আবহাওয়া হলো কোনো নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, চাপ, বায়ু প্রবাহ, মেঘ ও বৃষ্টিপাত ইত্যাদির অবস্থা। আবহাওয়া পরিবর্তনশীল এবং এটি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে।
আবহাওয়ার প্রধান কারণ হলো সূর্যের তাপ। সূর্যের তাপের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি হয়। বায়ু প্রবাহের ফলে মেঘ সৃষ্টি হয় এবং বৃষ্টিপাত হয়।
আবহাওয়ার প্রধান উপাদানগুলো হলো:
- তাপমাত্রা: বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হলো আবহাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাপমাত্রা বাড়লে বা কমলে আবহাওয়ার অবস্থাও পরিবর্তিত হয়।
- আর্দ্রতা: বায়ুমণ্ডলে থাকা জলীয় বাষ্পের পরিমাণকে আর্দ্রতা বলে। আর্দ্রতা বাড়লে বা কমলে আবহাওয়ার অবস্থাও পরিবর্তিত হয়।
- চাপ: বায়ুমণ্ডলের চাপ হলো বায়ুমণ্ডলের প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপর ক্রিয়াশীল বল। চাপ বাড়লে বা কমলে আবহাওয়ার অবস্থাও পরিবর্তিত হয়।
- বায়ু প্রবাহ: বায়ুমণ্ডলের একটি স্থান থেকে অন্য স্থানে বায়ুর চলাচলকে বায়ু প্রবাহ বলে। বায়ু প্রবাহের ফলে আবহাওয়ার অবস্থা পরিবর্তিত হয়।
- মেঘ: বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প জমাট বাঁধে এবং মেঘ সৃষ্টি করে। মেঘের উপস্থিতির ফলে আবহাওয়ার অবস্থা পরিবর্তিত হয়।
- বৃষ্টিপাত: মেঘের জলীয় বাষ্প বৃষ্টির ফোঁটা আকারে পৃথিবীতে পতিত হয়। বৃষ্টিপাতের ফলে আবহাওয়ার অবস্থা পরিবর্তিত হয়।
আবহাওয়ার পরিবর্তন বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো:
- সূর্যের তাপ: সূর্যের তাপের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি হয়। বায়ু প্রবাহের ফলে মেঘ সৃষ্টি হয় এবং বৃষ্টিপাত হয়।
- বায়ুমণ্ডলের চাপ: বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্যের ফলে বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি হয়। বায়ু প্রবাহের ফলে আবহাওয়ার অবস্থা পরিবর্তিত হয়।
- ভূতাত্ত্বিক কারণ: ভূতাত্ত্বিক কারণ যেমন ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ইত্যাদির ফলে আবহাওয়ার অবস্থা পরিবর্তিত হতে পারে।
- মানুষের কর্মকাণ্ড: মানুষের কর্মকাণ্ড যেমন যানবাহনের নির্গমন, শিল্প কারখানার নির্গমন ইত্যাদির ফলে আবহাওয়ার অবস্থা পরিবর্তিত হতে পারে।
আবহাওয়ার পরিবর্তন মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। আবহাওয়ার কারণে ফসলহানি, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব পড়তে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য আবহাওয়াবিদরা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ
আবহাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বায়ুচাপ। বায়ুচাপ হলো বায়ুমণ্ডলের প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপর ক্রিয়াশীল বল। বায়ুচাপের তারতম্যের ফলে আবহাওয়ার অবস্থা পরিবর্তিত হয়।
বায়ুমণ্ডলের যে স্থানে বায়ুর চাপ বেশি থাকে সেই স্থানকে উচ্চচাপ অঞ্চল বলে। উচ্চচাপ অঞ্চলে বায়ু হালকা হয় এবং উপরের দিকে উঠতে থাকে। ফলে নিম্নচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু উচ্চচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
বায়ুমণ্ডলের যে স্থানে বায়ুর চাপ কম থাকে সেই স্থানকে নিম্নচাপ অঞ্চল বলে। নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ু ভারী হয় এবং নিচের দিকে নেমে আসে। ফলে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
উচ্চচাপ ও নিম্নচাপের মধ্যেকার চাপের পার্থক্য যত বেশি হবে, বায়ু প্রবাহের গতি তত বেশি হবে।
বায়ুচাপের তারতম্যের ফলে বিভিন্ন ধরনের আবহাওয়ার অবস্থার সৃষ্টি হয়। যেমন:
- উচ্চচাপ অঞ্চলে: আবহাওয়া সাধারণত শুষ্ক ও পরিষ্কার থাকে।
- নিম্নচাপ অঞ্চলে: আবহাওয়া সাধারণত মেঘলা ও বৃষ্টিপূর্ণ থাকে।
বায়ুচাপের তারতম্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিরূপ আবহাওয়া
আবহাওয়া প্রতিটি উপাদান প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। আবহাওয়ার কোন উপাদান যখন অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয় তখন আমরা বিরূপ আবহাওয়া দেখতে পাই।
বিরূপ আবহাওয়া কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হই। যেমন মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হয়। কখনো কখনো মানুষ মারা যায় ।
তাপদাহ ও শৈত্যপ্রবাহ
প্রতি গরম আবহাওয়া দীর্ঘস্থায়ী অবস্থায় হল তাপদাহ।আমরা প্রতি বছর তাপদাহ অনুভব করি।তবে অস্বাভাবিক ও অসহনীয় তাপদাহ শত বছরের একবার দেখতে পাওয়া যায়।
ও স্বাভাবিক তাপদাহের ফলে ফসল উৎপাদন মারাত্ম কভাবে ব্যাহত হয়। আবার এই তাপদাহের কারণে কখনো কখনো মানুষসহ হাজার হাজার জীবের মৃত্যু হয়।
উত্তরের সুস্থ ও শীতল বায়ু আমাদের দেশের উপর দিয়ে প্রবাহের ফলে শীতকালে তাপমাত্রা কখ- নো কখনো অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।
এই অবস্থায়ই হলো শৈত্যপ্রবাহ। তবে উদ্ভিদ ওনানীর জন্য অসহনীয় শৈতপ্রবাহ বাংলাদেশের খুব কমই দেখা যায়।
বন্যা ও খরা
বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের এক পঞ্চমাংশ পানিতে তলিয়ে যায়।তবে ভয়াবহ বন্যার সময় বাংলা তৃতীয়াংশ পানি নিচে তলিয়ে যায়।
অনেক লম্বা সময় শুষ্ক আবহাওয়ায় থাকলে খরা দেখা দেয়। অস্বাভা বিক কম বৃষ্টিপাত ও উচ্চ তাপমাত্রায় হলো খরার কারণ। বাংলাদেশর উত্তর-পশ্চিমঅঞ্চলে খরা বৃষ্টি হয়।
কালবৈশাখী
গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে যে বজ্রঝড় হয় তাই কালবৈশাখী নামে পরিচিত। স্থলভাগ অত্যন্ত বড় হওয়ার ফলেই কালবৈশাখী বৃষ্টি হয়। সাধারণত বিকেল বেলায় কালবৈশাখী ঝড় বেশি হয়।
এই ঝড় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। সঞ্চারণশীল ধূসর মেঘ সোজা উপরে উঠে গিয়ে জমা হয়। পরবর্তীতে এই মেঘ ঘনীভূত হয়ে ঝরো হাওয়া, ভারী বৃষ্টি, বদ্ধ বৃষ্টি শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি সৃষ্টি করে। এটাই কালবৈশাখী।
টর্নেডো
টর্নেডো হলো শুরু ফানেল আকৃতির ঘূর্ণায়মান শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহ আকাশে বজ্রমেঘের স্তর থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
টর্নেডো আকাশে সাধারণত এক কিলোমিটারের কম হয়। টর্নেডোর ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।
যেমন- ঘরবাড়ির ছাদ উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে, দেয়াল ভেঙ্গে যেতে পারে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। শক্তিশালী টর্নেডো বড় বড় স্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন
ঘূর্ণিঝড় হলো নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান সামুদ্রিক বজ্রঝড়। এটি ৫০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়।
অত্যাধিক গরমের ফলে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের পানি ব্যাপকহারে বাম্পে পরিণত হয়। এর ফলে ঐসকল স্থানে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকে তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় দমকা হাওয়া বইতে থাকে ও মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে। কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের ফলে জলোচ্ছাসে সৃষ্টি হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লোকালয় প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। মাঝে জলোচ্ছ্বাসে ফলে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে তীব্র জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।