সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ ছিলেন একজন বাংলাদেশী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। তিনি ১৯৮৪ সালের ২৬ জুলাই চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে তিনি এসএসসি এবং রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাশ করেন।
২০০৩ সালের ২১ জানুয়ারি ৫১তম বিএমএ লং কোর্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর সাফল্যের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে কমিশনপ্রাপ্ত হন।
২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ইউটিউবে একটি “জাস্ট গো” নামে প্রমাণ্যচিত্রের কাজে ছিলেন। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন।
সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ ছিলেন একজন সাহসী এবং দেশপ্রেমিক মানুষ। তিনি একজন সফল সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন। তিনি একজন মেধাবী এবং প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যু বাংলাদেশের একটি বড় ক্ষতি।
সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের একটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত হয় এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
মেজর সিনহা হত্যার অভিযোগ পত্র
মেজর সিনহা হত্যার অভিযোগপত্র
মামলার বিবরণ
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।
অভিযোগপত্রের বিবরণ
র্যাব-১৫ কক্সবাজারের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, মেজর সিনহা ও তার বন্ধু শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাত টেকনাফের একটি সৈকতে বেড়াতে যাওয়ার সময় ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ থানার শামলাপুর চেকপোস্টে আটক হন।
থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা কেড়ে নেন এবং তাদের থানায় নিয়ে যান। থানায় ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগীরা মেজর সিনহাকে মারধর করেন। মেজর সিনহা প্রতিরোধ করলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, মেজর সিনহা ওসি প্রদীপের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিলেন। এ কারণে ওসি প্রদীপ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যাকাণ্ডের আগে ওসি প্রদীপ তার সহযোগীদের নিয়ে গোপন বৈঠক করেন।
অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে চার্জগঠন
২০২১ সালের ২৭ জুন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন এবং ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন।
রায়
২০২৩ সালের ১৯ জুলাই কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সাতজনকে খালাস দেওয়া হয়।
মেজর সিনহা হত্যা মামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি আলোচিত মামলা। এই মামলার রায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে একটি বার্তা দিয়েছে।
মেজর সিনহা হত্যায় যাবজ্জীবন শাস্তি পেলেন যারা
মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায়ে ১৫ আসামির মধ্যে ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন:
- বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত
- বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব
- বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) লিয়াকত আলী
- প্রদীপ কুমার দাশের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা
- বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন
- মো. নেজামুদ্দিন
- আয়াজ উদ্দিন
এদের মধ্যে এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয় ২০২২ সালের ৫ জুলাই। রায় ঘোষণার পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মেজর সিনহা হত্যার ঘটনাটি ২০২১ সালের ২৬ জুলাই কক্সবাজারের বাহারছড়ায় ঘটে। সেদিন রাতে মেজর সিনহা তার স্ত্রী ও এক বন্ধুকে নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। বাহারছড়ার চেকপোস্টে পুলিশ তাদের গাড়ি আটক করে এবং মেজর সিনহাকে মারধর করে। পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মেজর সিনহা হত্যায় কার কী সাজা
মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায়ে ১৫ আসামির মধ্যে দুজনকে ফাঁসি, ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আটজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
ফাঁসি
- টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ
- টেকনাফ থানার বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
- বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত
- বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব
- বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) লিয়াকত আলী
- প্রদীপ কুমার দাশের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা
- বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন
- মো. নেজামুদ্দিন
- আয়াজ উদ্দিন
বেকসুর খালাস
- টেকনাফ থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শাহজাহান
- বরখাস্ত কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব
- বরখাস্ত কনস্টেবল মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ
- বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. রফিক
- মো. রাসেল
- মো. আলম
মেজর সিনহা হত্যার ঘটনাটি ২০২১ সালের ২৬ জুলাই কক্সবাজারের বাহারছড়ায় ঘটে। সেদিন রাতে মেজর সিনহা তার স্ত্রী ও এক বন্ধুকে নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। বাহারছড়ার চেকপোস্টে পুলিশ তাদের গাড়ি আটক করে এবং মেজর সিনহাকে মারধর করে। পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এই মামলায় পুলিশের পক্ষ থেকে ৭২ জন সাক্ষী এবং আসামিপক্ষ থেকে ১২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।