গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি বর্তমানে অনেক মানুষের কাছে একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাবারের ধরন, জীবনযাত্রার অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং স্ট্রেসের কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যায়। তবে কিছু সহজ ও কার্যকর উপায়ের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক কমানো সম্ভব। এই নিবন্ধে, আমরা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমানোর জন্য কিছু প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর উপায়ের সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রাকৃতিক পানীয় ও ভেষজ উপাদান ব্যবহার করুন
গ্যাস্ট্রিক কমানোর জন্য প্রাকৃতিক পানীয় এবং ভেষজ উপাদান খুবই কার্যকর হতে পারে। এখানে কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় দেওয়া হলোআদা চাআদা পেটের অ্যাসিডিটি কমাতে এবং হজমে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। কিভাবে তৈরি করবেন এক টুকরো আদা ভালো করে থেঁতো করে এক কাপ গরম পানিতে ফেলে দিন। ৫-১০ মিনিট পর ছেঁকে নিয়ে মধু দিয়ে খেতে পারেন।পুদিনা চা পুদিনা পেটের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়ক। কিভাবে তৈরি করবেন পুদিনা পাতা এক কাপ গরম পানিতে দিয়ে ৫ মিনিট ফোটান।
পরবর্তীতে ছেঁকে নিয়ে পান করুন। ব্রাউন ভিনেগার ব্রাউন ভিনেগার গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করে এবং পেটের অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিভাবে ব্যবহার করবেন এক চামচ ব্রাউন ভিনেগার এক কাপ গরম পানির মধ্যে মিশিয়ে দিনে একবার পান করুন। আলুভরা পানি (Potato juice) আলুর রস পেটের আলসার এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। কিভাবে তৈরি করবেন আধা কাপ কাঁচা আলু ঘষে বা ব্লেন্ডারে করে রস বের করে পান করুন।এলাচ এবং দারচিনি এলাচ ও দারচিনি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে উপকারী, এটি হজম প্রক্রিয়া ভালো করে। কিভাবে তৈরি করবেন এলাচ ও দারচিনি এক কাপ গরম পানিতে ফেলে ৫-১০ মিনিট রেখে পান করুন।
স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস তৈরি করুন
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকেরই হয়ে থাকে, তবে স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তুললে এর মাত্রা অনেকটা কমানো যায়। এখানে কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় তুলে ধরছি যা আপনার গ্যাস্ট্রিক কমাতে সাহায্য করতে পারে।বিভক্তভাবে খাবার খান একবারে বেশি খাবার না খেয়ে, ছোট ছোট ভাগে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। দিনে ৫-৬টি ছোট খাবারের পরিমাণে খাওয়া ভালো। তেল ও মসলার পরিমাণ কমিয়ে দিন অতিরিক্ত তেল, চিনি, তাজা মসলাপাতি বা ক্যাফেইনযুক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এগুলো খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান শাকসবজি, ফলমূল, ওটমিল, এবং স্যালাডে ফাইবার অনেক থাকে। এটি হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে এবং অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। পানি বেশি পান করুন দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পানির অভাব খুবই ক্ষতিকর হতে পারে। খাবার খাওয়ার পর বেশিক্ষণ শুয়ে থাকবেন না খাবারের পর শুয়ে থাকলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়তে পারে। তাই কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা পর শোয়ার চেষ্টা করুন।
দই বা দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক খাবার খান দই, কেফির ইত্যাদি খাবারে প্রোবায়োটিকস থাকে যা পেটের ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিক কমাতে সহায়ক। মশলা জাতীয় খাবার কম খান অতিরিক্ত মশলা বা ঝাল খাবার অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ায়, তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন। নোঙর খাবারের পরিমাণ কমানো অতিরিক্ত কফি, চা, শাকসবজির রস, সোডা ইত্যাদি পানীয়গুলিও গ্যাস্ট্রিক বাড়াতে পারে। এগুলো খাওয়ার পরিমাণ কমান। ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া দ্রুত খাবার খাওয়ার পরিবর্তে ধীরে ধীরে খাবার খান, যাতে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয় এবং গ্যাস্ট্রিক কমে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
গ্যাস্ট্রিক কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম সত্যিই খুব কার্যকর। ব্যায়াম শুধু শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে না, পাশাপাশি পেটের অস্বস্তি কমাতেও সাহায্য করে। কিছু সাধারণ ব্যায়াম যা গ্যাস্ট্রিক কমাতে সাহায্য করতে পারে, তা হলো । হালকা হাঁটা প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা গ্যাস্ট্রিক কমাতে সাহায্য করে। পাইলেটস বা যোগ ব্যায়াম এই ব্যায়ামগুলো পেটের মাংসপেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। বাইসাইক্লিং পেটের চাপ কমানোর জন্য এই ব্যায়াম উপকারী হতে পারে। স্কোয়াটস পেটের মাংসপেশীকে শক্তিশালী করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্যও উপকারী।
স্ট্রেস কমাতে মনোযোগ দিন
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি কমানোর জন্য স্ট্রেস কমানো একদমই গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করতে পারে। স্ট্রেস কমানোর কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় হতে পারে। গভীর শ্বাস প্রশ্বাস গভীর শ্বাস নিলে শরীরের উত্তেজনা কমে এবং স্ট্রেস হ্রাস পায়। দিনে কিছু সময় গভীর শ্বাস নিন। যোগব্যায়াম ও ধ্যান যোগব্যায়াম ও ধ্যান মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে শান্ত করতে সাহায্য করে।
নিয়মিত কয়েক মিনিট ধ্যান করতে পারেন। সন্তুলিত খাদ্যাভ্যাস অতিরিক্ত মসলাযুক্ত বা তেল-চিটচিটে খাবার থেকে বিরত থাকুন। খাবার সঠিক সময়ে খান এবং ছোট ছোট পরিমাণে খান। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে শরীরের পুনর্গঠন হয় এবং স্ট্রেস কমে যায়।ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম স্ট্রেস কমানোর পাশাপাশি হজম ক্ষমতাও বাড়ায়। অতিবিলম্বে চিন্তা না করা যখনই আপনি স্ট্রেসে পড়েন, তখন অবিলম্বে কোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে কিছু সময় বিশ্রাম নিন।
সঠিক সময়ের মধ্যে খাবার খান
গ্যাস্ট্রিক কমানোর জন্য সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত এবং সঠিক সময়ে খাবার খেলে পেটের অ্যাসিডের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়া, গ্যাস্ট্রিক কমানোর জন্য আরও কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় হতে পারে খাবারের পর পরিমাণে বিশ্রাম নিন খাবার খাওয়ার পর একদম শুয়ে পড়বেন না।
সামান্য হাঁটা বা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া ভালো। অতিরিক্ত তেল-মশলা পরিহার করুন খুব বেশি তেল, মশলা, বা ঝাল খাবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে। ছোট ছোট পরিমাণে খাবার খান একসাথে অনেক খাবার না খেয়ে, দিনে ৪-৫ বার ছোট পরিমাণে খাবার খেলে পেটের ওপর চাপ কমে। পানি পান করুন খাবারের পর পানি পান করা জরুরি, কিন্তু খুব বেশি একসাথে পানি খাবেন না। স্ট্রেস কমান মানসিক চাপও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে। ধীরে ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাস বা যোগব্যায়াম চেষ্টা করতে পারেন।
কিছু খাবার থেকে বিরত থাকুন
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা কমানোর জন্য কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় হল খাবারের দিকে একটু নজর দেওয়া। কয়েকটি খাবার থেকে বিরত থাকলে গ্যাস্ট্রিক কমানো সম্ভব। তেলতেলে ও ঝাল খাবার অতিরিক্ত তেল বা মশলাযুক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। এগুলি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। টক খাবার লেবু, টমেটো, অ্যালকোহল ও অন্য টক খাবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে, কারণ এগুলি পেটে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ায়।
ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড স্যান্ডউইচ, পিজ্জা, বার্গার ইত্যাদি যেমন স্ন্যাকস উচ্চ তেল ও মশলার কারণে গ্যাস্ট্রিক বাড়াতে পারে। চা বা কফি অতিরিক্ত ক্যাফিনযুক্ত পানীয় যেমন চা বা কফি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে। এগুলি পেটে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ায়।চকলেট চকলেট বা কোকোজাতীয় খাবারও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে, কারণ এতে অ্যাসিডিটির মাত্রা বাড়াতে সহায়ক উপাদান থাকে। এছাড়া গ্যাস্ট্রিক কমানোর জন্য নিয়মিত পানি পান করা, খাওয়া-দাওয়ার সময় ধীরে ধীরে খাওয়া এবং খাবার খাওয়ার পর বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
গ্যাস্ট্রিক কমানোর জন্য কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় অনুসরণ করলে আপনি দ্রুত উপকার পেতে পারেন। প্রাকৃতিক পানীয়, স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, স্ট্রেস কমানো এবং কিছু খাবার এড়িয়ে চলার মাধ্যমে আপনি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সহজেই কমাতে পারবেন। তবে, যদি সমস্যা দীর্ঘকাল থাকে, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন: