মাজসেবক ও সংস্কারক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ হলেন তারা যারা সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করেছেন। তারা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য আন্দোলন করেছেন, শিক্ষার প্রসার করেছেন, নারীর অধিকার রক্ষা করেছেন, এবং ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করার জন্য কাজ করেছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত সমাজসেবক ও সংস্কারক ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১): তিনি নারী শিক্ষার প্রবক্তা ছিলেন এবং নারীদের জন্য বিধবা বিবাহ, বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণ, এবং সতীদাহ প্রথার বিলোপ ঘটানোর জন্য আন্দোলন করেন।
- রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩): তিনি ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করার জন্য আন্দোলন করেন এবং ভারতে নবজাগরণের সূচনা করেন।
- স্যার সৈয়দ আহমদ খান (১৮১৭-১৮৯৮): তিনি শিক্ষার প্রসার এবং মুসলিমদের উন্নয়নের জন্য কাজ করেন।
- আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৭-১৯৭৪): তিনি শিক্ষক, সমাজসেবক, এবং সাংবাদিক ছিলেন। তিনি শিক্ষার প্রসার এবং নারীর অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করেন।
- মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ (১৮৭৬-১৯৪৮): তিনি পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি ভারতের মুসলিমদের ন্যায্য অধিকারের জন্য আন্দোলন করেন।
বিশ্বের ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত সমাজসেবক ও সংস্কারক ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
- মাদার তেরেসা (১৯১০-১৯৯৭): তিনি ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করার জন্য কাজ করেন এবং দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্যের জন্য আন্দোলন করেন।
- মহাত্মা গান্ধী (১৮৬৯-১৯৪৮): তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তিনি অহিংসা ও সত্যাগ্রহের আদর্শে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দেন।
- নেলসন ম্যান্ডেলা (১৯১৮-২০১৩): তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তিনি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হন।
- মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩): তিনি মার্কসবাদের প্রবক্তা ছিলেন। তিনি পুঁজিবাদের সমালোচনা করেন এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেন।
- আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫): তিনি একজন বিখ্যাত পদার্থবিদ ছিলেন। তিনি আইনস্টাইনের তত্ত্ব আবিষ্কার করেন, যা মহাবিশ্বের রূপ সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদান রাখে।
এই সকল সমাজসেবক ও সংস্কারক তাদের অবদানের মাধ্যমে সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য কাজ করেছেন। তারা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা এবং আদর্শ।
হাজী মোহাম্মদ মহসিন
হাজী মোহাম্মদ মহসিন ১৭৩২ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী শহরে এক সম্ভ্রান্ত ও অসহ্যশালী পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।
বৃত্তি সম্পত্তি ও পরলক গত বোনমন্নুজানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে তিনি বিশাল সম্পত্তি অধিকারী হন।
বিশাল সম্পত্তির অধিকারী হয়েও তিনি অনারম্বর জীবন যাপন করতেন।
গরিব মেধাবী ছাত্রদের জন্য তিনি মহসিন ট্রাস্ট গঠন করেন। বাংলার হাতেম তাই নামে পরিচিতি। ১৮১২ সালে পরলোক গমন করেন।
রাজা রামমোহন রায়
রামমোহন রায় ১৭৭২ সালে হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষা ও ধর্মীয় সংস্কারক।
তিনি সংস্কৃত আরবি ফার্সি ইংরেজি ভাষা পন্ডিত লাভ করেন। ১৮২৩ সালে সংবাদপত্র বিধি (Press Ordinance) পাস করা হলে তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন।
তিনি সুপ্রিম কোর্টের একটি প্রতিবাদ লিপি দাখিল করেন। এ প্রতিবাদ লিপির প্রতিলিপি ইংল্যান্ডের প্রিভিশন কাউন্সিলের প্রেরণ করেন। ১৮২৮ সালে তিনি ব্রাক্ষসভা প্রতিষ্ঠা করেন।
এ সংগঠনের সদস্যগণ ব্রাক্ষণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দু ইসলাম খ্রীষ্ট ধর্মের সারসংক্ষেপ করে একেশ্বররবাদের উপর ভিত্তি করে রামমোহন ব্রাক্ষণ ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন।
সতীদা প্রথা নিষিদ্ধকরণে ও বিধবা বিবাহ প্রচলনের স্বপক্ষে তিনি জোর প্রচারণা চালান। সতিদা প্রথা প্রসঙ্গে তার বিখ্যাত গ্রন্থ প্রবর্তক ওনিবর্তকের সস্বাদ।
তৎকালীন নামমাত্র দিল্লিশ্ব মোগল বাদশা দ্বিতীয় আকবর তার দাবি দাওয়া ব্রিটিশ সরকারের কাছে পেশ করার জন্য ১৮৩০ সালে রামমোহন রায়কে বিলিতে পাঠান।
তাকে রাজা উপাধি দেন। রামমোহন রায় লন্ডনে গিয়ে কোম্পানির শাসনে ভারতীয়দের দুরবস্থার কথা ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে অবহিত করেন। রাজা রামমোহন রায় ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষপাতি
স্যার সৈয়দ আহমেদ খান
স্যার সৈয়দ আহমেদ ছিলেন ভারতের মুসলিম জাগরণের প্রথম অগ্রদূত। তিনি ১৮১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে প্রগতিমূলক ভাবধারা গড়ে তোলার জন্য যে আন্দোলনের সূত্রপাত করেন তা আলীগড় আন্দোলন নামে পরিচিত।
তিনি মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রচারে উদ্দেশ্য ১৮৭৫ সালে আলীগড়ে মহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
কলেজটি ১৯২০ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এ উন্নিত হয়। আলীগড় ভারতের উত্তরপ্রদেশের ওবাস্তিত একটি বিখ্যাত জেলা।
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর
১৮২৪ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মেদিনীপুর জেলার বীর সিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম ভগবতী দেবী।
তার পারিবারিক নাম ঈশ্বর চন্দ্র বন্দোপাধ্যায়। বিদ্যাসাগর ছিল তার উপাধি। ১৮৩৯ হালে সংস্কৃত কলেজ থেকে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন।
তিনি ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামে স্বাক্ষর করতেন। হিন্দু সমাজে বিধবা বিবাহপ্রচলনের চেষ্টা করেন। তার ২৬ জুলাই ১৮৫৬ বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়। ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই সাগরের মৃত্যু হয়।
নওয়াব আব্দুল লতিফ
নবাব আব্দুল লতিফ ১৮২৮ সালে ফরিদপুর জেলার জন্মগ্রহণ করেন। বাংলায় মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা প্রচলনের জন্য তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
১৮৬৩ সালে কলকাতায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ ( মোহামেডানাতী লিটারারি সোসাইটি) প্রতিষ্ঠা করেন।
তার প্রচেষ্টায় কলকাতা মাদ্রাসায় বর্তমান নাম আলিয়া মাদ্রাসা ইংরেজি বিভাগ খোলা হয়।
মুসলমান সমাজের প্রতি তার অবদানের জন্য সরকার তাকে খান বাহাদুর ও নোয়াব পাদি প্রদান করে। ১৮৯৩সালের ১০ জুলাই তিনি ইন্তেকাল করেন।
সৈয়দ আমীর আলী
সৈয়দ আমির আলী মুসলমানদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ের জন্য ১৮৭৭ সালে কলকাতায় সেন্টার ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন।
তার প্রতিষ্ঠিত সমিতি ছিল মুসলমানদের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। তিনি ১৯০৯ সালে লন্ডনে বিপি কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করেন।
তিনি ভারতীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম এ সম্মানের অধিকারী হন। The spirit of Islam তার একটি বিখ্যাত গ্রন্থ।
নওয়াব কয়জুন্নেসা চৌধুরাণী
বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের প্রথম অগ্রদূত লাকসাম এর নওয়াব ফজলুর নেশা চৌধুরানী।
বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অবদান স্বীকৃতি স্বরূপ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম এবং একমাত্র মুসলিম নারী হিসেবে বৃটেনের মহারানী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক নবাব উপাধি পান।
সাহসিক উদ্যোগ নিয়ে এই মহিয়সীনারী বেগম রোকেয়া জন্মের ৭ বছর আগে ১৮৭৩ সালে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠা করেন ফজলুতুন নেশা উৎসব ইংরেজি বিদ্যালয়। অত্যন্ত সাহিত্যুরাগী। তার রচিত প্রকাশিত হয় ১৮৭৬সালে।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালে নয় ডিসেম্বর রংপুর জেলা পায়রা বন্দর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তার জন্মদিন অর্থাৎ নয় ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়। তার পিতার নাম জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের।
বাংলাদেশের নারী শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারীবাদী লেখিকা।
১৯১১ সালে তিনি কলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন আনজুমান খাওয়াতিনে ইসলাম।
তার নামনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকিয়া ছাত্রী নিবাস এর নামকরণ করা হয়। ১৯৩২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।