০-১৫ মিনিট রাখুন। দিনে কয়েকবার এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারেন।

Image of Ice pack on affected area

৪. অ্যালোভেরা জেল:

অ্যালোভেরা জেলে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ফোলা কমাতে এবং চুলকানি উপশম করতে সাহায্য করে। আক্রান্ত স্থানে অ্যালোভেরা জেল লাগান।

Image of Aloe vera gel

৫. সিটজ বাথ:

গরম পানিতে বসা (সিটজ বাথ) ফোলা কমাতে এবং ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। দিনে কয়েকবার ১৫-২০ মিনিটের জন্য গরম পানিতে বসুন।

Image of Sitz bath

আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফাইবারযুক্ত খাবার, পানি এবং প্রাকৃতিক রস গ্রহণ করুন।
  • শারীরিক পরিশ্রম: নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  • ত্বকের পরিচ্ছন্নতা: আক্রান্ত স্থানটি পরিষ্কার রাখুন।
  • তनाव কমান: ধ্যান বা যোগাসন করুন।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস  একটি সাধারণ সমস্যা যা মলদ্বারের আশেপাশে শিরা ফোলাভাব বা প্রদাহের কারণে ঘটে। এই সমস্যাটি অনেকের জন্য বেদনাদায়ক এবং বিরক্তিকর হতে পারে। তবে কিছু সঠিক পদক্ষেপ অনুসরণ করলে এটি থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


পাইলসের কারণ ও লক্ষণ

পাইলস সাধারণত নিম্নোক্ত কারণে হয়ে থাকে: দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকা। কোষ্ঠকাঠিন্য বা দীর্ঘদিনের ডায়রিয়া। অতিরিক্ত ওজন। গর্ভাবস্থা।ফাইবারযুক্ত খাবারের অভাব। ভারী ওজন ওঠানো।

লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • মলত্যাগের সময় ব্যথা।
  • রক্তপাত।
  • মলদ্বারে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া।
  • ফোলা বা গিঁট অনুভব হওয়া।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন

  • ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ: নিয়মিত ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, এবং সম্পূর্ণ শস্য খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানো সম্ভব।
  • পর্যাপ্ত পানি পান: দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে মল নরম থাকবে এবং মলত্যাগ সহজ হবে।
  • মশলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার এড়ানো: এই ধরনের খাবার মলদ্বারের প্রদাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যক্রম

  • প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করলে রক্ত চলাচল ভালো হয় এবং পাইলসের সমস্যা কমে।
  • দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা থেকে বিরত থাকুন এবং প্রতি ঘণ্টায় কিছু সময় হাঁটুন।

মলত্যাগের সময় সঠিক অভ্যাস

  • মলত্যাগের জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন না।
  • টয়লেটে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা এড়িয়ে চলুন।
  • মলত্যাগের প্রয়োজন অনুভব করলে দেরি করবেন না।

প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া চিকিৎসা

  • গরম পানির সিটজ বাথ: প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট গরম পানিতে বসলে মলদ্বারের ফোলা ও ব্যথা কমে।
  • অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা প্রদাহ কমায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকে আরাম দেয়।
  • নারিকেল তেল: এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং জ্বালাপোড়া কমায়।
  • পেয়ারা পাতা বা নিম পাতা: এগুলো সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে মলদ্বার ধোয়া উপকারী।

. জীবনধারা পরিবর্তন

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: অতিরিক্ত ওজন পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা: এগুলো শরীরের শিরাগুলোর ওপর প্রভাব ফেলে।
  • মানসিক চাপ কমানো: নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং ধ্যান করলে মানসিক চাপ কমে।

উপসংহার

পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুসরণ করা জরুরি। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, শারীরিক কার্যক্রম বৃদ্ধি, এবং ঘরোয়া পদ্ধতি পাইলস নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে জটিলতার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করানো উচিত। সঠিক পদ্ধতি মেনে চললে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top