শীতকালে ঢাকায় মশার উৎপাত কিছুটা বেড়ে যায় কারণ শীতের মৌসুমে তাপমাত্রা কমে যায় এবং মশা তাদের প্রজনন ও জীবনের জন্য আরও উপযুক্ত পরিবেশ পায়।
যদিও গরমের সময়ে মশা বেশি সক্রিয় থাকে, শীতকালে কুয়াশা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়, যা তাদের বাচ্চা উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। এছাড়া শীতের দিনে রাতের বেলা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে মশা বেশি সময় বাইরেই থাকতে পারে, বিশেষ করে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া সহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগের বিস্তারও হতে পারে। এছাড়া, শীতকালে মানুষ বেশি সময় ঘরের মধ্যে থাকেন এবং ঘরের ভেতরেও জল জমে থাকতে পারে, যেখানে মশা ডিম পাড়ে। এই সব কারণেই শীতকালে ঢাকায় মশার উৎপাত বাড়তে পারে।
শীতকালে মশার উত্পাত বৃদ্ধিতের কারণসমূহ
শীতকালে মশার উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ার কিছু কারণ রয়েছে উত্তাপ ও আর্দ্রতা শীতকালে তাপমাত্রা কমলেও, অনেক অঞ্চলে আর্দ্রতা বেশি থাকে। মশা আর্দ্র পরিবেশে ভালোভাবে বংশবৃদ্ধি করে, কারণ তারা জলাশয়ে ডিম পাড়ে এবং ওই জলাশয়ে তার লার্ভা জন্মায়। শীতকালে কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় এবং এই বৃষ্টির পানি জমে থাকা পুকুর, ডোবা বা পলির জায়গায় মশার লার্ভা উৎপন্ন হতে পারে। ঘরবন্দি অবস্থায় থাকা শীতকালে মানুষ ঘরের মধ্যে বেশি সময় কাটায়, ফলে মশারা ঘরের মধ্যে ঢুকে সহজেই তাদের শিকার করতে পারে।
এছাড়া গৃহস্থালির কাজের জন্য একাধিক বার জল জমে থাকলে, তা মশার জন্মস্থল হতে পারে। পানি জমে থাকা শীতকালে শীতল পরিবেশের কারণে কিছু সময়ের জন্য পানি জমে থাকা জায়গাগুলি মশার উপযুক্ত স্থান হয়ে উঠতে পারে। পুকুর, ডোবা, পিপঁড়ের বাসা, বাসস্থানের আঙিনা ইত্যাদিতে জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা সৃষ্টি হতে থাকে। পরিবেশে শীতকালীন পরিবর্তন শীতকালে কিছু প্রাকৃতিক পরিবেশগত পরিবর্তন যেমন, দিনের সংক্ষিপ্ততা এবং রাতের দীর্ঘতা, মশাদের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। এছাড়া শীতকালীন সুস্থতার কারণে মশারা পিপঁড়া সহ আরও অনেক প্রজাতি বেশি সক্রিয় থাকে।
প্রতিকার উপায়নসমূহ
ঢাকায় কিউলেক্স মশা বেড়েছে চারগুণ
ঢাকায় সম্প্রতি কিউলেক্স মশার সংখ্যা বেড়ে গেছে, এবং এটি প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিউলেক্স মশা সাধারণত নোংরা পানিতে বংশবৃদ্ধি করে এবং এর মাধ্যমে জাপানি এনসেফেলাইটিস, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস, ও অন্যান্য রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
কী করণীয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা বাড়ির আশেপাশে নোংরা পানি জমতে না দেওয়া। ফগিং ওষুধ ছিটানো সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ফগিং চালানো। মশার জাল ও রেপেলেন্ট ব্যবহার মশার কামড় থেকে বাঁচতে রাতে মশারি ব্যবহার করা এবং মশা তাড়ানোর ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করা। জলাশয় ব্যবস্থাপনা নালা ও ড্রেনগুলোর পানি চলাচল নিশ্চিত করা।
দিনে-রাতে মশার উৎপাতে অতিষ্ট রাজধানীবাসী
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গাতেই মশার উপদ্রব একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মশার কারণে শুধু বিরক্তি নয়, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগও ছড়িয়ে পড়ছে। এটা রোধ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে ড্রেনেজ সিস্টেম পরিষ্কার রাখা জমে থাকা পানিতে মশা সবচেয়ে বেশি জন্মায়, তাই ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি।মশা নিধনের ওষুধ স্প্রে করা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো দরকার। ব্যক্তিগত সুরক্ষা মশারি ব্যবহার, ঘরে মশা প্রতিরোধক স্প্রে ব্যবহার, এবং সন্ধ্যার সময় জানালা-দরজা বন্ধ রাখা উচিত। জনসচেতনতা জনগণকে তাদের আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে উৎসাহিত করতে হবে।
দুই মাসে রাজধানীতে মশা বেড়েছে ৪০%
মশার উপদ্রব রাজধানীতে দ্রুত বাড়ছে, এবং দুই মাসে ৪০% বৃদ্ধি একটি উদ্বেগজনক তথ্য। এ ধরনের পরিস্থিতি সাধারণত ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আপনার এলাকায় মশা কমানোর জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন, যেমন:
- পানি জমে থাকার স্থান পরিষ্কার করা: ফুলের টব, ফ্রিজের পেছনে জমে থাকা পানি বা যেকোনো স্থানে পানি জমে থাকা এড়িয়ে চলুন।
- মশার ওষুধ ছিটানো: নিয়মিত মশা মারার স্প্রে বা ধূপ ব্যবহার করুন।
- মশার জাল বা নেট ব্যবহার: রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন।
- সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ: সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলাকায় মশা নিধনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
সবচেয়ে ঝুঁকিতে শিশু আর বয়স্করা
ঢাকায় মশার উৎপাত ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, যা বিশেষত শিশু এবং বয়স্কদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। মশাবাহিত রোগ, যেমন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং ম্যালেরিয়া, এই দুই গোষ্ঠীর জন্য বেশি ক্ষতিকর হতে পারে কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল।
শিশুরা: তাদের ইমিউন সিস্টেম পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। ডেঙ্গু বা অন্যান্য মশাবাহিত রোগে শিশুদের জটিলতা বেশি হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী জ্বর বা রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেশি।
বয়স্করা: অনেক সময় তাদের আগে থেকেই অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মশাবাহিত রোগ তাদের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: ঘরে এবং আশেপাশে জমা পানি সরিয়ে ফেলা যাতে মশার বংশবিস্তার কমে। মশারি ব্যবহার করা, বিশেষত শিশু ও বয়স্কদের জন্য। সন্ধ্যা ও ভোরবেলায় পুরো শরীর ঢেকে এমন পোশাক পরানো। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে নিয়মিত কীটনাশক ছিটানো।
ঢাকা সিটি কর্তৃপক্ষ যা বলছে
ঢাকায় মশার উপদ্রব সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নগরবাসীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, শীতের শেষে কিউলেক্স মশার সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মশা নিয়ন্ত্রণে ১২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে, যার মধ্যে মশা নিধন কার্যক্রমের জন্য ৮৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।এছাড়াও, ডিএনসিসি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সব ওয়ার্ডে একযোগে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ মশকনিধন কর্মসূচি শুরু করেছে, যা ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।
অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন। ডিএসসিসি মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে মশক সুপারভাইজারদের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে। Dhaka South City Corporation তবে, নগরবাসীর অভিমত অনুযায়ী, মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম পর্যাপ্ত নয়। কিছু এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয় এবং মশার উপদ্রব কমছে না।
কীটতত্ত্ববিদদের মতে, মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা জরুরি। তারা পরামর্শ দেন, মশার প্রজননস্থল ধ্বংস, পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।সর্বোপরি, মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনগুলোর কার্যক্রম জোরদার করা এবং নগরবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
দুই মাসে রাজধানীতে মশা বেড়েছে ৪০%