স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম

সহবাসের সময় দোয়া করা

সহবাসের সময় দোয়া করা ইসলামে সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে চায়, তখন সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। যদি সে বিসমিল্লাহ বলে, তাহলে তাদের মধ্যে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না।” (তিরমিজি, হাদিস নং: ১১০৩)

সহবাসের দোয়াটি হলো:

বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাজাক্বতানা।

অর্থ: “হে আল্লাহ! তোমার নামে আমরা আরম্ভ করছি। তুমি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের যে সন্তান দান করবে (এ মিলনের ফলে)— তা থেকেও শয়তানকে দূরে রাখো।”

এই দোয়াটি পাঠ করলে সহবাসের সময় শয়তান দূরে থাকে। এতে সহবাসে বরকত হয় এবং সন্তান নেককার হয়।

এছাড়াও, সহবাসের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত:

  • সহবাসের সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
  • সহবাসের সময় শব্দ করা থেকে বিরত থাকা।
  • সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে কোমল আচরণ করা।
  • সহবাসের সময় একে অপরের অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখা।

সহবাস একটি স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটিকে ইসলামে বৈধ করা হয়েছে। তবে, সহবাসের সময় ইসলামের বিধি-নিষেধ মেনে চলা উচিত।

স্ত্রীর মাসিককালীন স্বামীর আচরণ

স্ত্রীর মাসিককালীন সময় স্বামীর আচরণে কিছু পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। এই সময় স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। তাই স্বামীর উচিত এই সময় স্ত্রীকে আরও বেশি যত্ন ও সময় দেওয়া।

স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা

মাসিকের সময় স্ত্রীরা শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল থাকেন। তাদের পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই এই সময় তাদের বেশি পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাতে হবে।

স্ত্রীর মানসিক অবস্থা

মাসিকের সময় স্ত্রীরা মানসিকভাবেও কিছুটা অস্থির থাকেন। তারা দ্রুত উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারেন বা বিষণ্ণ হয়ে পড়তে পারেন। তাই এই সময় তাদের মানসিক অবস্থার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। তাদের সান্ত্বনা দেওয়া, তাদের কথা শোনা এবং তাদের আবেগকে বুঝতে চেষ্টা করা উচিত।

স্বামীর আচরণ

স্ত্রীর মাসিককালীন সময় স্বামীর আচরণ নিম্নরূপ হওয়া উচিত:

  • স্ত্রীকে যত্ন ও সময় দিন।
  • তাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখুন।
  • তাদেরকে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ করে দিন।
  • তাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াতে সাহায্য করুন।
  • তাদের কথা শোনেন এবং তাদের আবেগকে বুঝতে চেষ্টা করুন।
  • তাদেরকে সান্ত্বনা দিন এবং তাদের পাশে থাকুন।

নিম্নলিখিত কিছু বিষয় স্বামীরা খেয়াল রাখতে পারেন:

  • স্ত্রীকে বলুন যে আপনি তার পাশে আছেন এবং তাকে সমর্থন করছেন।
  • তাকে বলুন যে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন স্বাভাবিক।
  • তাকে বলুন যে আপনি তার জন্য এখানে আছেন এবং তাকে যেকোনো কিছুর জন্য সাহায্য করতে পারবেন।

স্ত্রীর মাসিককালীন সময় স্বামীর আচরণে কিছুটা পরিবর্তন আনা হলে স্ত্রীরা অনেক বেশি ভালো বোধ করবেন এবং তাদের এই সময়টা আরও সহজ হবে।

রোজা থাকা অবস্থায়

ইসলামে সহবাসের নিষিদ্ধ সময় রোজা অবস্থায়

ইসলামে সহবাসের নিষিদ্ধ সময় হলো রোজা অবস্থায়। রমজান মাসের রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সহবাস করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এটি রোজার ভঙ্গের কারণ।

রোজা অবস্থায় সহবাসের শাস্তি

রোজা অবস্থায় সহবাস করলে রোজা ভঙ্গ হয় এবং তা কাফফারা দিয়ে পূরণ করতে হয়। কাফফারা হলো:

  • ষাটটি রোজা রাখা।
  • ষাটজন মিসকিনকে খাওয়ানো।
  • ষাটজন মিসকিনকে কাপড় দেওয়া।

রোজা অবস্থায় সহবাসের কারণে রোজার ফজিলত নষ্ট হয়

রোজা অবস্থায় সহবাস করলে রোজার ফজিলত নষ্ট হয়ে যায়। এটি একটি গুরুতর পাপ।

রোজা অবস্থায় সহবাসের কারণ

রোজা অবস্থায় সহবাসের কিছু কারণ হলো:

  • অজ্ঞতা।
  • অসচেতনতা।
  • লোভ।
  • হঠকারিতা।

রোজা অবস্থায় সহবাস থেকে বিরত থাকার উপায়

রোজা অবস্থায় সহবাস থেকে বিরত থাকার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি খেয়াল রাখা উচিত:

  • রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
  • রোজা অবস্থায় সহবাসের শাস্তি সম্পর্কে জানা।
  • রোজা অবস্থায় সহবাসের কারণগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
  • রোজা অবস্থায় নিজেকে সহবাস থেকে বিরত রাখার জন্য সচেষ্ট হওয়া।

রোজা অবস্থায় সহবাস থেকে বিরত থাকার জন্য কিছু টিপস

রোজা অবস্থায় সহবাস থেকে বিরত থাকার জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:

  • রোজা রাখার আগে স্ত্রীকে সহবাসের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া।
  • রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে সহবাসের প্রলোভন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা।
  • রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করা।
  • রোজা অবস্থায় নিজেকে সহবাস থেকে বিরত রাখার জন্য দৃঢ় সংকল্প করা।

পরিশেষ

রোজা অবস্থায় সহবাস একটি গুরুতর পাপ। এটি থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।

সহবাসের দোয়ার ফজিলত

সহবাসের দোয়া হলো একটি সুন্নত দোয়া। এ দোয়া পড়লে সহবাসের মাধ্যমে সৃষ্ট সন্তান শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে। এছাড়াও, এ দোয়া পড়লে সহবাসের মাধ্যমে সৃষ্ট সন্তান সুস্থ, ধার্মিক ও ভাগ্যবান হয়।

সহবাসের দোয়াটি হলো:

بِسْمِ اللَّهِ وَبِاللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

অর্থ:

আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর সাহায্য নিয়ে। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে সন্তান দান করবেন তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখ।

এই দোয়াটি সহবাসের শুরুতে পড়া উচিত। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত এ দোয়াটি পড়া।

সহবাসের দোয়ার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে:

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ فَلْيَقُلْ: بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا، فَإِنْ أَصَابَهُمَا وَلَدٌ فِي ذَلِكَ لَمْ يَضُرَّهُ الشَّيْطَانُ بِشَيْءٍ

অর্থ:

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যখন তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়, তখন সে যেন বলে:

بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

অর্থ:

আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর সাহায্য নিয়ে। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে সন্তান দান করবেন তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখ।

যদি সে এ দোয়াটি পড়ে এবং তাদের মিলনের ফলে সন্তান হয়, তাহলে শয়তান সেই সন্তানকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

সুতরাং, সহবাসের দোয়াটি পড়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দোয়াটি পড়লে সহবাসের মাধ্যমে সৃষ্ট সন্তান সুস্থ, ধার্মিক ও ভাগ্যবান হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *