কর্মক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব কি?

তোমরা সবাই জানো শিক্ষার্থীরা স্কুল শেষ করে কি? কলেজে যায,কলেজ শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যায়। আমাদের দেশে অনেকগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে।

উচ্চমাধ্যমিক পড়া শেষ করে শিক্ষার্থীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আলাদা করে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়।এক সময় এই ভর্তি পরীক্ষার কাজটি ছিল খুব কঠিন, শিক্ষার্থীদের অনেক দূর থেকে দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে্‌ট্রেনে ,জাহাজ্‌ যেতে হতো। লাইনে দাঁড়িয়ে ভর্তি ফর্ম আনতে হতো।

সেই ফর্ম পূরণ করে  আবার তাদের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হত, ক্যাশ টাকা জমা দিতে  হতো ,ফরম জমা দিয়ে পরীক্ষার প্রবেশপত্র  নিতে হতো,সেই প্রবেশপত্র নিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো।

পরীক্ষার খাতা দেখা শেষ হলে ফলাফল প্রকাশিত হতো- খবরের কাগজে সেই ফলাফল  দেখে যারা সুযোগ পেতো তারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতো ।2009 সালে শাহজালাল বিজ্ঞানওপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করল তারা পুরো প্রক্রিয়াটি তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে শেষ করবে।

এবং এই ভর্তি-প্রাক্রয়ায় কোথাও কোন কাগজ ব্যবহার হবে না ভর্তি রেজিস্ট্রেশন জন্য কোন প্রার্থীকে তার ঘর থেকেই বের হতে হবে না।

কাগজবিহীন এই ভর্তি প্রক্রিয়াটি 2009 সালের 21 আগস্ট দেশের প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন- এবং তারপর থেকে এই দেশে প্রায় সকল স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় এভাবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় ।

সবাই নিজের ঘরে বসে শুধুমাত্র মোবাইল টেলিফোন ব্যবহার করে এই প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলতে পারে।

কর্মক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব কি কি?

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ হয়ে গেল পানির মতো সহজ,!কাগজ ব্যবহার না করে অফিসের  কার্যকর্ম করার এই  বিষয়টি  আমাদের দেশে মাত্র শুরু হলেও ধারণাটি কিন্তু নতুন নয় ।

হাজার 1975 সালে বিজনেস উইক নামের একটা ম্যাগাজিন প্রথমবার এটি সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল ।

কিন্তু তখন সেটি ছিল অনেকটা কল্পবিজ্ঞানের  মতো, কারণ এটি বাস্তবে রূপ দিতে হলে অফিসে সবার কাছে একটা কম্পিউটার থাকতে হবে- যেটি তখন কেউ চিন্তাও করতে পারত না।

এখন সেটি বাস্তবসম্মত হয়েছে । এখন অনেক অফিস পুরোপুরি কাগজবিহীন অফিসে পাল্টে গেছে। অফিসে কাগজে কিছু লিখতে হয় না- কম্পিউটারে লিখে একজন আরেকজনকে কাজে পাঠিয়ে দেয়।

কম্পিউটার গুলো নেটওয়ার্ক দিয়ে একটির সাথে আরেকটি যুক্ত হয়ে আছে কাজেই চোখের পলক সব কার্যক্রম হয়ে যায়।

কাগজে কিছু লেখা হয় না বলে কাগজের খবর  বেঁচে যায়। কাগজ তৈরি হয় গাছ থেকে তাই যখন কাগজ বেঁচে যায় তখন গাছ বেঁচে যায়, পরিবেশটা থাকে অনেক সুন্দর।

কাগজ ব্যবহার না করে অফিসের কাজকর্ম চালানোর যদি তথ্যপ্রযুক্তি একটা ধাপ হয় তাহলে তার পরের ধাপে কি হতে পারে ?

কাগজে লেখায় কালি টোনার ব্যবহার হয় না বলে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পরিবেশ দূষণ হয় না। যত দিন যাচ্ছে কম্পিউটারের মনিটরগুলো হচ্ছে বড়, তাই সেখানে কিছু একটা করার কাজটিও হয়েছে অনেক সহজ।

দেখা গেছে নতুন প্রজন্মের মানুষেরা আজকাল কিছু একটা কাগজে না লিখে কম্পিউটারে লিখতে পছন্দ করে, কাগজ না পড়ে মনিটরে পড়াই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে ।

একসময় ক্যামেরায় ছবি তুলে সেগুলো প্রিন্ট না করেই মানুষ সরাসরি  কম্পিউটারে বা মোবাইলের স্কিনে  দেখে নেয়।আমাদের দেশের কাগজ ছাড়া সবচেয়ে চমকপ্রদ কাজটি হচ্ছে ভোটের মেশিন।

দেশটি গণতান্ত্রিক , গণতান্ত্রিক দেশেসবকিছু ঠিক করা হয় নির্বাচন করে। নির্বাচনে ভোট দিতে হয়। ভোট দেওয়ার জন্য দরকার ব্যালট পেপার -অর্থাৎ কাগজ, যেখানে প্রার্থীদের নাম এবং মার্কা ছাপা থাকে। থাভোটারদের সেখানে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ফেলতে হয়।

নির্বাচনের শেষে সেগুলো গুনতে হয়।ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন এরকম কোন সমস্যা নেই- যারা ভোট দেবে তারা সরাসরি মেশিনের বোতাম চেপে ভোট দেয় এবং নির্বাচনের সময় শেষ হলে মুহূর্তের মধ্যে ফলাফল বের হয়ে যায়।

তোমরা শুনে খুব খুশি হবে আমাদের দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন এই ইলেকট্রনিক মেশিন দিয়ে করা শুরু হয়ে গেছে। 

        তথ্য প্রযুক্তি অফিসের কাজকর্ম চালানোর একটি  ধাপ 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কোথায় কোথায় ব্যবহার করা যায়?

তোমরা কেউ কেউ নিশ্চয়ই অনুমান করে  ফেলেছ -সেটি হবে অফিসে না গিয়েই অফিস করা।

আমরা সবকিছুই যদি কম্পিউটার  দিয়ে করি, আর সব কম্পিউটারেই যদি নেটওয়ার্ক দিয়ে একটার সাথে আরেকটা জুড়ে দেয়া থাকে তাহলে আমি সেই কম্পিউটারটা অফিসে বসে ব্যবহার করছি নাকি বাসায় বসে ব্যবহার করছি তাতে কি তাতে কি আসে যায়?

আসলেই কিছু আসে যায় না- আর সেটাই হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন এক ধরনের অফিসের ধারণা।

হাজার 1983 সালে প্রথম এটা নিয়ে আলোচনা হয় আর হাজার 1994 সালে প্রথম এধরনের একটা অফিস তার কাজ শুরু করে.

যারা কাজ করছে তারা সশরীরে কেউ অফিসে নেই কিন্তু অফিসের কাজ চলছে- এরকম অফিসের নাম হচ্ছে ভার্চুয়াল অফিস  অফিসকে ভার্চুয়াল অফিস বানানো যাবে তা নয়- কিন্তু যেগুলো বানানো যাবে- সেটা সেখানে অনেক লাভ. প্রথমত তোমাকে অফিসের জন্য বড় বিল্ডিং করতে হবে  না।

রাস্তাঘাটে ট্র্যাফিক জ্যামের সাথে যুক্ত করে কাউকে অফিসে আসতে হবে না. বাসায় বসে কাজ করতে পারলে পারবে বলে অফিসের কাজের পাশাপাশি বাসার কাজকর্ম ও করতে পারবে.!

কাজেই অফিসে গেলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করতে হবে কিন্তু বাসায় বসে কাজ করলে অফিসের সময় এর বাইরে অনেক কাজ করা সম্ভব ! কাজেই  ভার্চুয়াল অফিসের কাজকর্ম সাধারণ অফিস থেকে বেশি হতে পারে ।

বাংলাদেশ এখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মাধ্যমে বিশাল বিশাল জাহাজ তৈরি করে পৃথিবীর বড় বড় দেশে রপ্তানি করছে? 

তোমরা নিশ্চয়ই জানো বাংলাদেশ এখন বিশাল বিশাল জাহাজ তৈরি করে পৃথিবীর বড় বড় দেশে রপ্তানি করে।

আমাদের এত সুন্দর দেশটির ভেতরে  দিয়ে বিশাল বিশাল নদী গিয়েছে- এই দেশের মানুষ নদী বিল সমুদ্রে বড় হয়েছে- কাজেই তারা যে চমৎকার নৌকা  আর জাহাজ বানাতে পারবে তাতে অবাক হবার কী আছে? বড় বড় জাহাজ বানাতে হলে ।

বিশাল বিশাল ধাতব টুক্রোকে নির্দিষ্ট আকারে কেটে তারপর ওয়েল্ডিং করতে হয়।তোমরা নিশ্চয়ই পথে-ঘাটে দোকানে ওয়েলিং করতে দেখেছো

সেখান থেকে আলো বের হয় কেউ যদি সুজাসুজি সে দিকে তাকায় তাহলে তার চোখ পাকাপাকি ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে।

যারা ওয়েল্ডিং করে তাদের বিশেষ চশমা পড়ে কাজ করতে হয়। সেখানে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয় ধাতব টুলগুলো নাটক টুরো টুরো ছিটকে ছিটকে পড়ে।

কাজটি দেখেই মনে হয় এটি বেশ বিপদজনক  কাজ। বিপদজনক কাজটি যদি মানুষের মানুষকে করতে না হতো কোন একটা রোবট করতো তাহলে কেমন হতো? তোমরা শুনে খুশি  হবে।

এধরনের বিপদজনক কাজ গুলো আসলে আস্তে আস্তে মানুষ নিজের না করে রোবটের দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছে। মানুষেরা কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায়- একঘেয়ে কাজ হলে কাজ করতে ইচ্ছে করেনা। 

 কর্মক্ষেত্রে রোবট এর ব্যবহার

রোবট রা ক্লান্ত হয় না এ কাজটি নিয়ে তারা কখনও অভিযোগও করে না। তাই পৃথিবী বড় বড় কল কারখানার শ্রমিক হিসেবে আর মানুষ  নেই। কাজ করে রোবট… মানুষেরা বড়জোর দেখে কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা।

একঘেয়ে বিপদজনক কাজগুলো মানুষ মানুষ থেকে রোবট টা অনেক ভালো করতে পারে।

কাজ যত যত দিন যাচ্ছে মানুষের মেশিন মেশিনের করছে- তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের পথে-ঘাটে প্রতিদিন কত এক্সিডেন্ট হয়- মোটামুটি অনুমান করা যায় আর কয়েক দশক পর অ্যাক্সিডেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে

কারণ তখন গাড়ি আর মানুষেরা চালাবে না।গাড়ি চালাবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা যন্ত্র। বিশাল বিশাল প্লেন যখন আকাশে ওড়ে তখন কিছু করতে হয়- কম্পিউটারে সবকিছু করে।

বিশাল বিশাল প্লেন যখন আকাশে ওড়ে তখন পাল্টে কিছু করতে হয় না কম্পিউটার সবকিছু করে দুধ যুদ্ধবিমান যেগুলো আছে সেখান আজকাল পাইলট থাকেনা পাইলট ঘন্টা প্রতিদিন যুদ্ধ করছে প্রভাব ফেলছে সেটা তো খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায়।

আমাদের কাজের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি কেমন করে ব্যবহার হয় তার তালিকা করতে গেলে সেটি শেষ হবে বলে মনে হয় না।দাপ্তরিক চিঠিপত্র যোগাযোগের কথা তো আগেই বলা হয়েছে-  অফিসের মিটিং গুলো আজকাল অন্যভাবে হয়।

কর্মক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব

বিভিন্ন অফিসের বিভিন্ন মানুষ আলাদা ভাবে বসে একসাথে কনফারেন্স করে ফেলে! আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে  ই -ক্লাস রুম তৈরি হচ্ছে একজন শিক্ষক তার ক্লাসরুমে পড়াবেন সারাদেশে অসংখ্য মানুষ তার কাছে পড়বে।

অফিসের ব্যবস্থাপনা তথ্য প্রযুক্তি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। আগে অফিসে বড় বড় কোন ফাইল এক ঘর থেকে অন্য অফিসে যেতে দিন যেতে দিন পার হয়েছে  যেত। নতুন ইলেকট্রনিক ফাইল চোখে পড়লে এক অফিস থেকে অন্য ঘরে চলে যেতে পারে।

অফিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হয় টাকা পয়সা বা একাউন্টিং সংক্রান্ত, তথ্যপ্রযুক্তি কারণে সেই কাজগুলো এখন আর মানুষের করতে হয় না- বড় বড় লেজার খাতায় মাথা গুঁজে কিছু লিখতে হয় না, কম্পিউটার মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু করে ফেলে।

মানুষের কাজের জায়গায় সবসময়ই কাউকে না কাউকে কিছু একটা বলতে হয়, বোঝাতে হয্‌ সেমিনার দিতে হয়। এসব কাজের জন্য এত চমৎকার ব্যবস্থা বের হয়েছে, এত সুন্দর করে সবকিছু করে ফেলা যায় যে মাঝে মাঝে মনে হয় আগে এই কাজগুলো কেমন করে করা হতো ।