ইন্টারনেট আধুনিক শিক্ষার একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্য এবং শিক্ষার একটি বিশাল ভাণ্ডার প্রদান করে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিষয়ে তথ্য খুঁজে পেতে পারে, অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং অনলাইন ক্লাস গ্রহণ করতে পারে।
ইন্টারনেটের শিক্ষায় ব্যবহারের কিছু সুবিধা হল:
- তথ্যের অ্যাক্সেস: ইন্টারনেট শিক্ষার্থীদের যেকোনো বিষয়ে তথ্যের একটি বিশাল ভাণ্ডার প্রদান করে। এটি শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব গবেষণা করতে এবং তাদের নিজস্ব শিক্ষার পথ তৈরি করতে দেয়।
- শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ: ইন্টারনেট শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে। এটি বিভিন্ন ধরনের ইন্টারেক্টিভ অ্যাপ্লিকেশন এবং সরঞ্জামের মাধ্যমে করা যেতে পারে, যেমন অনলাইন ক্লাস, ফোরাম এবং চ্যাট।
- শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ: ইন্টারনেট শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব শেখার গতি এবং শৈলী অনুযায়ী শিক্ষার অনুমতি দেয়। এটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি দুর্দান্ত সম্পদ।
ইন্টারনেটের শিক্ষায় কিছু ব্যবহারের উদাহরণ হল:
- অনলাইন ক্লাস: শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিষয়ে অনলাইন ক্লাস গ্রহণ করতে পারে। এটি তাদের তাদের নিজস্ব সময়সূচীতে এবং তাদের নিজস্ব বাড়ির সুবিধা থেকে শিখতে দেয়।
- ই-লার্নিং: ই-লার্নিং হল একটি অনলাইন-ভিত্তিক শিক্ষার পদ্ধতি। এটি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক, ভিডিও, অডিও এবং অন্যান্য ডিজিটাল উপকরণগুলির মাধ্যমে বিষয়গুলি শিখতে দেয়।
- ভার্চুয়াল স্কুল: ভার্চুয়াল স্কুল হল একটি অনলাইন-ভিত্তিক স্কুল যা শিক্ষার্থীদের যেকোনো জায়গা থেকে শিক্ষার অনুমতি দেয়।
- শিক্ষাগত সফটওয়্যার: শিক্ষাগত সফটওয়্যার শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলি শিখতে এবং তাদের দক্ষতা বিকাশ করতে সহায়তা করে।
ইন্টারনেট শিক্ষার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাকে আরও অ্যাক্সেসযোগ্য, সহায়ক এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
ইন্টারনেটের স্বরূপঃ ইন্টারনেট শব্দটির পূর্ণরূপ হচ্ছে– ইন্টারকানেকটেড নেটওয়ার্ক । ইন্টারনেট হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত । এর মাধ্যমে অতি সহজে পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের যেকোনো কম্পিউটারের সাহায্য যাবতীয় তথ্য আদান-প্রদান করা যায় ।
ইন্টারনেটের ইতিকথাঃ ইন্টারনেটের জন্ম ইতিহাস যাত্রা শুরু করে ১৯৬০ সাল থেকে । সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করে । প্রতিরক্ষা বিভাগের কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা চারটি কম্পিউটারের মধ্যে গড়ে তোলে প্রথম অভ্যন্তরীণ এক নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা ।
এ যোগাযোগব্যবস্থার বিজ্ঞানীরা নাম ছিল ‘ভাপাণেট’। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে ভাপাণেটর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আপার্নেট । ক্রমশ চাহিদা ওপর নির্ভর করে ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের জন্য এরূপ অন্য একটি যোগাযোব্যবস্থা চালু করে । এর নাম রাখা হয় নেস্ফোনেট ।
মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ‘নেস্ফোনেট’-এর বিস্তার সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে । এ ব্যবস্থায় কিছুটা ঝামেলা দেখা দিলে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গড়ে তোলা হয় ‘কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক ‘ নব্বইয়ের দোরগোড়ায় এ নেটওয়ার্ক বিশ্বব্যাপী পরিচিত লাভ করে ‘ইন্টারনেট’ নামে পরিচিত।
ইন্টারনেটের প্রকারভেদঃ সাধারণ ব্যবহারকারিগণ দুভাগে ইন্টারনেটের গ্রাহক হতে পারেন । প্রথমটি কম্পিউটার বিশ্বে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন , এটি অনলাইন ইন্টারনেট নামে পরিচিত ।
দ্বিতীয়টি -কোনো একটি সার্ভারকে মাধ্যম হিসেবে রেখে কম্পিউটার বিশ্বে বিচরণ । যা ই- মেইল বা ‘অফলাইন ইন্টারনেট ‘ নামে পরিচিত ।
ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তাঃ ইন্টারনেট আধুনিক বিশ্বে এখন প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । ইন্টারনেট সার্ভিসের পরিধি এখন বেশ বিস্তৃত । এ থেকে ব্যবহারকারী প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে তার চাহিদামতো সার্ভিসটি গ্রহণ করতে পারেন ।
বর্তমানে ব্যাপকভাবে প্রচলিত এসব সার্ভিস হচ্ছে ইমেল ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব , সার্চ ইঞ্জিন গোফার এফটিপি বা ফাইল ট্রান্সফার প্রটোকল , টেলনেট , কনফারেন্সিং, চ্যাটিং ইত্যাদি । এসব সার্ভিসের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রয়োজনীয় তথ্য ,ছবি ,শব্দ প্রভৃতি আদান প্রদান করা হচ্ছে ।
ইন্টারনেটের অনলাইন ও অফলাইনঃ যদি কোনো দেশে ইন্টারনেটের সার্ভার থাকে তবে এ সার্ভারের সাহায্যে দুনিয়ার যেকোনো প্রান্তে রাখা অপর সার্ভারে যোগাযোগ করা যায় ।
এক ব্যবহারকারীর সাথে অপর ব্যবহারকারীর এ সংযোগকে বলা হয় অনলাইন । কিন্তু যেসব দেশে সার্ভার নেই সেক্ষেত্রে অপর দেশের সার্ভারের সাথে প্রথমে টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয় । একে বলে অফলাইন ।
অফলাইনে খরচ বেশি এবং সময়ও লাগে বেশি । আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইন ‘ ইন্টারনেট ‘ এর উদ্বোধন করে বাংলাদেশ টিএন্ডটি বোর্ড প্রথমবারের মতো ব্যক্তিগত পর্যায়ে স্যাটেলাইট যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেয়।
ব্যবস্থাটির নাম এক VSAT (Vast Very Small Aperture Termenal)। উল্লেখ্য – এর মাধ্যমে এখন টি এন্ড টি বোর্ডের সাহায্য ছাড়াই সরাসরি রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় ।
দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের প্রভাবঃ ইন্টারনেট হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কম্পিউটারগুলোর নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক । অর্থাৎ ইন্টারনেট হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থিত কম্পিউটারগুলোর নেটওয়ার্ক ।
বাণিজ্যিক কিংবা পেশাগত কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার যেমন কাজকর্মের গতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে তেমনি দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রকার কাজে ইন্টারনেট মানব জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার খাওয়া ,পড়াশুনা করা কোথাও বেড়াতে যাওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাস শোনা ,জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠানো এনেছে তার কিছু ক্ষেত্র নিচে উল্লেখ্য করা হলো ।
১। বর্তমানে ইন্টারনেটে খাবারের অর্ডার দেওয়া যায় ।
২। ঘরে বসেই ইন্টারনেটের সাহায্যে করা যায় ।
৩। GPRS সিস্টেম ব্যবহার করে অচেনা জায়গায় সহজেই পৌঁছানো সম্ভব হয় ।
৪। ব্যবসা-বাণিজ্যের খোঁজখবর নেওয়া , লেনদেন করা , ঘরে বসেই অফিস পরিচালনা করা যায় ।
৫ ই-মেইলের মাধ্যমে শুভেচ্ছা কার্ড পাঠানো যায় । প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করা যায় ।
৬। দূরবর্তী স্থান থেকে ভিডিও কনফারেসিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করা যায় ।
৭। টেলিকনফারেসিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করা যায় ।
৮। ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিমান ও রেলের টিকিট সংগ্রহ করা যায়।
৯। বইপড়া ছাড়াও গবেষণামূলক কাজ পরিচালনা করা যায় ।
ইন্টারনেট সংযোগঃ আইএসএস হংকং ভিত্তিক সুপারনেটের সাহায্যে বাংলাদেশের গ্রাহকদের ইন্টারনেট সার্ভিস সুবিধা দিচ্ছে । সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমেও ব্রডব্যান্ডের আওতায় বাংলাদেশের গ্রাহকরা ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে ।
এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরগুলো ও ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে । এর দ্বারা গ্রাহকরা কম্পিউটারের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনসেটের মাধ্যমে ও তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছে ।
ইন্টারনেট যেভাবে কাজ করেঃ ইন্টারনেটের কার্যকারিতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যাকবোন । ইন্টারনেট ব্যাকবোন হচ্ছে এক ধরনের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক, যা তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগতউপাদানকে সমন্বিত করে ইন্টারনেটকে কাজ করার সুযোগ করে দেয় ।
ইন্টারকানেট ক্ট পয়েন্টসমূহকে সংযুক্তকারী দ্রুতগতির ডাটা লাইনকে বলা হয় ইন্টারনেট ব্যাকবোন । ব্যাকবোনের প্রতিটি প্রান্তে দ্রুতগতির রাউটার বসানো থাকে ।
রাউটার হচ্ছে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের একটি অংশ , যা কোনো একটি পয়েন্ট থেকে ডাটা গ্রহণ করে এবং সবচেয়ে কম দূরত্বের পথে কাঙ্খিত গন্তব্যে তা পাঠিয়ে দেয় । আর এভাবেই ইন্টারনেটের কার্যক্রম পরিচালিত হয় ।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটঃ ১৯৯৩ সালের ১১ই নভেম্বর ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয় । সেসময় অফলাইনের মাধ্যমে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মেইল সার্ভিস দিয়ে আসছিল ।
এর মধ্যে ট্যাপ আগ্র সিস্টেম বিডিমেল বিডিনেট এবং আরোবা–১ উল্লেখ্যযোগ্য অফলাইনে সংযুক্ত থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তথ্যের সব সব সম্পদ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি ।
১৯৯৬ সালের ৪ জুন বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তদানীন্তন উপদেষ্টা মঞ্জুর এলাহী ।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাঃ বাংলাদেশের ৩৩.৪৩ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে । ( সূত্রঃ বিবিএন) অবশ্য সরাসরি গ্রাহক সংখ্যা বিবেচনা করে এ সংখ্যা অনুমান করা হয়েছে ।
সারা দেশে অসংখ্য সাইবার ক্যাফের ব্যাপক প্রসার ঘটায় এ সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে ।
ইন্টারনেট সেবার ধরন ও সহজলভ্যতাঃ একসময় বাংলাদেশের ইন্টারনেট সেবা টেলিফোনের ওপর নির্ভর করলেও বর্তমানে বেশ কিছু রেডিও লিংক ও ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে ।
সম্প্রতি মোবাইল কোম্পানিগুলো মোবাইল সংযোগের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা চালু করায় ইন্টারনেট কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইল ফোনে বহুল ব্যবহার শুরু হয়েছে । ওয়ারলেস সংযোগ হওয়ায় এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
সেটকস্ট না থাকায় গ্রাহকের কাছে এটি অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে উঠছে । কারণ মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে কম্পিউটারে ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় ।
অপকারঃ আলোর বিপরীতে অন্ধকার । চাঁদের কলঙ্ক ও গোলাপের কাঁটার মতো ইন্টারনেট নামক আধুনিক বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিটিরও রয়েছে নানা অপকার ।
কারণ এ বিশাল তথ্য ভান্ডারের মাঝে রয়েছে কিছু অশ্লীলতা এবং নগ্নতা যা আমাদের তরুণ সমাজকে বিপথগামী করছে । খেলে দিচ্ছে অন্ধকার পৃথিবীর দিকে ।
উপসংহারঃ ইন্টারনেট আধুনিক প্রযুক্তির বিস্ময়কর উদ্ভাবন । ইন্টারনেট বহুবিধ সুবিধা প্রদান করে বদলে দিয়েছে আমাদের জীবনযাত্রাকে । ছোট করে ফেলেছে বিশাল বিশ্বকে । সারা বিশ্বের মানুষ আনন্দ ভরে সুস্বাগতম জানিয়েছে ।
নিজের প্রয়োজনে একে ব্যবহার করছে নানা দিকেও নানা কায়দায় । বাংলাদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার জন্য দেশব্যাপী সরকারি উদ্যোগে ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন । পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরকেও সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে ।
এ বিস্ময়কর যোগাযোগব্যবস্থা ও তথ্যর ভান্ডারকে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়ে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের মূল কর্তব্য ।