বাংলাদেশের সংবিধানের পূর্ণ নাম কি?
বাংলাদেশের সংবিধান একটি প্রগতিশীল সংবিধান। এটি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধান। এটি জনগণের শাসন, আইনের শাসন, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতিগুলি হল:
- গণতন্ত্র: বাংলাদেশে জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস।
- আইনের শাসন: বাংলাদেশে আইনের উপর সকলকে সমানভাবে প্রযোজ্য।
- সামাজিক ন্যায়বিচার: বাংলাদেশে সকল নাগরিকের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
- ধর্মনিরপেক্ষতা: বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকার।
- সমাজতন্ত্র: বাংলাদেশে সকল নাগরিকের জন্য একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলা।
বাংলাদেশের সংবিধান ১৬৩টি অনুচ্ছেদ নিয়ে গঠিত। এটি পাঁচটি ভাগে বিভক্ত:
- প্রস্তাবনা
- মৌলিক অধিকার
- রাষ্ট্রের কাঠামো
- রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা
- বিবিধ
বাংলাদেশের সংবিধানে কয়টি সংশোধনী হয়েছে
সংশোধনীগুলোর মাধ্যমে সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন হলো:
- ১৯৭৩ সালের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আইন প্রণয়নের বিধান করা হয়।
- ১৯৭৫ সালের সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় এবং সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
- ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
- ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
সংবিধানের সংশোধনীগুলোকে বিভিন্নভাবে সমালোচিত করা হয়েছে। অনেকে মনে করেন যে, সংশোধনীগুলো সংবিধানকে দুর্বল করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর বিষয়বস্তু কি ছিল?
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীটি ১৯৭৩ সালের ১৫ই জুলাই পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আইন প্রণয়নের বিধান করা হয়।
সংশোধনীটির মূল বিষয়বস্তুগুলি হল:
- যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য একটি বিশেষ আদালত গঠনের বিধান করা হয়। এই আদালতটিতে একজন প্রধান বিচারপতি এবং চারজন বিচারপতি থাকবেন।
- যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা দেওয়া হয়। যুদ্ধাপরাধের মধ্যে রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অপরাধ।
- যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য একটি বিশেষ আইন প্রণয়নের বিধান করা হয়। এই আইনটি ১৯৭৩ সালের ২৬শে নভেম্বর পাস হয়।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যেসব যুদ্ধাপরাধীরা মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছিল তাদের বিচারের জন্য এই সংশোধনীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সংশোধনীটি পাস হওয়ার পর, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। এরপর থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কাজ থেমে যায়। ১৯৯১ সালের পর থেকে আবার যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি জোরালো হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধের বিচারের কাজ আবার শুরু হয়।
২০১৩ সালের ৩০শে ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে। ২০২৩ সালের ১০ই অক্টোবর পর্যন্ত আইসিটি মোট ৩২টি মামলায় ৫২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে।
সংশোধনীটি পাস হওয়ার পর, জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলির সংখ্যা ৫০ থেকে ৭৫ করা হয়। এই আসনগুলিতে প্রতি পাঁচ বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবিধান সভায় কয়টি কমিটি আছে
- মৌলিক বিষয় কমিটি: এই কমিটিগুলি সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত। এই কমিটিগুলি হলো:
- মৌলিক অধিকার কমিটি
- রাষ্ট্রের কাঠামো কমিটি
- রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কমিটি
- অন্যান্য বিষয় কমিটি: এই কমিটিগুলি সংবিধানের অন্যান্য বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত। এই কমিটিগুলি হলো:
- অর্থনীতি কমিটি
- সামাজিক ন্যায়বিচার কমিটি
- সংস্কৃতি কমিটি
- সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি
- প্রশাসন কমিটি
- আইন ও বিচার কমিটি
- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটি
- সংসদ কমিটি
- বিচার ব্যবস্থা কমিটি
এই কমিটিগুলির কাজ হলো সংবিধানের খসড়া তৈরি করা, সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদগুলির উপর আলোচনা করা, এবং সংবিধানের চূড়ান্ত খসড়াটি অনুমোদন করা।
সংবিধান সভায় প্রতিটি কমিটিতে ১৫ জন সদস্য থাকে। এই সদস্যদের মধ্যে ১০ জন সদস্য সংসদ সদস্য, এবং ৫ জন সদস্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সদস্য।
সংবিধানের প্রধান ধারাসমূহ
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রধান ধারাসমূহ হল:
- গণতন্ত্র: বাংলাদেশের জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস।
- আইনের শাসন: বাংলাদেশে আইনের উপর সকলকে সমানভাবে প্রযোজ্য।
- সামাজিক ন্যায়বিচার: বাংলাদেশে সকল নাগরিকের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
- ধর্মনিরপেক্ষতা: বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকার।
- সমাজতন্ত্র: বাংলাদেশে সকল নাগরিকের জন্য একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলা।
এই ধারাসমূহের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের সংবিধান গঠিত হয়েছে। এই ধারাসমূহের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি গণতান্ত্রিক, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মনিরপেক্ষ, এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য অর্জন করা হয়।
সংবিধানের প্রধান ধারাসমূহের মধ্যে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় হল:
- মানবাধিকার: বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এই অধিকারগুলির মধ্যে রয়েছে জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, সমান অধিকার, এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা।
- রাষ্ট্রের কাঠামো: বাংলাদেশের একটি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ব্যবস্থায়, জনগণ প্রতি পাঁচ বছরে সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়। সংসদ সরকার গঠন করে এবং সরকারের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
- রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা: বাংলাদেশের সরকারের তিনটি শাখা রয়েছে: নির্বাহী, আইনসভা, এবং বিচার বিভাগ। এই তিনটি শাখার মধ্যে ক্ষমতা পৃথকীকরণ করা হয়েছে।
সংবিধানের প্রধান ধারাসমূহ বাংলাদেশের জনগণের অধিকার এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। এই ধারাসমূহের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত সমাজের প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম কত তারিখে গৃহীত হয়েছিল?
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম ১৯৮৮ সালের ৫ জুন গৃহীত হয়েছিল। চতুর্থ জাতীয় সংসদে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী প্রস্তাব পাশ হয়েছিল, যাতে ২(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।”
এই সংশোধনীটি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সরকারের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছিল।
১৯৭২ সালে গৃহীত বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে একটি মৌলিক মতবাদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের সরকার ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধান থেকে সরিয়ে দিয়ে
“পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র উপর” কথাটি অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানের একটি মৌলিক মতবাদ হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে।
বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি কয়টি
- জাতীয়তাবাদ: বাংলাদেশের সকল নাগরিকের মধ্যে জাতীয় চেতনা ও ঐক্য গড়ে তোলা।
- সমাজতন্ত্র: সকল নাগরিকের জন্য একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলা।
- গণতন্ত্র: সকল নাগরিকের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
- ধর্মনিরপেক্ষতা: সকল ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
এই মূলনীতিগুলি বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার দিকনির্দেশনা দেয়। এই মূলনীতিগুলির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের একটি গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, এবং ন্যায়সঙ্গত রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জন করা হয়।
১৯৭২ সালে গৃহীত বাংলাদেশের সংবিধানে এই চারটি মূলনীতিকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের সরকার ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধান থেকে সরিয়ে দিয়ে “পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র উপর” কথাটি অন্তর্ভুক্ত করে।
২০১০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানের একটি মৌলিক মতবাদ হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে।