কুরবানির ইতিহাস

যেভাবে শুরু হয়েছিল কুরবানি

কুরবানির ইতিহাস শুরু হয় হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ঘটনা থেকে। তিনি ছিলেন একজন নবী এবং তাঁর স্ত্রী ছিলেন হযরত হাজেরা (আঃ)। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর বয়স তখন ছিল ৮৬ বছর। তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে তিনি তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানি করছেন।

তিনি এই স্বপ্নকে আল্লাহর নির্দেশ বলে মনে করেছিলেন এবং তাঁর পুত্রকে কুরবানি করার জন্য প্রস্তুত হলেন।

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে একটি পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গেলেন এবং তাঁকে কুরবানি করার জন্য একটি পাথর দিয়ে বেঁধে দিলেন। তিনি নিজে একটি ছুরি নিয়ে তাঁর পুত্রের গলায় রাখলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর আনুগত্য দেখে খুশি হলেন এবং তাঁর পুত্রের পরিবর্তে একটি দুম্বা পাঠালেন।

এই ঘটনার স্মরণে মুসলমানরা প্রতি বছর ঈদুল আযহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি করে থাকেন। কুরবানির পশু হতে হবে গরু, ছাগল, ভেড়া বা উট। কুরবানির পশুটিকে সুস্থ, সবল এবং নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে হতে হবে।

কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়। একটি ভাগ গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, একটি ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এবং একটি ভাগ নিজের জন্য রাখা হয়।

কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ইবাদত। এটি আমাদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের শিক্ষা দেয় এবং আমাদেরকে অন্যদের প্রতি সহায়তা করার আহ্বান জানায়।

প্রথম কোরবানি যিনি করেছিলেন

মানব ইতিহাসের প্রথম কোরবানিদাতা হলেন আদি পিতা হজরত আদম (আ.) এর পুত্র হাবিল (আ.)। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একটি ভেড়া কুরবানি করেছিলেন। তাঁর ভাই কাবিল (আ.) তার ফসলের কিছু অংশ কুরবানি করেছিলেন।

কিন্তু আল্লাহ তায়ালা হাবিলের কোরবানি কবুল করলেন এবং কাবিলের কোরবানি কবুল করলেন না। এর কারণ হলো, হাবিল তার কোরবানি একনিষ্ঠ মনে করেছিলেন, কিন্তু কাবিল লোকদেখানো করেছিলেন।

কুরআনে এই ঘটনার বর্ণনা নিম্নরূপ:

আর তোমরা তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত সঠিকভাবে শুনাও, যখন তারা উভয়েই কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হল এবং অপরজনের কোরবানি কবুল হল না। সে বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। সে বলল, আল্লাহ মুত্তাকিনদের কোরবানিই কবুল করেন। (সূরা মায়িদা, আয়াত ২৭)

এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া যায় যে, কোরবানি শুধুমাত্র পশু জবাই করা নয়, এর মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এজন্য কোরবানি দিতে হবে একনিষ্ঠ মনে এবং আল্লাহর আনুগত্যের সাথে।

কোরবানির পশু কোথা থেকে এসেছে

কোরবানির পশু সাধারণত দুটি উৎস থেকে আসে। একটি হলো ব্যক্তিগত খামার, যেখানে মুসলমানরা তাদের নিজের পশু লালন-পালন করে। আরেকটি হলো কোরবানি পশুর বাজার, যেখানে মুসলমানরা বাজার থেকে পশু কিনে নেয়।

ব্যক্তিগত খামার থেকে আসা কোরবানির পশুগুলো সাধারণত স্বাস্থ্যকর এবং ভালো মানের হয়। এগুলোকে মুসলিম খামারিরা লালন-পালন করে এবং ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পালন করে।

বাজার থেকে আসা কোরবানির পশুগুলোও সাধারণত স্বাস্থ্যকর এবং ভালো মানের হয়। এগুলোকে হালাল পশুর বাজার থেকে কেনা হয়। বাজারে কোরবানির পশুর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকে এবং এগুলোকে ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী জবাই করা হয়।

বাংলাদেশে কোরবানির পশুর প্রধান উৎস হলো খামার। দেশের বিভিন্ন জেলায় কোরবানির পশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া এবং উট পালন করা হয়।

কোরবানির পশু কেনার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। যেমন:

  • পশুটি যেন স্বাস্থ্যকর এবং ভালো মানের হয়।
  • পশুটির বয়স নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে হোক।
  • পশুটির শরীরে কোনো রোগ বা ত্রুটি না থাকে।
  • পশুটিকে ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পালন করা হয়েছে কিনা।

কোরবানির পশু কেনার জন্য ভালো মানের বাজার বা খামার নির্বাচন করা উচিত। এছাড়াও, একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

সামর্থ্যবানের জন্য কুরবানি ওয়াজিব

হ্যাঁ, সামর্থ্যবানের জন্য কুরবানি ওয়াজিব। কুরবানির জন্য সামর্থ্য থাকার অর্থ হলো, একজন ব্যক্তির নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা। নিসাব হলো স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি এবং অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ।

কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য আরও কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন:

  • ব্যক্তিটি অবশ্যই মুসলিম হতে হবে।
  • ব্যক্তিটি প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে।
  • ব্যক্তিটি সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হতে হবে।
  • ব্যক্তিটি মুকিম হতে হবে। অর্থাৎ, ব্যক্তিটি যেখানে কোরবানি করবেন সে স্থানে তার স্থায়ী বাসস্থান থাকতে হবে।
  • ব্যক্তির উপর কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে।

যে ব্যক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব, সে ব্যক্তি নিজের জন্য, তার পরিবারের জন্য এবং অভাবীদের জন্য কোরবানি দিতে পারে। কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়। একটি ভাগ গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, একটি ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এবং একটি ভাগ নিজের জন্য রাখা হয়।

কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ইবাদত। এটি আমাদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের শিক্ষা দেয় এবং আমাদেরকে অন্যদের প্রতি সহায়তা করার আহ্বান জানায়।

কুরবানীর কিছু অজানা বিষয়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *