তাফসীর ইবনে কাসীর হলো কুরআনুল কারিমের একটি বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ। এটি মুসলিম বিশ্বে বিশেষভাবে সমাদৃত তাফসীর গ্রন্থ।
তাফসীর ইবনে কাসীরের লেখক হলেন আল্লামা ইবনে কাসীর। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত মুফাসসির, ইতিহাসবিদ, এবং হাদিস বিশারদ। তিনি ১২৭২ সালে সিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩৪০ সালে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
তাফসীর ইবনে কাসীর কুরআনুল কারিমের একটি ব্যাপক এবং বিস্তৃত তাফসীর গ্রন্থ। এতে কুরআনের প্রতিটি সূরার তাফসীর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাফসীরটিতে কুরআনের আয়াতগুলোর ব্যাখ্যার পাশাপাশি হাদিস, ইতিহাস, এবং সাহিত্যের বিভিন্ন তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে।
তাফসীর ইবনে কাসীরের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- এটি একটি ব্যাপক এবং বিস্তৃত তাফসীর গ্রন্থ।
- এতে কুরআনের আয়াতগুলোর ব্যাখ্যার পাশাপাশি হাদিস, ইতিহাস, এবং সাহিত্যের বিভিন্ন তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে।
- এটি একটি নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ তাফসীর গ্রন্থ।
তাফসীর ইবনে কাসীর কুরআনুল কারিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এটি কুরআনের আয়াতগুলোর ব্যাখ্যার পাশাপাশি ইসলামের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্য সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
তাফসীর ইবনে কাসীরের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই অনুবাদটি করেছেন মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহিম।
জন্ম ও বংশ
তাফসীর ইবনে কাসীরের লেখক আল্লামা ইবনে কাসীরের জন্ম ১২৭২ সালে সিরিয়ার বসরান মাজদল নামক স্থানে। তার পিতার নাম খতীব শিহাবউদ্দীন আবু হাফস উমর ইব্ন কাসীর।
তিনি বসবাস করতেন বুসরা নগরীর পশ্চিমে অবস্থিত ‘শারকাব্বীন’ গ্রামে। ৭০১ হিজরীতে তার পিতা খতীব শিহাব উদ্দীন ইন্তেকাল করেন। তখন ইবনে কাসীর (রহ.) এর বয়স মাত্র তিন বছর।
ইবনে কাসীরের বংশ কুরায়শের বনী হাসালা শাখা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। তার পিতা একজন খতিব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বিদ্বান ব্যক্তি। ইবনে কাসীরের মাতার নাম ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ ইব্ন আলী ইব্ন ইবরাহিম। তিনি ছিলেন একজন ধার্মিক মহিলা।
ইবনে কাসীর ছোটবেলা থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি কুরআন, হাদিস, ফিকহ, তাফসীর, ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। তিনি শত শত শায়েখ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
ইবনে কাসীর ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। তিনি খুব অল্প সময়েই জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ মুফাসসির, ইতিহাসবিদ, এবং হাদিস বিশারদ।
ইবনে কাসীরের উল্লেখযোগ্য রচনাবলী হলো:
- তাফসীর ইবনে কাসীর
- আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া
- আশ-শারহুল মুয়াল্লাম
- আল-উসুলুল কাফিয়া
- আল-ফাতাওয়া
- আল-আখবারুল মুফরাদ
ইবনে কাসীর ৭৭৪ হিজরী সনের ২৬ শাবান বৃহস্পতিবার তার ইনতিকাল হয়।
শৈশব ও যৌবন
তাফসীর ইবনে কাসীরের লেখক আল্লামা ইবনে কাসীরের শৈশব ও যৌবন ছিল অত্যন্ত কঠিন। তার পিতা যখন তিনি মাত্র তিন বছর বয়সে ছিলেন তখনই ইন্তেকাল করেন। ফলে তার মাতা একাই তার লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার দায়িত্ব নেন।
ইবনে কাসীর ছোটবেলা থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি কুরআন, হাদিস, ফিকহ, তাফসীর, ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। তিনি শত শত শায়েখ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
ইবনে কাসীরের মাতা ছিলেন একজন ধার্মিক মহিলা। তিনি তার পুত্র ইবনে কাসীরকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। তিনি তাকে কুরআন, হাদিস, এবং ফিকহের প্রাথমিক শিক্ষা দেন।
ইবনে কাসীরের বড় ভাই আবু বকর ইব্ন কাসীর ছিলেন একজন বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি তার ছোট ভাই ইবনে কাসীরকে আরও উচ্চশিক্ষার জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি তাকে বিভিন্ন শায়েখের কাছে পাঠান।
ইবনে কাসীর ১২৯২ সালে বুসরা নগরীর একটি মাদরাসায় ভর্তি হন। তিনি এই মাদরাসায় কুরআন, হাদিস, ফিকহ, তাফসীর, ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন।
ইবনে কাসীর ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। তিনি খুব অল্প সময়েই জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ মুফাসসির, ইতিহাসবিদ, এবং হাদিস বিশারদ।
ইবনে কাসীরের যৌবনকাল ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার জন্য অত্যন্ত উৎপাদনশীল। তিনি এই সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি কুরআনের তাফসীর, ইসলামের ইতিহাস, এবং হাদিসের ব্যাখ্যার উপর অনেক গ্রন্থ রচনা করেন।
ইবনে কাসীরের যৌবনকালে তিনি বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুসলিমদের মধ্যে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
কর্মজীবন
শৈশব ও যৌবন
আবুল ফিদা ইসমাইল ইবনে উমার ইবনে কাসীর (৭০০-৭৭৪ হিজরী) সিরিয়ার বসরান মাজদল নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা খতীব শিহাবউদ্দীন আবু হাফস উমর ইব্ন কাসীর। তিনি বসবাস করতেন বুসরা নগরীর পশ্চিমে অবস্থিত ‘শারকাব্বীন’ গ্রামে। ৭০১ হিজরীতে তার পিতা খতীব শিহাব উদ্দীন ইন্তেকাল করেন। তখন ইবনে কাসীর (রহ.) এর বয়স মাত্র তিন বছর।
ইবনে কাসীরের শৈশব ও যৌবন দামেশকে কাটে। তিনি দামেশকের বিখ্যাত মাদ্রাসা আল-শামসিয়ায় শিক্ষালাভ করেন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন শাইখ আবদুল হালিম আল-আমরি, শাইখ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আল-আফরাহী, শাইখ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল কাদের আল-হারানি প্রমুখ।
শিক্ষকতা ও লেখকতা
ইবনে কাসীর শিক্ষকতা ও লেখালিখির মাধ্যমে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি দামেশকের মাদ্রাসা আল-শামসিয়ায় তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, আরবি ব্যাকরণ ও সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন, যার মধ্যে তাফসীর ইবনে কাসীর অন্যতম।
তাফসীর ইবনে কাসীর
ইবনে কাসীরের সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হল তাফসীর ইবনে কাসীর। এটি কুরআনের একটি বিশদ ও ব্যাপক তাফসীর। এতে কুরআনের প্রতিটি আয়াতের তাফসীর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাফসীর ইবনে কাসীরকে কুরআনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তাফসীর ইবনে কাসীরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল:
- এতে কুরআনের আয়াতসমূহের তাফসীরের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বিদ্বানদের মতামত যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- এতে ইসরাইলী রেওয়ায়েতসমূহের সমালোচনা করা হয়েছে।
- এতে কুরআনের আয়াতসমূহের সাথে ইসলামী শরীয়তের বিধানসমূহের সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে।
তাফসীর ইবনে কাসীর আজও বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে একটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
মৃত্যু
ইবনে কাসীর ৭৭৪ হিজরীতে দামেশকে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর দামেশকে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মিত হয়।
পরিশেষ
ইবনে কাসীর ছিলেন একজন জ্ঞানী ও বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ আজও মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়।
জ্ঞানের স্বীকৃতি
তাফসীর ইবনে কাসীরের জ্ঞানের স্বীকৃতি বিশ্বব্যাপী। মুসলিম বিদ্বানগণ তাফসীর ইবনে কাসীরকে কুরআনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করেন।
তাফসীর ইবনে কাসীরের জ্ঞানের স্বীকৃতির কিছু উদাহরণ হল:
- ইমাম শাওকানী (রহ.) বলেন, “তাফসীর ইবনে কাসীর কুরআনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ। এটিতে কুরআনের আয়াতসমূহের তাফসীরের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বিদ্বানদের মতামত যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তাফসীরগ্রন্থ।”
- ইমাম আব্দুল হাই লাখনাউয়ী (রহ.) বলেন, “তাফসীর ইবনে কাসীর কুরআনের একটি অনন্য তাফসীরগ্রন্থ। এটিতে কুরআনের আয়াতসমূহের তাফসীরের ক্ষেত্রে কুরআন, হাদিস, এবং যুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এটি একটি অত্যন্ত মূল্যবান গ্রন্থ।”
- ইমাম মুহাম্মদ মুহসিন আলী (রহ.) বলেন, “তাফসীর ইবনে কাসীর কুরআনের একটি সুন্দর ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ। এটিতে কুরআনের আয়াতসমূহের তাফসীরের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বিদ্বানদের মতামত যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি জ্ঞান ভান্ডার।”
তাফসীর ইবনে কাসীরের জ্ঞানের স্বীকৃতির কারণ হল:
- এটি একটি ব্যাপক ও বিশদ তাফসীর। এতে কুরআনের প্রতিটি আয়াতের তাফসীর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
- এতে কুরআনের আয়াতসমূহের তাফসীরের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বিদ্বানদের মতামত যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- এটি একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তাফসীর।
- এটি একটি তথ্যপূর্ণ ও জ্ঞানগর্ভ তাফসীর।
তাফসীর ইবনে কাসীর আজও বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে একটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
তাফসীর ইবনে কাসীর এর মূল্য
তাফসীর ইবনে কাসীরের মূল্য অনেক। এটি একটি ব্যাপক ও বিশদ তাফসীর। এতে কুরআনের প্রতিটি আয়াতের তাফসীর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাফসীর ইবনে কাসীরের মূল্য নিম্নরূপ:
- তাফসীর ইবনে কাসীর কুরআনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে কুরআনের আয়াতসমূহের তাফসীরের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বিদ্বানদের মতামত যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তাফসীরগ্রন্থ।
- তাফসীর ইবনে কাসীর একটি ব্যাপক ও বিশদ তাফসীর। এতে কুরআনের প্রতিটি আয়াতের তাফসীর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এটি কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ, ব্যাখ্যা, এবং তাৎপর্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
- তাফসীর ইবনে কাসীর একটি জ্ঞানগর্ভ তাফসীর। এতে কুরআনের আয়াতসমূহের তাফসীরের ক্ষেত্রে ইসলামী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার তথ্য ও জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে। এটি একজন জ্ঞানী ও বিদ্বান ব্যক্তির রচিত গ্রন্থ।
- তাফসীর ইবনে কাসীর একটি তথ্যপূর্ণ তাফসীর। এতে কুরআনের আয়াতসমূহের তাফসীরের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তথ্য প্রদান করা হয়েছে। এটি একজন পাঠককে কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ ও তাৎপর্য সম্পর্কে গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
তাফসীর ইবনে কাসীর আজও বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে একটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এটি কুরআন শিক্ষা ও গবেষণার জন্য একটি অপরিহার্য গ্রন্থ।