বর্ণ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

বর্ণ হলো ভাষার ক্ষুদ্রতম একক। এটি একটি ধ্বনি বা ধ্বনিসমূহের সমষ্টি যা একটি নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে। বাংলা ভাষায় মোট ৫০টি বর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি স্বরবর্ণ এবং ২৫টি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে।

স্বরবর্ণ হলো এমন বর্ণ যা উচ্চারণের সময় কোনো বাধা পায় না। বাংলা ভাষায় মোট ২৫টি স্বরবর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি মূর্ধন্যস্বর, ৯টি ওষ্ঠ্যস্বর, ২টি দন্ত্যস্বর এবং ৩টি অন্তঃস্থস্বর রয়েছে।

ব্যঞ্জনবর্ণ হলো এমন বর্ণ যা উচ্চারণের সময় বাধা পায়। বাংলা ভাষায় মোট ২৫টি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি অঘোষ ব্যঞ্জন, ১০টি ঘোষ ব্যঞ্জন, ৪টি উষ্ম ব্যঞ্জন এবং ১টি অর্ধমাত্রার ব্যঞ্জন রয়েছে।

বর্ণের প্রকারভেদ

বাংলা ভাষায় বর্ণগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

  • স্বরবর্ণ: উচ্চারণের সময় কোনো বাধা না পেয়ে যেসব বর্ণ উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে স্বরবর্ণ বলে।
  • ব্যঞ্জনবর্ণ: উচ্চারণের সময় বাধা পেয়ে যেসব বর্ণ উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে।
  • অন্য বর্ণ: স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণ নয় এমন বর্ণকে অন্য বর্ণ বলে। বাংলা ভাষায় অন্য বর্ণ হলো ‘হ’।

স্বরবর্ণ

  • মূর্ধন্যস্বর: উচ্চারণের সময় জিহ্বার ডগা ওপরের তালুতে স্পর্শ করে যেসব স্বরবর্ণ উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে মূর্ধন্যস্বর বলে। মূর্ধন্যস্বর হলো আ, ই, উ, ঋ।
  • ওষ্ঠ্যস্বর: উচ্চারণের সময় ঠোঁট বন্ধ করে যেসব স্বরবর্ণ উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে ওষ্ঠ্যস্বর বলে। ওষ্ঠ্যস্বর হলো ও, ঔ।
  • দন্ত্যস্বর: উচ্চারণের সময় জিহ্বার ডগা ওপরের দাঁতের গোড়ায় স্পর্শ করে যেসব স্বরবর্ণ উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে দন্ত্যস্বর বলে। দন্ত্যস্বর হলো এ, ঐ।
  • অন্তঃস্থস্বর: উচ্চারণের সময় জিহ্বার মধ্যভাগ ওপরের তালুতে স্পর্শ করে যেসব স্বরবর্ণ উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে অন্তঃস্থস্বর বলে। অন্তঃস্থস্বর হলো অ, ঈ।

ব্যঞ্জনবর্ণ

  • অঘোষ ব্যঞ্জন: উচ্চারণের সময় কণ্ঠনালীর কোনো বাধা না পেয়ে যেসব ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে অঘোষ ব্যঞ্জন বলে। অঘোষ ব্যঞ্জন হলো ক, খ, গ, ঘ, চ, ছ, জ, ঝ, ট, ঠ, ড, ঢ, ত, থ, দ, ধ, প, ফ।
  • ঘোষ ব্যঞ্জন: উচ্চারণের সময় কণ্ঠনালীর বাধা পেয়ে যেসব ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে ঘোষ ব্যঞ্জন বলে। ঘোষ ব্যঞ্জন হলো ঙ, ঞ, ণ, ন, ম, ল, ব, ভ, শ, ষ, স, হ।
  • উষ্ম ব্যঞ্জন: উচ্চারণের সময় জিহ্বার তাপের প্রভাবে যেসব ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে উষ্ম ব্যঞ্জন বলে। উষ্ম ব্যঞ্জন হলো য, র, ল।
  • অর্ধমাত্রার ব্যঞ্জন: উচ্চারণের সময় অর্ধমাত্রার শব্দ উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে অর্ধমাত্রার ব্যঞ্জন বলে। অর্ধমাত্রার ব্যঞ্জন হলো য়।

বাংলা বর্ণমালার শ্রেণী বিভাগঃ বাংলা বর্ণমালাকে দু ভাগে ভাগ করা হয়েছে ।

 যথা-

           ক) স্বরবর্ণ   

           খ) ব্যঞ্জনবর্ণ

স্বরবর্ণঃ যে সকল বর্ণ অন্য বর্ণের সাহায্য ব্যতীত নিজে নিজেই উচ্চারিত হতে পারে তাকে স্বরবর্ণ বলে । স্বরবর্ণ মোট  ১১টি ।

যথা-

অ, ই, ড় ,ঈ , উ, ঊ , ঋ , ঐ , ও ,  ঔ     ১১টি ।

ব্যঞ্জনবর্ণঃ  যে সকল বর্ণ স্বরবর্ণের সাহায্য ব্যতীত নিজে নিজে উচ্চারিত হতে পারে না, সে বর্ণগুলোকে ব্যঞ্জন বর্ণ বলে ।

যথা-

ক, খ , গ , ঘ, ঙ

,চ ,  ছ ,  জ , হ , ঞ

ট, ঠ , ড , ঢ  ,ণ 

ত ,থ,  দ ,  ধ , ন

প ,  ফ ,ব , ভ, ম

য , র , ল

শ , ষ ,  স ,  হ

ড় , ঢ়   , য় , ৎ

,ং  ঃ ,   ঁ           ৩৯টি

ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ফলা বলে । বাংলা বর্ণমালা সমূহকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে ।

যথা,

        ■ পূর্ণমাত্রা বর্ণ

        ■  অর্ধমাত্রা বর্ণ

        ■  এবং মাত্রাহীন বর্ণ

 

       ◉  পূর্ণমাত্রা বর্ণ – ৩২ টি

       ◉ অর্ধমাত্রা বর্ণ – ৮ টি 

       ◉ মাত্রাহীন বর্ণ – ১০ টি

ব্যঞ্জনবর্ণের ভেতর অর্ধমাত্রার বর্ণ ৭ যথাঃ খ , গ  , ণ , ধ ,শ ,

স্বরবর্ণের ভিতর অর্ধমাত্রার বর্ণ ১ টি যথাঃ  ঋ ।

১। স্বরবর্ণের পূর্ণরূপঃ স্বরবর্ণ যখন স্বাধীনভাবে  ব্যবহৃত হয়, তখন এর পূর্ণরূপ লেখা হয় ।  স্বরবর্ণের পূর্ণরূপ শব্দের শুরুতে,  মাঝে , শেষে- তিন অবস্থানেই থাকতে পারে । যেমনঃ অনেক, আকাশ , ইলিশ , উকিল , ঋণ , এক । শব্দের মধ্যেঃ বেদুইন , বাউল , আউশ,পাউরুটি । শব্দের শেষেঃ বই , বউ , সেমাই ,জামাই ।

২। স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্তরূপ বা কারঃ অ- ভিন্ন স্বরবর্ণগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হলে পূর্ণরূপের বদলে সংক্ষিপ্ত রূপ পরিগ্রহ করে । স্বর বর্ণের এ ধরনের সংক্ষিপ্তরূপকে  কার বলে । স্বরবর্ণর কার-কার চিহ্ন ১০টি ।

যথা- 

আ-কার (া) মা, বাবা , ঢাকা ।

ই-কার (ি)  কিনি , চিনি , মিনি ।

ঈ-কার (ী)  শশী ,সীমানা  রীতি ।

উ-কার (ু )  কুকুর , পুকুর , দুপুর ।

ঊ-কার( (ূ ) ভূত , মূল্য , সূচি।

ঋ -কার (ৃ) কৃষক ,  তৃন , পৃথিবী ।

এ-কার( ে)  চেয়ার ,টেবিল,মেয়ে

ঐ-কার (ৈ) তৈরি ,বৈবি ,হৈচৈ 

ও-কার( ো) খোকা,  পোকা

ঔ-কারো(ৌ) নৌকা , মৌসুমী , পৌষ । 

১। ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্ণরূপঃ ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্ণরূপ শব্দের প্রথমে, মধ্যে বা শেষে স্বাধীনভাবে বসে ।  যেমন- শব্দের প্রথমেঃ কবিতা, পড়াশোনা , টগর , শব্দের মধ্যেঃ  কাকলি , খুলনা , ফুটবল। শব্দের শেষেঃ আম , শীতল , সিলেট ।

২। ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ বা ফলাঃ অনেক সময় স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য ব্যঞ্জনবর্ণের আকার সংক্ষিপ্ত হয়ে যায় । ব্যঞ্জনবর্ণের এই সংক্ষিপ্ত রূপকে  ফলা বলে । ব্যঞ্জনবর্ণের ফলা চিহ্ন ছয় (৬)টি ।

যথা-

য-ফলা (্য)   খ্যাতি,  সহ্য ।

ব-ফলা (ূ) পক্ব  , বিশ্ব , অশ্ব ।

ম-ফলা(া) পদ্ম ,সম্মান ,  স্মরণ ।

র-ফলা (চ্র)  প্রমান , প্রান্ত।

ন/ণ-ফলা (ণ/ন) বিভিন্ন, যত্ন , রত্ন ,  অপুরাহু  ।

ল-ফলা (ু)ক্লান্ত , ম্লান, অম্ল । 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top