বাংলাদেশে হাইটেক পার্ক সম্পর্কিত তথ্য

হাইটেক পার্ক কি

হাইটেক পার্ক হল একটি নির্দিষ্ট এলাকা যা তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) এবং সম্পর্কিত শিল্পের জন্য উন্নীত অবকাঠামো এবং পরিষেবাগুলিকে একত্রিত করে।

হাইটেক পার্কগুলি সাধারণত উচ্চ-গতির ইন্টারনেট, শক্তিশালী নেটওয়ার্কিং এবং সহায়তামূলক ব্যবসায়িক পরিষেবাগুলির মতো সুযোগ-সুবিধাগুলি প্রদান করে।

তারা প্রায়ই উচ্চ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা ও উন্নয়ন (আর&ডি) কেন্দ্রগুলির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত থাকে।

হাইটেক পার্ক

হাইটেক পার্কগুলি আইটি শিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে ডিজাইন করা হয়েছে। তারা উদ্যোক্তাদের জন্য একটি কেন্দ্রীভূত অবস্থান প্রদান করে, যা তাদের ব্যবসায়িক সম্ভাবনাগুলিকে আরও ভালভাবে বিকাশ এবং বাজারজাত করতে সহায়তা করতে পারে।

তারা সরকার এবং ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতাকেও উত্সাহিত করে।

হাইটেক পার্কগুলি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিছু জনপ্রিয় হাইটেক পার্কের মধ্যে রয়েছে সিলিকন ভ্যালি, ক্যালিফোর্নিয়া; হার্ডওয়ার্ল্ড, ওহাইও; এবং ম্যানচেস্টার, ইংল্যান্ড।

রূপকল্প ও অভিলক্ষ

রূপকল্প হল একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যতের একটি ধারণা। এটি একটি আদর্শ চিত্র যা একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কী অর্জন করতে চায় তা বর্ণনা করে। রূপকল্পটি সাধারণত একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, মূল্যবোধ এবং উদ্দেশ্যগুলিকে প্রতিফলিত করে।

অভিলক্ষ হল একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য। এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্জন করার জন্য একটি পরিমাপযোগ্য এবং অর্জনযোগ্য লক্ষ্য।

অভিলক্ষগুলি সাধারণত রূপকল্পের সাথে সম্পর্কিত থাকে এবং রূপকল্প অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলিকে নির্দেশ করে।

রূপকল্প ও অভিলক্ষের মধ্যে পার্থক্য

রূপকল্প এবং অভিলক্ষের মধ্যে কিছু প্রধান পার্থক্য নিম্নরূপ:

বৈশিষ্ট্যরূপকল্পঅভিলক্ষ
প্রকৃতিধারণাগতনির্দিষ্ট
পরিমাণঅস্পষ্টপরিমাপযোগ্য
সময়কালদীর্ঘমেয়াদীস্বল্পমেয়াদী বা মধ্যমেয়াদী
লক্ষ্যএকটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যতের একটি আদর্শ চিত্রএকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য যা একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান অর্জন করতে চায়

রূপকল্প ও অভিলক্ষের গুরুত্ব

রূপকল্প ও অভিলক্ষগুলি একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলি নিম্নলিখিতগুলির জন্য সহায়তা করে:

  • দিকনির্দেশনা প্রদান: রূপকল্প এবং অভিলক্ষগুলি একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
  • তারা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এবং অংশীদারদের বুঝতে সাহায্য করে যে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কী অর্জন করতে চায় এবং তারা সেই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য কী করতে হবে।
  • উদ্দেশ্য প্রদান: রূপকল্প এবং অভিলক্ষগুলি একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য উদ্দেশ্য প্রদান করে। তারা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এবং অংশীদারদের অনুপ্রাণিত করতে এবং তাদের কাজের অর্থ অনুভব করতে সাহায্য করে।
  • অগ্রগতি পরিমাপ: রূপকল্প এবং অভিলক্ষগুলি একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি পরিমাপ করতে সহায়তা করে।
  • তারা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে দেখাতে সাহায্য করে যে তারা তাদের লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য কতদূর এগিয়েছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় যে কোনও পরিবর্তনগুলি করতে সাহায্য করে।

রূপকল্প ও অভিলক্ষের উদাহরণ

একটি কোম্পানির রূপকল্প হতে পারে “একটি বিশ্বব্যাপী নেতৃস্থানীয় আইটি কোম্পানি হওয়া যা বিশ্বকে আরও ভাল জায়গা করে তোলে।”

এই রূপকল্পটি কোম্পানির মূল্যবোধ এবং উদ্দেশ্যগুলিকে প্রতিফলিত করে এবং কোম্পানির কর্মীদের এবং অংশীদারদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

এই কোম্পানির একটি অভিলক্ষ হতে পারে “২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা।” এই অভিলক্ষটি কোম্পানির রূপকল্প অর্জনের জন্য একটি পরিমাপযোগ্য এবং অর্জনযোগ্য লক্ষ্য।

অন্য একটি উদাহরণ হল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রূপকল্প হতে পারে “প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একটি শিক্ষা প্রদান করা যা তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে সাহায্য করে।”

এই রূপকল্পটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধ এবং উদ্দেশ্যগুলিকে প্রতিফলিত করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি অভিলক্ষ হতে পারে “২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৫% সফলভাবে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে।” এই অভিলক্ষটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রূপকল্প অর্জনের জন্য একটি পরিমাপযোগ্য এবং অর্জনযোগ্য লক্ষ্য।

সারাদেশে কতটি হাই টেক পার্ক স্থাপন করা হবে?

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সারাদেশে ১০৯টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ১০টি হাই-টেক পার্ক ইতোমধ্যেই পূর্ণ উদ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে।
বাকি ৯৯টি হাই-টেক পার্কের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

হাই-টেক পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য পূরণ করা হবে।

হাইটেক পার্ক: ৫৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা

২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে সাতটি এবং শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে দুটি কোম্পানিকে প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এই কোম্পানিগুলো মোট ৫৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।

বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো হল:

  • ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড: ৬.৫ মিলিয়ন ডলার
  • টেকনোমিডিয়া লিমিটেড: ৫ মিলিয়ন ডলার
  • ড্যাফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড: ৫ মিলিয়ন ডলার
  • সেলট্রোন ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিস লিমিটেড: ৫ মিলিয়ন ডলার
  • উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড: ৫ মিলিয়ন ডলার
  • ম্যাকটেল লিমিটেড: ৫ মিলিয়ন ডলার
  • চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন: ৫ মিলিয়ন ডলার

শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো হল:

  • রেডডট ডিজিটাল লিমিটেড: ১০ মিলিয়ন ডলার
  • ফেলিসিটি বিগ ডাটা লিমিটেড: ১০ মিলিয়ন ডলার

এই বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন নতুন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোগ গড়ে উঠবে এবং দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন হবে। এছাড়াও, এই বিনিয়োগের ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য হল ২০২৫ সালের মধ্যে সারাদেশে ১০৯টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা। এই হাই-টেক পার্কগুলোর মাধ্যমে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য পূরণ করা হবে।

ব‌রিশালে হাইটেক পার্ক নির্মাণ শুরু

২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বরিশালে একটি হাইটেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই হাইটেক পার্কটি বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় সাড়ে ছয় একর জমিতে নির্মিত হবে। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এটি হবে বাংলাদেশের ১২তম হাইটেক পার্ক।

এই হাইটেক পার্কের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৫৪ কোটি টাকা এবং ভারত সরকার ৪৬ কোটি টাকা ঋণ দেবে। এই পার্কে প্রতি বছর ১ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং ৩ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

বরিশালে হাইটেক পার্ক নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও, এই পার্ক দক্ষিণাঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

হাইটেক পার্কটির নির্মাণকাজ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হাইটেক পার্ক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পরবর্তী ঠিকানা

হাইটেক পার্ক হল এমন একটি পরিবেশ যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) উদ্যোগগুলিকে উত্সাহিত ও সমর্থন করা হয়।

এই পার্কগুলিতে সাধারণত অত্যাধুনিক অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ সুযোগ এবং অন্যান্য সুবিধা রয়েছে যা আইটি উদ্যোক্তাদের তাদের ব্যবসায়কে সফল করতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশে হাইটেক পার্কগুলির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পার্কগুলির মাধ্যমে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য পূরণ করা হচ্ছে।

বিনিয়োগের জন্য হাইটেক পার্ক:

হাইটেক পার্কগুলি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প। এই পার্কগুলিতে আইটি উদ্যোগগুলির জন্য একটি সুবিধাজনক পরিবেশ রয়েছে।

এছাড়াও, হাইটেক পার্কগুলিতে প্রশিক্ষণ সুযোগ এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হয় যা আইটি উদ্যোক্তাদের তাদের ব্যবসায়কে সফল করতে সাহায্য করে।

কর্মসংস্থানের জন্য হাইটেক পার্ক:

হাইটেক পার্কগুলি কর্মসংস্থানের একটি বড় উৎস। এই পার্কগুলিতে নতুন নতুন আইটি উদ্যোগ গড়ে উঠছে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে সারাদেশে ১০৯টি হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হবে। এই হাইটেক পার্কগুলির মাধ্যমে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য পূরণ করা হবে।

হাইটেক পার্কগুলির সুবিধা:

হাইটেক পার্কগুলির কিছু সুবিধা হল:

  • অত্যাধুনিক অবকাঠামো
  • প্রশিক্ষণ সুযোগ
  • অন্যান্য সহায়তা
  • বিনিয়োগের সুযোগ
  • কর্মসংস্থানের সুযোগ

হাইটেক পার্কগুলির ভবিষ্যৎ:

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের সাথে সাথে হাইটেক পার্কগুলির গুরুত্ব আরও বাড়বে। এই পার্কগুলির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সম্ভব হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *