কুঁজো বুড়ির গল্প: একটি জনপ্রিয় বাংলা লোককথা
কুঁজো বুড়ি বাংলা লোকসাহিত্যের একটি জনপ্রিয় চরিত্র। এই চরিত্রটির গল্পগুলি প্রায়শই শিশুদের জন্য বলা হয়। গল্পগুলিতে কুঁজো বুড়িকে একজন চতুর, কৌশলী এবং প্রায়ই মজার চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়। তার কুঁজো ভঙ্গি এবং বিচিত্র কাজের মাধ্যমে সে প্রায়ই বিপদের মুখ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নেয় এবং অন্যদেরও সাহায্য করে।
গল্পের মূল বিষয়বস্তু:
- কুঁজো বুড়ির চরিত্র: কুঁজো বুড়ি সাধারণত একজন বয়স্ক মহিলা হিসেবে চিত্রিত হন। তার কুঁজো ভঙ্গি এবং বিচিত্র আচরণ তার চরিত্রকে অনন্য করে তোলে।
- চতুরতা ও কৌশল: কুঁজো বুড়ি প্রায়ই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বিপদের মুখ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নেয়। তার চতুরতা এবং বুদ্ধিমত্তা গল্পের মূল আকর্ষণ।
- সামাজিক বার্তা: কুঁজো বুড়ির গল্পগুলিতে প্রায়ই সামাজিক বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেমন, দুর্বলের জয়, কৌশলের জয়, অহংকারের পতন ইত্যাদি।
জনপ্রিয়তা:
কুঁজো বুড়ির গল্পগুলি শিশুদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। কারণ, এই গল্পগুলিতে রয়েছে:
- রোমাঞ্চ: বিপদ, ষড়যন্ত্র এবং অবশেষে বিজয়ের মতো উপাদান শিশুদের মনকে আকর্ষণ করে।
- হাস্যরস: কুঁজো বুড়ির মজার মজার কাজ এবং তার কৌশলগুলি শিশুদের হাসায়।
- শিক্ষা: গল্পগুলোর মাধ্যমে শিশুরা চতুরতা, সাহস এবং সততার মতো গুণাবলী শিখতে পারে।
উদাহরণ:
একটি জনপ্রিয় কুঁজো বুড়ির গল্পে বলা হয় যে, কুঁজো বুড়ি একদিন জঙ্গলে গিয়ে একটা বাঘের সাথে দেখা করে। বাঘ তাকে খেতে চায়। কিন্তু কুঁজো বুড়ি তার চতুরতার মাধ্যমে বাঘকে ফাঁকি দিয়ে বাঁচতে সফল হয়।
কেন কুঁজো বুড়ির গল্প জনপ্রিয়:
- সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব: কুঁজো বুড়ি সাধারণ মানুষের মতোই একজন। সে তার বুদ্ধি এবং কৌশলের মাধ্যমে বিপদের মুখোমুখি হয়।
- কাল্পনিকতা: কুঁজো বুড়ির গল্পগুলিতে কাল্পনিক উপাদান থাকে যা শিশুদের কল্পনাশক্তিকে উদ্দীপ্ত করে।
- সর্বজনীন আবেদন: কুঁজো বুড়ির গল্পগুলি সর্বজনীন। এটি বয়স, লিঙ্গ বা জাতি নির্বিশেষে সবার কাছেই আকর্ষণীয়
কুঁজো বুড়ির গল্প
এক ছিল কুঁজো বুড়ি। বুড়ির ছিল তিনটি কুকুর। রঙ্গা, বঙ্গা আর ভুতু। একদিন বুড়ি ঠিক করলো সে নাতনির বাড়ি যাবে। তাই রঙ্গা, বঙ্গা আর ভুতুকে ডাকলো আর বলল, তোরা বাড়ি পাহারা দে। আমি নাতনিকে দেখে আসি।
কুকুর তিনটি বলল,আচ্ছা।
বুড়ি রওয়ানা হল। লাঠি ঠুক ঠুক করে কুঁজো বুড়ি চলল। খানিক দূরে যেতেই এক শিয়ালের সঙ্গে বুড়ির দেখা। শিয়াল বলল, আমার খুব খিদে। বুড়ি তোমাকে আমি খাব।
বুড়ি বুদ্ধি করে বলল, আমাকে এখন খেয়ো না। আমার গায়ের কি মাংস আছে? আগে নাতনির বাড়ি যাই। খেয়েদেয়ে মোটাতাজা হয়ে আসি। তখন বরং খেয়ো। শিয়াল বলল, “ঠিক আছে তবে তাই যাও, মোটাতাজা হয়ে এসো।”
বুড়ি লাঠি ঠুক ঠুক করে সামনে এগিয়ে চলল। হঠাৎ এক বাঘ সামনে এসে বলল, হালুম। বুড়ি, তোমাকে আমি খাব। আমার খুব খিদে পেয়েছে। বুড়ি বললো, এতো মহা মুশকিল। বাঘকেও সেই আগের মতো একই কথা বলল বুড়ি। বাঘ দেখল বুড়ির কথা মিছে নয়। বলল, তবে যাও। কিন্তু ফিরে আসতে হবে, হ্যাঁ।
আবার কুঁজো বুড়ি পথ চলল। আস্তে আস্তে লাঠিতে ভর দিয়ে। এক সময় নাতনির বাড়ি পৌঁছে গেল বুড়ি। নাতনির বাড়িতে কিছু দিন মজার মজার খাবার খেল। তাতে বুড়ি মোটা হলকিন্তু এক দিক দিয়ে বুড়ি মহাচিন্তায় পড়ল।
এবার ফিরবে কীভাবে? বুড়ি নাতনিকে সব কথা খুলে বলল। নাতনি বলল, চিন্তার কিছু নেই। আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
নাতনি একটা মস্ত লাউয়ের খোল জোগাড় করল। তার ভিতরে ঢুকিয়ে দিল বুড়িকে। সঙ্গে দিল কিছু চিঁড়ে আর গুড়। এবার খোলটাকে দিল জোরে এক ধাক্কা। গড়িয়ে চলল সেই লাউয়ের খোল। খোল গড়াতে গড়াতে চলে বাঘের কাছে। বাঘ সেই লাউয়ের খোলে দিল এক লাঠি আবার গড়িয়ে চলল লাউয়ের খোল।
বুড়ি তখন ছড়া কাটলো-
লাউ গুড় গুড় লাউ গুড় গুড়
চিঁড়ে খায় আর খায় গুড়
বুড়ি গেল অনেক দূর।
খোল গড়াতে গড়াতে এলো শিয়ালের কাছে। শিয়াল দেখল খোলের ভিতরে বুড়ি। বলল, বুড়ি এবার তোমাকে খাব। বুড়ি বলল, খাবি তো খুব ভালো কথা। কিন্তু আমারও তো কিছু ইচ্ছে আছে। আমি যে তোর গান শুনতে চাই। শিয়াল তক্ষুনি গান ধরল, হুক্কা হুয়া। হুক্কা হুয়া। বুড়ি গিয়ে দাঁড়াল একটা উঁচু ঢিবির উপর। বুড়ি তখন গানের সুরে ডাকল-
আয় আয় তু তু
রঙ্গা বঙ্গা ভুতু
আয় আয় আয়
জলদি চলে আয়।
নিমেষেই ছুটে এলো বুড়ির কুকুর তিনটি। শিয়ালকে ঘিরে ফেলল তারা। একটা কামড় দিল শিয়ালের কানে, আরেকটা দিল ঘাড়ে, একটা পায়ে। বাছা এবার যাবে কোথায়? শিয়াল তখন নাস্তানাবুদ, মরমর দশা। কোনো রকম প্রাণটা নিয়ে শেয়ালটি সেখান থেকে ছুটে পালালো।
তারপর কুঁজো বুড়ি মহানন্দে চলল তার বাড়ির দিকে সঙ্গে রঙ্গা, বঙ্গা আর ভুতু।