মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হলেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮১ সালের ১৫ আগস্ট তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর রাজনীতিতে জড়িত হন। তিনি ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনা তৃতীয় এবং চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি, শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছেন। তিনি নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানবাধিকার রক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। তিনি ২০১৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের মানবাধিকার বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় নেত্রী। তিনি দেশের মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থনে আজ প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল আছেন।
প্রারম্ভিক জীবন
শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হলেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার মাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব।
শেখ হাসিনা তার শৈশব টুঙ্গিপাড়ায় কাটিয়েছেন। তিনি ১৯৫৪ সালে টুঙ্গিপাড়ার গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে তিনি টিকাটুলির ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
শেখ হাসিনা ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ভর্তি হন। তিনি ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
শেখ হাসিনা তার প্রাথমিক জীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৮১ সালের ১৫ আগস্ট তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হন। তিনি ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হলেন শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং একাদশ জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় প্রধান। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এরপর থেকে টানা চার বার সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা একজন জনপ্রিয় নেত্রী। তিনি তার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং সামাজিক উন্নয়নে অগ্রগতি সাধন করেছে। তিনি নারীর ক্ষমতায়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
শেখ হাসিনা একজন সাহসী ও দৃঢ়চেতা নেত্রী। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্যও লড়াই করেছেন। তিনি তার দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। দলটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এবং ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকার পরিচালনা করেছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের কাছে একটি জনপ্রিয় দল এবং দলটি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
১৯৯১-এর নির্বাচন
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ছিল দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনে প্রধান দুই দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (আওয়ামী লীগ) অংশগ্রহণ করেছিল।
নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি আসন লাভ করে জয়লাভ করে এবং খালেদা জিয়াকে প্রধান করে সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন লাভ করে দ্বিতীয় স্থানে আসে।
নির্বাচনের ফলাফল নিম্নরূপ ছিল:
দল | আসন |
---|---|
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল | ১৪০ |
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | ৮৮ |
জাতীয় পার্টি | ৩৭ |
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) | ১২ |
কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ (সিপিবি) | ৬ |
অন্যান্য | ৪৯ |
নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধন করে। বিএনপি প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসে এবং খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন।
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কিছু বিতর্ক ছিল। আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছিল যে নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে কারচুপি হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদকাল, ১৯৯৬-২০০১
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদকাল, ১৯৯৬-২০০১
শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন বাংলাদেশের ৯ম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তিনি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসেন।
শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদকালে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করে। তিনি অর্থনীতিতে উন্নতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের সুরক্ষার উপর জোর দেন।
অর্থনীতিতে উন্নতি
শেখ হাসিনার সরকার অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়। তিনি কর আদায় বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিল্পায়নকে উৎসাহিত করেন। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৬%। ২০০১ সালে তা বেড়ে ৬.৭% হয়। দারিদ্র্যের হারও কমে যায়। ১৯৯৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮.৭%। ২০০১ সালে তা কমে ৩৩.১% হয়।
সামাজিক উন্নয়ন
শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং নারীর ক্ষমতায়নেও জোর দেয়। তিনি শিক্ষার হার বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা উন্নত এবং নারীর অধিকার রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেন।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫.৪%। ২০০১ সালে তা বেড়ে ৬১.৯% হয়। স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাও উন্নত হয়। ১৯৯৬ সালে প্রতি ১০০০ জনে একজন ডাক্তার ছিল। ২০০১ সালে তা বেড়ে প্রতি ১০০০ জনে ২.৭ জন হয়।
শেখ হাসিনার সরকার নারীর অধিকার রক্ষার জন্যও বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়। তিনি নারীর জন্য ক্ষমতার সুযোগ বৃদ্ধি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং নারীর শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সুবিধা উন্নত করার জন্য পদক্ষেপ নেন।
গণতন্ত্রের সুরক্ষা
শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের সুরক্ষার উপরও জোর দেন। তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমের স্বাধীনতা এবং জনগণের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেন।
শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদকালে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের উন্নয়নে বেশ কিছু অগ্রগতি অর্জন করে। তিনি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য কাজ করেন এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আনেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদকালের কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন
- অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি
- দারিদ্র্যের হার কমানো
- শিক্ষার হার বৃদ্ধি
- স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা উন্নত
- নারীর অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ
- গণতন্ত্রের সুরক্ষা
শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদকাল বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করে।
বিরোধীদলীয় সময়কাল, ২০০১-২০০৮
বিরোধীদলীয় সময়কাল, ২০০১-২০০৮
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জয়লাভ করে এবং খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। আওয়ামী লীগ ২৯২টি আসনের মধ্যে ১৪৬টি আসন লাভ করে দ্বিতীয় স্থানে আসে।
শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন। তিনি সরকারের সমালোচনা করেন এবং গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য কাজ করেন।
বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
- তিনি সরকারের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন।
- তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেন এবং বিএনপি সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করেন।
- তিনি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকারের সমালোচনা করেন।
বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন
- তিনি আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
- তিনি সরকারের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সফল হন।
- তিনি গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য কাজ করেন এবং বিএনপি সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতাকে সীমিত করতে সক্ষম হন।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।
উপসংহার
শেখ হাসিনার বিরোধীদলীয় সময়কাল ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। তিনি একজন দক্ষ ও সাহসী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সরকারের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে জনমত গঠনেও সফল হন।