আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস– এর ইতিহাস
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হল প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত একটি বিশেষ দিবস। এই দিনটি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের দ্বারা তাদের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি প্রদর্শনের জন্য পালিত হয়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনার সাথে জড়িত। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজনের পর, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)-এর বাঙালি জনগণকে তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই দাবির পক্ষে মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে সালাম, বরকত, জব্বার ও রফিকসহ কয়েকজন ছাত্র শহীদ হন। এই ঘটনাটি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে ওঠে।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর, ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
প্রস্তাবটি ১৮৮টি দেশের সমর্থনে গৃহীত হয়। এরপর থেকে, ২০০০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ভাষাভাষী সম্প্রদায় তাদের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করে। এছাড়াও, দিবসটি ভাষার গুরুত্ব ও ভাষাগত বৈচিত্র্যের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব নিম্নরূপ:
- এটি ভাষার গুরুত্ব ও ভাষাগত বৈচিত্র্যের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- এটি ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে।
- এটি ভাষাগত সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- এটি ভাষার মাধ্যমে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে সহায়তা করে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদযাপন
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ভাষাভাষী সম্প্রদায় দ্বারা উদযাপিত হয়। দিবসটি উদযাপনের বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে রয়েছে:
- ভাষার উপর আলোচনা ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা
- ভাষার উপর সাহিত্য ও সংস্কৃতির উৎসব
- ভাষার উপর সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মিছিল ও র্যালী
বাংলাদেশে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একটি জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। দিবসটি উদযাপনের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেমন:
- ভাষা শহীদদের স্মরণে শোকসভা
- ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মিছিল ও র্যালী
- ভাষার উপর আলোচনা ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা
- ভাষার উপর সাহিত্য ও সংস্কৃতির উৎসব
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস যা বিশ্বব্যাপী ভাষার গুরুত্ব ও ভাষাগত বৈচিত্র্যের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।