স্মৃতিসৌধ কি
স্মৃতিসৌধ হলো এমন একটি স্থাপনা যা কোনও বিশেষ ব্যক্তি, ঘটনা বা ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য নির্মিত হয়। স্মৃতিসৌধগুলি বিভিন্ন আকারে এবং আকৃতিতে হতে পারে। এগুলি সাধারণত পাথর, ইট, বা ধাতব দিয়ে তৈরি হয়।
স্মৃতিসৌধের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ঐতিহাসিক ঘটনা বা ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করা এবং তাদের অবদানকে সম্মান করা। স্মৃতিসৌধগুলি জাতীয়তাবাদ, গৌরব এবং ঐতিহ্যের প্রতীকও হতে পারে।
স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। কিছু সাধারণ ধরণের স্মৃতিসৌধের মধ্যে রয়েছে:
- অবতারণা: এটি একটি ব্যক্তির মূর্তি বা প্রতিকৃতি।
- স্তম্ভ: এটি একটি উঁচু, ত্রিকোণীয় কাঠামো।
- মঞ্চ: এটি একটি উঁচু, সমতল ভিত্তি।
- স্তব্ধতা: এটি একটি শান্ত, নিস্তব্ধ স্থান।
স্মৃতিসৌধগুলি প্রায়শই ঐতিহাসিক স্থানে নির্মিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, অনেক যুদ্ধের স্মৃতিসৌধ যুদ্ধের ক্ষেত্রগুলিতে নির্মিত হয়। অন্যান্য স্মৃতিসৌধগুলি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ হতে পারে।
বাংলাদেশে অনেক বিখ্যাত স্মৃতিসৌধ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- জাতীয় স্মৃতিসৌধ: এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি বিশাল স্মৃতিসৌধ।
- মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ: এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গঠিত মুজিবনগর সরকারের স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিসৌধ।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি: এটি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি।
স্মৃতিসৌধগুলি শুধুমাত্র ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এগুলি আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও।
স্মৃতিসৌধ এর সমার্থক শব্দ কি
স্মৃতিসৌধ এর সমার্থক শব্দ হলো:
- স্মৃতিস্তম্ভ
- স্মৃতিচিহ্ন
- স্মৃতিফলক
- স্মৃতিস্তম্ভ
- স্মৃতিস্থল
- স্মৃতিস্থান
- স্মৃতিভবন
এই শব্দগুলির অর্থ একই, অর্থাৎ কোনও বিশেষ ব্যক্তি, ঘটনা বা ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য নির্মিত স্থাপনা।
উদাহরণস্বরূপ, আমরা বলতে পারি:
- জাতীয় স্মৃতিসৌধ একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
- মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ একটি স্মৃতিচিহ্ন।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি একটি স্মৃতিফলক।
এছাড়াও, আমরা বলতে পারি:
- স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয় ঐতিহাসিক ঘটনা বা ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করার জন্য।
- স্মৃতিসৌধগুলি জাতীয়তাবাদ, গৌরব এবং ঐতিহ্যের প্রতীক।
নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা
মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিজিবি। এলাকাটিতে ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে এবং সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকার নিরাপত্তা বেষ্টনী পরিদর্শনে আসেন ঢাকা রেঞ্জ এর ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “এবার মহান বিজয় দিবসকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে এবং সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীদেরকে কঠোর নিরাপত্তা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।”
জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মানের ইতিহাস
জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাতটি স্তম্ভ
বাংলাদেশের সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি বিশাল স্মৃতিসৌধ। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৯৮২ সালের আগস্ট মাসে স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
স্মৃতিসৌধটি একটি ত্রিভুজাকৃতির কাঠামো যার উচ্চতা ১৫০ ফুট। স্তম্ভটি সাতটি ছোট স্তম্ভের সমন্বয়ে গঠিত। এই সাতটি স্তম্ভ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি প্রধান পর্যায়কে প্রতিনিধিত্ব করে।
সাতটি স্তম্ভের ইতিহাস
প্রথম স্তম্ভ: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন
দ্বিতীয় স্তম্ভ: ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন
তৃতীয় স্তম্ভ: ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন
চতুর্থ স্তম্ভ: ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন
পঞ্চম স্তম্ভ: ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন
ষষ্ঠ স্তম্ভ: ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান
সপ্তম স্তম্ভ: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ
এই সাতটি স্তম্ভ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের একটি সংক্ষিপ্তসার প্রদান করে। এটি আমাদেরকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইকারী বীর শহীদদের অবদান স্মরণ করিয়ে দেয়।