যৌতুক প্রথা হলো বিবাহের সময় কনের পরিবার বরপক্ষকে প্রদান করা অর্থ, সম্পত্তি বা সেবা। যৌতুক প্রথা একটি সামাজিক প্রথা যা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত।
যৌতুক প্রথার ইতিহাস
যৌতুক প্রথার ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। প্রাচীন গ্রিস, রোম, ভারত, চীন ইত্যাদি দেশে যৌতুক প্রথা প্রচলিত ছিল। বাংলাদেশেও যৌতুক প্রথার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে যৌতুক প্রথার প্রচলন হয়েছিল কৃষিকাজের বিকাশের সাথে সাথে। কৃষিকাজের বিকাশের ফলে সম্পত্তির অধিকার পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে নারীরা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। এই বঞ্চনার প্রতিক্রিয়ায় নারীদের পরিবার বরপক্ষকে যৌতুক প্রদান করতে শুরু করে।
যৌতুক প্রথার কুফল
যৌতুক প্রথার অনেক কুফল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- দারিদ্র্য বৃদ্ধি: যৌতুক প্রথার কারণে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়। কারণ, যৌতুক প্রদানের জন্য অনেক পরিবারকে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করতে হয় বা ঋণ নিতে হয়।
- নারী নির্যাতন: যৌতুক প্রথার কারণে নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পায়। যৌতুক না পেলে বরপক্ষ কন্যাকে নির্যাতন করে বা হত্যা করে।
- বিবাহ বিচ্ছেদ: যৌতুক প্রথার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ বৃদ্ধি পায়। যৌতুক না পেলে বরপক্ষ কন্যাকে তালাক দেয়।
- সমাজিক অবক্ষয়: যৌতুক প্রথার কারণে সামাজিক অবক্ষয় ঘটে। এটি সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
যৌতুক প্রথা দূর করার উপায়
যৌতুক প্রথা দূর করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
- সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: যৌতুক প্রথার কুফল সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। এজন্য গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
- আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ: যৌতুক প্রথা নিরোধে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা জরুরি। এজন্য যৌতুক নিরোধ আইনকে আরও কঠোর করা এবং এ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
- সরকারের উদ্যোগ: যৌতুক প্রথা নিরোধে সরকারকেও উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য সরকারকে যৌতুক নিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
যৌতুক প্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি দূর করার জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।