লোহিত সাগর কি
লোহিত সাগর ভারত মহাসাগরের একটি অংশ, যা আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশকে পৃথক করে। এটি একটি দীর্ঘ এবং সরু খাঁড়ির মতো আকৃতির। সাগরটির উত্তরে মিশরের সিনাই উপদ্বীপ, পশ্চিমে আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল, পূর্বে আরব উপদ্বীপের পশ্চিম উপকূল এবং দক্ষিণে বাব এল মান্দেব প্রণালী অবস্থিত।
লোহিত সাগরের গড় গভীরতা প্রায় 500 মিটার। এর সর্বোচ্চ গভীরতা 2,500 মিটার। সাগরের জলের তাপমাত্রা সাধারণত 22 ডিগ্রি সেলসিয়াস। লবণাক্ততা 3,5% থেকে 40% পর্যন্ত হতে পারে।
লোহিত সাগরের পানি সাধারণত নীল রঙের হয়, তবে কিছু সময় এটি লালচে রঙ ধারণ করে। এই লালচে রঙের কারণ হল সাগরের পানিতে থাকা এক ধরনের এককোষী শৈবাল, যাকে ট্রিকোডেসামিয়াম রিথ্রিয়াম (Trichodesmium erythraeum) বলা হয়। এই শৈবালগুলি বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে এবং ট্রিকোডেসামাইন (Trichodesmium) নামক একটি অজৈব যৌগ তৈরি করে। এই যৌগের রঙ লাল হওয়ায় সাগরের পানি লালচে রঙ ধারণ করে।
লোহিত সাগর একটি সমৃদ্ধ সামুদ্রিক পরিবেশ। সাগরটিতে বিভিন্ন ধরনের মাছ, সামুদ্রিক প্রাণী এবং প্রবাল রয়েছে। লোহিত সাগরের উপকূলরেখার সাথে অনেকগুলি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য রয়েছে, যেমন মিশরের শহর হুরগাডা এবং শারমের এল শেক।
লোহিত সাগরের নামকরণ হয় কিভাবে
লোহিত সাগরের নামকরণ নিয়ে বেশ কয়েকটি মতবাদ রয়েছে।
একটি মতবাদ অনুসারে, লোহিত সাগরের নামকরণ হয়েছে এর রঙের কারণে। সাগরের পানিতে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে ট্রিকোডেসামিয়াম রিথ্রিয়াম নামে এক ধরনের অজৈব যৌগ গঠন করে। এর রং লাল হওয়ায় এই সাগরের পানি লাল দেখায়। তবে এই লাল রং সবসময় দেখা যায় না। বিশেষ করে, বর্ষাকালে সাগরের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কমে যায় এবং ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও কমে যায়। ফলে সাগরের পানি লাল দেখা যায় না।
আরেকটি মতবাদ অনুসারে, লোহিত সাগরের নামকরণ হয়েছে এর অবস্থানের কারণে। সাগরটি আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশকে পৃথক করেছে। আফ্রিকা মহাদেশের মাটি লালচে রঙের। তাই, সাগরটিকে “লোহিত সাগর” বলা হয়।
তৃতীয় মতবাদ অনুসারে, লোহিত সাগরের নামকরণ হয়েছে এর ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে। বাইবেলে বলা হয়েছে যে, মূসা নবী তার অনুসারীদেরকে মিশর থেকে বের করে নিয়ে আসার সময় লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে পার হন। সাগরটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় এবং মূসা নবী ও তার অনুসারীরা নিরাপদে পার হয়ে যান। এই ঘটনাটিকে খ্রিস্টান ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই, সাগরটিকে “লোহিত সাগর” বলা হয়।
এই তিনটি মতবাদের মধ্যে কোনটি সঠিক তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে, সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মতবাদ হল প্রথম মতবাদ।
লোহিত সাগরের পানি লাল কেন
লোহিত সাগরের পানি সাধারণত নীল রঙের হয়, তবে কিছু সময় এটি লালচে রঙ ধারণ করে। এই লালচে রঙের কারণ হল সাগরের পানিতে থাকা এক ধরনের এককোষী শৈবাল, যাকে ট্রিকোডেসামিয়াম রিথ্রিয়াম (Trichodesmium erythraeum) বলা হয়।
এই শৈবালগুলি বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে এবং ট্রিকোডেসামাইন (Trichodesmium) নামক একটি অজৈব যৌগ তৈরি করে। এই যৌগের রঙ লাল হওয়ায় সাগরের পানি লালচে রঙ ধারণ করে।
ট্রিকোডেসামিয়াম শৈবালগুলি সাধারণত লোহিত সাগরের উপকূলে পাওয়া যায়, তবে তারা সাগরের গভীরেও পাওয়া যেতে পারে। এই শৈবালগুলির বৃদ্ধি সাধারণত বসন্ত এবং গ্রীষ্মে ঘটে, যখন তাপমাত্রা এবং জলের গুণাগুণ এই শৈবালগুলির বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত থাকে।
ট্রিকোডেসামিয়াম শৈবালগুলির বৃদ্ধি সাগরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। এটি মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
লোহিত সাগরের পানি লালচে রঙ ধারণ করার ঘটনাকে “লাল তরঙ্গ” (Red tide) বলা হয়। লাল তরঙ্গ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, তবে এটি মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
লোহিত সাগরের পানি সৃষ্টির কারণ কি
লোহিত সাগরের পানি সৃষ্টির মূল কারণ হলো এর ভূতাত্ত্বিক অবস্থান। লোহিত সাগর ভারত মহাসাগরের একটি অংশ, যা আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশকে পৃথক করে। এই সাগরটি একটি দীর্ঘ এবং সরু খাঁড়ির মতো আকৃতির। সাগরটির উত্তরে সিনাই উপদ্বীপ, পশ্চিমে আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল, পূর্বে আরব উপদ্বীপের পশ্চিম উপকূল এবং দক্ষিণে বাব এল মান্দেব প্রণালী অবস্থিত।
লোহিত সাগরের পানি সৃষ্টির জন্য ভূতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি কারণ হলো:
- উচ্চ তাপমাত্রা: লোহিত সাগরের অবস্থান নিম্ন অক্ষাংশে হওয়ায় এর তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি। সাগরটির গড় তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
- কম বৃষ্টিপাত: লোহিত সাগরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম। সাগরটিতে প্রতি বছর গড়ে মাত্র ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
- উচ্চ বাষ্পীভবন: লোহিত সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল বাষ্পীভূত হয়। সাগরটি থেকে প্রতি বছর গড়ে ১,৩০০ মিলিমিটার জল বাষ্পীভূত হয়।
এই তিনটি কারণে লোহিত সাগরের পানিতে লবণাক্ততা বেশি থাকে। সাগরটির গড় লবণাক্ততা ৪১%। লবণাক্ততা বেশি হওয়ায় সাগরের পানিতে জলের বাষ্পীভবন কম হয়। ফলে সাগরের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে।
এই সমস্ত কারণে লোহিত সাগরের পানিতে এক ধরনের এককোষী শৈবাল, যাকে ট্রিকোডেসামিয়াম রিথ্রিয়াম (Trichodesmium erythraeum) বলা হয়, খুব সহজেই বৃদ্ধি পেতে পারে। এই শৈবালগুলি বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে এবং ট্রিকোডেসামাইন (Trichodesmium) নামক একটি অজৈব যৌগ তৈরি করে। এই যৌগের রঙ লাল হওয়ায় সাগরের পানি লালচে রঙ ধারণ করে।
ট্রিকোডেসামিয়াম শৈবালগুলি সাধারণত লোহিত সাগরের উপকূলে পাওয়া যায়, তবে তারা সাগরের গভীরেও পাওয়া যেতে পারে। এই শৈবালগুলির বৃদ্ধি সাধারণত বসন্ত এবং গ্রীষ্মে ঘটে, যখন তাপমাত্রা এবং জলের গুণাগুণ এই শৈবালগুলির বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত থাকে।
ট্রিকোডেসামিয়াম শৈবালগুলির বৃদ্ধি সাগরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। এটি মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
লোহিত সাগরের পানি লালচে রঙ ধারণ করার ঘটনাকে “লাল তরঙ্গ” (Red tide) বলা হয়। লাল তরঙ্গ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, তবে এটি মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
লোহিত সাগরের গভীরতা কত?
লোহিত সাগরের গভীরতা সর্বোচ্চ ২,৫০০ মিটার। সাগরটির গড় গভীরতা প্রায় ৫০০ মিটার। সাগরটি মধ্যভাগে সর্বোচ্চ গভীরতা বিশিষ্ট। সাগরটির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত বাব এল মান্দেব প্রণালির গভীরতা প্রায় ১,৮০০ মিটার।
লোহিত সাগরের গভীরতা তার ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে। সাগরটি একটি দীর্ঘ এবং সরু খাঁড়ির মতো আকৃতির। সাগরটির উত্তরে সিনাই উপদ্বীপ, পশ্চিমে আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল, পূর্বে আরব উপদ্বীপের পশ্চিম উপকূল এবং দক্ষিণে বাব এল মান্দেব প্রণালী অবস্থিত।
লোহিত সাগরের গভীরতার কারণে এটি একটি সমৃদ্ধ সামুদ্রিক পরিবেশ। সাগরটিতে বিভিন্ন ধরনের মাছ, সামুদ্রিক প্রাণী এবং প্রবাল রয়েছে।
লোহিত সাগর কোন দেশে অবস্থিত
লোহিত সাগর ভারত মহাসাগরের একটি অংশ, যা আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশকে পৃথক করে। সাগরটির উত্তরে মিশরের সিনাই উপদ্বীপ, পশ্চিমে আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল, পূর্বে আরব উপদ্বীপের পশ্চিম উপকূল এবং দক্ষিণে বাব এল মান্দেব প্রণালী অবস্থিত।
সুতরাং, লোহিত সাগরের উত্তর উপকূলে মিশর, পশ্চিম উপকূলে ইয়েমেন, সুদান, সোমালিয়া এবং জিবুতি, পূর্ব উপকূলে সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সুদান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ইয়েমেন অবস্থিত।
লোহিত সাগরের উত্তর-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত বন্দর শহর এল সুয়েজ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সাথে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
লোহিত সাগরে কি মানুষ ডুবে
লোহিত সাগরে মানুষ ডুবে। লোহিত সাগরের পানিতে লবণাক্ততা বেশি, যা মানুষের দেহের লবণাক্ততার চেয়ে বেশি। এর ফলে মানুষের দেহের লবণ বাইরে বেরিয়ে যেতে থাকে এবং দেহের পানি শোষিত হতে থাকে। এতে মানুষের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয় এবং সে অচেতন হয়ে পড়ে। অচেতন অবস্থায় সে ডুবে যেতে পারে।
লোহিত সাগরে ডুবে যাওয়ার অন্যান্য কারণগুলি হল:
- সাগরের স্রোত: লোহিত সাগরের স্রোত খুবই শক্তিশালী হতে পারে। এতে মানুষ ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
- সাগরের ঢেউ: লোহিত সাগরের ঢেউও খুবই উঁচু হতে পারে। এতে মানুষ ডুবে যেতে পারে।
- সাগরের প্রাণী: লোহিত সাগরে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত প্রাণী রয়েছে। এগুলির কামড়ে মানুষ মারা যেতে পারে।
লোহিত সাগরে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচতে হলে নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- সাঁতার কাটার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- সাগরের স্রোত ও ঢেউয়ের ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।
- সাগরের প্রাণী সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।
- সাঁতার কাটার সময় লাইফ জ্যাকেট পরানো উচিত।
লোহিত সাগরে ডুবে যাওয়ার ঘটনা প্রতি বছরই ঘটে থাকে। ২০২২ সালের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, লোহিত সাগরে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ ডুবে মারা গেছে।
লোহিত সাগরের তীরে ঐতিহাসিক তাবুক
লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত তাবুক একটি ঐতিহাসিক শহর। এটি সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। তাবুক শহরটি তার প্রাচীন ইতিহাস এবং ধর্মীয় গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত।
তাবুক শহরের ইতিহাস প্রায় ৫,০০০ বছরের পুরানো। শহরটি প্রাচীন মিশর, রোম এবং পারস্য সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ৭ম শতাব্দীতে ইসলামের আগমনের পর তাবুক শহরটি আরব খিলাফতের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়।
তাবুক শহরটি ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ (সাঃ) এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী তাবুক শহরের কাছে রোমান বাহিনীকে পরাজিত করে। এই যুদ্ধটিই মুসলিম ইতিহাসের প্রথম বিজয়ী যুদ্ধ।
তাবুক শহরে অনেকগুলি ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- তাবুক দুর্গ: এটি একটি প্রাচীন দুর্গ যা ৭ম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল।
- তাবুক মসজিদ: এটি একটি ঐতিহাসিক মসজিদ যা মুহাম্মদ (সাঃ) এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী তাবুক শহর থেকে ফিরে আসার সময় নির্মিত হয়েছিল।
- তাবুক মরুভূমি: এটি একটি বিস্তৃত মরুভূমি যা তাবুক শহরের চারপাশে অবস্থিত।
তাবুক শহরটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। শহরটিতে অনেকগুলি হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং দোকান রয়েছে। শহরের আশেপাশে অনেকগুলি ঐতিহাসিক স্থান এবং মরুভূমি ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।
তাবুক শহরের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে এটিকে “ইসলামের প্রাচীন রাজধানী” বলা হয়।