সোনারগাঁ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

জানুয়ারির মাঝামাঝি। শীতের সকাল। কুয়াশার আবরণ ভেদ করে সূর্য কেবল উঁকি দিচ্ছে  আকাশে। এরমধ্যে সবাই পৌঁছে গেছে স্কুলে।

সাবিহা নমিতা কোভিদ সুবীর  সবাই। আগে এসে গেছেন। সবাই যাতে শিক্ষা  সফরে। ঐতিহাসিক সোনারগাঁও  যাবে তারা। কি আনন্দ উল্লাস সবার মনে!

 সাবিহা ভাবছিল সোনারগাঁও আসলে দেখতে কেমন? এটাকি সোনারগাঁ দিয়ে ঘোড়া কোন গ্রাম? হঠাৎ তার চিন্তা ছেদ পড়ল। হাসান স্যার সবাইকে বাসে ওঠার জন্য তাড়া দিলেন।

সবাই সুশৃংখল হয়ে বাসে  ঢাকার একটি ম্যাপ যুলিয়ে দেখালেন বললেন- এই দেখ, সোনারগাঁও। ঢাকা থেকে সোনারগাঁও দূরত্ব 27 কিলোমিটার।

এটা নারায়ণগঞ্জ জেলায় ঢাকা দক্ষিণ পূর্বে এ প্রাচীন নগরী সোনারগাঁও এর অবস্থান।

 সবাই মনোযোগ দিয়ে  শুনছিল হাসান স্যারের কথা ।তিনি জানালেন, আমরা গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফেলে এসেছি। এবার আমাদের বাস চলবে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কপথে।

কাচপুর ব্রিজ পার হয়ে একটু গেলে  সোনারগাঁও। দেখতে দেখতে এসে পৌছালো সোনারগাঁও। সোনারগাঁওয়ের মাটিতে পা দিয়েই সাবিহার মন খুশিতে ভরে উঠলো।

চারদিকে সবুজ গাছপালা আর শীতের সকালের মিষ্টি রোঁদ্দুর । তাদের চোখে পড়ল একগম্বুজ বিশিষ্ট একটা প্রাচীন মসজিদ। স্যার বললেন, এটা গোয়ালদি মসজিদ।

মুঘল স্থাপত্য  শৈলীর অপূর্ব নিদর্শন রয়েছে মসজিদে। তবে এটা তৈরি হয়েছিল মোঘলরা বঙ্গদেশের আসার আগে।হাসান স্যার আরও জানালেন, প্রাচীনকালের এর নাম ছিল সুবর্ণগ্রাম।

পরে এর নাম হয় সোনারগাঁওঢাকা আর আগে সোনারগাঁও ছিল দক্ষিণ পূর্ব বাংলার রাজধানী। ঈশা খাঁ ছিলেন এ অঞ্চলের  শাসক।

সোনারগাঁওয়ের সবচেয়ে এলাকা পানাম নগর। এ যেন ঘোরের মধ্যে আরেক নগর! সাবিহার ভাবতে আর বেড়াতে বেশ ভালই লাগছে।

এর একটা মাত্র রাস্তা। তার দুই পাশে সারি সারি প্রাচীন দালান। দালাল গুলো খুব উঁচু নয় ।  সবই  দোতলা।  প্রায়১০০ বছরেরও আগে তৈরি। এখানেই ধনী ব্যবসায়ীরা বসবাস করতেন।

সোনারগাঁও তখন ছিল মসলিন কাপড় তৈরি প্রসিদ্ধ স্থান। সোনারগাঁওয়ে তৈরি মসলিনের বিশ্বজোড়া খ্যাতি ও কদর ছিল। পরে সুতি কাপড়ের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে  এটি।

কিন্তু এদেশে ইংরেজরা আসার পর দেশী কাপড়ের কদর যায় কমে। তখন বিলিতি কাপড় আসা শুরু করে এদেশে। বন্ধ হয়ে যায় এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য।

এ শহরের পুরনো দালান বাংলার অভূতপূর্ব স্থাপত্যশৈলী । আমাদের সংস্কৃতির নিদর্শন হিসেবে যেন সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এবার আমাদের শেষ গন্তব্য সোনারগাঁও লোকশিল্প  জাদুঘর। দেখার পালা।

একটি দেশের শিল্প  ইতিহাস ঐতিহ্যের এর যাবতীয়নিদর্শন জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকে।

সোনার গাঁওয়ে জাদুঘরে ডুবতে ডুবতে সবুজের স্নিগ্ধ স্পর্শে  সাবিহার মনটা ভরে গেল। কী চমৎকার একটা লেক! শান্ত কুকুর আর গাছগাছালিতে ভরা চারপাশ।

প্রথমেই সবাই ঢুকে পরল লোক শিল্প জাদুঘর। জাদুঘর টা সাধারণ জাদুঘর নয়, লোকশিল্পের জাদু ঘর। আমাদের  গ্রামীণ  মানুষের তৈরি জিনিসপত্র কে বলে লোক শিল্প।

হাসান আনসারী কথাটা বুঝিয়ে দিলেন। যে বাড়িতে জাদুঘর টা করা হয়েছে তার আদি নাম বড় সরদারবাড়ি।দারুনকারু কাজ করা এর প্রবেশপথ।

কওো জিনিস যে আছে দেখবার, সিকদার। কাঠের তৈরি জিনিস মুখোশ মৃৎপাত্র মাটির পুতুল বাস লোহা কাঁসার তৈরি নানা জিনিস অলংকার ইত্যাদি দেখে সবাই বিস্তৃত। কি সুন্দর জামদানি শাড়ি আর কি বাহার ওই নকশি কাঁথার!

সোনারগাঁও লোক শিল্প জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী জয়নুল আবেদিন। তার সংগ্রহশালায় গিয়ে আরো মুগ্ধ সবাই।

তিনি ছিলেন অনেক বড় শিল্পী। সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলে পড়েছে। এবার ঐতি হাসিক সোনারগাঁও থেকে আমাদের ফেরার পালা।

বাসের জানালা দিয়ে অস্তগামী সূর্যের ছবি দেখতে দেখতে ফিরে এলাম ঢাকা এসিপি আমাদের মনে গাঁথা থাকবে অনেকদিন।