সাম্মাম ফল কি
সাম্মাম ফল হল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। এটি দেখতে অনেকটা বেল বা বাতাবি লেবুর মতো। ভেতরে রসালো তরমুজের মতো এবং সুস্বাদু। একটি সাম্মাম এক থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজনের হয়।
সাম্মাম ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হল Citrullus colocynthis। এটি কিউকাম্বার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সাম্মাম ফল মূলত মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ভারতে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশেও সাম্মাম ফলের চাষ হচ্ছে।
সাম্মাম ফলের পুষ্টিগুণ অনেক। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার রয়েছে। সাম্মাম ফল খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ত্বক সুন্দর হয়, হজমশক্তি বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
সাম্মাম ফল কাঁচা বা পাকা দুইভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা সাম্মাম ফলের রস খেলে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা এবং বদহজম দূর হয়। পাকা সাম্মাম ফলের রস খেলে শরীরে শক্তি বাড়ে এবং পানিশূন্যতা দূর হয়।
সাম্মাম ফলের চাষ খুব সহজ। এটি যেকোনো ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে বেলে দোআঁশ মাটি সাম্মাম ফলের জন্য সবচেয়ে ভালো। সাম্মাম ফলের চারা রোপণের পর দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ফল আসে।
বাংলাদেশে সাম্মাম ফলের চাষ এখনও একটি নতুন বিষয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাম্মাম ফলের চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে সাম্মাম ফলের চাষের সম্ভাবনা অনেক।
সাম্মাম ফলের বীজ কোথায় পাওয়া যায়
সাম্মাম ফলের বীজ বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি জায়গায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে:
- অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট, যেমন দারাজ, ইভ্যালি, শপআপ, ইত্যাদি।
- কৃষিবীজ বিক্রয়কারী দোকান।
- সাম্মাম ফল চাষকারীদের কাছ থেকে।
অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট থেকে সাম্মাম ফলের বীজ কেনার সুবিধা হল যে আপনি ঘরে বসেই বীজ কেনা এবং সংগ্রহ করতে পারবেন। কৃষিবীজ বিক্রয়কারী দোকান থেকে সাম্মাম ফলের বীজ কেনার সুবিধা হল যে আপনি বিভিন্ন জাতের সাম্মাম ফলের বীজ এক জায়গায় পাবেন।
সাম্মাম ফল চাষকারীদের কাছ থেকে সাম্মাম ফলের বীজ কেনার সুবিধা হল যে আপনি সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে বীজ কিনতে পারবেন।
সাম্মাম ফলের বীজ কেনার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন:
- বীজের প্যাকেটটি ভালোভাবে পরীক্ষা করুন। প্যাকেটের গায়ে বীজের জাতের নাম, পরিমাণ এবং মেয়াদ উল্লেখ থাকতে হবে।
- বীজগুলো ভালোভাবে শুকনো এবং অক্ষত কিনা তা পরীক্ষা করুন।
- বীজগুলোর দাম বাজারদর অনুযায়ী কিনা তা জেনে নিন।
সাম্মাম ফলের বীজ সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলুন:
- বীজগুলোকে একটি শুষ্ক এবং ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করুন।
- বীজগুলোকে একটি কাচের বা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
- বীজগুলোকে একটি এয়ারটাইট কন্টেইনারে সংরক্ষণ করুন।
সাম্মাম ফলের বীজ সংরক্ষণের সময় বীজগুলোকে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন।
সাম্মাম ফল চাষ পদ্ধতি
সাম্মাম ফলের চাষ খুব সহজ। এটি যেকোনো ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে বেলে দোআঁশ মাটি সাম্মাম ফলের জন্য সবচেয়ে ভালো। সাম্মাম ফলের চাষের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করুন:
বীজ বপন
সাম্মাম ফলের বীজ বপনের জন্য প্রথমে একটি ভালো মানের মাটি তৈরি করুন। মাটিতে ভালোভাবে জৈব সার মিশিয়ে নিন। এরপর মাটিতে বীজ বপন করুন। প্রতিটি বীজের মাঝে 15-20 সেমি দূরত্ব রাখুন।
চারা রোপণ
বীজ থেকে চারা গজানোর পর চারাগুলোকে আলাদা করে মাটিতে রোপণ করুন। চারা রোপণের জন্য 60x60x60 সেমি আকারের গর্ত তৈরি করুন। গর্তের মাঝে মাটিতে ভালোভাবে জৈব সার মিশিয়ে নিন। এরপর চারাগুলো গর্তের মাঝে রোপণ করুন।
সেচ
সাম্মাম ফলের গাছে প্রচুর পরিমাণে পানি প্রয়োজন। তাই গাছে নিয়মিত সেচ দিন। তবে অতিরিক্ত পানি দেবেন না।
সার প্রয়োগ
সাম্মাম ফলের গাছে সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়। চারা রোপণের পর প্রতি সপ্তাহে একবার করে সার প্রয়োগ করুন। সার হিসেবে গোবর সার, ইউরিয়া সার, টিএসপি সার এবং পটাশিয়াম সার ব্যবহার করতে পারেন।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
সাম্মাম ফলের গাছে পোকামাকড় ও রোগবালাই আক্রমণ করতে পারে। তাই নিয়মিত গাছ পরিদর্শন করুন। পোকামাকড় ও রোগবালাই দেখা দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নিন।
ফল সংগ্রহ
সাম্মাম ফলের চারা রোপণের পর দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ফল আসে। ফল পরিপক্ব হলে গাছ থেকে সংগ্রহ করুন।
সাম্মাম ফলের চাষের কিছু টিপস
- সাম্মাম ফলের গাছ রোপণের জন্য উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া ভালো।
- সাম্মাম ফলের গাছ রোপণের জন্য ভালো মানের জৈব সার ব্যবহার করুন।
- সাম্মাম ফলের গাছে নিয়মিত সেচ দিন। তবে অতিরিক্ত পানি দেবেন না।
- সাম্মাম ফলের গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করুন।
- সাম্মাম ফলের গাছে পোকামাকড় ও রোগবালাই দেখা দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নিন।
সাম্মাম ফলের চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। তাই আপনি যদি সাম্মাম ফল চাষ করতে চান তাহলে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি অনুসরণ করে চাষ করুন।